ঢাকা ০৫:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo আব্দুল মালেক মজুমদারকে পাওয়া যাচ্ছে না Logo শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে আইএসইউতে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা Logo মানবাধিকার রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয়ে “আমাদের আইন” এর শেরপুর জেলা কমিটি গঠিত Logo শেরপুরে ধান ক্ষেত থেকে অটোরিক্সা চালকের মরদেহ উদ্ধার Logo বরুড়ায় তথ্য আপা’র উঠান বৈঠক Logo সুনামগঞ্জে বিশ্ব অটিজম ও সচেতনতা দিবস পালিত Logo গুলশানে র‍্যাবের ক্যাশিয়ার শাহ আলমের ইস্পায় গড়ে তুলেছে অপরাধের আখড়া Logo বুড়িচংয়ে বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলায় চলছে জুয়ার আসর Logo লালমনিরহাটে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন Logo স্লিপের অর্থ ছাড় করানোর নামে ঘুষের টাকা আদায়ের অভিযোগ

রেশমা বেগমের একগুচ্ছ কবিতা

১. কিছু কবিতা

কিছু স্বপ্ন কবিতার রত্নাকরে ভাসে,ডুবে
নিত্য প্রহর নিজস্বতার চৌকশ স্মরণে–
আকাশের মুক্ত নীল ছুঁয়ে যায় পংক্তিপাতা
বাতাসের অম্বরী কবিতা চাষে মননে।

কিছু কবিতা অদৃশ্যে অস্পষ্ট থেকে যায়
কিছু কালের সীমানায় বাহিত হয়,
সময়ের প্রতিচ্ছবি,প্রতিবিম্ব কবিতার প্রণয়ে
জীবন্ত সারথি হয়ে পাঠকের রয়।

কাব্যের দেশে আবেগ ফেরারী হয়ে জৌলুষে;
কবিতার স্পর্শে স্বাপ্নিক কল্পকথা হাসে —
কোন্ ভাবের বহিঃপ্রকাশ কবিতায় কী মর্মে
পাঠক হৃদয় অনুভবের চিন্তনে ভাসে।

কিছু কবিতা যুগের,কালের ধারক সাক্ষী
অতীত জগৎ জীবনের চিত্রপট বিরাজমান,
সত্য সঠিক,অনুধাবনে কলমী শক্তি হাতিয়ার
নিজ ভুবনে আপন সঙ্গী মহামূল্যবান।

জীবন ব্যপ্তিতে কবিতার ধ্যানে পড়েছি আকালে
বিন্দু-বিন্দু শব্দ,বাক্যে গড়ছি কাব্যমালা,
কোন্ অনাহুতের অনৈতিকতায় কবিতা হচ্ছে
দিনে-দিনে কবিতা ‘চোরের’ আড়তশালা।

২. পৌষের মনোহরী রূপ

পৌষে শীতের আহ্লাদীপনা বেশ মনোহরী
প্রকৃতির আবেগী রূপসজ্জায় চোরাবালি,
উস্কো খুশখো পাতার মর্মর শুনে বনমালী
টুনটুনি লাফালাফি করে শুষ্কডাল খালি।

সর্ষে ফুলের হলুদ রঙে ডুবন্ত-মন চঞ্চলা
আঁখির পলক পরেনা তিয়াসী আত্মভোলা,
আকাশের বক্ষ শূন্য মেঘকন্যা বিহীন
সূর্য্যের আলো নাচে তা ধিন্ তা ধিন্।

গোধূলি-লগ্নে কুয়াশা সৌখিন আবরণ পাতে
রজনীতে জ্যোৎস্নার কাব্যিক মায়ার সাথে,
পৌষের মনোহরী রূপ তেপান্তরে হাঁটায়
চিত্তকে মুগ্ধতার তরঙ্গে ডুবায় ভাসায়।

শীতের সৌম্য কমনীয় স্বভাব কখনো
আবার সহনীয় অভাব রীতিতে সখনো,
ঘুমের দেশে আরামের মহব্বতে সকলে
স্বপ্নরা ঘোরাঘুরি করে রাতচোরা দখলে।

