ঢাকা ০৫:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মহেশখালীতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ সামগ্রী বিতরণ করেছে কোস্ট গার্ড Logo কালীগঞ্জে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ Logo শেরপুর–ময়মনসিংহ সীমান্তে কোটি টাকার চোরাচালানী মালামাল সহ কাভার্ডভ্যান ও ইজিবাইক আটক Logo কটিয়াদীর বনগ্রাম বাজারে দুই প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকারের জরিমানা Logo সরাইলে এনসিপির উঠান বৈঠকে বক্তব্য দিয়ে শিক্ষকের দুঃখপ্রকাশ Logo ‎বরুড়ায় আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত Logo ভোলাহাট রেশম উন্নয়ন বোর্ডের জোনাল অফিস দুর্নীতির আখড়া Logo বরুড়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার ১১ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা Logo টেকনাফে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ ১ মাদক পাচারকারী আটক Logo শেরপুরে ১ বছর সাজাপ্রাপ্ত পলাতক কয়েদী গ্রেফতার

সুরজিৎ ঝা এর এক গুচ্ছ কবিতা

১. অর্জুনের প্রতি

হে পার্থ নীরব কেন,
নিক্ষেপ করো তীর।
ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করো,
হে অর্জুন, হে বীর।
কত সৈন্য মারা যাচ্ছে দেখ,
তব পিতামহের প্রহারে।
ধর্মের জয় প্রশস্ত হোক,
তব গান্ডিবের ঝ‌ঙ্কারে।
তব সম্মুখে রয়েছেন যাঁরা,
তাঁরা সকলেই শত্রুপক্ষ।
ধর্মের লাগি অধর্মের নাশ,
হোক আজ মূল লক্ষ্য।
কেন বৃথা ভেবে চলো,
কেন জড়াও মায়াজালে?
সকলকেই তো যেতে হবে,
নিজ সময় শেষ হলে।
সারথী যেথা ভগবান স্বয়ং,
বিরাজমান ধ্বজায় হনু।
যুদ্ধ যেথা ধর্মের লাগি,
সাক্ষী স্বয়ং ভানু।
হে পার্থ, তবু যদি সংশয়
থাকে তব মনে।
দেহ তব তীর মোরে,
পিতামহ বধিতে এখনে।
যাঁর মোহে তব গান্ডিব,
হয়ে পড়েছে দুর্বল।
তাঁর বানের আঘাতে দেখ,
মারা পড়ছে সৈন্যদল।
বচন ভুলিয়া চক্র হস্তে,
পিতামহ পানে ধায়।
প্রভুর ক্রোধ সংবরণ লাগি
পার্থ, প্রভু চরণে লুটায়।
ভীতগ্রস্থ হয়ে করোজোরে
অর্জুন,কহে প্রভু পানে।‌
একবার শান্ত হন যনার্ধন,
পিতামহ বধিবো নিজ বানে।
একথা শুনিয়া প্রভু পুনরায়
বিরাজ করেন নিজ স্থানে।
রথ চালনা করেন হরি,
পিতামহের রথ পানে।
চারদিক নিস্তব্ধ হয় আজ
দেখি,গান্ডিবের গর্জনে।
সহসা অম্বর আচ্ছাদিত করে,
অর্জুনের সহস্র বানে।
পার্থ হৃদয়ে বিঁধে তীর
ভীষ্মের দেহে নহে।
হে পার্থ, চালাও বান,
মৃদু কন্ঠে কৃষ্ণ কহে।
ভগবানের চক্ষু হতেও
আজ,অশ্রুর ধারা ঝরে।
গান্ডিব দেখি মাটিতে লুটায়,
মহা অপরাধবোধের ভরে।
পুষ্প হস্তে যাঁর চরণতলে,
প্রনাম জানান ভগবান।
এ জগতে দেবব্রত সম,
নেয় কেহ ভাগ্য বান।
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর অর্জুন,
কাঁদে যাঁহার পদ ধরে।
চিরবিশ্রাম রত পুত্র আজি,
নিজ মাতৃ ক্রোরে।

 

