ঢাকা ০৩:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo টেকনাফে ৩ কোটি টাকা মূল্যের ৬০ হাজার ইয়াবাসহ এক মাদক পাচারকারী আটক Logo নীলফামারীতে ভলিবল ও কাবাডি প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত Logo ‎বরুড়া পৌর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অবশিষ্ট টিন নিয়ে গেলো শিক্ষা অফিস Logo নীলফামারীতে শীতবস্ত্র ও রুম হিটার বিতরণ Logo কালীগঞ্জে বিএনপি সহ তিন দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ Logo সুনামগঞ্জে বিপুল পরিমান ভারতীয় জিরা এবং ফুসকা জব্দ Logo ওসমান হাদীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় ডিমলায় জামায়াত ইসলামীর দোয়া অনুষ্ঠান Logo খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার ১৫২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প Logo চীনের অর্থনীতিতে পরিষেবা খাতের জয়যাত্রা Logo হাইনান বন্দর বিশ্ব বাণিজ্যকে এগিয়ে নেবে

মারমা শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের নিন্দা জানালো পিসিসিপি

মো: নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার

বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমা উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির এক নিরীহ মারমা শিক্ষার্থী তার স্বজাতির ৫ যুবক কর্তৃক ভয়ঙ্কর গণধর্ষণের শিকার হলেও তাকে ন্যায়বিচার না দিয়ে সামাজিক বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। অভিযুক্ত পাঁচ যুবককে মাত্র ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় (২০ আগষ্ট) বুধবার সকালে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন কায়েস ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবীব আজম।

বিবৃতিতে পিসিসিপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলেন,
বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার পাইন্দু হেডম্যান পাড়ায় মারমা শিক্ষার্থীকে নির্মম ভাবে ধর্ষণ করে তারই স্বজাতিরা, ধর্ষণকারীরা হলো- রুমা উপজেলার পাইন্দু হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা ক্যাহ্লা ওয়াইং মারমা, ক্যওয়ং সাই মারমা, চহাই মারমা, উহাই সিং মারমা এবং ক্য সাই ওয়ং মারমা।

পিসিসিপি’র বিবৃতিতে বলা হয়,
ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে পাইন্দু ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা রাংমেশে মারমা’র ছেলে শৈহাইনু মার্মা প্রথমে ছাত্রীটিকে একা পেয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। পরে তার সহপাঠী ও বন্ধুদের মাধ্যমে ঘটনাটি জানাজানি হলে শৈহাইনু’র চার বন্ধু বন্ধু ক্যাহ্লা ওয়াইং, ক্য ওয়ং সাই, চহাই, উহাই সিং ও ক্য সাই ওয়ং ভয়ভীতি দেখিয়ে পর্যায়ক্রমে একই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। নির্যাতন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত অসহায় কিশোরী ঘটনাটি পরিবারকে জানায়।

কিন্তু ন্যায়বিচার দেওয়ার বদলে গত ১৯ আগস্ট পাইন্দু হেডম্যান পাড়ায় কারবারী থোয়াইসা মার্মার সভাপতিত্বে এক সালিশ বসে। সেখানে পাইন্দু ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গংবাসে মার্মা এবং পাইন্দু মৌজার হেডম্যান মংচউ মার্মাগং-এর নেতৃত্বে অভিযুক্তদের মোটে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এমনকি জরিমানার টাকাটিও বাকি রাখা হয়, যা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। আরো ভয়ংকর বিষয় হলো ভিকটিমের পরিবারকে পাড়ায় আটকে রাখা হয়েছে যাতে তারা আইনি পদক্ষেপ নিতে না পারেন।

পিসিসিপি নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, টাকা দিয়ে ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়া কেবল অন্যায় নয়, এটি ভবিষ্যতে আরও অপরাধের পথ খুলে দেবে। পিসিসিপি প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে—অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

পিসিসিপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে আরো বলেন, ধর্ষণ একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ কখনো সামাজিক সালিশে নিষ্পত্তি হতে পারে না। এখন জনমতের একটাই দাবি—ভুক্তভোগী শিশুর পাশে দাঁড়িয়ে ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর আইনি শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

রুমার এই নৃশংস গণধর্ষণের পরও পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন জেএসএস, ইউপিডিএফ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তাদের এই নীরবতা জনমনে তীব্র প্রশ্ন তুলছে—শিশু শিক্ষার্থীর আর্তনাদ কি তাদের কানে পৌঁছায় না? তবে কি তাদের মানবাধিকারের চেতনা জেগে ওঠে শুধু বাঙালিদের বেলায়? স্বজাতি অপরাধী হলেই কি ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধও তাদের কাছে নীরব থাকার কারণ হয়ে দাঁড়ায়? এই দ্বিমুখী অবস্থান আসলে কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে—অপরাধীর, না ভুক্তভোগীর?

