ঢাকা ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শেরপুর-ময়মনসিংহ সীমান্তে বিপুল ভারতীয় মাদক ও চোরাচালানী মালামাল আটক Logo প্রাণের বিনিময়ে সংবাদ—সাংবাদিক সুরক্ষা কেন এখনো স্বপ্ন Logo শেরপুরে সাংবাদিকের ওপর চোরাকারবারিদের হামলা, গ্রেপ্তার ৩ Logo কটিয়াদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় দাদি-নাতনির মৃত্যু, আহত ৫ Logo লালমনিরহাট সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে পুশ ইন করেছে ভারত Logo রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের দাবী Logo ব্রাহ্মণপাড়ায় বডিফিটিং গাঁজাসহ বাবা-ছেলে আটক Logo চান্দিনায় প্রাইভেটকার চাপায় মা ও মেয়ে নিহত Logo চান্দিনা বিএনপি’র কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত Logo রাজশাহীতে অস্ত্র, গুলি ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার, পানির নিচে যৌথ অভিযান

ভরা মৌসুমেও সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে ইলিশ

বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো

ভরা মৌসুম, ঝাকে ঝাকে ধরা পড়ছে জেলেদের জ্বালে, সাগর থেকে ট্রলার ভরে ভরে আসছে দেশের বিভিন্ন মোকামে, তবুও সাধারণ মানুষের ভাগ্যয় জুটছে না ইলিশ মাছ।

বছর ঘুরে ঠিক এই সময়ে ইলিশ মাছের ছড়াছড়ি থাকে বাজারে কমবেশি সব ধরনের মানুষই সাধ্য অনুযায়ী ইলিশ মাছ কিনে থাকে কিন্তু এবার ঘটছে তার সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র বেশ কয়েক বছর ধরে ইলিশ মাছের দাম উর্ধ্বমুখী থাকার কারণে সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইলিশ মাছ যেন সোনার হরিণ ,তারপর আবার এবছর মৌসুম শুরুর প্রথমদিকে তুলনামূলক বাজারগুলোতে মাছের সরবরাহ কম থাকলেও বর্তমানে বাজারে ইলিশ মাছের ছড়াছড়ি।

গত সপ্তাহ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত লক্ষ্য করা গেছে সাগর থেকে নদীপথে বড় বড় ট্রলার ভরে খুলনার পাইকারি আড়ৎ গুলোতে ইলিশ মাছ আসলেও সেগুলো রাজধানী সহ দেশের নামিদামি বাজারে চলে যাচ্ছে ফলে খুলনার ক্রেতাদের নাগালের বাইরে থেকেই যাচ্ছে স্বপ্ন সাধের মাস ইলিশ। বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সমুদ্রে যেতে না পারায় ইলিশের সরবরাহ কম ছিল কিন্তু এ সপ্তাহের শুরু থেকে বাজার পর্যায়ে মাছের সরবরাহ লক্ষণীয় তবে মাছ অনুপাতে দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সাধারণ ক্রেতারা স্বপ্ন সাধের ইলিশ মাছ কেনার উদ্দেশ্যে বাজারে এলেও আকাশছোঁয়া দাম দেখে অনেকেই ইলিশ না কিনে হতাশ হয়ে ফিরেছেন। প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের মৌসুম ধরা হয়। তবে খুলনার বাজারগুলোতে এ সময়ে ইলিশের দেখা মিললেও চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। বিশেষ করে এক কেজি ওজনের ইলিশ এখন প্রায় অনুপস্থিত। গত শুক্রবার থেকে আজকের দিন পর্যন্ত খুলনার রূপসা আড়ৎ, মিস্ত্রীপাড়া বাজার ও নতুন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

তুলনামূলক ছোট আকারের ইলিশ বা জাটকা বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও বাজারে তা অনেক বেশি দেখা গেছে। ৫ থেকে ৬টি ছোট মাছ মিলে এক কেজি হয় এমন ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশই এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে, যার দাম ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি। ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মিলছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজিতে। মাত্র কয়েকটি দোকানে এক কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া গেলেও তার দাম আকাশছোঁয়া।

