মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান
মহান আল্লাহর এ পৃথিবী থেকে প্রতিটি মানুষ দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে- এটাই এ দুনিয়ার বাস্তব নিয়ম। আমরা সবাই এসেছি এ সুন্দর পৃথিবীতে, আবার চলে যেতে হবে এ পৃথিবী ছেড়ে। আমরা যেমন এসেছি একা, তেমনি চলে যেতে হবে সে একাই, সম্বল শুধু সাড়ে তিন হাত জমি, সাড়ে তিন হাত কবর। সবগুলো কথাই সত্য, কোনটাই কিন্তু মিথ্যা নয়।
একদিন বাবা-মাকেও সন্তানদের সকল প্রকার ভালবাসা ত্যাগ করে চলে যেতে হয়- এটাই চির বাস্তব। তবে এটাও সত্য এমন কঠিন বাস্তবতা সন্তানদের আবেগের কাছে পরাজিত। বাবা-মায়ের চির বিদায় সহ্য করা সন্তানদের পক্ষে এতটা কঠিন, এতটা ব্যাথার!!! সন্তানদের আবেগি মন কোন দিন চায় না বাবা-মা কষ্ট পাক, ব্যাথা পাক, সন্তানদের মায়ার মোহ ত্যাগ করে বাবা-মা চির বিদায় নিক। এটাই সন্তানদের আবেগ; এটাই তাদের মায়ার অনুভূতি; এটাই পরম মমতা যে অবুঝ মন, আবেগ, মমতা এবং ভালবাসার কাছে এ দুনিয়ার কঠিন বাস্তবতাও পরাজিত!!!
৪ঠা মে, ২০২৩ ইং ভোর ৪:৩০ টা। মা, এক বছর আগে এ দিনে তুমি চলে গেছ আমাদেরকে এতিম করে। মা, তুমি কাউকে না জানিয়ে, না বুঝিয়ে, কাউকে ঘুম থেকে না জাগিয়ে, কাউকে কোন কষ্ট না দিয়ে, কারো কাছে কোন কিছু আবদার না করে অত্যন্ত শান্তির সাথে (মা, অনেকে আমাকে স্বান্তনা দিয়েছে এমন বিদায় মহান আল্লাহ প্রদত্ত পরম শান্তির মৃত্যু) এবং ইমানের সাথে (যে ইমানের সাথে চির বিদায় নেয়ার জন্য তুমি সব সময় দোয়া করতে) চলে গেছো। মা, আমাদের কোন অভিযোগ নেই, আমরা অভিযোগ করলে তোমার আতœা কষ্ট পাবে, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ কষ্ট পারেন। মা, শুধু এতটুকু কষ্ট আর ব্যথা- আমরা চির দিনের জন্য এতিম হয়ে গেলাম, মা আর কোন দিন তোমার প্রকাশ্য দোয়া ভালবাসার মমতায় গ্রহণ করতে পারতে পারবো না, মা আর কোন দিন তোমার দু’’টো কোমল হাত আমাদের মাথায় স্পর্শ করবে না, হাজার-লক্ষ টাকা এ দুই হাতে আসবে এবং দুই হাত ভরে খরচ হবে, কিন্তু মা হাজার-লক্ষ অর্থ আর সামর্থের বিনিময়েও তোমাকে একটু খাবার খাওয়াতে পারবো না। মা, তুমি খুব সৌখিন ছিলে, সুন্দর-সুন্দর কাপড় তুমি দু’চোখ ভরে দেখতে, দেখে খুব খুশি হতে, তোমার মনটা আনন্দে উৎফুল্ল হতো। মা, আর কোন দিন আমাদের হাজারো সামর্থ থাকলেও তোমার হাতে তোমার পছন্দের কাপড় আমরা সন্তানেরা তুলে দিতে পারবো না। মা, চলে গেলে নিরবে তুমি, কিন্তু মা আমরাতো খুব তাড়াতাড়ি এতিম হয়ে গেলাম!!! মা, তুমি চলে যাচ্ছ দেখে সন্তানদের মন অঝোরে কাঁদছে, সন্তানদের মন ব্যাথায় কাঁতরাচ্ছে, তাদের সেই ব্যথা দেখলে হয়তো তুমিও অনেক কষ্ট পেতে। সেজন্যই কি মা নিরভে কাউকে না বলে চলে গেলে মা? মা, চলে যাওয়ার একদিন আগে তুমি কয়েকবার আমাকে ডেকেছ, মা আমি পারিনি তোমার ডাক শুনে উত্তর দিতে, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও মা। মা, মাত্র একটি সপ্তাহ আমার হাতে গড়া নতুন বিল্ডিং এ তুমি ঘুমিয়ে যেতে পারছো, সে ঘরটিতে হয়তো আর কিছু দিন থাকতে তোমার মন চেয়েছিল। কিন্তু মা তুমি চলে যাবে একটি মাসও পরম মমতায় গড়া (যেখানে তোমারও অনেক পরম মমতা জড়িত) সে ঘরটিতে তুমি থাকতে পারো নি। মা, আজ তোমাকে হারিয়ে এতটাই এতিম হলাম- সারা জীবন চরম কষ্টে, চরম শূণ্যতায় এবং এক রাশ মনের ব্যাথায় এ ঘরটিতে থাকতে হবে। মা, তোমার নাতী সানীমকে যখন জিজ্ঞাসা করি- তোমার দাদু কোথায়? সে উত্তর দেয়- আল্লাহর কাছে চলে গেছে, আর আসবে না। মা, তুমি এতটা দূরে চলে গেছ, আর কোন দিন আসবে না আমাদেরকে দোয়া করতে, আমাদেরকে ¯েœহ করতে, অন্যায় হলে শাসন করতে।
আজ মাকে হারানোর এক বছর পূর্ণ হলো। এ দুনিয়ায় বাবা-মাকে হারানোর ব্যথা ও কষ্ট সন্তানের মন থেকে কখনোই মুছে না। দিন যায়, নতুনের আবহ আসে, সময় প্রবাহিত হয়, কিন্তু বাবা-মাকে হারানোর যন্ত্রণা এবং কষ্ট সন্তানের মন থেকে কোন দিন হারাবার নয়। মা, প্রতিটি দিন তোমার ছবিটা আমার চোখের সমান ভেসে আসে, প্রতিটি রাত ঘুমাতে যাই এ্রক রাশ অশ্রæ বিসর্জন দিয়ে, প্রতিটি দিন তোমাকে স্মরণ করি চোখের পানি একাকার করে। আমার এ লেখাটি লিখতে যতটা সময় আমি টেবিলে ছিলাম ততক্ষণ শুধু তোমার হাসি-আনন্দ, তোমার ¯েœহ-শাসন কল্পনা করে আমি অঝোরে কেঁদেছি, যে ব্যাথা আর কান্না হয়তো কখনোই থামবার নয়। মা, এ দুনিয়ায় এসে যা কিছু পেয়েছি সব কিছুই তোমার দোয়ায়, যদি তোমার আত্মা আমাকে কোন দিন প্রশ্ন করে বাবা তুমি কেমন আছ? মা, শুধু এটুকুই বলবো- খুব কষ্টে আছি, প্রচন্ড যন্ত্রণায় আছি তোমাকে হারিয়ে, আর নয় বছর আগে আমাদের বাবাকে হারিয়ে।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আমাদের মা ছিলেন অত্যন্ত মহিয়সী একজন নারী, যিনি সব সময় মানুষকে দান করতে ভালবাসতেন, সামথ্য অনুযায়ী দান করতে চেষ্টা করতেন, সামর্থ অনুযায়ী মানুষের সেবা করতেন এবং এ দুনিয়ার মানুষের জন্য দোয়া করতেন। আমার মায়ের মাগফেরাতের জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন, আমরা আপনাদের কাছে দোয়া প্রত্যাশী।
লেখক-
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান
সহকারী অধ্যাপক
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং
প্রভোস্ট (ভারপ্রাপ্ত)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।