২. বৃদ্ধা

বৃদ্ধা দেখি কুঁজো হয়ে,
হেঁটে চলে রাস্তায়।
কর্মের ভার বয়ে চলে সে,
মেটাতে পেটের দায়।
কাছের মানুষ আছে তবু,
রাখে না কেউ হদিশ।
জীবনযুদ্ধে সে প্রতিনিয়ত,
হজম করে চলে বীষ।
এভাবেই একের পর এক,
বয়ে যেতে থাকে দিন।
কুঁজো শরীর আজ হয়ে পড়েছে,
জীর্নকায় ও ক্ষীন।
একপাশে দেখি খিদের জ্বালায়,
অসহায় মানুষের হাহাকার।
অন্যপাশে বিলাস বহুল জীবন,
করে চলে কেউ পার।
সবাই জীবনে বর্তমান তবু ,
লড়াইটা যেন একার।
এতো বড়ো পৃথিবীতে আজ,
কেউ নেয় এদের দেখার!!

৩. অসহায়

দুখী মুখে রয়েছি চেয়ে,
শিশিরে ভেজা পাতা।
কম্পিত আজ কন্ঠ যে মোর,
চিন্তা বহনকারী মাথা।।
সব কিছু যেন হারাতে বসেছি
উপায় নেই ফিরে পাওয়ার।
পিছু চেয়ে দেখি বন্ধ দোয়ার,
জায়গা নেই ফিরে যাওয়ার।।
অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তার মাঝে
যায় না দেখা কিছু।
কোথা হতে যেন ঘাতক ছায়া,
করে চলেছে মোর পিছু।।
শেষ হত্যা করে আজ,
হতে চায় সে ক্ষান্ত।
ঘাতকের ছুঁড়ির ছোঁয়ায় হবে,
এ অশান্ত জীবন শান্ত।।
সময় জানি ফুরিয়েছে মোর,
বন্ধ হবে এবার আঁখি ‌।
মরন নিকটে বুঝতে পেরে,
জীবন দিয়েছে ফাঁকি।।
যাওয়ার পূর্বে তাহার সাথে,
হবে না আর মোর দেখা।
পথিক হয়ে আঁধার পথে,
মিলিয়ে যাবো একা।

 

৪. স্বার্থ

ভুলের চোরাবালিতে হারিয়ে জগৎ,
ভুল আজ সব কিছু।
নিজেরে বড়ো দেখানোর লাগি যেথা,
অন্যকে দেখানো হয় নীচু।।
কথায় কথায় অরাজকতার হুংকার,
কথায় কথায় করে গর্জন।
কখনো সামান্য স্বার্থের জন্য করে,
গোলা – বারুদের বর্ষন।।
কোটি‌ টাকার ঋন মুকুব করা হয়,
যারা কুবেরের ন্যায় ধনপতি।
সামান্য কিছু টাকার জন্য কৃষকদের,
বেচতে হয় বাটি – ঘটি।।
কোটিপতিদের পায়ের তলায় যাঁরা,
দিবা – রাত্রি মাখান তেল।
তাঁরাই দেখি আবার ভরা দরবারে,
গরিবের মাথায় ভাঙেন বেল।।
দেশের আনাচে কানাচে সর্বত্র আজ,
ছড়িয়ে রয়েছে দুর্নীতি।
দরিদ্রের শোষন, ধনীদের পোষন,
এটাই দেখি সমাজের নীতি।।
শিক্ষা সংস্কৃতিতেও ভয় দেখিয়ে,
শুরু হয়েছে নানা ব্যবসা।
দুর্নীতির অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে,
মানুষের মনের সকল আশা।

 

৫. অন্ধের রাজত্ব

সারা বিশ্বজুড়ে অন্ধের রাজ,
অজ্ঞানতায় ডুবেছে সমাজ।
টাকা দিয়ে যেথা যায় সব কেনা,
বড়ো দায় আজ মানবেরে চেনা।
যেদিকে তাকাই দেখা যায় জাল,
সমাজও আজ দুগ্ধের ন্যায় ভেজাল।
এর‌ই মাঝে নতুন সমাজ
গড়ার নিয়েছি যে গুরুভার,
ভেবে চলি তাই প্রতিনিয়ত
খুলবে কেমনে জ্ঞানের দ্বার??
চিন্তার চোটে কপালে তে ভাঁজ,
ঘুচবে কেমনে দানবের রাজ??
দিনে দিনে দেখি বৃদ্ধি করেছে
অসুরেরা নিজেদের বংশ,
একতা ও শিক্ষার প্রসার ছাড়া
কেমনে হবে তা ধ্বংস??
মানবে মানবে শুরু হয়েছে,
জাতপাতের মিথ্যে দ্বন্দ্ব।
মন্দকে ত্যাগ না করিলে
ফিরবে কি উপায়ে ছন্দ??
অজ্ঞানতায় রাখতে জগৎ
শিক্ষাকে করা হচ্ছে শস্ত্র,
তাই দেখ আজ জ্ঞানের
রবি যেতে বসেছে অস্ত।