কেজিপ্রতি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। সাধারণ মানুষের কাছে ইলিশ এখন যেন সোনার হরিণ। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। উল্লেখযোগ্য ভাবে বলা যেতে পারে খুলনার রূপসা আড়ৎ হচ্ছে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি মাছের বাজার, যেখান থেকে বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে নিয়ে যান। শেখপাড়া বাজারের একজন বিক্রেতা বলেন, ‘মাছের যে দাম, তা কিনে বিক্রি করতে পারব কি না সন্দেহ। ৮০০ গ্রাম ইলিশ ১ হাজার ৪০০ টাকায় কিনে কিভাবে বিক্রি করব, তবুও কিছু মাছ নিচ্ছি। নতুন বাজারে মাছ কিনতে আশা একজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বছরে একদিন ইলিশ খেতে পারব না।

বাজারে কোনো নিয়ম নেই। যে যেমন পারছে, দাম চাচ্ছে। ৮০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কেনা আমাদের মতো চাকরিজীবীদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ অপরদিকে মিস্ত্রীপাড়া বাজারের আর একজন ক্রেতা বলেন, ইলিশ মাছ কিনতেই বাজারে এসেছিলাম। দাম শুনে এখন অন্য মাছ কিনে বাড়ি যাচ্ছি।
দামের ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতি। রূপসা পাইকারি বাজারের বেশ কয়েকজন আড়তদার বলেন,
এ সময়ে যে পরিমাণ ইলিশ আসার কথা, তার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। চাহিদা বেশি থাকায় দামও চড়া। তবে গত দুই দিনের তুলনায় দাম কিছুটা কমলেও সাধারণ ক্রেতাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

খুলনা মৎস্য অধিদফতরের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে ইলিশের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। গত সপ্তাহে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সমুদ্রে যেতে পারেনি, ফলে সরবরাহ কম। এখন জেলেরা সমুদ্র থেকে ফিরছে, আগামী সপ্তাহে দাম কিছুটা কমবে বলেও আশা করছি কিন্তু সব জায়গার মতো এখানেও যদি সিন্ডিকেটের কালো থাবা গ্রাস করে তাহলে দাম কমা তো দূরের কথা সাধারণ দরিদ্র মানুষদের জন্য ইলিশ মাছ থাকবে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শেরপুর-ময়মনসিংহ সীমান্তে বিপুল ভারতীয় মাদক ও চোরাচালানী মালামাল আটক

SBN

SBN

ভরা মৌসুমেও সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে ইলিশ

আপডেট সময় ০৩:৩৭:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো

ভরা মৌসুম, ঝাকে ঝাকে ধরা পড়ছে জেলেদের জ্বালে, সাগর থেকে ট্রলার ভরে ভরে আসছে দেশের বিভিন্ন মোকামে, তবুও সাধারণ মানুষের ভাগ্যয় জুটছে না ইলিশ মাছ।

বছর ঘুরে ঠিক এই সময়ে ইলিশ মাছের ছড়াছড়ি থাকে বাজারে কমবেশি সব ধরনের মানুষই সাধ্য অনুযায়ী ইলিশ মাছ কিনে থাকে কিন্তু এবার ঘটছে তার সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র বেশ কয়েক বছর ধরে ইলিশ মাছের দাম উর্ধ্বমুখী থাকার কারণে সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইলিশ মাছ যেন সোনার হরিণ ,তারপর আবার এবছর মৌসুম শুরুর প্রথমদিকে তুলনামূলক বাজারগুলোতে মাছের সরবরাহ কম থাকলেও বর্তমানে বাজারে ইলিশ মাছের ছড়াছড়ি।

