
মো: নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার
দেশের সুন্দর পর্যটন জেলাগুলোর মধ্যে রাঙামাটি অন্যতম। কাপ্তাই লেক, লেকের মধ্যে ডুবে থাকা পাহাড়, পাহাড়ি নদী, মেঘ আর ঝরনা যেন জীবন্ত ক্যানভাস। এখানকার ঝুলন্ত সেতু পর্যটকদের অন্যতম বেড়ানোর স্থান। লেকের স্বচ্ছ পানিতে পর্যটকরা ঘুরে রেড়ান। উপভোগ করেন পাহাড়-হ্রদ আর মেঘ-বৃষ্টির গল্প। এ উপভোগে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ‘হাউস বোট’।
যান্ত্রিক জীবনে ক্লান্তি দূর করতে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবসহ প্রিয় মানুষ নিয়ে অনেকেই ছুটে আসেন রাঙামাটিতে। ইতোমধ্যে তাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে হাউস বোট। কারণ এসব বোটে রয়েছে সারা দিন জলে ভেসে হ্রদ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি রাত যাপনেরও সুযোগ। আগে নৌকায় করে লেকে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ থাকলেও রাত যাপনের সুযোগ ছিল না।
কাপ্তাই হ্রদে ভেসে বেড়ানোর বেশ কয়েকটি হাউস বোট রয়েছে। প্রমোদিনী, রাঙাতরী, স্বপ্নডিঙ্গি, মাউরুন এগুলোর মধ্যে অন্যতম। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এসব বোটের বিলাসবহুল কক্ষে শুয়ে জানালা দিয়ে উপভোগ করা যায় দিগন্তবিস্তৃত কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য। ছাদে রয়েছে আড্ডা দেওয়ার জন্য বাঁশের তৈরি সোফা। পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী বাংলা খাবারের পাশাপাশি রয়েছে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী খাবার।
চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছেন আরফিন মেহেদী ও তাসলিম সুলতানা। এ নবদম্পতি জানান, বিয়ের পরে তারা প্রথম ভ্রমণে এসেছেন। এই ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখতে তারা বেছে নিয়েছেন কাপ্তাই হ্রদ। এখানকার লেকে ঘুরছেন এবং হাউস বোটে রাত যাপন করছেন।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসছেন ইসরাফিল হক নামে একজন। তিনি বলেন, ‘আগে শুধু নৌকা ভাড়া করে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঘুরে বেড়ানো যেত। রাত যাপনের ব্যবস্থা ছিল না। এ ধরনের ব্যবস্থা আমরা কাশ্মিরে দেখেছি। এখন দেশে এ সুবিধা থাকায় বাইরের দেশে যেতে হবে না। খুব ভালো লাগছে, উপভোগ করছি।’
সঞ্জয় দত্ত নামে আরেক পর্যটক বলেন, হাউস বোট থেকে রাতের আকাশ বা সকালের সৌন্দর্য খুবই উপভোগ্য। লেকের স্বচ্ছ পানিতে ভেসে ভেসে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখা এক অন্যরকম অনুভূতি, যা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। অসাধারণ! একটা মালদ্বীপ মালদ্বীপ ভাব চলে আসে।
প্রমোদিনী হাউস বোটের স্বত্বাধিকারী দীপাঞ্জন বলেন, আমরাই প্রথম কাপ্তাই হ্রদে হাউস বোট নিয়ে আসি। আমাদের দেখাদেখি অনেকেই হাউস বোট নামিয়েছেন। পর্যটকরাও থাকছেন, উপভোগ করছেন। পর্যটন জেলা রাঙামটিতে পর্যটকদের উপভোগের নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হলো।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে প্রথম হাউস বোট হ্রদের জলে নামাই। চাহিদা দেখে একে একে চারটি বোট নামিয়েছি। দিন দিন এ চাহিদা আরও বাড়ছে, পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তাই আরও একটি বোট নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। পর্যটকদের সেবা দিতে আমরা সব সময় প্রস্তুত।
মাউরুন হাউস বোটের কর্মকর্তা উচ্ছল চাকমা জানান, হাউস বোট হচ্ছে পর্যটনের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা। আমরা শুরু থেকেই সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি, এই পর্যটন মৌসুমেও পর্যটকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া মিলবে। এটিকে আরও উন্নত করা হলে পর্যটনক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখবে।
রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য হাবীব আজম
বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এ ধরনের উদ্যোগ আরও দরকার। আমরা চাই দেশের পর্যটন খাত আরও সমৃদ্ধ হোক, সুন্দর হোক। রাঙামাটিতে মানুষ ভ্রমণ করুক। হ্রদ-পাহাড় আর প্রকৃতি সম্পর্কে জানুক।