৬. দু – মুখো

সকল মানবের মধ্যে নাকি,
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাস।
তবে কেন আজ চারদিকে,
ছড়িয়েছে মিথ্যা – সন্ত্রাস?
নিজের কর্ম ত্যাগ করে এরা
অন্যের পেছনে করে‌ কাটি।
যাকে বিশ্বাস করে চলেছেন,
সত্যিই কি সে খাঁটি?
রাজনীতির পাঠ গ্ৰহন না করেও,
আজ অনেকেই রাজনীতিবিদ।
অন্যের জায়গা হাতানোর লাগি,
গেয়ে চলে নিন্দার গীত।
তেলের ওপর ঢালে তেল,
মাখনের ওপর মাখন।
নিজের অক্ষমতাগুলি এরা
এভাবেই রাখে গোপন।
তবুও কভু অসাবধানতা বশত,
পড়ে যদি এরা ধরা।
দোষ লুকোতে ঝরে পড়ে,
এদের মিথ্যে অশ্রুর ধারা।
সাংবাদিক না হয়েও অনেকে
দেখি প্রেরন করে সংবাদ।
সকল কর্ম ত্যাগ করে নিন্দা করাতে,
এরা করেছে আজ বাজিমাত।
কথার মাধ্যমে বশীকরণ করে,
করতে চায় এরা রাজ।
এরূপ কালকূট বিষের প্রভাবে
দূষিত হয়ে চলেছে সমাজ।

 

৭. জিজ্ঞাসা

হে‌‌ দেব তুমি অন্ধের কারাগারে,
পাঠিয়েছ কেন আলো?
হস্তহীনেরে বলে চলেছো কেন?
নিজ হাতে মশাল জ্বালো।।
তাদের‌ই দিকবিজয়ী বলো,
চেনে না যারা দিক।
হে দেব কেন পদহীনেরে ?
বানাতে চাও পথিক।
সাথে আছো দেখি তাদের,
করে‌ চলেছে যারা ভুল।
তবে কেন এ হেন বিচারের?
মোরা দিয়ে যাবো মাশুল।
তুমি হলে নাকি এ জগতের?
সব চেয়ে শক্তিমান।
তবে কেন অনাহারে যায়?
সহস্র জীবের প্রান…।
ত্রিভুবনে সকল জীবের,
আধার নাকি তুমি??
তবে‌ কেন কেও রাজপ্রাসাদে?
জোটে না কারও ভূমি।
জানতে পারি‌ মোরা কিসের লাগি?
রচিলে এমন বিধান।
চারদিকে কেন হত্যালীলা?
তুমি যদি হ‌ও প্রধান।

 

৮. মায়ার জাল

শত বর্ষের নিশি কেটে,
এলো বুঝি ভোর।
ওহে বন্দি গৃহী আজ তুই,
মনের দ্বার খোল।।
যুগ যুগ হতে অন্ধকার গৃহে,
খুঁজে গেলি নিজ সুখ।
মায়ার গোলামী করে গেলি
তাই, দেখলি না শান্তির মুখ।।
মনের সাথে আপোষ করে,
বয়ে চলে বহু দিন।
এভাবে আর‌ কাটাবি কত??
ওহে, চৈতন্য হীন।।
মায়ায় ভরা এ জগতে,
সত্য নাহি কিছু।
মোহের জালে আবদ্ধ হয়ে,
করে চলিস বৃথা পিছু।।
দেখ আজ কাটিয়ে আঁধার,
রবি -র হয়েছে উদয়।
সত্যের সন্ধানে গমন করো,
ছেড়ে মিথ্যে প্রনয়।‌।