নতুন ধানের পিঠাপুলি রসের পায়েস
নতুনত্বে জিহ্বার মিটে ভোজন খায়েশ,
প্রত্যুষে পাখ্ পাখালির মধুকরী সুরসাধন
জলাধারে হাঁসের ঝাঁকের মোহনীয় বাঁধন।

৩. নতুন বছরের শুভাগমনে

হে, নতুন সূর্য্য হাসি দিয়ে আলো ছড়াও
হে,আকাশ-বাতাস বিশালতা দিয়ে
হৃদয়কে প্রসারিত করো।
দুয়ে মুছে যাক্ স্মৃতির দুঃখ-বেদনা,গ্লানি
শূন্যে উড়ে যাক্ যত জঞ্জাল-আবর্জনা,
পৃথিবী জুড়ে সুখময় পরিস্থিতি বিরাজ করুক
অযাচিত জটিলতা,অমানবিক মূল্যবোধের
ধ্বংস আবর্তিত হোক।
প্রভাতের অপার্থিব নৈস্বর্গিকধারা আত্মাকে
পুণ্যতার প্লাবনে পরিশীলিত করুক,
মনের আঙ্গিনা সত্য সুন্দরের তপস্যায়
নিমগ্ন থাকুক অহর্নিশ।
শাখে বসে পক্ষীরা গুঞ্জরণের মাদকতায়
উতলা-চঞ্চল করুক মননের চতুরঙ্গ,
নতুন সময়ের অপেক্ষায় পাহাড়-নদী,সাগর
তোমরাও কী অধীরতায় প্রহর গুনছো
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুলে?
সময় আসে যায় সময়ের নিয়মের হিসাবে —
জীবন কথা কয় অর্পিত প্রেক্ষাপটের চিত্রে,
সুন্দর সময়,সুখের মুহূর্ত নাতিদীর্ঘ–
ইচ্ছা শক্তির ঐকান্তিকতায় দুঃসময়কে
সমান্তরাল সহনীয় মাত্রায় আনায়ন বাঞ্চনীয় ।
নতুন বছরের সমীপে রেখে গেলাম
অনুভবে অনুভূতির কথামালা,
সবার তরে আনন্দঘন সময়ের
শুভেচ্ছান্তে।

৪. শূন্য রঙ্গমঞ্চে

শূন্যে ঘুরে,শূন্যে উড়ে কত কথা
কত বাক্যের নীরব রহস্য অভিসার —
বদলে যায় গাছ পাতারা নিত্য নতুনে
বাক্য বিনিময় দূর অলকায় নির্বিকার।

চেনা জগৎ অচেনা পথে হাঁটে ভিন্নতায়
মানুষ কেবল দুঃখ-ব্যথা পুষে রাখে,
ডাকে আয় স্মৃতির স্পর্শীয় ঘটমান দুর্বিষহে
নিশাচর বিভাবরী স্বপনে পরাগ মাখে।

ভালো থাকা,ভালো রাখা নিজস্ব ঘরানায়
সাধ্যমত প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয় যাপন-যন্ত্রে,
কত চাওয়া-পাওয়ার হিসেব অভ্যস্ত ঝাঁপিতে
অচলদেহ সচলতায় আনন্দে প্রাপ্তির মন্ত্রে ।

কেহ নহে আপন,নহে পর জীবন-জগতে
স্বার্থ শেষে সবাই দিনান্তে এক-কাতারে,
খেলা ঘরের কর্মযজ্ঞ দুর্দান্ত বিদুষী
একতারায় লহরী তোলো আপন পাথারে।

দিন যবে শেষ হলো যাপিত জনমে
অস্তরাগের ধোঁয়াশায় খেয়া ঘুরে অসীমে–
অবলা-মন কত কিছু নিয়ে ব্যস্ত ছিলো জীবনভর
মিথ্যা আশ্বাসে,বিশ্বাসে নাট্যশালার
শূন্য রঙ্গমঞ্চে।
চলো এবার হাঁটি অজানা অচেনা লক্ষে!!