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

টেকনাফে ৩ কোটি টাকা মূল্যের ৬০ হাজার ইয়াবাসহ এক মাদক পাচারকারী আটক

SBN

SBN

মারমা শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের নিন্দা জানালো পিসিসিপি

আপডেট সময় ১১:৪১:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

মো: নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার

বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমা উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির এক নিরীহ মারমা শিক্ষার্থী তার স্বজাতির ৫ যুবক কর্তৃক ভয়ঙ্কর গণধর্ষণের শিকার হলেও তাকে ন্যায়বিচার না দিয়ে সামাজিক বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। অভিযুক্ত পাঁচ যুবককে মাত্র ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় (২০ আগষ্ট) বুধবার সকালে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন কায়েস ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবীব আজম।

বিবৃতিতে পিসিসিপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলেন,
বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার পাইন্দু হেডম্যান পাড়ায় মারমা শিক্ষার্থীকে নির্মম ভাবে ধর্ষণ করে তারই স্বজাতিরা, ধর্ষণকারীরা হলো- রুমা উপজেলার পাইন্দু হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা ক্যাহ্লা ওয়াইং মারমা, ক্যওয়ং সাই মারমা, চহাই মারমা, উহাই সিং মারমা এবং ক্য সাই ওয়ং মারমা।

পিসিসিপি’র বিবৃতিতে বলা হয়,
ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে পাইন্দু ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা রাংমেশে মারমা’র ছেলে শৈহাইনু মার্মা প্রথমে ছাত্রীটিকে একা পেয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। পরে তার সহপাঠী ও বন্ধুদের মাধ্যমে ঘটনাটি জানাজানি হলে শৈহাইনু’র চার বন্ধু বন্ধু ক্যাহ্লা ওয়াইং, ক্য ওয়ং সাই, চহাই, উহাই সিং ও ক্য সাই ওয়ং ভয়ভীতি দেখিয়ে পর্যায়ক্রমে একই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। নির্যাতন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত অসহায় কিশোরী ঘটনাটি পরিবারকে জানায়।

কিন্তু ন্যায়বিচার দেওয়ার বদলে গত ১৯ আগস্ট পাইন্দু হেডম্যান পাড়ায় কারবারী থোয়াইসা মার্মার সভাপতিত্বে এক সালিশ বসে। সেখানে পাইন্দু ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গংবাসে মার্মা এবং পাইন্দু মৌজার হেডম্যান মংচউ মার্মাগং-এর নেতৃত্বে অভিযুক্তদের মোটে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এমনকি জরিমানার টাকাটিও বাকি রাখা হয়, যা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। আরো ভয়ংকর বিষয় হলো ভিকটিমের পরিবারকে পাড়ায় আটকে রাখা হয়েছে যাতে তারা আইনি পদক্ষেপ নিতে না পারেন।

পিসিসিপি নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, টাকা দিয়ে ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়া কেবল অন্যায় নয়, এটি ভবিষ্যতে আরও অপরাধের পথ খুলে দেবে। পিসিসিপি প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে—অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

পিসিসিপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে আরো বলেন, ধর্ষণ একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ কখনো সামাজিক সালিশে নিষ্পত্তি হতে পারে না। এখন জনমতের একটাই দাবি—ভুক্তভোগী শিশুর পাশে দাঁড়িয়ে ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর আইনি শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

রুমার এই নৃশংস গণধর্ষণের পরও পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন জেএসএস, ইউপিডিএফ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তাদের এই নীরবতা জনমনে তীব্র প্রশ্ন তুলছে—শিশু শিক্ষার্থীর আর্তনাদ কি তাদের কানে পৌঁছায় না? তবে কি তাদের মানবাধিকারের চেতনা জেগে ওঠে শুধু বাঙালিদের বেলায়? স্বজাতি অপরাধী হলেই কি ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধও তাদের কাছে নীরব থাকার কারণ হয়ে দাঁড়ায়? এই দ্বিমুখী অবস্থান আসলে কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে—অপরাধীর, না ভুক্তভোগীর?