
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক দুটি সমাবেশ ও আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিল শেষে উপজেলা সদরের হাসপাতাল মোড়ে একদল সমর্থকদের মধ্যে কদবেল খাওয়াকে কেন্দ্র করে গায়ে ধাক্কা লাগে , যা পরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রুপ নেয় । পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে ।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় আনন্দ মিছিল শেষে একদল সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। যা রাত ৯:২০ মিনিটে গিয়ে শেষ হয় । এসময় দোকান পাটে লুটপাটের ঘটনাও ঘটে ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বুধবার বিকাল ৫টার দিকে সরাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন মাস্টার এর নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে একটি আনন্দ মিছিল নিয়ে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সমবেত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচী সমাপ্ত করে।
অন্য দিকে বিকালে সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুর ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপুর নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা সরাইল-নাসিরনগর সড়কের পাশে উপজেলা সদরের উচালিয়াপাড়া মোড়ে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশ পালন করে ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটেন। পরে সমবেত নেতা-কর্মীরা উচালিয়াপাড়া মোড় থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করে বড্ডাপাড়া গরুর বাজারের সামনে পথসভা করে কর্মসূচীর শান্তিপূর্ন সমাপ্তি করে।
এদিকে সরাইল উপজেলা সদরের হাসপাতাল মোড়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান শেষে একদল সমর্থক কদবেল খাওয়া নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে আসা উচালিয়াপাড়া ও সৈয়দটুলা গ্রামের কতিপয় যুবকদের মাঝে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে বিকাল ৫ টার দিকে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। মূহূর্তের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে , হাসপাতাল মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। এসময় উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে । এ সময় সরাইল-নাসিরনগর সড়ক ও সরাইল হাসপাতাল মোড় হয়ে সরাইল বাজারে প্রবেশের প্রধান সড়কে সবধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।সাধারণ জনগণ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনা ঘটে ।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশারফ হোসাইন, সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে সংঘর্ষ থামাতে ব্যার্থ হয়। পরে রাত ৯টার পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আসে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩০জন আহত হয়। আহতদের সরাইল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুরুতর আহত মুন্না ও ছাবন আলী নামের দুই জনকে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ কর হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সরাইল উপজেলা বিএনপির উচালিয়াপাড়া মোড়ের সমাবেশে নেতা-কর্মীরা স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করেছেন। সমাবেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা হয়। পরে সেখান থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করে বডাপাড়া গরুর বাজার এলাকার সামনে গিয়ে পথসভা করে কর্মসূচীর শান্তিপূর্ন সমাপ্তি করা হয়।
সরাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন মাস্টার বলেন, পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাএকটি বিশাল আনন্দ মিছিল বের করে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পালন করে কর্মসূচী সমাপ্ত করা হয়। সংঘর্ষের ব্যপারে তিনি বলেন, তপু গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আমাদের কেউ জড়িত নয়।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপু বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সরাইল উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করে কর্মসূচী সফল করায় সকলকে ধন্যবাদ।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা শান্ত সরাইলকে অশান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। দূস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।