৫.।স্বাধীনতার মাহাত্ম্য

ওই কমলা রঙের কোমল সূর্যোদয় বলে ওঠে
স্বাধীনতা, তুমি এত সুন্দর,উদার,আবেগী –!
কালান্তরে তৃপ্তি সহকারে দেখি তোমার ঐশ্বর্য্য,
অসীম গৌরবের মাহাত্ম্য রূপ।

পাথার,নদীর তরঙ্গ ছলাৎ ছলাৎ করে বলে ওঠে
স্বাধীনতা,তোমার দর্শন,দানে ডুবে আমরা
হয়েছি আজন্ম কৃতার্থ,অনন্তের বিদুষী রশ্মি তুমি,
সালাম তোমায় লাখো শহীদান–
বাংলার চাঁদ হাসে আত্মত্যাগীর মহাউৎসর্গ দেখে।

শিমুল-পলাশ,রক্ত জবা স্ব-কন্ঠে বলে ওঠে
স্বাধীনতা,আমরা হয়েছি রূপে মহিয়ান
আত্মদানে শহীদের রক্ত কণার রক্তরাগে,
জনম জনম উদ্ভাসিত রবে তাঁদের সম্মান।

পাখীর কলরব,সবুজের সমাহার ধ্বনি তুলে
স্বাধীনতা,তোমার মাহাত্ম্যে সাজাই নিজ ভুবনঘর,
উড়ন্ত শঙ্খচিলের ঠোঁটে চিরকুট বলে উঠে
এতে রয়েছে স্বাধীনতা তোমার নাম, নিরহংকার সম্মান।

সোনালী ফসলি মাঠ,সোঁদামাটির ঘ্রাণ নাকে
ছড়ায় মধুগন্ধী সুবাতাস,বলে ওঠে ধন্য মাতৃভূমি—
স্বাধীনতা,তোমায় পেয়ে হয়েছি মোরা সুখের গরবিনী।
ঘাসফড়িং, প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ে
স্বাধীন ভুমে বাংলার মুক্ত হাওয়া গায়ে মেখে।

দেশের মানুষ সমস্বরে বলে ওঠো
আমরা ঋণী! স্বাধীনতা তোমার পদতলে
দাও ঠাই,, টুংগীপাড়ার ছেলে মুজিবের
দিকনির্দেশনা যেন খুঁজে পাই—-

৬. পাহাড়, নদীর চুপকথা

শীত সকালে পাহাড়,নদীর
চুপকথা হয় নিরহংকারে,
কুয়াশা আবৃত পাহাড় মন্ত্রমোহে
নদীতে ভাসে সরবে—

দু’জন দু’জনাতে মিশে একাকার
শীতল জলের স্বপ্নাচার,
নদী নিজস্ব-বেগে ছুটে চলে–
তটে লোকারণ্যে বনবিহার।

জীবনের দুঃখ-কষ্ট বন্দিত্ব দশায়
পাহাড়,নদীপাড়ে দীর্ঘশ্বাস,
স্মৃতির কথাশৈলীর দুর্দান্ত প্রকাশ
উড়ন্ত পক্ষীর অবিশ্বাস।

সংগোপনে সন্ধি করে শশীকলায়
দু’জনার বুকভরে মমতামোহে,
গিরিখাত,ঝর্ণা নন্দননৃত্যে মাতে
ব্যাথাহতের পরাণে দাহবহে।

জীবন-জগৎ অভিন্ন অন্তর আত্মা
সূক্ষান্তরে রয়েছে পরিপূর্ণতা,
বিশ্বের বিস্ময় পাহাড়-নদীর আত্মকথা,
দর্শনে নিপতিত সংকীর্ণতা।

৭. এক পলকে

চাঁদ হাতছানি দিচ্ছে মায়ার চোখে
সরে যেওনা এখনই তুমি–
কৌটা ভর্তি কথার গুটি রেখেছি
নিরালায় শুনবে না! বসে আমি।

বিরস আঁখি মেলে এক পলকে
ভাবনার দেশান্তরে হারিয়েছো কোথায়?
আঁধার মাখা নিঃশ্বাসের স্পর্শের ছোঁয়া
নিস্তব্ধ রজনী মগ্নতায় ভোলায়।

জোনাকিরা খেলার মাতামাতিতে ব্যস্ত
আলোর ফুসকা মন নাচায়,
কত কী দৃশ্য স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধকরী
হৃদয় কাঁপানো শিহরণ জাগায়।

পলক পড়ে না,তোমাকে দেখা
শেষ হলো না অদ্যাবধিতে–
ভালোবাসায় দুটো জীবন রাজ্য গড়ুক
প্রেমজঙ্ঘা নিশ্চয়ই খুঁজছে শতাব্দিতে।

