ঢাকা ০৬:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মুরাদনগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী বিতরণ Logo কটিয়াদী করগাঁও ইউনিয়নে ভিজিএফ এর চাল বিতরণের ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ Logo সুন্দরবনে পৃথক অভিযানে ২০৫ কেজি হরিণের মাংসসহ আটক -১ Logo ড্যাব কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ শাখার ইফতার মাহফিল Logo লাকসামে ১৯ বছরের তরুনীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ : গ্রেফতার-৫ Logo জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসলে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করবে Logo রূপসায় ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশ উইমেন্স ফ্যাশন ডিজাইনার সোসাইটির পক্ষে ইফতার সামগ্রী বিতরণ Logo বরুড়ায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এর ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত Logo উখিয়া যুবদলের দু‘গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৬

শ্বশুড় দেবর চাচাতো ভাইসহ আত্মীয় স্বজনদের প্রশিক্ষণার্থী

মোঃ ইলিয়াস আলী, ঠাকুরগাঁও

অন্য উপজেলা থেকে ভ্যান ভাড়া করে শ্বশুড়, দেবর, চাচাতো ভাইসহ আত্মীয় স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণার্থী বানিয়ে ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আক্তারের বিরুদ্ধে। তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে এসে এসব অনিয়মের সত্যতাও পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকালে উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়াম হলে এ ঘটনা। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষ প্রকল্পের আওতায় বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে দিনব্যাপী ১৫০ জন পাট ও বীজ চাষীকে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন ও ঠাকুরগাঁও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। ১৫০ জনের প্রশিক্ষণ হলেও উপস্থিত ছিলেন ৯২ জন চাষী। এর মধ্যে প্রায় ৬০ জন পার্শ্ববতী পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল উপজেলার বাসিন্দা। অথচ প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণার্থীদের নিজ উপজেলার বাসিন্দা হতে হবে।

বিকালে খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা চাষীদের পরিচয় জানার চেষ্টা করলে প্রশিক্ষণ ছেড়ে ভ্যানে চড়ে চলে যায় প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া অন্য উপজেলার চাষীরা। ফাঁকা হয়ে যায় অডিটরিয়াম হল। ঘটনা জানাজানি হলে শুরু হয় গন্ডগোল। পরে বিষয়টি অবগত করা হয় উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তাকে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বড়বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, আমার নির্বাচনী এলাকার পরিচয় দিয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিল পীরগঞ্জের কয়েকজন চাষী। খবর পেয়ে এসে দেখি সকলেই অপরিচিত। জিজ্ঞাসা করলে জানা গেছে তাদের পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার ভ্যান ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন। সকলেই কর্মকর্তার আত্মীয়-স্বজন হবেন। উনার শ্বশুড়ও ছিলেন। দ্রুত চলে গেছেন আমাকে দেখে।

পাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী রুবেল জানান, আমাকে ফোন দিয়ে পাট কর্মকর্তা ২ জন চাষীকে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাতে বলেছিলো। ১৫০ জন প্রশিক্ষর্ণাথী হলে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে কমপক্ষে ১৫ জনের সুযোগ পাওয়ার কথা। শুনেছি আমার ওই দুইজন চাষী ফেরত এসেছে, প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেনি, অনারিয়ামও পায়নি।

বিকাল ৪টার পর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একপাশে বসে আছেন পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার। অন্যপাশে ঠাকুরগাঁও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াসিম কুমার মালাকার মাস্টাররোল দেখে চাষীদের ৫০০ টাকা অনারিয়াম দিচ্ছেন। কয়েকজনকে দেওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় অনারিয়াম দেওয়া।

আত্মীয়-স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার জানান, তারা কিভাবে এসেছে আমি জানিনা। বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননা তিনি। এরপরে সেখান থেকে উঠে চলে যান।

অপর পাশে বসে থাকা ঠাকুরগাঁও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াসিম কুমার মালাকারও হাতে টাকা এবং কৃষকদের তালিকা নিয়ে উঠে চলে যান উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষে। সেখান থেকে ৩০ মিনিট পর বের হয়ে ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, অন্য উপজেলা থেকে চাষী এনে প্রশিক্ষণের ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ করবেন তিনি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার জানান, অন্য উপজেলা থেকে আত্মীয় স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণার্থী বানানোর ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এ অনিয়মের শাস্তি হিসেবে পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।

জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার দেওয়ার তথ্যমতে, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষ প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপে ৩০০ জন চাষীকে প্রশিক্ষন দেওয়ার বাবদ ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ জুনের ৩০ তারিখে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী বিতরণ

SBN

SBN

শ্বশুড় দেবর চাচাতো ভাইসহ আত্মীয় স্বজনদের প্রশিক্ষণার্থী

আপডেট সময় ০৪:১৫:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

মোঃ ইলিয়াস আলী, ঠাকুরগাঁও

অন্য উপজেলা থেকে ভ্যান ভাড়া করে শ্বশুড়, দেবর, চাচাতো ভাইসহ আত্মীয় স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণার্থী বানিয়ে ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আক্তারের বিরুদ্ধে। তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে এসে এসব অনিয়মের সত্যতাও পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকালে উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়াম হলে এ ঘটনা। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষ প্রকল্পের আওতায় বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে দিনব্যাপী ১৫০ জন পাট ও বীজ চাষীকে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন ও ঠাকুরগাঁও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। ১৫০ জনের প্রশিক্ষণ হলেও উপস্থিত ছিলেন ৯২ জন চাষী। এর মধ্যে প্রায় ৬০ জন পার্শ্ববতী পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল উপজেলার বাসিন্দা। অথচ প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণার্থীদের নিজ উপজেলার বাসিন্দা হতে হবে।

বিকালে খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা চাষীদের পরিচয় জানার চেষ্টা করলে প্রশিক্ষণ ছেড়ে ভ্যানে চড়ে চলে যায় প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া অন্য উপজেলার চাষীরা। ফাঁকা হয়ে যায় অডিটরিয়াম হল। ঘটনা জানাজানি হলে শুরু হয় গন্ডগোল। পরে বিষয়টি অবগত করা হয় উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তাকে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বড়বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, আমার নির্বাচনী এলাকার পরিচয় দিয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিল পীরগঞ্জের কয়েকজন চাষী। খবর পেয়ে এসে দেখি সকলেই অপরিচিত। জিজ্ঞাসা করলে জানা গেছে তাদের পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার ভ্যান ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন। সকলেই কর্মকর্তার আত্মীয়-স্বজন হবেন। উনার শ্বশুড়ও ছিলেন। দ্রুত চলে গেছেন আমাকে দেখে।

পাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী রুবেল জানান, আমাকে ফোন দিয়ে পাট কর্মকর্তা ২ জন চাষীকে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাতে বলেছিলো। ১৫০ জন প্রশিক্ষর্ণাথী হলে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে কমপক্ষে ১৫ জনের সুযোগ পাওয়ার কথা। শুনেছি আমার ওই দুইজন চাষী ফেরত এসেছে, প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেনি, অনারিয়ামও পায়নি।

বিকাল ৪টার পর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একপাশে বসে আছেন পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার। অন্যপাশে ঠাকুরগাঁও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াসিম কুমার মালাকার মাস্টাররোল দেখে চাষীদের ৫০০ টাকা অনারিয়াম দিচ্ছেন। কয়েকজনকে দেওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় অনারিয়াম দেওয়া।

আত্মীয়-স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার জানান, তারা কিভাবে এসেছে আমি জানিনা। বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননা তিনি। এরপরে সেখান থেকে উঠে চলে যান।

অপর পাশে বসে থাকা ঠাকুরগাঁও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াসিম কুমার মালাকারও হাতে টাকা এবং কৃষকদের তালিকা নিয়ে উঠে চলে যান উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষে। সেখান থেকে ৩০ মিনিট পর বের হয়ে ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, অন্য উপজেলা থেকে চাষী এনে প্রশিক্ষণের ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ করবেন তিনি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার জানান, অন্য উপজেলা থেকে আত্মীয় স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণার্থী বানানোর ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এ অনিয়মের শাস্তি হিসেবে পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।

জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার দেওয়ার তথ্যমতে, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষ প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপে ৩০০ জন চাষীকে প্রশিক্ষন দেওয়ার বাবদ ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ জুনের ৩০ তারিখে।