ঢাকা ০৭:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

সৎ ভাইদের ফাঁসাতে বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েকে খুন: ঘাতক বাবার আদালতে আত্মসমর্পণ

শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুরে বাক্‌প্রতিবন্ধী কিশোরী সাদিয়া খাতুনকে (১৩) কুপিয়ে হত্যা করার চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি ওই কিশোরীর বাবা জমাদার মিয়া অবশেষে বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। এর আগে নিহত ওই কিশোরীর মা মারুফা বেগম তার বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে ছিল জমাদার মিয়া।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে স্বেচ্ছায় সদর জি. আর আমলি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জমাদার মিয়া। পরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মাহমুদ তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

শেরপুর সদর থানার ওসি তদন্ত জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের পয়স্তীর চর এলাকার একটি সবজি খেত থেকে ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

অভিযোগ উঠে, শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের দশানিপাড়ার কোমর শেকের ছেলে জমাদার মিয়া তার সৎ ভাইদের ফাঁসাতে নিজের প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিজেই কুপিয়ে খুন করেছেন। এদিকে হত্যাকারীকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বাবা জমাদার মিয়াকে। ইতোমধ্যেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাবার সম্পৃক্ততার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। পরদিন মঙ্গলবার বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন সাদিয়ার মা মারুফা বেগম। মামলায় আসামি করা হয় সাদিয়ার বাবা সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে খবর প্রকাশ হয় এবং এতে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বাবা হয়ে নিজের প্রতিবন্ধী কিশোরী মেয়েকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করায় ঘাতক বাবাকে গ্রেফতারের দাবি জোরালো হতে থাকে। এদিকে পুলিশ হন্নে হয়ে ঘাতক বাবার সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় হানা দিতে থাকে। ফলে বারবার পুলিশের তাড়া খেয়ে অবশেষে মূল আসামি ঘাতক বাবা জমাদার আলী (৫০) আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

আত্মসমর্পণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপ- পরিদর্শক (এসআই) মো. তারেক বিন হাসান জানান, এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে জমাদার আলী অত্যন্ত দুষ্ট প্রকৃতির ও মামলাবাজ লোক। হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগে জমাদার তার বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এমনটি সিসিটিভি ফোটেজে দেখা গেছে। সাদিয়া হত্যার পর থেকেই তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছিল। পুলিশের তাড়া খেয়ে সে বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুব শিগগিরই আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে খুনের প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটন হবে আশা করছি।

এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসী জানান জমাদার মিয়া একজন জুয়ারি। জুয়া খেলে অর্থ সম্পদ শেষ করে সৎ ভাইদের ঠকাতে তাদের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চালিয়ে আসছিল। স্থানীয় কামারেরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান দুলাল মাস্টার বলেন, ‘এটা জঘন্যতম একটা অপরাধ। নিজের ভাইদের ফাঁসানোর জন্যই এমন কাজ করেছে জমাদার মিয়া। সে জুয়া খেলে সব শেষ করে এখন ভাইদের সম্পদ নিয়ে বিরোধ করে আসছে। শেষ পর্যন্ত ভাইদের ফাঁসানোর জন্য বাবা হয়ে একটা প্রতিবন্ধী নিরীহ মেয়েকে খুন করলো।’

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দেখেছি প্রতিবন্ধী মেয়েটাকে নিয়ে জমাদার মিয়া এই বন্ধে (মাঠে) আসে। এসময় মেয়েডার হাতে দাও দেখেছি। এরপরই মেয়েডারে কুপাইয়া মাইরা ফালায়।’

কামারেরচর বাজারের এক হোটেল মালিক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমার হোটেলে এসে মেয়েটিকে সিংগারা খাওয়ায় জমাদার মিয়া। এ সময় মেয়েটির হাতে একটা দাও ছিল। এরপর তারা মাঠের দিকে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই লোকজন মেয়েটার লাশ দেখতে পায়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইনসাফভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়তে চাই -আলহাজ্ব সেলিম মাহমুদ

