
যুক্তরাষ্ট্রের সময় ২১ ফেব্রুয়ারি, হোয়াইট হাউস ওয়েবসাইট ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বিনিয়োগনীতি প্রকাশ করে এবং মার্কিন বিনিয়োগ নীতিতে পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়। এই নীতির মূল বিষয় হল: চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিমুখী বিনিয়োগের ক্ষেত্র সীমিত করা।
মার্কিন নয়া ঘোষণা অনুসারে: চীন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের মূল কোম্পানি ও সম্পদ অধিগ্রহণ থেকে বিরত রাখা হবে; যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি, মূল অবকাঠামো, কৃষি ও শক্তিসহ কৌশলিক বিভাগে চীনের বিনিয়োগ সীমিত করা হবে; চীনের সেমি-কন্টাকটার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, জৈবপ্রযুক্তি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্রে মার্কিন বিনিয়োগের ওপর নতুন বা সম্প্রসারিত বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
বস্তুত, এই নীতি হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তা ধারণার সাধারণীকরণ। এই বৈষম্যমূলক নীতি সাধারণভাবে বাজার-অর্থনীতির বিরুদ্ধে যায় এবং দুই দেশের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সাধারণ বাণিজ্য-সহযোগিতায় গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং নিজের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে চীন।
বিগত বছরগুলোতে তথাকথিত ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র অজুহাতে, চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব বিশেষ করে উচ্চ-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সক্ষমতা হ্রাস করতে, যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ডক্টর ওয়াং সিয়াওসুং বলেন, ট্রাম্প নিজের প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর অর্থনৈতিক দমন-পীড়নের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, আবার ক্ষমতায় আসার পর তিনি দ্রুতগতিতে এটি বাস্তবায়ন করছেন। চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা থেকে শুরু করে, দ্বিমুখী বিনিয়োগ সীমিত করা পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্র কেবল চীনের ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল অবলম্বন করছে।
অনেক দিন ধরে, সবচেয়ে মুক্ত ও উন্মুক্ত বাজার-অর্থনীতি ব্যবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গর্ব করে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, দেশটির কথার সাথে কাজের মিল নেই। বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ শুধু চীনের বিরুদ্ধে নয়, বরং এর মিত্রদেরও বিরুদ্ধেও। কিছুদিন আগে, যুক্তরাষ্ট্র নিপ্পন স্টিল কর্পোরেশনের আমেরিকান স্টিল কর্পোরেশন অধিগ্রহণে বাধা দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করল। অবশেষে এই অধিগ্রহণ-প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনীতিবিদ মনে করে, মার্কিন উচ্চ-প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে চীনে বিনিয়োগে বাধা দিলে, চীনের উন্নয়ন ও উচ্চ-প্রযুক্তি শিল্পের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। কিন্তু বাইরে চরম চাপ সত্ত্বেও, চীনের প্রযুক্তি উদ্ভাবনা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিপ ডিজাইন ও উৎপাদন ক্ষমতায় ক্রমাগত সাফল্য থেকে শুরু করে, ডিপসিকের উত্থান পর্যন্ত, চীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বিকাশে শক্তিশালী সক্ষমতা প্রদর্শন করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ নীতি’ জারির দুই দিন আগে, চীন ‘বিদেশী বিনিয়োগ স্থিতিশীলতার জন্য পরিকল্পনা, ২০২৫’ প্রকাশ করে। স্বাধীন উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বাড়ানো, উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্মের কার্যকারিতা ও পরিষেবা নিশ্চিতকরণসহ ৪ দিকে ২০টি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয় এই পরিকল্পনায়, যা বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলো স্বাগত জানিয়েছে। টেসলা গ্লোবাল-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট থাওলিন বলেন, চীনের বাজারের সাথে তার কোম্পানি আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত হতে বদ্ধপরিকর। চীনে আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সের সর্বশেষ গবেষণা থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক কোম্পানি চীনকে বিশ্বের শীর্ষ ৩টি বিনিয়োগ-গন্তব্যের একটি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
সূত্র: অনুপমা-আলিম-ছাই,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।