
কুমিল্লা নগরীর রেইসকোর্সে নিজ বাসায় হামলার শিকার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জহিরুল হক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ।
সোমবার(২৩ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নিহতের স্ত্রী মহানগর যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি ফারহানা আফরিন হিমি।
এ ঘটনায় চিকিৎসকের স্ত্রী হিমি বাদী হয়ে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন- সালাউদ্দিন মোর্শেদ ভুইয়া ওরফে পাপ্পু ও তার স্ত্রী সুমী, ছেলে আরহাম ও আহনাফ এবং ফারুক আহমেদ। ঘটনার পরপর প্রধান আসামী পাপ্পুকে আটক করে কারাগারে পাঠান কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ।
বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, ডেভেলপারস কোম্পানি গোল্ড সিলভার এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ ও রেইসকোর্স এলাকার বাসিন্দা জহিরুল হত্যা মামলার আসামী সালাউদ্দিন মোর্শেদ ভুইয়া ওরফে পাপ্পু সাথে ঝামেলা ছিলো ডাঃ জহিরুলের হকের।
পুলিশ ও প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, গত শনিবার কুমিল্লা নগরীর শাপলা টাওয়ারের ফ্ল্যাট মালিক সমিতির একটি অনুষ্ঠানের শেষে একই ফ্লাটের প্রতিবেশী সালাউদ্দিন মোর্শেদ ভুইয়া ওরফে পাপ্পুর বাসায় বিরিয়ানি দিতে যায় চিকিৎসক জহিরুলের স্ত্রী হিমি। এসময় পাপ্পু এবং তার স্ত্রী সুমি আক্তার জহিরুলের স্ত্রী হিমিকে গালাগালি করেন। এর জের ধরে ডা. জহিরুল ও তার স্ত্রী হিমি প্রতিবাদ করতে পাপ্পুর বাসা গেলে সেখানে ‘ধারালো বটি দিয়ে জহিরুল ও তার স্ত্রী ডা. জহিরকে আঘাত করতে থাকে। এসময় ডা. জহিরের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় ডা. জহিরুলকে কুমেকের আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সংকটাপন্ন অবস্থায় রোববার ভোরে তাকে পরিবারের সদস্যরা ঢাকা ইউনাইটেড হসপিটালে নিয়ে যায়। সেখানে সোমবার ভোরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
নিহতের স্ত্রী ও মহানগর যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি ফারহানা আফরিন হিমি বলেন, ফারুক ও পাপ্পু আমাদের কেনা ফ্ল্যাটে চেম্বার করা নিয়ে ঝামেলা করতো। সরকারি নিয়ম মেনে আমরা এ চেম্বার করি । অথচ এ নিয়ে পাপ্পু আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করতো। বিষয়টি নিয়ে আমি ফারুক সাহেবকে অভিযোগ দিলে তিনি পাপ্পুর পক্ষে অবস্থান নিতো । শনিবার সমিতির অনুষ্ঠান শেষে পাপ্পুর বাসায় খাবার দিতে গেলে আমাকে খারাপ ভাষায় গালাগালি করে পাপ্পুর স্ত্রী সুমি। এ সময় আমার স্বামী প্রতিবাদ করতে গেল আমাদের উপর হামলা করে । আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের একচুল ছাড় দিবো না।
এদিকে এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও বর্তমান শাপলা টাওয়ারের ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, শনিবার রাতে ভবনের ৮ তলায় আমি চিল্লাচিল্লীর শব্দ শুনতে পেয়ে ঘটনারস্থলে গিয়ে দেখি পাপ্পু ও তার পরিবার মিলে বটি দিয়ে চিকিৎসক জহিরুলকে এলোমেলো ভাবে কোপাতে থাকে। আমি বাধা দিতে গেলে পাপ্পু আমাকে দৌঁড়ে আসে হত্যা করতে। পরে আমি নিচে নেমে পুলিশকে কল দেই।
এদিকে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ কুমিল্লার সভাপতি ডা.আবদুল বাকী আনিস, সাধারণ সম্পাদক ডা. আতাউর রহমান জসীম, স্বাচিপ কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক ডা. মোরশেদ আলম, বিএমপিএ-র সভাপতি ডা. একেএম আবদুস সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক ডা. তৌফিকুন্নবী খান লিটন।
কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ সনজুর মোর্শেদ বলেন, ‘হামলার ঘটনায় এরই মধ্যে সালাউদ্দিন মোর্শেদ ভুইয়া ওরফে পাপ্পুকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ পুলিশের পাশাপাশি একাধিক বাহিনী এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাজ করছে।
(এ নিয়ে আমাদের ব্যাপক অনুসন্ধান চলছে-শীঘ্রই বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে)