
সম্প্রতি আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাল হায়দার ওগুল আলিয়েভ চীনে রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন। সফরকালে তিনি চীনের গণমাধ্যমকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর এবারের চীন সফর ফলপ্রসূ হয়েছে, যা চীন-আজারবাইজান সম্পর্কের উন্নয়নে নতুন প্রেরণা যোগ করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে ইতিবাচক সংকেত পাঠিয়েছে।
এই সফরে, চীন-আজারবাইজান সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। উভয়পক্ষ সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার একটি যৌথ-বিবৃতি প্রকাশ করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের ২০টিরও বেশি সহযোগিতার নথিতে স্বাক্ষর করেছে। আলিয়েভ এ সফর ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘চমৎকার’ বলে প্রশংসা করেন এবং সফরের ফলাফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। যৌথ-বিবৃতিতে বাণিজ্য, পরিবহন, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিস্তৃত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, দু’পক্ষ মূল স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একে অপরকে সমর্থন, করে, আজারবাইজান দৃঢ়ভাবে এক-চীন নীতি মেনে চলে, যা দু’দেশের মধ্যে ভবিষ্যতের সার্বিক সহযোগিতার জন্য দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে।
প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ বহুবার চীন সফর করেছেন এবং চীনের দ্রুত উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবার চীনে এসে নতুন অবকাঠামো প্রকল্প ও শহরগুলোর নতুন চেহারা দেখতে পান। চীনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে, চীনের সাফল্যের জন্য তিনি অভিনন্দন জানান এবং চীনের উন্নয়ন পথের যথার্থতা স্বীকার করেন।
চীন-আজারবাইজান সম্পর্কের উন্নয়নের দিকে ফিরে তাকিয়ে আলিয়েভ বলেন, তার পিতা হায়দার আলিয়েভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৯৪ সালে চীনে সফর করেছিলেন, যা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা করে। আজকের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি পূর্বসূরীদের প্রচেষ্টার উত্তরাধিকার ও বিকাশ।
আলিয়েভ চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বের ধরণ ও বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট সি’র উত্থাপিত ধারাবাহিক বৈশ্বিক উদ্যোগ বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে চীনা প্রজ্ঞার অবদান রেখেছে। আজারবাইজান সক্রিয়ভাবে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগকে সমর্থন ও অংশগ্রহণ করে এবং বেশ কয়েকটি অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
আলিয়েভ বলেন, আজারবাইজান একটি সম্পদ-রপ্তানিকারী অর্থনীতি থেকে বৈচিত্র্যময় ও টেকসই উন্নয়ন মডেলে রূপান্তরিত হচ্ছে। চীনের অভিজ্ঞতা আজারবাইজানের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। বর্তমানে আজারবাইজানে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নিম্ন বৈদেশিক ঋণের অনুপাত এবং পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাস্তবায়ন হয়েছে। সবুজ শক্তির ক্ষেত্রে আজারবাইজান-চীন সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য ফলাফল অর্জন করেছে। চীনা কোম্পানিগুলোর সম্পৃক্ততায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলো ২০৩০ সালে আজারবাইজানের স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করবে এবং গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমাবে আশা করা হচ্ছে।
সফরকালে চীন ও আজারবাইজান ভিসা-ফ্রি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আলিয়েভ এটিকে আজারবাইজানের জনগণের জন্য একটি ‘বিশেষ সুবিধা’ বলে অভিহিত করেছেন, এবং বলেছেন যা দু’দেশের মধ্যে মানুষের যোগাযোগ ও আদান-প্রদান ব্যাপকভাবে উত্সাহিত করবে। আজারবাইজান চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দেয়, ফ্লাইট বৃদ্ধি ও পর্যটন প্রচার ইত্যাদি উপায়ের মাধ্যমে চীনা পর্যটক আকর্ষণ করবে। একইসঙ্গে আজারবাইজান চীনের সঙ্গে শিক্ষার ক্ষেত্রের সহযোগিতা সম্প্রসারণ করতে চায়।
আলিয়েভ বলেন, আজারবাইজান ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ যৌথ নির্মাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। আজারবাইজান একটি সম্পূর্ণ পরিবহন অবকাঠামো ব্যবস্থা নির্মাণ করেছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করলে মালবাহী পরিবহনের দক্ষতা অনেক উন্নত হবে। আজারবাইজান চীনের বিনিয়োগকে স্বাগত জানায় এবং আশা করে নিজের ভৌগলিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে এশিয়া ও ইউরোপ সংযোগকারী একটি পরিবহন কেন্দ্র হয়ে উঠবে দেশটি।
তিনি বহুপাক্ষিক সহযোগিতার প্রতি আজারবাইজানের সমর্থনের কথাও বলেছেন। শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার একটি সংলাপ অংশীদার হিসেবে আলিয়েভ ‘শাংহাই স্পিরিট’-এর উচ্চ প্রশংসা করেছেন এবং সহযোগিতা আরও গভীর করার জন্য উন্মুখ। গ্লোবাল সাউথের সদস্য হিসেবে আজারবাইজান ও চীন বহুপক্ষবাদ সমর্থন, একতরফা হস্তক্ষেপের বিরোধিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে একই অবস্থানে রয়েছে, এবং চীনের সঙ্গে বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য একসাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।
সূত্র : তুহিনা-হাশিম-লিলি, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।