ঢাকা ১২:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শিক্ষায় সংস্কার আনতে না পারলে শিক্ষকগণ প্রকৃত মর্যাদা পাবেন না Logo সাংবাদিকদের উপর হামলা,পঞ্চগড় জেলা বিএমইউজের নিন্দা Logo তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে সহযোগিতার ডাক Logo উহানে সেমিনার: ‘এক চীন নীতি’ আন্তর্জাতিক ন্যায়ের প্রতিফলন Logo চীনের অর্থনৈতিক স্থিতি বিশ্বে আশাবাদের প্রতীক Logo ছয় মাসের মিশন শেষে ঘরে ফিরবেন চীনের তিন নভোচারী Logo ‎বরুড়ায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরন Logo মুরাদনগরে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু স্কুলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন Logo রূপসায় ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo ব্রাহ্মণপাড়ায় ঋণের বোঝা সইতে না পেরে এক যুবকের আত্মহত্যা

রাজনীতি হউক জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্রের বিনির্মাণে

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে রাজনীতি ছিল জনগণের আশা ও আস্থার কেন্দ্রবিন্দু। রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতির কল্যাণ, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের বিকাশ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় রাজনীতি এখন অনেকাংশেই ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কবলে পড়েছে। জনগণের জন্য রাজনীতি করার যে অঙ্গীকার ছিল, তা অনেকাংশে হারিয়ে যাচ্ছে দলীয় ক্ষমতার প্রতিযোগিতায়। ফলে আজ রাজনীতির মাঠে দেখা যায় আদর্শ নয়, দেখা যায় সুবিধার হিসাব। এই অপরাজনীতি রাষ্ট্রের শিকড়ে আঘাত করছে নীরবে।

বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা তাই প্রশ্ন তুলছে— রাজনীতি আসলে কার জন্য? সাধারণ জনগণ আজ রাজনীতির ভোক্তা, অংশগ্রহণকারী নয়। নির্বাচনের মৌসুমে মানুষকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, এরপর বছরজুড়ে তারা হয়ে ওঠে উপেক্ষিত। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, প্রতিহিংসা; উন্নয়ন নয়, বরং প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা। স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় রাজনীতি পর্যন্ত একই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে। দলে দলে ভাঙন, বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ, আর সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব–এসবই এখন রাজনীতির নতুন চেহারা।

একসময় রাজনীতি ছিল ত্যাগের, আদর্শের ও নেতৃত্বের মিশ্রণ। এখন তা পরিণত হয়েছে লোভ, ক্ষমতা ও ব্যবসার খেলায়। দলীয় কোন্দল, অনুপ্রবেশ, টেন্ডারবাজি, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ—এসবের মাধ্যমে একটি গোষ্ঠী রাজনীতিকে ব্যবহার করছে ব্যক্তিগত লাভের হাতিয়ার হিসেবে। অথচ প্রকৃত রাজনীতি হওয়া উচিত জনগণের কল্যাণে, রাষ্ট্রের উন্নয়নে, ও প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে জনগণের দুঃখ-দুর্দশাকে প্রাধান্য দিত, তবে আজ সমাজে ন্যায়বিচার, সুশাসন ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা পেত।

আজ প্রয়োজন একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি—যেখানে মতভেদ থাকবে, কিন্তু বিভাজন নয়; যেখানে প্রতিপক্ষকে দমন নয়, বরং মতের সম্মান থাকবে। তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে যুক্ত করতে হবে নীতি ও সততার ভিত্তিতে, যাতে তারা বিশ্বাস করতে পারে— রাজনীতি এখনো পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারে। গণতন্ত্র তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন রাজনীতি আবার জনগণের হাতে ফিরবে, ক্ষমতার কূটচক্র থেকে মুক্ত হয়ে মানুষের জীবনে ছোঁয়া আনবে উন্নয়ন ও ন্যায়বোধের।