৯. রাজার বিরুদ্ধে

দূর হতে শোনা যায় হুঙ্কার,
দেব – দানবের অস্ত্রের ঝঙ্কার,
যুদ্ধ শেষের আগেই দেখি,
সুরলোক হেরেছে স্বর্গ।
অসুরের হাতে অগ্নী যেথা,
গ্ৰহন করে‌ চলেছে অর্ঘ।
দেবরাজ আজ পলায়মান,
অসুরদের কাছে যুদ্ধবিমান,
দেবেরায় তাঁদের রাজার বিরুদ্ধে,
করে চলেছেন ষড়যন্ত্র।
দেবেরে বস করেছে তারা,
কানে ‌ঢেলে বিষ মন্ত্র।
সব দেবেরায় অন্তর হতে,
আজ হতে চান দেবরাজ।
শত রাজায় ঘেরা রাজসভাতে,
আর ইন্দ্রদেবের নেয় কাজ।
যুদ্ধ ছাড়ায় সর্বসম্মতিক্রমে,
স্বর্গ পেল মহা অসুর।
সিংহাসন লাভের পর হতে,
ধারন করলো রূপ পশুর।
স্বর্গজুড়ে আজ অসুরেরা সকল,
বন্দি হলেন সুরেদের দল।
বুঝলেন সুরেরা মনে মনে,
নিভেছে আশার আলো।
রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের,
এ কি রূপ পরিনাম হলো!

 

১০ নিজের প্রতি

আমার জন্য কান্না ঝরেছে অনেকের,
তবে কেউ আমার জন্য কাঁদে নি।
আমার জন্য দয়া করেছে সকলেই,
কিন্ত কেউ মন থেকে দোয়া করেনি।
কখনো বা মেনে গেছে সব‌ কিছু,
দুঃখের বিষয় মানতে আমাকে পারেনি।
মায়ার বাঁধনে বেঁধেছে অনেকে মোরে,
ভালোবাসায় বেঁধে‌ রাখবে বলে আসেনি।
জীবনে সাথে থাকবে ভেবেছিলাম যাঁরা,
“থাকবো” বলে অনেকেই পাশে থাকেনি।
যাদের জন্য করে গেলাম কত কিছু,
তারা কেউই বিদ্রোহ করতে ভাবেনি।
মনেরে আমি বুঝিয়েছিলেম বহু কথা
তবু,মনের সাথে আপোষ করে কভু পারিনি।
ভালো হয়ে ছিলাম জগতের কাছে,
মনের কাছে কভু ভালোই হতে পারিনি।
জগতের কাছে তুলনায় হয়ে থেকেছি,
এখনো অব্দি কভু উপমা হতে পারিনি।
দিগন্ত রেখায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছি,
তবু হেথা মোর খোঁজে কেউ আসেনি।

 

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মহেশখালীতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ সামগ্রী বিতরণ করেছে কোস্ট গার্ড

