মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার
শিক্ষক ও শিক্ষাঙ্গনের শিষ্টাচার
শিক্ষা লাভ করা এবং শিক্ষা দান করা যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি শিক্ষক, শিক্ষাঙ্গন ও সহপাঠীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা আবশ্যক। এতে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং জ্ঞানার্জনের আগ্রহ বাড়ে বাবা-মায়ের পর মান্য ব্যক্তিটি হলেন শিক্ষক। শিক্ষাদানের মাধ্যমে তিনি আমাদের নতুনভাবে জীবন দেন। বাঁচতে শেখান। শিক্ষার্থীদের উচিত শিক্ষকের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পায় এমন আচরণই করা। এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যার ফলে শিক্ষক কষ্ট পান, অসন্তুষ্ট হন।
শিক্ষকের আচরণ বা মুদ্রাদোষ অভিনয় করে দেখানো, নকল করা, ভেংচানো বা শিক্ষককে বিদ্রুপাত্মক নাম ধরে ডাকবে না। ঠাট্টার ছলে বা মজা করেও শিক্ষককে অসম্মান দেখানো হয় এমন যেকোনো আচরণ করা থেকে বিরত থাকা।শিক্ষক ক্লাসে প্রবেশ করলে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করো। শিক্ষক ক্লাসে অবস্থান করা অবস্থায় তার অনুমতি নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করা।ক্লাসে শিক্ষক কোনো প্রশ্ন করলে উঠে দাঁড়িয়ে উত্তর দাও। পরীক্ষার হলে প্রশ্ন বা উত্তরপত্র নেওয়ার সময় উঠে দাঁড়াও।
ক্লাসে শিক্ষক পড়ানোর সময় হেলান দিয়ে বসবে না বা পা নাচাবে না। এ ধরনের আচরণ শিক্ষকের প্রতি শিষ্টাচার পরিপন্থী।এক শিক্ষকের ব্যাপারে অন্য শিক্ষকের কাছে অভিযোগ বা সমালোচনা করবে না। শিক্ষকের পড়া বুঝতে না পারলে বিনয়ের সঙ্গে কী বোঝোনি তা শিক্ষককে জানাও। অন্য শিক্ষকের সহায়তা নিতে হলেও আগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কথা না বলে তোমার আলোচনা বিষয়বস্তুতে সীমাবদ্ধ রাখো।শিক্ষকের আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষোভ পুষে রাখবে না। আড়ালে বিষোদগার করা বা পরে শিক্ষককে নাজেহাল করার পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকো।
শিক্ষক আন্তরিক হলেই তাকে ‘ইয়ার দোস্ত’ মনে করবে না। তার সঙ্গে হালকা রসিকতা বা গায়ে হাত দিয়ে কথা বলা, হাত ধরে টানাটানি করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকো।ক্লাসে শিক্ষক যখন পড়ান তখন তাকে পড়ানোয় সাহায্য করো।
ক্লাসের সহপাঠীদের সঙ্গে মিলে বাজে শব্দ করা, কাগজ ছোড়াছুড়ি করা, শিস দেওয়া ইত্যাদি আচরণ করে ক্লাসের পরিবেশ নষ্ট করা থেকে বিরত থাকা। ক্লাসে উপস্থিত হয়েছ পড়াশোনা করার জন্য, এ কাজে ব্যাঘাত ঘটালে দিনশেষে তোমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।ক্লাসের বাইরে রাস্তায়, বাজারে, দোকানে বা অন্য যেকোনো স্থানে শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হলে, মুখোমুখি পড়ে গেলে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করো। দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাবে না। এটা একদিকে যেমন শিষ্টাচারের পরিপন্থী, তেমনি দৃষ্টিকটু।
শিক্ষকের সঙ্গে ‘খাতির জমানো’র জন্য উপহার, উপঢৌকন দেওয়া বা অন্য কোনো অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকো। এটা তোমার জন্য হিতে বিপরীত পরিণাম বয়ে আনতে পারে।
শিক্ষকের নজর এড়িয়ে থাকার জন্য মুখ লুকিয়ে থাকবে না। এর ফলে শিক্ষকের সঙ্গে দূরত্ব বাড়বে। ক্লাসে শিক্ষক পাঠদানকালে সক্রিয় অংশগ্রহণ করো। শিক্ষক প্রশ্ন করলে উত্তর দাও, শিক্ষকের কাছে কোনো প্রশ্ন থাকলে শ্রেণিকক্ষের শিষ্টাচার মেনে শিক্ষককে প্রশ্ন করো।
শিক্ষকের করণীয় : শিক্ষকের দায়িত্ব হলো, সব শিক্ষার্থীকে সমান গুরুত্ব দেওয়া, অনর্থক কথা পরিহার করা, শিক্ষাঙ্গনের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করে চলা।
নম্রতা এবং বিনয় শিক্ষায় সাফল্যের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে, কারণ এটি আত্ম-প্রতিফলন এবং বুদ্ধি ভিত্তিক মানসিক বিকাশকে উৎসাহিত করে।
বিনয়ী শিক্ষার্থীরা তাদের সহকর্মী এবং প্রশিক্ষকদের প্রতি সবসময় খোলামেলা থাকে এবং শিখার আগ্রহ থাকে বেশী মাত্রায়, যা উন্নত একাডেমিক কর্মক্ষমতা এবং আরও ভাল ফলাফলের দিকে নিয়ে যেতে পারে। বিনয় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিবাচক অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে যা শেষ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্তি ভিত্তিক সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাই আজকের সদা পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে নিজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং জ্ঞানার্জনের নিমিত্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিনয়ের পরিবেশ তৈরী করা উচিত। এই ধরনের পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা একে অপরের সাথে জ্ঞানের বিনিময় করতে পারবে এবং স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে, যার ফলে সৃজনশীলতা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব আরও এগিয়ে যাবে।
একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে বিনয়ের সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য প্রশাসক এবং শিক্ষক উভয়ের প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বিনয় একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য যার জন্য প্রত্যেকেরই চেষ্টা করা উচিত কারণ এটি মানুষের মধ্যে সম্মান বৃদ্ধি করে এবং ব্যক্তিগত বিকাশকে উত্সাহিত করে। আমাদের শিক্ষায় বিনয়ের দর্শন সংযোজিত হোক এবং তৈরী হোক একটি বিনয়ের সমাজ।
লেখক:চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ, শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।