রাজনীতি যদি জনগণের জন্য হয়, তবে রাষ্ট্র হবে জনগণেরও। তাই এখনই সময়—অপরাজনীতির অন্ধকার ভেদ করে নতুন আলোর পথে হাঁটার। রাজনীতি হউক জনগণের কল্যাণে, রাষ্ট্রের পুনর্গঠনে; কারণ একটি আদর্শনিষ্ঠ রাজনীতি-ই পারে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে গড়তে সত্যিকারের গণমানুষের রাষ্ট্রে।

লেখক: মোহাম্মদ আলী সুমন,
সাংবাদিক ও সংগঠক।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষায় সংস্কার আনতে না পারলে শিক্ষকগণ প্রকৃত মর্যাদা পাবেন না

SBN

SBN

রাজনীতি হউক জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্রের বিনির্মাণে

আপডেট সময় ০৭:৩২:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে রাজনীতি ছিল জনগণের আশা ও আস্থার কেন্দ্রবিন্দু। রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতির কল্যাণ, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের বিকাশ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় রাজনীতি এখন অনেকাংশেই ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কবলে পড়েছে। জনগণের জন্য রাজনীতি করার যে অঙ্গীকার ছিল, তা অনেকাংশে হারিয়ে যাচ্ছে দলীয় ক্ষমতার প্রতিযোগিতায়। ফলে আজ রাজনীতির মাঠে দেখা যায় আদর্শ নয়, দেখা যায় সুবিধার হিসাব। এই অপরাজনীতি রাষ্ট্রের শিকড়ে আঘাত করছে নীরবে।

বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা তাই প্রশ্ন তুলছে— রাজনীতি আসলে কার জন্য? সাধারণ জনগণ আজ রাজনীতির ভোক্তা, অংশগ্রহণকারী নয়। নির্বাচনের মৌসুমে মানুষকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, এরপর বছরজুড়ে তারা হয়ে ওঠে উপেক্ষিত। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, প্রতিহিংসা; উন্নয়ন নয়, বরং প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা। স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় রাজনীতি পর্যন্ত একই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে। দলে দলে ভাঙন, বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ, আর সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব–এসবই এখন রাজনীতির নতুন চেহারা।

একসময় রাজনীতি ছিল ত্যাগের, আদর্শের ও নেতৃত্বের মিশ্রণ। এখন তা পরিণত হয়েছে লোভ, ক্ষমতা ও ব্যবসার খেলায়। দলীয় কোন্দল, অনুপ্রবেশ, টেন্ডারবাজি, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ—এসবের মাধ্যমে একটি গোষ্ঠী রাজনীতিকে ব্যবহার করছে ব্যক্তিগত লাভের হাতিয়ার হিসেবে। অথচ প্রকৃত রাজনীতি হওয়া উচিত জনগণের কল্যাণে, রাষ্ট্রের উন্নয়নে, ও প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে জনগণের দুঃখ-দুর্দশাকে প্রাধান্য দিত, তবে আজ সমাজে ন্যায়বিচার, সুশাসন ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা পেত।

আজ প্রয়োজন একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি—যেখানে মতভেদ থাকবে, কিন্তু বিভাজন নয়; যেখানে প্রতিপক্ষকে দমন নয়, বরং মতের সম্মান থাকবে। তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে যুক্ত করতে হবে নীতি ও সততার ভিত্তিতে, যাতে তারা বিশ্বাস করতে পারে— রাজনীতি এখনো পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারে। গণতন্ত্র তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন রাজনীতি আবার জনগণের হাতে ফিরবে, ক্ষমতার কূটচক্র থেকে মুক্ত হয়ে মানুষের জীবনে ছোঁয়া আনবে উন্নয়ন ও ন্যায়বোধের।

রাজনীতি যদি জনগণের জন্য হয়, তবে রাষ্ট্র হবে জনগণেরও। তাই এখনই সময়—অপরাজনীতির অন্ধকার ভেদ করে নতুন আলোর পথে হাঁটার। রাজনীতি হউক জনগণের কল্যাণে, রাষ্ট্রের পুনর্গঠনে; কারণ একটি আদর্শনিষ্ঠ রাজনীতি-ই পারে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে গড়তে সত্যিকারের গণমানুষের রাষ্ট্রে।

লেখক: মোহাম্মদ আলী সুমন,
সাংবাদিক ও সংগঠক।