লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটে চলতি মৌসুমে অধিক লাভের আশায়, রেকর্ড পরিমাণ আগাম জাতের আলু চাষ করেছেন কৃষকরা। তাদের অভিযোগ আলুর কাঙ্ক্ষিত মুল্য থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে আসছেন প্রতিবছর। লাভবান হয় ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট।
গত বছর আলুর বাজার ছিলো বেশ ভালো, ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজির আলু সর্বোচ্চ ১২০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়েছে হাটেবাজারে। গত বছর আলুর দাম পেয়ে এ বছর কৃষকেরা বেশি আগ্রহী হয়ে আলু চাষ করেন।
লালমনিরহাট কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় ৬ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে এর পরিমাণ আরো বেশি হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
কেননা গ্রামের সমতলের কৃষকের পাশাপাশি তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, রত্নাই, সতী নদীর চরাঞ্চলেও ব্যাপক হারে আলু চাষ হয়েছে। এছাড়াও অনেক কোল্ড স্টোরের মালিক শত শত একর জমি এক বছরের জন্য লিজ নিয়ে আলু চাষ করেছে।
ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বাজারে আগামজাতের পরিপক্ক আলু উঠতে শুরু করে। সেই সঙ্গে আলুর দামও কমতে থাকে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাজারে আলুর কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এখন বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু স্থানভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বছর আলুর দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের আলু বীজ কিনতে হয়েছে বেশি দামে। এছাড়া সার, বীজ, কীটনাশক, চাষের ও পরিচর্যার খরচ মিলে প্রায় এক বিঘা জমি চাষে খরচ পড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা।
কৃষককে উৎপাদন খরচ তুলতে হলে বাজারে আলুর দাম থাকতে হবে কমপক্ষে ৩৫ টাকা। তাছাড়া এ সময়ের উৎপাদিত আলু কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা যায় না।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবছর অনেক কৃষকরা জমিতে বছরে তিনটি করে ফসল চাষ করছেন। ইরি-বোরো ধান চাষের আগে জমিতে আলু, সরিষা, পেঁয়াজসহ নানা রবি ফসল চাষ করে থাকেন। আলু তুলে একই জমিতে সেচ নির্ভর বোরো ধানের চাষ করেন। আলু ৯০ দিনে ফসল হলেও ৬০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে উঠে থাকে। গত দুই বছর ধরে আলুর দাম বাজারে অনেকটা বেশি তাই ব্যাপকহারে আলু চাষে ঝুঁকেছিলেন ব্যবসায়ী ও কৃষক।
সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চিনিপাড়া গ্রামের আলু চাষি হেলেন মিয়া (৪৮) জানান, গত বছরের আগাম আলুর দাম বাজারে ভালো থাকায় এবার দ্বিগুণ জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি।
ধরলা নদীর টুনটুনির চরের কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, আমার ১৮ বিঘা জমিতে কার্ডিনাল আলু হয়েছে। ১২০ টাকা কেজি দরে বীজ আলু কিনেছি। সারসহ অন্যান্য খরচও বেশি। এখন আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ১৫ টাকা কেজি দরে। প্রতি কেজি খরচ পড়েছে ২৫ টাকা। আলুর পাইকারি ব্যবসায়ী মাহফুজার রহমান জানান, আমরা ১৫-২০ টাকা কেজি দরে আলু কিনে মাত্র এক টাকা লাভে বিক্রি করছি। আগাম জাতের আলুর সরবরাহ বেশি, তাই দাম পড়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইখুল আরিফিন জানান, চাষিদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সময়ের ব্যবধানে আলুর দাম বাড়বে। বিদেশে এখনো রপ্তানি শুরু হয়নি, রপ্তানি শুরু হলে আলুর দাম বাড়বে।