ঢাকা ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo নলছিটিতে ৪০টি টিউবওয়েল বিতরণ Logo অবৈধ ড্রেজারে ধ্বংসের মুখে বারেশ্বর বিলের তিন ফসলি জমি Logo কালীগঞ্জে ভাটা উচ্ছেদে এসে শ্রমিকদের বাধায় ফিরে গেলেন পরিবেশ অধিপ্তর Logo সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে ৫১ শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তির্ন Logo ১৬ই ডিসেম্বর: মুক্তির লড়াই, গণঅভ্যুত্থান ও নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা Logo চীনের অর্থনীতি: চাপ সামলেও শক্তিশালী অগ্রগতি Logo বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে চীন Logo ইউনিট ৭৩১: সংগঠিত রাষ্ট্রীয় অপরাধের অকাট্য প্রমাণ Logo আবুধাবিতে ওয়াং ই–শেখ আবদুল্লাহ বৈঠক Logo ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: বিজয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে—রণাঙ্গনে চূড়ান্ত আঘাতের দিন

মুরাদনগরে অবৈধ ড্রেজারের কবলে তিন ফসলি জমি! বিলীন হচ্ছে কৃষকের আশা

মাহফুজুর রহমান, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্ব ধৈইর পশ্চিম ইউনিয়নের কোরবানপুর ও খোষঘর এলাকায় অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে মাটি উত্তোলন। এতে ধ্বংস হচ্ছে উর্বর তিন ফসলি জমি, সরে যাচ্ছে মাটির স্তর, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের জমি এবং হুমকির মুখে পড়ছে স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা। অভিযোগ উঠেছে—প্রশাসনের অভিযানের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবারো একই সিন্ডিকেট আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে মাঠে নেমে পড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কোরবানপুরে ৪টি, পেন্নাই গ্রামে ২টি, রোয়াচলা গ্রামে ২টি, ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নে ৫টি, দারোরা ইউনিয়নে ৩টি, ধামঘর ইউনিয়নে ২টি, এছাড়াও মুকলিশপুর, সীমানার পাড়, জুগিরখিলসহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় নিয়মিত ড্রেজারের মহোৎসব চলছে।

অভিযোগ রয়েছে—বছরের পর বছর ধরে এই ড্রেজার সিন্ডিকেট প্রশাসনের অভিযানকে সাময়িকভাবে এড়িয়ে আবারো আগের মতো চালু হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ড্রেজার ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন,
“প্রতিদিন জমির বুক ফেটে বালু তুলে নেওয়া হচ্ছে। একসময় যে জমিতে ধান, গম, ডাল সব কিছু হতো, এখন সেখানে পানি জমে থাকে। চাষাবাদ তো দূরের কথা, জমি আর জমি নেই।”

আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন,
“আমরা বারবার ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রশাসনের কাছে বলেছি। কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হলেও পরে আগের মতোই ড্রেজার চলে। সবাই দেখেও না দেখার ভান করে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার এবং আজাদ নামে দুই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় একাধিক ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। কোরবানপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের পুকুর থেকে শুরু করে কোরবানপুর নতুন কবরস্থানের পাশ পর্যন্ত মোট ৩-৪ স্থানে ড্রেজার মেশিন নিয়মিত চলছে।

ড্রেজার ব্যবসায়ী সারোয়ার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ড্রেজার শুধু আমার একার চলছে না। পাশেই তো আজাদ ও মামুনের ড্রেজার চলছে। আগে ওটা বন্ধ করুন, পরে আমারটা করবো।

অন্য ড্রেজার ব্যবসায়ী আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ পাভেল খান পাপ্পু বলেন, “অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে প্রতিবছর আবাদি জমির প্রায় ১ থেকে ২ শতাংশ জমি কমে যাচ্ছে। গত বছর থেকে এ বছর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হেক্টর জমি আবাদ অনুপযোগী হয়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে।”