অপূর্ব শোভনীয় নিশিরাতে আবেগী মন
নির্মল ভালোবাসায় সিক্ত অনুরণনে–
আর নয় কালক্ষেপন সময়ের চুম্বনে
নিরুদ্দেশ যেন না হয় অমানিশাতে।

৮. আশার বেলাভূমিতে

নিরাশ সময়ের চূড়ায় বসতি
আলোর শিখা জ্বলছে বহুদূরে–
চোখের কোণ ভিজে জলে
আশার বেলা সাজে করুণ-সুরে।

নিঝুম-রাতে আঁধারের সঙ্গী হয়ে
তারার কথা শুনি উচ্ছ্বাসে,
প্রভাতে কচি আলোর মাখামাখিতে
জীবনীশক্তি ফিরে নব উদ্যমে।

আশার বেলাভূমিতে চন্দ্রের মহত্ত্বে
বুক বাঁধি মহতি কর্মে–,
দিন আসলেই কী ফিরবে
নব-সূর্যোদয়ে সময়ের মর্মে ?

বাউরী বাতাসে বৃক্ষের পল্লবের
মর্মর ধ্বনিতে প্রকম্পিত হৃদয় —
নীলআকাশ ছোঁয়ায় শান্তির পরশ
কোন্ ঠিকানায় স্বস্তির সদয়!

প্রত্যহ আপেক্ষার ধারাপাত গুনি
আশার খেয়া ভাসাই মাহেন্দ্র-ক্ষণে,
নিশিরাত কাঁদে নিস্তব্ধ সরোবরে
এই আমি কে আমি কোনবনে—

৯. বাজার ব্যবস্থায় অস্থিরতা

নিম্নবিত্ত,মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠছে
প্রত্যহ প্রতিপ্রহরে,ক্ষণে-ক্ষণে,
বাজার ব্যবস্থার একমুখী অসামঞ্জস্যে–
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিরামহীন ভাবে
উপচে পড়ছে অস্থিরতার নাভিমূলে।

সর্বময় এক অজানা বিষাদ বৈরী বাতাস —
নিত্যনৈমিত্তিক মৌলিক চাহিদা পূরণে
হাহাকার উড়ছে জনপদে জনমানবের!
যাপিত জীবনের কোমল অনুভূতি
বিধ্বস্ত বিষণ্ণতায় কোষাগারে আড়ষ্টনীল।

বাজার ব্যবস্থায় কী প্রকৃতির সিন্ডিকেট
বিরাজমান!
এর শেষ কোথায়!শেষের পরে কী
আরো শেষ আছে? দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির
অশনি অস্থিরতা গ্রাস করছে তৃণমূল থেকে
সমাজের এক বড় জনগণ অংশকে।

সুজন কূজনের সুধীজন খেয়াল করুন
সময় থাকতে সময়ের কাজের প্রত্যাশী–
কোথায় কী অসামঞ্জস্যতার বদৌলতে
জীবন ধারণ নিদারুণ কষ্টে পর্যবসিত–!
বাজার ব্যবস্থার সহনীয় পরিস্থিতি আনায়নে
যথা সম্ভাব্য কার্যকরী ফলপ্রসূ ব্যবস্থা
অনতিবিলম্বে গ্রহণ করা বাঞ্চনীয়–
আসু সমাধানের অপেক্ষার
অধীরতায় জনগোষ্ঠী।

১০. নতুন ধানের ঘ্রাণ

নতুন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণে
মন ভরে দারুণভাবে–
নবান্নের পিঠাপুলির রসনা আসে
জিহ্বায় ভরাট মাপে।

বাল্যবেলার স্মৃতিরা করে খেলা
কতকিছু মনে পড়ে,
ধানমাড়াই,ধানভানা,কুলায় চালঝাড়া
চিত্ত আন্দলিত করে।

নতুন ধানের ঘ্রাণে ভাসায়
ফসলিয়া মাঠের চারিধার,
খালের পাশে ছুটাছুটি করা
বইচা-পুটির লাফালাফি অনিবার।