SBN

SBN

সুরজিৎ ঝা এর এক গুচ্ছ কবিতা

আপডেট সময় ১১:১৪:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৪

১. অর্জুনের প্রতি

হে পার্থ নীরব কেন,
নিক্ষেপ করো তীর।
ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করো,
হে অর্জুন, হে বীর।
কত সৈন্য মারা যাচ্ছে দেখ,
তব পিতামহের প্রহারে।
ধর্মের জয় প্রশস্ত হোক,
তব গান্ডিবের ঝ‌ঙ্কারে।
তব সম্মুখে রয়েছেন যাঁরা,
তাঁরা সকলেই শত্রুপক্ষ।
ধর্মের লাগি অধর্মের নাশ,
হোক আজ মূল লক্ষ্য।
কেন বৃথা ভেবে চলো,
কেন জড়াও মায়াজালে?
সকলকেই তো যেতে হবে,
নিজ সময় শেষ হলে।
সারথী যেথা ভগবান স্বয়ং,
বিরাজমান ধ্বজায় হনু।
যুদ্ধ যেথা ধর্মের লাগি,
সাক্ষী স্বয়ং ভানু।
হে পার্থ, তবু যদি সংশয়
থাকে তব মনে।
দেহ তব তীর মোরে,
পিতামহ বধিতে এখনে।
যাঁর মোহে তব গান্ডিব,
হয়ে পড়েছে দুর্বল।
তাঁর বানের আঘাতে দেখ,
মারা পড়ছে সৈন্যদল।
বচন ভুলিয়া চক্র হস্তে,
পিতামহ পানে ধায়।
প্রভুর ক্রোধ সংবরণ লাগি
পার্থ, প্রভু চরণে লুটায়।
ভীতগ্রস্থ হয়ে করোজোরে
অর্জুন,কহে প্রভু পানে।‌
একবার শান্ত হন যনার্ধন,
পিতামহ বধিবো নিজ বানে।
একথা শুনিয়া প্রভু পুনরায়
বিরাজ করেন নিজ স্থানে।
রথ চালনা করেন হরি,
পিতামহের রথ পানে।
চারদিক নিস্তব্ধ হয় আজ
দেখি,গান্ডিবের গর্জনে।
সহসা অম্বর আচ্ছাদিত করে,
অর্জুনের সহস্র বানে।
পার্থ হৃদয়ে বিঁধে তীর
ভীষ্মের দেহে নহে।
হে পার্থ, চালাও বান,
মৃদু কন্ঠে কৃষ্ণ কহে।
ভগবানের চক্ষু হতেও
আজ,অশ্রুর ধারা ঝরে।
গান্ডিব দেখি মাটিতে লুটায়,
মহা অপরাধবোধের ভরে।
পুষ্প হস্তে যাঁর চরণতলে,
প্রনাম জানান ভগবান।
এ জগতে দেবব্রত সম,
নেয় কেহ ভাগ্য বান।
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর অর্জুন,
কাঁদে যাঁহার পদ ধরে।
চিরবিশ্রাম রত পুত্র আজি,
নিজ মাতৃ ক্রোরে।

 

২. বৃদ্ধা

বৃদ্ধা দেখি কুঁজো হয়ে,
হেঁটে চলে রাস্তায়।
কর্মের ভার বয়ে চলে সে,
মেটাতে পেটের দায়।
কাছের মানুষ আছে তবু,
রাখে না কেউ হদিশ।
জীবনযুদ্ধে সে প্রতিনিয়ত,
হজম করে চলে বীষ।
এভাবেই একের পর এক,
বয়ে যেতে থাকে দিন।
কুঁজো শরীর আজ হয়ে পড়েছে,
জীর্নকায় ও ক্ষীন।
একপাশে দেখি খিদের জ্বালায়,
অসহায় মানুষের হাহাকার।
অন্যপাশে বিলাস বহুল জীবন,
করে চলে কেউ পার।
সবাই জীবনে বর্তমান তবু ,
লড়াইটা যেন একার।
এতো বড়ো পৃথিবীতে আজ,
কেউ নেয় এদের দেখার!!

৩. অসহায়

দুখী মুখে রয়েছি চেয়ে,
শিশিরে ভেজা পাতা।
কম্পিত আজ কন্ঠ যে মোর,
চিন্তা বহনকারী মাথা।।
সব কিছু যেন হারাতে বসেছি
উপায় নেই ফিরে পাওয়ার।
পিছু চেয়ে দেখি বন্ধ দোয়ার,
জায়গা নেই ফিরে যাওয়ার।।
অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তার মাঝে
যায় না দেখা কিছু।
কোথা হতে যেন ঘাতক ছায়া,
করে চলেছে মোর পিছু।।
শেষ হত্যা করে আজ,
হতে চায় সে ক্ষান্ত।
ঘাতকের ছুঁড়ির ছোঁয়ায় হবে,
এ অশান্ত জীবন শান্ত।।
সময় জানি ফুরিয়েছে মোর,
বন্ধ হবে এবার আঁখি ‌।
মরন নিকটে বুঝতে পেরে,
জীবন দিয়েছে ফাঁকি।।
যাওয়ার পূর্বে তাহার সাথে,
হবে না আর মোর দেখা।
পথিক হয়ে আঁধার পথে,
মিলিয়ে যাবো একা।

 

