মোঃ রায়হান
ক্রাইম রিপোর্টার নওগাঁ জেলা
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর দুই স্থানে এবং আত্রাই উপজেলার আত্রাই নদীর একটি স্থানে বেড়িবাঁধ ধসে গেছে। এতে দুই উপজেলার ৮-১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার।
গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত এই বাঁধগুলো ভাঙে। খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা বলছেন, দ্রুতই পানিবন্দী পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তাসহ সার্বিক সহায়তা করা হবে।
রাণীনগর উপজেলার নান্দাইবাড়ী গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, গত দু-তিন দিন থেকে হঠাৎ করেই ছোট যমুনা নদীর পানি বাড়তে থাকে। গতকাল গভীর রাতে নান্দাইবাড়ী হাফেজিয়া মাদ্রাসা এলাকায় নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে পানির তোরে মাদ্রাসার একটি কক্ষের দেয়ালও ভেঙে গেছে।
এ ছাড়া আধা কিলোমিটার দূরেই দক্ষিণ নান্দাই বাড়ির বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। ওই এলাকার কিষ্টপুর, মালি, নান্দাইবাড়ীসহ কয়েকটি গ্রামের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে চার থেকে পাঁচশত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, তাঁর এলাকার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া ফসলি খেতও তলিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক দৈনিক মুক্তির লড়াই পত্রিকাকে বলেন, ওই এলাকার প্রায় ২০ হেক্টর জমির ধান এখন পানির নিচে।
মৎস্য কর্মকর্তা শিল্পী রায় জানান, ২৩টি পুকুর ডুবে মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদি হাসান জানান, বাঁধ ভেঙে উপজেলার দেড়-দুই শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
নান্দাইবাড়ী হাফেজিয়া মাদ্রাসার একটি কক্ষের দেয়াল পানি তোরে ভেঙে গেছে
নান্দাইবাড়ী হাফেজিয়া মাদ্রাসার একটি কক্ষের দেয়াল পানি তোরে ভেঙে গেছে।
এদিকে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আত্রাই নদীর নন্দনালী বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে ওই এলাকার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া আত্রাই-বান্দাইখাড়া পাকা সড়কের নন্দনালী সরদারপাড়া তালতলা এলাকায় পাকা সড়ক পানির তোরে ভেঙে গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন।
আত্রাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়া উদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে এক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, বাঁধ ভেঙে প্রায় ১০ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, ‘সকাল থেকেই আমরা দুর্গত এলাকায় রয়েছি এবং ভেঙে যাওয়া বাঁধ আটকানোর চেষ্টা করছি। এ ছাড়া দুর্গতদের জন্য খাদ্যসহায়তা থেকে সার্বিক সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। আশা করছি, খুব দ্রুতই আমরা সহযোগিতা করতে পারব।’
এ বিষয়ে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল জানান, গত কয়েক দিন বৃষ্টির কারণে আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। আজ দুপুর ৩টার দিকে ছোট যমুনা নদীর পানি লিটন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে আত্রাই নদীর পানি আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ দশমিক ৭৭ সেন্টিমিটার, শিমুলতলী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ দশমিক ৬৭ সেন্টিমিটার এবং মহাদেবপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ দশমিক ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পানি আরও বাড়বে। এ অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।