রাতভর নবান্ন ধানের পিঠার
আয়োজনে উৎসব-উৎসব রব,
রাত পোহালে স্বজনদের আপ্যায়নে
রসনা বিলাসে সরব।

গ্রাম বাংলার নিয়ম রেওয়াজে
বাড়িতে নাইওরির বহর,
আনন্দ উচ্ছ্বাসে আটখানা স্বজনপ্রীতি
ঝাঁপিতে ভিন্নমাত্রার মোহর।

আপলোডকারীর তথ্য

আব্দুল মালেক মজুমদারকে পাওয়া যাচ্ছে না

SBN

SBN

রেশমা বেগমের একগুচ্ছ কবিতা

আপডেট সময় ০৮:৩০:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৪

১. কিছু কবিতা

কিছু স্বপ্ন কবিতার রত্নাকরে ভাসে,ডুবে
নিত্য প্রহর নিজস্বতার চৌকশ স্মরণে–
আকাশের মুক্ত নীল ছুঁয়ে যায় পংক্তিপাতা
বাতাসের অম্বরী কবিতা চাষে মননে।

কিছু কবিতা অদৃশ্যে অস্পষ্ট থেকে যায়
কিছু কালের সীমানায় বাহিত হয়,
সময়ের প্রতিচ্ছবি,প্রতিবিম্ব কবিতার প্রণয়ে
জীবন্ত সারথি হয়ে পাঠকের রয়।

কাব্যের দেশে আবেগ ফেরারী হয়ে জৌলুষে;
কবিতার স্পর্শে স্বাপ্নিক কল্পকথা হাসে —
কোন্ ভাবের বহিঃপ্রকাশ কবিতায় কী মর্মে
পাঠক হৃদয় অনুভবের চিন্তনে ভাসে।

কিছু কবিতা যুগের,কালের ধারক সাক্ষী
অতীত জগৎ জীবনের চিত্রপট বিরাজমান,
সত্য সঠিক,অনুধাবনে কলমী শক্তি হাতিয়ার
নিজ ভুবনে আপন সঙ্গী মহামূল্যবান।

জীবন ব্যপ্তিতে কবিতার ধ্যানে পড়েছি আকালে
বিন্দু-বিন্দু শব্দ,বাক্যে গড়ছি কাব্যমালা,
কোন্ অনাহুতের অনৈতিকতায় কবিতা হচ্ছে
দিনে-দিনে কবিতা ‘চোরের’ আড়তশালা।

২. পৌষের মনোহরী রূপ

পৌষে শীতের আহ্লাদীপনা বেশ মনোহরী
প্রকৃতির আবেগী রূপসজ্জায় চোরাবালি,
উস্কো খুশখো পাতার মর্মর শুনে বনমালী
টুনটুনি লাফালাফি করে শুষ্কডাল খালি।

সর্ষে ফুলের হলুদ রঙে ডুবন্ত-মন চঞ্চলা
আঁখির পলক পরেনা তিয়াসী আত্মভোলা,
আকাশের বক্ষ শূন্য মেঘকন্যা বিহীন
সূর্য্যের আলো নাচে তা ধিন্ তা ধিন্।

গোধূলি-লগ্নে কুয়াশা সৌখিন আবরণ পাতে
রজনীতে জ্যোৎস্নার কাব্যিক মায়ার সাথে,
পৌষের মনোহরী রূপ তেপান্তরে হাঁটায়
চিত্তকে মুগ্ধতার তরঙ্গে ডুবায় ভাসায়।

শীতের সৌম্য কমনীয় স্বভাব কখনো
আবার সহনীয় অভাব রীতিতে সখনো,
ঘুমের দেশে আরামের মহব্বতে সকলে
স্বপ্নরা ঘোরাঘুরি করে রাতচোরা দখলে।

নতুন ধানের পিঠাপুলি রসের পায়েস
নতুনত্বে জিহ্বার মিটে ভোজন খায়েশ,
প্রত্যুষে পাখ্ পাখালির মধুকরী সুরসাধন
জলাধারে হাঁসের ঝাঁকের মোহনীয় বাঁধন।