SBN

SBN

সৎ ভাইদের ফাঁসাতে বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েকে খুন: ঘাতক বাবার আদালতে আত্মসমর্পণ

আপডেট সময় ০৬:৩৮:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুরে বাক্‌প্রতিবন্ধী কিশোরী সাদিয়া খাতুনকে (১৩) কুপিয়ে হত্যা করার চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি ওই কিশোরীর বাবা জমাদার মিয়া অবশেষে বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। এর আগে নিহত ওই কিশোরীর মা মারুফা বেগম তার বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে ছিল জমাদার মিয়া।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে স্বেচ্ছায় সদর জি. আর আমলি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জমাদার মিয়া। পরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মাহমুদ তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

শেরপুর সদর থানার ওসি তদন্ত জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের পয়স্তীর চর এলাকার একটি সবজি খেত থেকে ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

অভিযোগ উঠে, শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের দশানিপাড়ার কোমর শেকের ছেলে জমাদার মিয়া তার সৎ ভাইদের ফাঁসাতে নিজের প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিজেই কুপিয়ে খুন করেছেন। এদিকে হত্যাকারীকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বাবা জমাদার মিয়াকে। ইতোমধ্যেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাবার সম্পৃক্ততার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। পরদিন মঙ্গলবার বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন সাদিয়ার মা মারুফা বেগম। মামলায় আসামি করা হয় সাদিয়ার বাবা সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে খবর প্রকাশ হয় এবং এতে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বাবা হয়ে নিজের প্রতিবন্ধী কিশোরী মেয়েকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করায় ঘাতক বাবাকে গ্রেফতারের দাবি জোরালো হতে থাকে। এদিকে পুলিশ হন্নে হয়ে ঘাতক বাবার সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় হানা দিতে থাকে। ফলে বারবার পুলিশের তাড়া খেয়ে অবশেষে মূল আসামি ঘাতক বাবা জমাদার আলী (৫০) আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

আত্মসমর্পণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপ- পরিদর্শক (এসআই) মো. তারেক বিন হাসান জানান, এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে জমাদার আলী অত্যন্ত দুষ্ট প্রকৃতির ও মামলাবাজ লোক। হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগে জমাদার তার বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এমনটি সিসিটিভি ফোটেজে দেখা গেছে। সাদিয়া হত্যার পর থেকেই তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছিল। পুলিশের তাড়া খেয়ে সে বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুব শিগগিরই আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে খুনের প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটন হবে আশা করছি।

এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসী জানান জমাদার মিয়া একজন জুয়ারি। জুয়া খেলে অর্থ সম্পদ শেষ করে সৎ ভাইদের ঠকাতে তাদের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চালিয়ে আসছিল। স্থানীয় কামারেরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান দুলাল মাস্টার বলেন, ‘এটা জঘন্যতম একটা অপরাধ। নিজের ভাইদের ফাঁসানোর জন্যই এমন কাজ করেছে জমাদার মিয়া। সে জুয়া খেলে সব শেষ করে এখন ভাইদের সম্পদ নিয়ে বিরোধ করে আসছে। শেষ পর্যন্ত ভাইদের ফাঁসানোর জন্য বাবা হয়ে একটা প্রতিবন্ধী নিরীহ মেয়েকে খুন করলো।’

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দেখেছি প্রতিবন্ধী মেয়েটাকে নিয়ে জমাদার মিয়া এই বন্ধে (মাঠে) আসে। এসময় মেয়েডার হাতে দাও দেখেছি। এরপরই মেয়েডারে কুপাইয়া মাইরা ফালায়।’

কামারেরচর বাজারের এক হোটেল মালিক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমার হোটেলে এসে মেয়েটিকে সিংগারা খাওয়ায় জমাদার মিয়া। এ সময় মেয়েটির হাতে একটা দাও ছিল। এরপর তারা মাঠের দিকে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই লোকজন মেয়েটার লাশ দেখতে পায়।