৪. স্বার্থ

ভুলের চোরাবালিতে হারিয়ে জগৎ,
ভুল আজ সব কিছু।
নিজেরে বড়ো দেখানোর লাগি যেথা,
অন্যকে দেখানো হয় নীচু।।
কথায় কথায় অরাজকতার হুংকার,
কথায় কথায় করে গর্জন।
কখনো সামান্য স্বার্থের জন্য করে,
গোলা – বারুদের বর্ষন।।
কোটি‌ টাকার ঋন মুকুব করা হয়,
যারা কুবেরের ন্যায় ধনপতি।
সামান্য কিছু টাকার জন্য কৃষকদের,
বেচতে হয় বাটি – ঘটি।।
কোটিপতিদের পায়ের তলায় যাঁরা,
দিবা – রাত্রি মাখান তেল।
তাঁরাই দেখি আবার ভরা দরবারে,
গরিবের মাথায় ভাঙেন বেল।।
দেশের আনাচে কানাচে সর্বত্র আজ,
ছড়িয়ে রয়েছে দুর্নীতি।
দরিদ্রের শোষন, ধনীদের পোষন,
এটাই দেখি সমাজের নীতি।।
শিক্ষা সংস্কৃতিতেও ভয় দেখিয়ে,
শুরু হয়েছে নানা ব্যবসা।
দুর্নীতির অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে,
মানুষের মনের সকল আশা।

 

৫. অন্ধের রাজত্ব

সারা বিশ্বজুড়ে অন্ধের রাজ,
অজ্ঞানতায় ডুবেছে সমাজ।
টাকা দিয়ে যেথা যায় সব কেনা,
বড়ো দায় আজ মানবেরে চেনা।
যেদিকে তাকাই দেখা যায় জাল,
সমাজও আজ দুগ্ধের ন্যায় ভেজাল।
এর‌ই মাঝে নতুন সমাজ
গড়ার নিয়েছি যে গুরুভার,
ভেবে চলি তাই প্রতিনিয়ত
খুলবে কেমনে জ্ঞানের দ্বার??
চিন্তার চোটে কপালে তে ভাঁজ,
ঘুচবে কেমনে দানবের রাজ??
দিনে দিনে দেখি বৃদ্ধি করেছে
অসুরেরা নিজেদের বংশ,
একতা ও শিক্ষার প্রসার ছাড়া
কেমনে হবে তা ধ্বংস??
মানবে মানবে শুরু হয়েছে,
জাতপাতের মিথ্যে দ্বন্দ্ব।
মন্দকে ত্যাগ না করিলে
ফিরবে কি উপায়ে ছন্দ??
অজ্ঞানতায় রাখতে জগৎ
শিক্ষাকে করা হচ্ছে শস্ত্র,
তাই দেখ আজ জ্ঞানের
রবি যেতে বসেছে অস্ত।

৬. দু – মুখো

সকল মানবের মধ্যে নাকি,
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বাস।
তবে কেন আজ চারদিকে,
ছড়িয়েছে মিথ্যা – সন্ত্রাস?
নিজের কর্ম ত্যাগ করে এরা
অন্যের পেছনে করে‌ কাটি।
যাকে বিশ্বাস করে চলেছেন,
সত্যিই কি সে খাঁটি?
রাজনীতির পাঠ গ্ৰহন না করেও,
আজ অনেকেই রাজনীতিবিদ।
অন্যের জায়গা হাতানোর লাগি,
গেয়ে চলে নিন্দার গীত।
তেলের ওপর ঢালে তেল,
মাখনের ওপর মাখন।
নিজের অক্ষমতাগুলি এরা
এভাবেই রাখে গোপন।
তবুও কভু অসাবধানতা বশত,
পড়ে যদি এরা ধরা।
দোষ লুকোতে ঝরে পড়ে,
এদের মিথ্যে অশ্রুর ধারা।
সাংবাদিক না হয়েও অনেকে
দেখি প্রেরন করে সংবাদ।
সকল কর্ম ত্যাগ করে নিন্দা করাতে,
এরা করেছে আজ বাজিমাত।
কথার মাধ্যমে বশীকরণ করে,
করতে চায় এরা রাজ।
এরূপ কালকূট বিষের প্রভাবে
দূষিত হয়ে চলেছে সমাজ।

 

৭. জিজ্ঞাসা

হে‌‌ দেব তুমি অন্ধের কারাগারে,
পাঠিয়েছ কেন আলো?
হস্তহীনেরে বলে চলেছো কেন?
নিজ হাতে মশাল জ্বালো।।
তাদের‌ই দিকবিজয়ী বলো,
চেনে না যারা দিক।
হে দেব কেন পদহীনেরে ?
বানাতে চাও পথিক।
সাথে আছো দেখি তাদের,
করে‌ চলেছে যারা ভুল।
তবে কেন এ হেন বিচারের?
মোরা দিয়ে যাবো মাশুল।
তুমি হলে নাকি এ জগতের?
সব চেয়ে শক্তিমান।
তবে কেন অনাহারে যায়?
সহস্র জীবের প্রান…।
ত্রিভুবনে সকল জীবের,
আধার নাকি তুমি??
তবে‌ কেন কেও রাজপ্রাসাদে?
জোটে না কারও ভূমি।
জানতে পারি‌ মোরা কিসের লাগি?
রচিলে এমন বিধান।
চারদিকে কেন হত্যালীলা?
তুমি যদি হ‌ও প্রধান।