৩. নতুন বছরের শুভাগমনে

হে, নতুন সূর্য্য হাসি দিয়ে আলো ছড়াও
হে,আকাশ-বাতাস বিশালতা দিয়ে
হৃদয়কে প্রসারিত করো।
দুয়ে মুছে যাক্ স্মৃতির দুঃখ-বেদনা,গ্লানি
শূন্যে উড়ে যাক্ যত জঞ্জাল-আবর্জনা,
পৃথিবী জুড়ে সুখময় পরিস্থিতি বিরাজ করুক
অযাচিত জটিলতা,অমানবিক মূল্যবোধের
ধ্বংস আবর্তিত হোক।
প্রভাতের অপার্থিব নৈস্বর্গিকধারা আত্মাকে
পুণ্যতার প্লাবনে পরিশীলিত করুক,
মনের আঙ্গিনা সত্য সুন্দরের তপস্যায়
নিমগ্ন থাকুক অহর্নিশ।
শাখে বসে পক্ষীরা গুঞ্জরণের মাদকতায়
উতলা-চঞ্চল করুক মননের চতুরঙ্গ,
নতুন সময়ের অপেক্ষায় পাহাড়-নদী,সাগর
তোমরাও কী অধীরতায় প্রহর গুনছো
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুলে?
সময় আসে যায় সময়ের নিয়মের হিসাবে —
জীবন কথা কয় অর্পিত প্রেক্ষাপটের চিত্রে,
সুন্দর সময়,সুখের মুহূর্ত নাতিদীর্ঘ–
ইচ্ছা শক্তির ঐকান্তিকতায় দুঃসময়কে
সমান্তরাল সহনীয় মাত্রায় আনায়ন বাঞ্চনীয় ।
নতুন বছরের সমীপে রেখে গেলাম
অনুভবে অনুভূতির কথামালা,
সবার তরে আনন্দঘন সময়ের
শুভেচ্ছান্তে।

৪. শূন্য রঙ্গমঞ্চে

শূন্যে ঘুরে,শূন্যে উড়ে কত কথা
কত বাক্যের নীরব রহস্য অভিসার —
বদলে যায় গাছ পাতারা নিত্য নতুনে
বাক্য বিনিময় দূর অলকায় নির্বিকার।

চেনা জগৎ অচেনা পথে হাঁটে ভিন্নতায়
মানুষ কেবল দুঃখ-ব্যথা পুষে রাখে,
ডাকে আয় স্মৃতির স্পর্শীয় ঘটমান দুর্বিষহে
নিশাচর বিভাবরী স্বপনে পরাগ মাখে।

ভালো থাকা,ভালো রাখা নিজস্ব ঘরানায়
সাধ্যমত প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয় যাপন-যন্ত্রে,
কত চাওয়া-পাওয়ার হিসেব অভ্যস্ত ঝাঁপিতে
অচলদেহ সচলতায় আনন্দে প্রাপ্তির মন্ত্রে ।

কেহ নহে আপন,নহে পর জীবন-জগতে
স্বার্থ শেষে সবাই দিনান্তে এক-কাতারে,
খেলা ঘরের কর্মযজ্ঞ দুর্দান্ত বিদুষী
একতারায় লহরী তোলো আপন পাথারে।

দিন যবে শেষ হলো যাপিত জনমে
অস্তরাগের ধোঁয়াশায় খেয়া ঘুরে অসীমে–
অবলা-মন কত কিছু নিয়ে ব্যস্ত ছিলো জীবনভর
মিথ্যা আশ্বাসে,বিশ্বাসে নাট্যশালার
শূন্য রঙ্গমঞ্চে।
চলো এবার হাঁটি অজানা অচেনা লক্ষে!!

৫.।স্বাধীনতার মাহাত্ম্য

ওই কমলা রঙের কোমল সূর্যোদয় বলে ওঠে
স্বাধীনতা, তুমি এত সুন্দর,উদার,আবেগী –!
কালান্তরে তৃপ্তি সহকারে দেখি তোমার ঐশ্বর্য্য,
অসীম গৌরবের মাহাত্ম্য রূপ।

পাথার,নদীর তরঙ্গ ছলাৎ ছলাৎ করে বলে ওঠে
স্বাধীনতা,তোমার দর্শন,দানে ডুবে আমরা
হয়েছি আজন্ম কৃতার্থ,অনন্তের বিদুষী রশ্মি তুমি,
সালাম তোমায় লাখো শহীদান–
বাংলার চাঁদ হাসে আত্মত্যাগীর মহাউৎসর্গ দেখে।