গত সপ্তাহ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত লক্ষ্য করা গেছে সাগর থেকে নদীপথে বড় বড় ট্রলার ভরে খুলনার পাইকারি আড়ৎ গুলোতে ইলিশ মাছ আসলেও সেগুলো রাজধানী সহ দেশের নামিদামি বাজারে চলে যাচ্ছে ফলে খুলনার ক্রেতাদের নাগালের বাইরে থেকেই যাচ্ছে স্বপ্ন সাধের মাস ইলিশ। বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সমুদ্রে যেতে না পারায় ইলিশের সরবরাহ কম ছিল কিন্তু এ সপ্তাহের শুরু থেকে বাজার পর্যায়ে মাছের সরবরাহ লক্ষণীয় তবে মাছ অনুপাতে দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সাধারণ ক্রেতারা স্বপ্ন সাধের ইলিশ মাছ কেনার উদ্দেশ্যে বাজারে এলেও আকাশছোঁয়া দাম দেখে অনেকেই ইলিশ না কিনে হতাশ হয়ে ফিরেছেন। প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের মৌসুম ধরা হয়। তবে খুলনার বাজারগুলোতে এ সময়ে ইলিশের দেখা মিললেও চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। বিশেষ করে এক কেজি ওজনের ইলিশ এখন প্রায় অনুপস্থিত। গত শুক্রবার থেকে আজকের দিন পর্যন্ত খুলনার রূপসা আড়ৎ, মিস্ত্রীপাড়া বাজার ও নতুন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

তুলনামূলক ছোট আকারের ইলিশ বা জাটকা বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও বাজারে তা অনেক বেশি দেখা গেছে। ৫ থেকে ৬টি ছোট মাছ মিলে এক কেজি হয় এমন ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশই এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে, যার দাম ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি। ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মিলছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজিতে। মাত্র কয়েকটি দোকানে এক কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া গেলেও তার দাম আকাশছোঁয়া।

কেজিপ্রতি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। সাধারণ মানুষের কাছে ইলিশ এখন যেন সোনার হরিণ। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। উল্লেখযোগ্য ভাবে বলা যেতে পারে খুলনার রূপসা আড়ৎ হচ্ছে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি মাছের বাজার, যেখান থেকে বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে নিয়ে যান। শেখপাড়া বাজারের একজন বিক্রেতা বলেন, ‘মাছের যে দাম, তা কিনে বিক্রি করতে পারব কি না সন্দেহ। ৮০০ গ্রাম ইলিশ ১ হাজার ৪০০ টাকায় কিনে কিভাবে বিক্রি করব, তবুও কিছু মাছ নিচ্ছি। নতুন বাজারে মাছ কিনতে আশা একজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বছরে একদিন ইলিশ খেতে পারব না।

বাজারে কোনো নিয়ম নেই। যে যেমন পারছে, দাম চাচ্ছে। ৮০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কেনা আমাদের মতো চাকরিজীবীদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ অপরদিকে মিস্ত্রীপাড়া বাজারের আর একজন ক্রেতা বলেন, ইলিশ মাছ কিনতেই বাজারে এসেছিলাম। দাম শুনে এখন অন্য মাছ কিনে বাড়ি যাচ্ছি।
দামের ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতি। রূপসা পাইকারি বাজারের বেশ কয়েকজন আড়তদার বলেন,
এ সময়ে যে পরিমাণ ইলিশ আসার কথা, তার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। চাহিদা বেশি থাকায় দামও চড়া। তবে গত দুই দিনের তুলনায় দাম কিছুটা কমলেও সাধারণ ক্রেতাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

খুলনা মৎস্য অধিদফতরের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে ইলিশের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। গত সপ্তাহে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সমুদ্রে যেতে পারেনি, ফলে সরবরাহ কম। এখন জেলেরা সমুদ্র থেকে ফিরছে, আগামী সপ্তাহে দাম কিছুটা কমবে বলেও আশা করছি কিন্তু সব জায়গার মতো এখানেও যদি সিন্ডিকেটের কালো থাবা গ্রাস করে তাহলে দাম কমা তো দূরের কথা সাধারণ দরিদ্র মানুষদের জন্য ইলিশ মাছ থাকবে ধরাছোঁয়ার বাইরে।