
শাহিন আলম আশিক
মহান বিজয় দিবস কেবল একটি তারিখ নয়; এটি জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের এক গৌরবময় অধ্যায়—আত্ম-সমীক্ষা ও নতুন শপথ গ্রহণের দিন। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রাম শেষে, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছিল চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ভূখণ্ডের জন্ম হয়। এই বিজয় ছিল দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনা ও ঔপনিবেশিক শাসনের শেকল ভাঙার এক ঐতিহাসিক মুক্তির লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি।
এই বিজয়ের বীজ বপন হয়েছিল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও বৈষম্যমুক্ত সমাজের অঙ্গীকারে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই সংগ্রামী আদর্শ আজও আমাদের চলার পথে চিরন্তন অনুপ্রেরণা জুগিয়ে আসছে। সম্প্রতি, যখন তরুণ প্রজন্ম ৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আত্মত্যাগ ও আত্মাহুতি দিল, তা ছিল আসলে মুক্তির লড়াইয়ের সেই অসমাপ্ত অধ্যায়টিকে পূর্ণতা দেওয়ারই এক দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা। তাদের সেই ত্যাগ প্রমাণ করে—স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা পূরণের এই মুক্তির লড়াই আজও জারি আছে।
তবে গভীর পরিতাপের বিষয়, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত ‘সোনার বাংলার’ কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন আজও সম্পূর্ণ পূরণ হয়নি। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জবাবদিহিতার অভাব এবং বৈষম্যমূলক আর্থসামাজিক কাঠামো আজও আমাদের অগ্রযাত্রার পথে বড় বাধা হিসেবে বিদ্যমান। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও ৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আত্মদানকারী তরুণদের স্বপ্ন ছিল শোষণমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও দুর্নীতিমুক্ত একটি কল্যাণমুখী বাংলাদেশ। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের পথে আজ এক নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ ও পরাশক্তির ছায়াতল।
এই বিজয় দিবসের মূল অঙ্গীকার হোক: দেশের সার্বভৌমত্ব ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন যেকোনো প্রকার বিদেশি হস্তক্ষেপ বা আধিপত্যবাদ (Hegemony) থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত একটি স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা। আমরা একটি সুন্দর ও নতুন বাংলাদেশ চাই, যা হবে সম্পূর্ণরূপে জনগণের ইচ্ছানুসারে পরিচালিত, যেখানে কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কৌশলগত বা অর্থনৈতিক প্রভাব দেশের মৌলিক স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেবে না। ভারতীয় আধিপত্যবাদ মুক্ত একটি স্বনির্ভর ও সার্বভৌম বাংলাদেশই হোক নতুন প্রজন্মের চূড়ান্ত প্রত্যাশা ও মুক্তির নতুন লড়াইয়ের ডাক।
তাই, মহান বিজয় দিবসের এই পুণ্যলগ্নে, অতীতের গ্লানি ভুলে দলমত নির্বিশেষে গোটা জাতিকে এই বৃহত্তর লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটিই হোক আমাদের নতুন প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা পূরণের একমাত্র পথ।
দুর্নীতি ও সন্ত্রাসকে সমূলে উৎপাটন করে, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং প্রত্যাশিত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং প্রত্যাশিত সার্বভৌম বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতিটি নাগরিককে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মূল লক্ষ্য তার সার্থকতা লাভ করবে। ১৬ই ডিসেম্বরের এই দিনে আমাদের শপথ হোক—অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং সকল প্রকার আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই হবে মুক্তির লড়াইয়ের নবতম অধ্যায়।
মুক্তির লড়াই ডেস্ক : 






















