অতনু চৌধুরী(রাজু)বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি:
বাগেরহাটের মোংলায় বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠনের ঘটনায় হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে যুবদলের কিছু উশৃঙ্খল নেতাকর্মী। এতে ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি প্রার্থী কামাল’সহ ৪’জন রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। পরবর্তীতে দুপুর সোয়া ১’টার দিকে প্রশাসন ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সামনে থেকে ফিল্ম ষ্টাইলে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায় তারা।
শনিবার (২৫ জানুয়ারী) পৌর শহরের কবরস্থান রোডের দিগন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আহত ৪ জনকে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে এবং শহরে নৌবাহিনীর সদস্যদের টহল বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় ঘোষণা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ওয়ার্ড ও বিভাগীয় পর্যায় থেকে কমিটি গঠনের নির্দেশনা আসে স্থানীয় নেতৃবৃন্দদের কাছে। সে অনুযায়ী মোংলা উপজেলার ৬’টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার সকল ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় বাগেরহাট জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) মোংলা পোর্ট পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ের ভোটগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। ৯’টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬’টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেতা নির্বাচিত হলেও ৩’টিতে নির্বাচনের দাবি ওঠে।
শনিবার সকাল ১০’টা থেকে দুপুর ২’টা পর্যন্ত পৌরসভার ১, ২ ও ৬’নম্বর ওয়ার্ডের কমিটি গঠনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা করেন জেলা নেতৃবৃন্দ। কিন্তু ভোটগ্রহণ শুরু থেকেই তা ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করছিল পৌর যুবদলের সদস্য সচিব এম এ কাশেমসহ কিছু উশৃঙ্খল নেতাকর্মী। শনিবার দুপুরে হঠাৎ যুবদল নেতা কাশেমের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫’টি মোটরসাইকেলে করে বেশ কিছু যুবদল নেতা দিগন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও প্রশাসনের সামনে থেকে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায় পৌর যুবদলের সদস্য সচিব এম এ কাশেমসহ যুবদল নেতা মঞ্জু, কামরুল, মাছুম, শামিম, বাবু, ছগির, ইউনুস, সোহেল, হোসাইন মোল্লা, হাসান মেহেদী, সেলিম রেজা, ওয়াসিম ও মিরাজসহ প্রায় ২০ থেক ২৫’জন যুবদল নেতাকর্মী।
এর আগে একই ব্যক্তিরা ২’নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামী আদর্শ একাডেমী স্কুল কেন্দ্রে হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটায়। এতে বাধা দিলে কয়েকজনকে মেরে রক্তাক্ত যখম করা হয়। তাদের হামলা ও মারধরে বিএনপির ২’নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি প্রার্থী হাজী কামাল, তার ছেলে কলেজ ছাত্র আঃ আহাদ নূর, মোঃ ফিরোজ আহাম্মেদ ও বাহাদুর গুরুতর আহত হন। এসময় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ছুটে আসলে ওই এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ, নৌবাহিনীসহ অন্যান্য প্রশাসন ও জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। মোতায়ন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যদের।
এ বিষয়ে মোংলা পৌর যুবদলের সদস্য সচিব এম এ কাশেমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে অভিযুক্তরা অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন যে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করা হয়নি, বরং আওয়ামী দোসরদের ভোটগ্রহণের কারণে ৬’নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার বাক্স ত্যাগ করে চলে গেছে।
নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম গোরা ও জেলা বিএনপির সদস্য শেখ নাছির আহাম্মেদ মালেক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্রীয় ঘোষণার অনুযায়ী মোংলা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু যুবদলের কিছু উশৃঙ্খল নেতাকর্মী সেই নির্বাচন ভাংচাল করার চেষ্টা করেছে এবং ৬’নম্বর ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করেছে। ফলে ওই ওয়ার্ডের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে এবং পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে ভোটগ্রহণ করা হবে। এছাড়া যারা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে দলীয় সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান জেলা নেতৃবৃন্দ।
মোংলা পোর্ট পৌরসভায় ৯’টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬’টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেতা নির্বাচিত হলেও ৩’টিতে ভোটগ্রহণ চলছিল, যার মধ্যে ৬’নম্বর ওয়ার্ডের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।