ঢাকা ০৫:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ছিনতাইকারীর হামলায় জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা পার্থ আহত Logo ঝিনাইদহে বিড়াল হত্যার ঘটনায় মামলা : গ্রেফতার -২ Logo কালীগঞ্জে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নায়েব আলী’র মৃত্যু Logo ইচ্ছে পূরণ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ Logo বিএনপি নেতা ফেরদৌস আলম মৃধা নিজস্ব অর্থায়নের বলদী গ্রামের বেহাল রাস্তা গুলো পূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেন Logo সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রেরণ করে সিআইপি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া জসিম উদ্দিনকে সংবর্ধনা Logo মুরাদনগরে খামারগ্রাম প্রবাসী সংগঠনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দোয়া মাহফিল Logo বুড়িচং বাকশীমূল স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত Logo খুলনায় যুবককে গুলি করে হত্যার চেষ্টা Logo সিলেট জেলা যুবদলের নেতা আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ

মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন

লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুলঃ

মানুষ পৃথিবীতে স্বাধীনভাবে মানবিক মর্যাদাসহ বেঁচে থাকার জন্যে এবং তাঁর স্বাভাবিক গুণাবলী ও বৃত্তির প্রকাশ ঘটাতে প্রয়োজনীয় অধিকারগুলোকেই বলা হয় মানবাধিকার। মানুষের এ অধিকারগুলো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই মানবাধিকার ঘোষিত হয়। একে বলা হয়, মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র’’। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য। তাই আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল ‘‘সংবিধান’’ এ মানবাধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ফলে মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার তৈরি করেছে বিভিন্ন আইন। যথা-শিশু অধিকার আইন, বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন, শিশু ও নারী নির্যাতন রোধ আইন ইত্যাদি।
মানবাধিকারের বিশ্বজনীন ঘোষণা সত্ত্বেও প্রায়ই আমাদের মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের পাতায় আমরা এরকম ঘটনা প্রায়ই শুনি ও দেখি। আমাদের দেশে এ রকম কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো- শিশুশ্রম, নারী ও শিশু পাচার, এসিড নিক্ষেপ, সড়ক দুর্ঘটনা, সাম্প্রদায়িকতা, ও যৌতুকের কারণে অত্যাচার ইত্যাদি।
উল্লেখিত মানবাধিকার বিরোধী কাজ সম্পর্কে সকলকে সচেতন হতে হবে এবং প্রতিকার করার জন্যে বিদ্যমান আইনের কার্যকর প্রয়োগ আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা ব্যাপক। আইনের প্রয়োগিক প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার নিশ্চিত করার কাজটি যেমন পুলিশ বিভাগকে করতে হচ্ছে তেমনি এই বিষয়ে জনমত তথা গণসচেতনতা তৈরির দায়িত্ব প্রধানত গণমাধ্যমের। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এই সকল সাংবিধানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্যেই মূলত পুলিশ ও গণমাধ্যম তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। রাষ্ট্রের স্বার্থে, সমাজ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করায় মূলত পুলিশ ও গণমাধ্যমের দায়িত্ব।
মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ ও গণমাধ্যমের সমন্বয় আবশ্যক। এতে রাষ্ট্র, সমাজ এবং জনগণ অধিক সেবা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
আমরা যদি উন্নত বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখি তাহলে দেখতে পাব যে, গণতন্ত্র প্রচলিত আছে এইরূপ সকল দেশেই পুলিশ ও গণমাধ্যমসমূহের মধ্যে সৌহাদ্যের সম্পর্ক ও সমন্বয় বিদ্যমান রয়েছে। ফলে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে সেখানের জনগণেরও সু-সম্পর্ক বিরাজমান। ফলে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, আইনের প্রয়োগ এবং জনস্বার্থে যে কোন কার্যক্রম পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে তারা পালন করেন। তাই সেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিরাপদ থাকে। পুলিশ ও গণমাধ্যমসমূহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সত্যের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করছেন, তবে তাদের মধ্যে আরো অধিক সমন্বয় থাকা আবশ্যক। কারণ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে নিম্নবর্ণিত সুবিধাবলী লাভ করা সম্ভব।
যথা :-
* রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগণের অধিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
* জনগণের প্রয়োজনে পুলিশ দ্রুত তাদের সেবা প্রদান করতে পারবেন।
* দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা সুদৃঢ় হবে।
* মানবাধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করা সহজতর হবে।
* পুলিশবাহিনী গণমুখী তথা জনগণের বন্ধু হওয়ার সুযোগ পাবে।
* নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করা সহজ হবে।
* দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন অর্থাৎ সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ ও গণমাধ্যমসমূহের কার্যক্রমে সমন্বয় খুবই প্রয়োজন। তবে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান দুটিকে আরো কতিপয় সাধারণ শর্ত পালন করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। যথা:-
* পুলিশ ও গণমাধ্যমসমূহকে সর্বদা দলমতের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে।
* সর্বদা নিরপেক্ষ ও নির্ভীক থাকতে হবে।
* সর্বক্ষেত্রে সমঅধিকার, আইনগত অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
* পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কার্যকরভাবে অপরাধ রোধ, উদঘাটন, দমন, সামাজিক শান্তি ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
* পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীদের দক্ষ, কর্মনিষ্ঠ ও আধুনিক করে তোলার জন্যে যুগোপযোগী ও বিজ্ঞানসম্মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
* কারো অনভিপ্রেত অন্যায় নির্দেশ বা ক্ষুদ্র স্বার্থ চিন্তা তাকে যেন ক্ষমতা অপব্যবহারে লিপ্ত না করে তা নিশ্চত করতে হবে।
* কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
* জনগণের বিশ্বাস কিংবা আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে।
* নিয়মানুবর্তিতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে।
* জনগণের চাহিদা মোতাবেক গণমুখী ভূমিকা পালন করতে হবে।
* জনগণের ডাকে দ্রুত সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
* বিজ্ঞান ভিত্তিক আধুনিক অনুসন্ধান কিংবা তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতির ব্যবহার করতে হবে।
* দুর্নীতি দমনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
* রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে।
দেশে সুদৃঢ় গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পুলিশ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রমে সমন্বয় থাকা বাঞ্চনীয়। মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ বাহিনী ও গণমাধ্যমকে সর্বদা নিরপেক্ষ, সততা ও নিষ্ঠার সাথে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সকল মানুষের সমান অধিকার, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রের আলোকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে সংবিধান প্রণীত হয়। এই সংবিধানে সকলের মানবাধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
আমরা জানি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এই সংবিধান পরিবর্তন করে বৈষম্যমূলক ও সাম্প্রদায়িককরণের মাধ্যমে পাকিস্তানের অগণতান্ত্রিক ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালানো হয়। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও অগ্রবাদকে বিভিন্নভাবে মদদ দেওয়া হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যে পচাত্তর পরবর্তীতে আওয়ামীলীগসহ গণতান্ত্রিক শক্তি ও অন্যান্য সামাজিক শক্তি বস্তবতা ও বিরাজমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জোটবদ্ধভাবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জনগণের রায়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে সাম্য ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট নির্বাচনে জয়লাভ করে। এরপর জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে ১৯৭১ সালে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের কারণে দোষীদের বিচার কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অনেক অপরাধীর বিচারের রায় হয়েছে এবং তা কার্যকর হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড মামলার বিচারের রায় হয়েছে এবং অধিকাংশ অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করছে। তবে মানবাধিকর উন্নয়ন ও সংরক্ষণে সরকার, রাজনৈতিক দলসমূহ, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও জনগণকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
লেখক পরিচিতি:
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল
(শিক্ষক, গবেষক, কলাম লেখক, সমাজসেবক ও সংগঠক)
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ছিনতাইকারীর হামলায় জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা পার্থ আহত