শিমুল-পলাশ,রক্ত জবা স্ব-কন্ঠে বলে ওঠে
স্বাধীনতা,আমরা হয়েছি রূপে মহিয়ান
আত্মদানে শহীদের রক্ত কণার রক্তরাগে,
জনম জনম উদ্ভাসিত রবে তাঁদের সম্মান।

পাখীর কলরব,সবুজের সমাহার ধ্বনি তুলে
স্বাধীনতা,তোমার মাহাত্ম্যে সাজাই নিজ ভুবনঘর,
উড়ন্ত শঙ্খচিলের ঠোঁটে চিরকুট বলে উঠে
এতে রয়েছে স্বাধীনতা তোমার নাম, নিরহংকার সম্মান।

সোনালী ফসলি মাঠ,সোঁদামাটির ঘ্রাণ নাকে
ছড়ায় মধুগন্ধী সুবাতাস,বলে ওঠে ধন্য মাতৃভূমি—
স্বাধীনতা,তোমায় পেয়ে হয়েছি মোরা সুখের গরবিনী।
ঘাসফড়িং, প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ে
স্বাধীন ভুমে বাংলার মুক্ত হাওয়া গায়ে মেখে।

দেশের মানুষ সমস্বরে বলে ওঠো
আমরা ঋণী! স্বাধীনতা তোমার পদতলে
দাও ঠাই,, টুংগীপাড়ার ছেলে মুজিবের
দিকনির্দেশনা যেন খুঁজে পাই—-

৬. পাহাড়, নদীর চুপকথা

শীত সকালে পাহাড়,নদীর
চুপকথা হয় নিরহংকারে,
কুয়াশা আবৃত পাহাড় মন্ত্রমোহে
নদীতে ভাসে সরবে—

দু’জন দু’জনাতে মিশে একাকার
শীতল জলের স্বপ্নাচার,
নদী নিজস্ব-বেগে ছুটে চলে–
তটে লোকারণ্যে বনবিহার।

জীবনের দুঃখ-কষ্ট বন্দিত্ব দশায়
পাহাড়,নদীপাড়ে দীর্ঘশ্বাস,
স্মৃতির কথাশৈলীর দুর্দান্ত প্রকাশ
উড়ন্ত পক্ষীর অবিশ্বাস।

সংগোপনে সন্ধি করে শশীকলায়
দু’জনার বুকভরে মমতামোহে,
গিরিখাত,ঝর্ণা নন্দননৃত্যে মাতে
ব্যাথাহতের পরাণে দাহবহে।

জীবন-জগৎ অভিন্ন অন্তর আত্মা
সূক্ষান্তরে রয়েছে পরিপূর্ণতা,
বিশ্বের বিস্ময় পাহাড়-নদীর আত্মকথা,
দর্শনে নিপতিত সংকীর্ণতা।

৭. এক পলকে

চাঁদ হাতছানি দিচ্ছে মায়ার চোখে
সরে যেওনা এখনই তুমি–
কৌটা ভর্তি কথার গুটি রেখেছি
নিরালায় শুনবে না! বসে আমি।

বিরস আঁখি মেলে এক পলকে
ভাবনার দেশান্তরে হারিয়েছো কোথায়?
আঁধার মাখা নিঃশ্বাসের স্পর্শের ছোঁয়া
নিস্তব্ধ রজনী মগ্নতায় ভোলায়।

জোনাকিরা খেলার মাতামাতিতে ব্যস্ত
আলোর ফুসকা মন নাচায়,
কত কী দৃশ্য স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধকরী
হৃদয় কাঁপানো শিহরণ জাগায়।

পলক পড়ে না,তোমাকে দেখা
শেষ হলো না অদ্যাবধিতে–
ভালোবাসায় দুটো জীবন রাজ্য গড়ুক
প্রেমজঙ্ঘা নিশ্চয়ই খুঁজছে শতাব্দিতে।

অপূর্ব শোভনীয় নিশিরাতে আবেগী মন
নির্মল ভালোবাসায় সিক্ত অনুরণনে–
আর নয় কালক্ষেপন সময়ের চুম্বনে
নিরুদ্দেশ যেন না হয় অমানিশাতে।

