
শাহিন আলম আশিক
ডিসেম্বরের ১১ তারিখ আমাদের জীবনে নিয়ে আসে এক গভীর দ্বৈত তাৎপর্য – প্রকৃতির মহিমা এবং মানবিকতার অঙ্গীকার। এই দিনে আমরা স্মরণ করি আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস (International Mountain Day) এবং ইউনিসেফ দিবস (UNICEF Day)। এই দুটি দিবস এক সুতোয় গাঁথা, যা আমাদের স্বাধীনতার মর্ম, মুক্তিযুদ্ধ এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষাকে গভীরভাবে প্রতিফলিত করে।
প্রকৃতির স্থপতি, জাতীয় আত্মমর্যাদার প্রতীক
পর্বতমালা কেবল নিছক ভূমিরূপ নয়; এগুলো মহান সৃষ্টিকর্তার অপূর্ব সৃষ্টি, যা আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্য, স্থিতিশীলতা এবং জীবন-বৈচিত্র্যের এক অমূল্য আধার। পর্বত দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় এদের সংরক্ষণ ও পরিবেশগত গুরুত্বের কথা, যা ইসলামের দৃষ্টিতে আমানত রক্ষার সমতুল্য। ঠিক যেমন পর্বত তার অটল উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তেমনি আমাদের জাতীয় আত্মমর্যাদা এবং মুক্তির লড়াইয়ের আদর্শ মাথা উঁচু করে সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা যোগায়। প্রকৃতিকে রক্ষা করা আমাদের অস্তিত্বের অংশ, আর এই রক্ষা করার ব্রত আমাদের মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসারই প্রতিচ্ছবি।
শৈশবের অধিকার, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা
অন্যদিকে, ইউনিসেফ দিবস হলো বিশ্বের প্রতিটি শিশুর অধিকার, স্বাস্থ্য ও মঙ্গলের অঙ্গীকার। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে শিশুদের অধিকার রক্ষা করা একটি প্রধান দায়িত্ব। শিশুরা হলো আমাদের আগামীর স্বপ্ন, আর তাদের নিরাপত্তা ও বিকাশ নিশ্চিত করাই সমাজের প্রধান দায়িত্ব।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে সকল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল মূলত সাম্য, ন্যায়বিচার এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সকল নাগরিকের, বিশেষ করে শিশুদের, একটি উন্নত জীবন নিশ্চিত করা। ইউনিসেফ দিবস সেই মানবিক মূল্যবোধকেই প্রতিফলিত করে—যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি শিশু সমান সুযোগ পাবে। এটি আমাদের সেই অঙ্গীকারের পুনরাবৃত্তি: শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য লড়া, যেমনটা আমরা শিখেছি একাত্তরের
মুক্তির লড়াই ও সংগ্রামে।
আগামীর স্বপ্ন ও সম্মিলিত পথচলা আগামীর স্বপ্নে আমরা দেখতে চাই এক বৈষম্যহীন পৃথিবী, যেখানে: পর্বতগুলো স্বমহিমায় সংরক্ষিত থাকবে, তাদের জীবনদায়ী সম্পদ সুরক্ষিত হবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে (যেমনটি কুরআনে প্রকৃতির সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে)।
প্রতিটি শিশু তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ পাবে, তাদের হাসি থাকবে নির্ভয় ও উজ্জ্বল।
আমাদের জাতীয় আদর্শ এবং মানবিকতা বিশ্বজুড়ে এক সাম্য, শান্তি ও ন্যায়বিচারের বার্তা বহন করবে।
এই দুটি দিবসের তাৎপর্য আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক। আসুন, আমরা প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হই, শিশুদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হই এবং স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ধারণ করে বৈষম্যমুক্ত একটি সমাজ গড়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাই। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায়ক হবেন, ইনশাআল্লাহ।
শুভ হোক আগামীর পথচলা।
মুক্তির লড়াই ডেস্ক : 

