 

৮. মায়ার জাল

শত বর্ষের নিশি কেটে,
এলো বুঝি ভোর।
ওহে বন্দি গৃহী আজ তুই,
মনের দ্বার খোল।।
যুগ যুগ হতে অন্ধকার গৃহে,
খুঁজে গেলি নিজ সুখ।
মায়ার গোলামী করে গেলি
তাই, দেখলি না শান্তির মুখ।।
মনের সাথে আপোষ করে,
বয়ে চলে বহু দিন।
এভাবে আর‌ কাটাবি কত??
ওহে, চৈতন্য হীন।।
মায়ায় ভরা এ জগতে,
সত্য নাহি কিছু।
মোহের জালে আবদ্ধ হয়ে,
করে চলিস বৃথা পিছু।।
দেখ আজ কাটিয়ে আঁধার,
রবি -র হয়েছে উদয়।
সত্যের সন্ধানে গমন করো,
ছেড়ে মিথ্যে প্রনয়।‌।

৯. রাজার বিরুদ্ধে

দূর হতে শোনা যায় হুঙ্কার,
দেব – দানবের অস্ত্রের ঝঙ্কার,
যুদ্ধ শেষের আগেই দেখি,
সুরলোক হেরেছে স্বর্গ।
অসুরের হাতে অগ্নী যেথা,
গ্ৰহন করে‌ চলেছে অর্ঘ।
দেবরাজ আজ পলায়মান,
অসুরদের কাছে যুদ্ধবিমান,
দেবেরায় তাঁদের রাজার বিরুদ্ধে,
করে চলেছেন ষড়যন্ত্র।
দেবেরে বস করেছে তারা,
কানে ‌ঢেলে বিষ মন্ত্র।
সব দেবেরায় অন্তর হতে,
আজ হতে চান দেবরাজ।
শত রাজায় ঘেরা রাজসভাতে,
আর ইন্দ্রদেবের নেয় কাজ।
যুদ্ধ ছাড়ায় সর্বসম্মতিক্রমে,
স্বর্গ পেল মহা অসুর।
সিংহাসন লাভের পর হতে,
ধারন করলো রূপ পশুর।
স্বর্গজুড়ে আজ অসুরেরা সকল,
বন্দি হলেন সুরেদের দল।
বুঝলেন সুরেরা মনে মনে,
নিভেছে আশার আলো।
রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের,
এ কি রূপ পরিনাম হলো!

 

১০ নিজের প্রতি

আমার জন্য কান্না ঝরেছে অনেকের,
তবে কেউ আমার জন্য কাঁদে নি।
আমার জন্য দয়া করেছে সকলেই,
কিন্ত কেউ মন থেকে দোয়া করেনি।
কখনো বা মেনে গেছে সব‌ কিছু,
দুঃখের বিষয় মানতে আমাকে পারেনি।
মায়ার বাঁধনে বেঁধেছে অনেকে মোরে,
ভালোবাসায় বেঁধে‌ রাখবে বলে আসেনি।
জীবনে সাথে থাকবে ভেবেছিলাম যাঁরা,
“থাকবো” বলে অনেকেই পাশে থাকেনি।
যাদের জন্য করে গেলাম কত কিছু,
তারা কেউই বিদ্রোহ করতে ভাবেনি।
মনেরে আমি বুঝিয়েছিলেম বহু কথা
তবু,মনের সাথে আপোষ করে কভু পারিনি।
ভালো হয়ে ছিলাম জগতের কাছে,
মনের কাছে কভু ভালোই হতে পারিনি।
জগতের কাছে তুলনায় হয়ে থেকেছি,
এখনো অব্দি কভু উপমা হতে পারিনি।
দিগন্ত রেখায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছি,
তবু হেথা মোর খোঁজে কেউ আসেনি।