SBN

SBN

মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন

আপডেট সময় ০১:৫৯:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুলঃ

মানুষ পৃথিবীতে স্বাধীনভাবে মানবিক মর্যাদাসহ বেঁচে থাকার জন্যে এবং তাঁর স্বাভাবিক গুণাবলী ও বৃত্তির প্রকাশ ঘটাতে প্রয়োজনীয় অধিকারগুলোকেই বলা হয় মানবাধিকার। মানুষের এ অধিকারগুলো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই মানবাধিকার ঘোষিত হয়। একে বলা হয়, মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র’’। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য। তাই আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল ‘‘সংবিধান’’ এ মানবাধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ফলে মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার তৈরি করেছে বিভিন্ন আইন। যথা-শিশু অধিকার আইন, বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন, শিশু ও নারী নির্যাতন রোধ আইন ইত্যাদি।
মানবাধিকারের বিশ্বজনীন ঘোষণা সত্ত্বেও প্রায়ই আমাদের মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের পাতায় আমরা এরকম ঘটনা প্রায়ই শুনি ও দেখি। আমাদের দেশে এ রকম কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো- শিশুশ্রম, নারী ও শিশু পাচার, এসিড নিক্ষেপ, সড়ক দুর্ঘটনা, সাম্প্রদায়িকতা, ও যৌতুকের কারণে অত্যাচার ইত্যাদি।
উল্লেখিত মানবাধিকার বিরোধী কাজ সম্পর্কে সকলকে সচেতন হতে হবে এবং প্রতিকার করার জন্যে বিদ্যমান আইনের কার্যকর প্রয়োগ আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা ব্যাপক। আইনের প্রয়োগিক প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার নিশ্চিত করার কাজটি যেমন পুলিশ বিভাগকে করতে হচ্ছে তেমনি এই বিষয়ে জনমত তথা গণসচেতনতা তৈরির দায়িত্ব প্রধানত গণমাধ্যমের। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এই সকল সাংবিধানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্যেই মূলত পুলিশ ও গণমাধ্যম তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। রাষ্ট্রের স্বার্থে, সমাজ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করায় মূলত পুলিশ ও গণমাধ্যমের দায়িত্ব।
মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ ও গণমাধ্যমের সমন্বয় আবশ্যক। এতে রাষ্ট্র, সমাজ এবং জনগণ অধিক সেবা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
আমরা যদি উন্নত বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখি তাহলে দেখতে পাব যে, গণতন্ত্র প্রচলিত আছে এইরূপ সকল দেশেই পুলিশ ও গণমাধ্যমসমূহের মধ্যে সৌহাদ্যের সম্পর্ক ও সমন্বয় বিদ্যমান রয়েছে। ফলে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে সেখানের জনগণেরও সু-সম্পর্ক বিরাজমান। ফলে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, আইনের প্রয়োগ এবং জনস্বার্থে যে কোন কার্যক্রম পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে তারা পালন করেন। তাই সেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিরাপদ থাকে। পুলিশ ও গণমাধ্যমসমূহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সত্যের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করছেন, তবে তাদের মধ্যে আরো অধিক সমন্বয় থাকা আবশ্যক। কারণ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে নিম্নবর্ণিত সুবিধাবলী লাভ করা সম্ভব।
যথা :-
* রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগণের অধিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
* জনগণের প্রয়োজনে পুলিশ দ্রুত তাদের সেবা প্রদান করতে পারবেন।
* দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা সুদৃঢ় হবে।
* মানবাধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করা সহজতর হবে।
* পুলিশবাহিনী গণমুখী তথা জনগণের বন্ধু হওয়ার সুযোগ পাবে।
* নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করা সহজ হবে।
* দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন অর্থাৎ সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ ও গণমাধ্যমসমূহের কার্যক্রমে সমন্বয় খুবই প্রয়োজন। তবে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান দুটিকে আরো কতিপয় সাধারণ শর্ত পালন করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। যথা:-
* পুলিশ ও গণমাধ্যমসমূহকে সর্বদা দলমতের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে।
* সর্বদা নিরপেক্ষ ও নির্ভীক থাকতে হবে।
* সর্বক্ষেত্রে সমঅধিকার, আইনগত অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
* পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কার্যকরভাবে অপরাধ রোধ, উদঘাটন, দমন, সামাজিক শান্তি ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
* পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীদের দক্ষ, কর্মনিষ্ঠ ও আধুনিক করে তোলার জন্যে যুগোপযোগী ও বিজ্ঞানসম্মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
* কারো অনভিপ্রেত অন্যায় নির্দেশ বা ক্ষুদ্র স্বার্থ চিন্তা তাকে যেন ক্ষমতা অপব্যবহারে লিপ্ত না করে তা নিশ্চত করতে হবে।
* কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
* জনগণের বিশ্বাস কিংবা আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে।
* নিয়মানুবর্তিতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে।
* জনগণের চাহিদা মোতাবেক গণমুখী ভূমিকা পালন করতে হবে।
* জনগণের ডাকে দ্রুত সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
* বিজ্ঞান ভিত্তিক আধুনিক অনুসন্ধান কিংবা তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতির ব্যবহার করতে হবে।
* দুর্নীতি দমনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
* রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে।
দেশে সুদৃঢ় গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পুলিশ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রমে সমন্বয় থাকা বাঞ্চনীয়। মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ বাহিনী ও গণমাধ্যমকে সর্বদা নিরপেক্ষ, সততা ও নিষ্ঠার সাথে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সকল মানুষের সমান অধিকার, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রের আলোকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে সংবিধান প্রণীত হয়। এই সংবিধানে সকলের মানবাধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
আমরা জানি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এই সংবিধান পরিবর্তন করে বৈষম্যমূলক ও সাম্প্রদায়িককরণের মাধ্যমে পাকিস্তানের অগণতান্ত্রিক ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালানো হয়। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও অগ্রবাদকে বিভিন্নভাবে মদদ দেওয়া হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যে পচাত্তর পরবর্তীতে আওয়ামীলীগসহ গণতান্ত্রিক শক্তি ও অন্যান্য সামাজিক শক্তি বস্তবতা ও বিরাজমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জোটবদ্ধভাবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জনগণের রায়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে সাম্য ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট নির্বাচনে জয়লাভ করে। এরপর জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে ১৯৭১ সালে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের কারণে দোষীদের বিচার কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অনেক অপরাধীর বিচারের রায় হয়েছে এবং তা কার্যকর হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড মামলার বিচারের রায় হয়েছে এবং অধিকাংশ অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করছে। তবে মানবাধিকর উন্নয়ন ও সংরক্ষণে সরকার, রাজনৈতিক দলসমূহ, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও জনগণকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
লেখক পরিচিতি:
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল
(শিক্ষক, গবেষক, কলাম লেখক, সমাজসেবক ও সংগঠক)
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি।