ঢাকা ০৪:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo রক্তের কালিতে লেখা ১৪ ডিসেম্বর—শোক ও গৌরবের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস Logo হাদির উপর গুলির ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন থেকে ফেরার পথে ২ জনকে কুপিয়ে জখম Logo ওসমান হাদির সুস্থতা কামনায় মুরাদনগরে দোয়া মাহফিল Logo রাণীনগরে ৬০০ শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ Logo কালীগঞ্জে অপহরণের ১৬ ঘন্টা পর এক যুবককে উদ্ধার, তিন অপহরণকারী গ্রেফতার Logo শরীফ ওসমান হাদীর ওপর হামলার পর সীমান্তে বিজিবির কড়া নিরাপত্তা Logo দীগলটারীতে ভাঙা সেতুর কারণে দুই পাড়ের পাঁচ শতাধিক মানুষের চরম দুর্ভোগ Logo নীলফামারীতে ট্রেনের ধাক্কায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু  Logo লাকসাম গোবিন্দপুরে বিএনপির উঠান বৈঠক ও মহিলা সমাবেশ Logo শাহরাস্তি পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবি

রক্তের কালিতে লেখা ১৪ ডিসেম্বর—শোক ও গৌরবের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

আজ ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের সেই বিভীষিকাময় দিনের স্মৃতি বয়ে আনে, যেদিন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ হারিয়েছিল তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে এক চূড়ান্ত ও নৃশংস পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।

তাদের প্রত্যক্ষ মদদে এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস বাহিনী বেছে বেছে বাংলার মেধাবী সন্তান, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, শিল্পী ও গবেষকদের অপহরণ ও নির্মম হত্যায় মেতে ওঠে। উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের আগেই বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে দেওয়া, যেন নবজাত রাষ্ট্রটি নেতৃত্ব, জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিহীন হয়ে পড়ে।

এই সুপরিকল্পিত গণহত্যার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ভাষাবিদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ইতিহাসবিদ ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ও শহীদুল্লা কায়সার, চিকিৎসক ডা. ফজলে রাব্বি, ডা. আলিম চৌধুরীসহ অসংখ্য গুণীজন। মূলত আলবদর বাহিনী এই হত্যাযজ্ঞের প্রধান ঘাতক হিসেবে কাজ করে; তারা আগে থেকেই বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি করে রাখে এবং সেই তালিকা অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে অপহরণ শুরু করে, যার চরম রূপ নেয় ১৪ ডিসেম্বর রাতে। চোখ বেঁধে তুলে নেওয়া এসব মানুষকে অমানবিক নির্যাতনের পর হত্যা করে ফেলে রাখা হয় রায়েরবাজারের ইটখোলা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও ঢাকার বিভিন্ন নির্জন স্থানে।

১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে যখন শহীদদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়, তখন পুরো জাতি স্তব্ধ হয়ে যায় বিকৃত দেহ, বাঁধা হাত, চোখ উপড়ানো সেই লাশগুলো যেন সদ্যোজাত বাংলাদেশের স্বপ্নের ওপর নেমে আসা এক গভীর শোকের ছায়া।

ইতিহাসবিদদের মতে, এটি ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ের সবচেয়ে জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ, যার মাধ্যমে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ও তাদের দোসররা আন্তর্জাতিক অপরাধের চূড়ান্ত প্রমাণ রেখে যায়। ১৪ ডিসেম্বর তাই কেবল শোকের দিন নয়; এটি বাঙালি জাতির চেতনার এক গভীর শপথের দিন যে শপথে রয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়। তাঁদের রক্তে রঞ্জিত এই দিন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে জ্ঞানভিত্তিক, মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে।

গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় জাতি আজ স্মরণ করছে সেই সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীকে, যাঁদের আত্মত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের বিজয় ও ভবিষ্যৎ জাতি তাঁদের ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারবে না।

লেখক : মোহাম্মদ আলী সুমন, সাংবাদিক ও সংগঠক।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রক্তের কালিতে লেখা ১৪ ডিসেম্বর—শোক ও গৌরবের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

SBN

SBN

রক্তের কালিতে লেখা ১৪ ডিসেম্বর—শোক ও গৌরবের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

আপডেট সময় ০৮:১৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

আজ ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের সেই বিভীষিকাময় দিনের স্মৃতি বয়ে আনে, যেদিন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ হারিয়েছিল তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে এক চূড়ান্ত ও নৃশংস পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।

তাদের প্রত্যক্ষ মদদে এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস বাহিনী বেছে বেছে বাংলার মেধাবী সন্তান, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, শিল্পী ও গবেষকদের অপহরণ ও নির্মম হত্যায় মেতে ওঠে। উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের আগেই বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে দেওয়া, যেন নবজাত রাষ্ট্রটি নেতৃত্ব, জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিহীন হয়ে পড়ে।

এই সুপরিকল্পিত গণহত্যার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ভাষাবিদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ইতিহাসবিদ ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ও শহীদুল্লা কায়সার, চিকিৎসক ডা. ফজলে রাব্বি, ডা. আলিম চৌধুরীসহ অসংখ্য গুণীজন। মূলত আলবদর বাহিনী এই হত্যাযজ্ঞের প্রধান ঘাতক হিসেবে কাজ করে; তারা আগে থেকেই বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি করে রাখে এবং সেই তালিকা অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে অপহরণ শুরু করে, যার চরম রূপ নেয় ১৪ ডিসেম্বর রাতে। চোখ বেঁধে তুলে নেওয়া এসব মানুষকে অমানবিক নির্যাতনের পর হত্যা করে ফেলে রাখা হয় রায়েরবাজারের ইটখোলা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও ঢাকার বিভিন্ন নির্জন স্থানে।

১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে যখন শহীদদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়, তখন পুরো জাতি স্তব্ধ হয়ে যায় বিকৃত দেহ, বাঁধা হাত, চোখ উপড়ানো সেই লাশগুলো যেন সদ্যোজাত বাংলাদেশের স্বপ্নের ওপর নেমে আসা এক গভীর শোকের ছায়া।

ইতিহাসবিদদের মতে, এটি ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ের সবচেয়ে জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ, যার মাধ্যমে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ও তাদের দোসররা আন্তর্জাতিক অপরাধের চূড়ান্ত প্রমাণ রেখে যায়। ১৪ ডিসেম্বর তাই কেবল শোকের দিন নয়; এটি বাঙালি জাতির চেতনার এক গভীর শপথের দিন যে শপথে রয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়। তাঁদের রক্তে রঞ্জিত এই দিন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে জ্ঞানভিত্তিক, মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে।

গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় জাতি আজ স্মরণ করছে সেই সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীকে, যাঁদের আত্মত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের বিজয় ও ভবিষ্যৎ জাতি তাঁদের ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারবে না।

লেখক : মোহাম্মদ আলী সুমন, সাংবাদিক ও সংগঠক।