
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
দলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও লাইভে এসে বিষপান করে আত্নহত্যার চেষ্টা করেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা শ্রমিক দলের আহবায়ক ওমর ফারুক।
বুধবার (২৫ জুন) রাতে নিজ বাড়িতে ফেসবুকে লাইভ করে বিষপান করে আত্নহত্যার চেষ্টা করেন ওমর ফারুক।
ওমর ফারুক পাটগ্রাম পৌরসভার কোটতলীর বাসিন্দা এবং পাটগ্রাম উপজেলা শ্রমিক দলের আহবায়ক।
ফেসবুকে লাইভের আগে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে দলের প্রতিক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি । স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, আমি বিএনপি করে নিজের জীবন শেষ করেছি। সামান্য একটি ঘটনা নিয়ে আমার নামে লালমনিরহাটে দুলু ভাই ও রাজিব ভাই ভিন্নভাবে অভিযোগ করেন। আমি হাত ধরে মাফ চেয়েছি, দলের জন্য কোনো ধরনের খারাপ কাজ করিনি। পাটগ্রাম উপজেলার সুবিধাবাদী, সুযোগসন্ধানী ব্যক্তিরা এখন সবকিছু করছে। দখল থেকে চাঁদাবাজি, দলের ক্ষতি করে চলেছে। তিনি আরও লিখেন,আমি কষ্ট করে,খেয়ে না খেয়ে,বউ-বাচ্চার যা কিছু ছিল তা বিক্রি করে তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা লিফলেট উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বাজারে বাজারে বিতরণ করে দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছি।
ওমর ফারুক লিখেন,পাটগ্রামে কেউ বলতে পারবে না যে, ৫ তারিখের পর আমি কারো কাছে গিয়ে টাকা-পয়সা বা চাঁদাবাজি করেছি অথবা কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি। কেউ বলতে পারবে না। দলের কারণে কতদিন বাড়িতে থাকতে পারিনি, বউ-বাচ্চা না খেয়ে ছিল। পুরো দলের জন্য ফেসবুক থেকে শুরু করে সবকিছুতেই দলের কাজ করে গেছি, সরাসরি মারও খেয়েছি। এখন সুদিনে এসে কিছু সুবিধাবাদী মানুষের কারণে আজ আমাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। সকালে আমার মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষা। জানি না মেয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা। তবে একটি কথা, দল করে কী পেলাম? আর আমি তো জোরে কথা বলি, এটা আমার অভ্যাস। তবে কারো ক্ষতি করিনি। আমার বউ-বাচ্চাকে আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম।
তিনি লিখেন, আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না, কারণ সৎ ভাবে জীবনযাপন করা এবং সঠিকভাবে দল করা সত্ত্বেও আজ আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। বিদায় দুনিয়া! পাটগ্রাম উপজেলার কিছু বিএনপির জন্য খুবই ভালো হবে আমি না থাকলে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান, আপনি যদি আমার এই খবর দেখেন, তাহলে দলের সুবিধাবাদীদেরকে দল থেকে বাদ দেবেন। বিদায়! অনেক কষ্টে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম, কারণ আমি কোনো সময় কারো কাছে নত হতে শিখিনি। তারপরও আজ উনাদের হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছি। বিদায়! জানি না আমার বউ-বাচ্চার কী হবে, তবুও আমি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম। কারণ আমি নিজেই বেশ কিছুদিন থেকে অসুস্থ, তারপরও কারো কাছে কখনো নত হইনি।
এরপর ফেসবুক লাইভে এসে বিষপান করেন ওমর ফারুক। পারিবারের লোকজন বুঝতে পেয়ে তাকে তাৎক্ষনিক উদ্ধার করে প্রথমে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক লালমনিরহাট জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, বহিস্কার বা শোকজের মত কোন সিদ্ধান্তই হয়নি। তবুও, কেন এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে বিষপান করেছে ওমর ফারুক তা তদন্ত করতে বিএনপির একটি টিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তের পরে তারা প্রতিবেদন দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত তার চিকিৎসা চলছে।