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান বলেন, “আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর কোরবানপুর এলাকায় ইতোমধ্যে ২০-২৫ বার অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযানে যাই। তবে অভিযান শেষে তারা আবার নতুন পাইপ ও ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করে। ড্রেজারগুলো বিলের মাঝখানে থাকায় অপরাধীদের পাওয়া কঠিন হয়, তাই আমরা ড্রেজার অপসারণ করি। অবৈধ ড্রেজার স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে জমির মালিকদের নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।”

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নলছিটিতে ৪০টি টিউবওয়েল বিতরণ

SBN

SBN

মুরাদনগরে অবৈধ ড্রেজারের কবলে তিন ফসলি জমি! বিলীন হচ্ছে কৃষকের আশা

আপডেট সময় ১১:১৩:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

মাহফুজুর রহমান, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্ব ধৈইর পশ্চিম ইউনিয়নের কোরবানপুর ও খোষঘর এলাকায় অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে মাটি উত্তোলন। এতে ধ্বংস হচ্ছে উর্বর তিন ফসলি জমি, সরে যাচ্ছে মাটির স্তর, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের জমি এবং হুমকির মুখে পড়ছে স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা। অভিযোগ উঠেছে—প্রশাসনের অভিযানের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবারো একই সিন্ডিকেট আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে মাঠে নেমে পড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কোরবানপুরে ৪টি, পেন্নাই গ্রামে ২টি, রোয়াচলা গ্রামে ২টি, ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নে ৫টি, দারোরা ইউনিয়নে ৩টি, ধামঘর ইউনিয়নে ২টি, এছাড়াও মুকলিশপুর, সীমানার পাড়, জুগিরখিলসহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় নিয়মিত ড্রেজারের মহোৎসব চলছে।

অভিযোগ রয়েছে—বছরের পর বছর ধরে এই ড্রেজার সিন্ডিকেট প্রশাসনের অভিযানকে সাময়িকভাবে এড়িয়ে আবারো আগের মতো চালু হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ড্রেজার ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন,
“প্রতিদিন জমির বুক ফেটে বালু তুলে নেওয়া হচ্ছে। একসময় যে জমিতে ধান, গম, ডাল সব কিছু হতো, এখন সেখানে পানি জমে থাকে। চাষাবাদ তো দূরের কথা, জমি আর জমি নেই।”

আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন,
“আমরা বারবার ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রশাসনের কাছে বলেছি। কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হলেও পরে আগের মতোই ড্রেজার চলে। সবাই দেখেও না দেখার ভান করে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার এবং আজাদ নামে দুই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় একাধিক ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। কোরবানপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের পুকুর থেকে শুরু করে কোরবানপুর নতুন কবরস্থানের পাশ পর্যন্ত মোট ৩-৪ স্থানে ড্রেজার মেশিন নিয়মিত চলছে।

ড্রেজার ব্যবসায়ী সারোয়ার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ড্রেজার শুধু আমার একার চলছে না। পাশেই তো আজাদ ও মামুনের ড্রেজার চলছে। আগে ওটা বন্ধ করুন, পরে আমারটা করবো।

অন্য ড্রেজার ব্যবসায়ী আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ পাভেল খান পাপ্পু বলেন, “অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে প্রতিবছর আবাদি জমির প্রায় ১ থেকে ২ শতাংশ জমি কমে যাচ্ছে। গত বছর থেকে এ বছর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হেক্টর জমি আবাদ অনুপযোগী হয়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে।”

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান বলেন, “আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর কোরবানপুর এলাকায় ইতোমধ্যে ২০-২৫ বার অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযানে যাই। তবে অভিযান শেষে তারা আবার নতুন পাইপ ও ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করে। ড্রেজারগুলো বিলের মাঝখানে থাকায় অপরাধীদের পাওয়া কঠিন হয়, তাই আমরা ড্রেজার অপসারণ করি। অবৈধ ড্রেজার স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে জমির মালিকদের নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।”