৮. আশার বেলাভূমিতে

নিরাশ সময়ের চূড়ায় বসতি
আলোর শিখা জ্বলছে বহুদূরে–
চোখের কোণ ভিজে জলে
আশার বেলা সাজে করুণ-সুরে।

নিঝুম-রাতে আঁধারের সঙ্গী হয়ে
তারার কথা শুনি উচ্ছ্বাসে,
প্রভাতে কচি আলোর মাখামাখিতে
জীবনীশক্তি ফিরে নব উদ্যমে।

আশার বেলাভূমিতে চন্দ্রের মহত্ত্বে
বুক বাঁধি মহতি কর্মে–,
দিন আসলেই কী ফিরবে
নব-সূর্যোদয়ে সময়ের মর্মে ?

বাউরী বাতাসে বৃক্ষের পল্লবের
মর্মর ধ্বনিতে প্রকম্পিত হৃদয় —
নীলআকাশ ছোঁয়ায় শান্তির পরশ
কোন্ ঠিকানায় স্বস্তির সদয়!

প্রত্যহ আপেক্ষার ধারাপাত গুনি
আশার খেয়া ভাসাই মাহেন্দ্র-ক্ষণে,
নিশিরাত কাঁদে নিস্তব্ধ সরোবরে
এই আমি কে আমি কোনবনে—

৯. বাজার ব্যবস্থায় অস্থিরতা

নিম্নবিত্ত,মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠছে
প্রত্যহ প্রতিপ্রহরে,ক্ষণে-ক্ষণে,
বাজার ব্যবস্থার একমুখী অসামঞ্জস্যে–
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিরামহীন ভাবে
উপচে পড়ছে অস্থিরতার নাভিমূলে।

সর্বময় এক অজানা বিষাদ বৈরী বাতাস —
নিত্যনৈমিত্তিক মৌলিক চাহিদা পূরণে
হাহাকার উড়ছে জনপদে জনমানবের!
যাপিত জীবনের কোমল অনুভূতি
বিধ্বস্ত বিষণ্ণতায় কোষাগারে আড়ষ্টনীল।

বাজার ব্যবস্থায় কী প্রকৃতির সিন্ডিকেট
বিরাজমান!
এর শেষ কোথায়!শেষের পরে কী
আরো শেষ আছে? দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির
অশনি অস্থিরতা গ্রাস করছে তৃণমূল থেকে
সমাজের এক বড় জনগণ অংশকে।

সুজন কূজনের সুধীজন খেয়াল করুন
সময় থাকতে সময়ের কাজের প্রত্যাশী–
কোথায় কী অসামঞ্জস্যতার বদৌলতে
জীবন ধারণ নিদারুণ কষ্টে পর্যবসিত–!
বাজার ব্যবস্থার সহনীয় পরিস্থিতি আনায়নে
যথা সম্ভাব্য কার্যকরী ফলপ্রসূ ব্যবস্থা
অনতিবিলম্বে গ্রহণ করা বাঞ্চনীয়–
আসু সমাধানের অপেক্ষার
অধীরতায় জনগোষ্ঠী।

১০. নতুন ধানের ঘ্রাণ

নতুন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণে
মন ভরে দারুণভাবে–
নবান্নের পিঠাপুলির রসনা আসে
জিহ্বায় ভরাট মাপে।

বাল্যবেলার স্মৃতিরা করে খেলা
কতকিছু মনে পড়ে,
ধানমাড়াই,ধানভানা,কুলায় চালঝাড়া
চিত্ত আন্দলিত করে।

নতুন ধানের ঘ্রাণে ভাসায়
ফসলিয়া মাঠের চারিধার,
খালের পাশে ছুটাছুটি করা
বইচা-পুটির লাফালাফি অনিবার।

রাতভর নবান্ন ধানের পিঠার
আয়োজনে উৎসব-উৎসব রব,
রাত পোহালে স্বজনদের আপ্যায়নে
রসনা বিলাসে সরব।

গ্রাম বাংলার নিয়ম রেওয়াজে
বাড়িতে নাইওরির বহর,
আনন্দ উচ্ছ্বাসে আটখানা স্বজনপ্রীতি
ঝাঁপিতে ভিন্নমাত্রার মোহর।