
‘আমার মানিকে পরিবারের সুখের লাইগা প্রবাসে শ্রমিকের চাকরি করছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়া কাজ করছে। কখনও তার কষ্ট বুঝতে দেয় নাই।’ অশ্রুসজল চোখে বিলাপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন হোসনে আরা। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার মিছে চেষ্টা করছিলেন ক্যান্সারে আক্রান্ত স্বামী রোশন ভান্ডারী। এতে থামছিল না এ নারীর কান্না। তিনি সাংবাদিক দেখে ডুকরে কেঁদে বলে ওঠেন, ‘আমার মানিকের মুখটা শেষবার দেখতাম চাই। তার লাশটা আপনেরা আইন্না দেন।’ মালয়েশিয়ার পেনাং রাজ্যে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে দুই সহকর্মীর সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন এ দম্পতির ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৪)। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। ভবনের নিচে আটকা পড়ে আছেন কয়েকজন।
নিহত সাইফুলের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর দক্ষিণপাড়ায়। সেখানেই বুধবার সকালে মা-বাবার বুকফাটা আর্তনাদের দৃশ্য দেখা যায়। স্বজন ও এলাকাবাসী তাদের ঘিরে রেখেছিলেন। এ সময় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা যায়, বছর পাঁচেক আগে মালয়েশিয়া যান সাইফুল। তাঁর বড় ভাই দুবাইপ্রবাসী। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের পরিবারে সবার ছোট তিনি। সাইফুলের বাবা রোশন ভান্ডারী কৃষিজীবী। দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছেন। এখন আর কাজ করতে পারেন না। নিয়মিত থেরাপি দিতে হয়। রোশন ভান্ডারী বলেন, সোমবারও তাঁর থেরাপির জন্য ২০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে সাইফুল। বুধবার আরও টাকা পাঠাবে বলে জানিয়েছিল। পরিবারের পরিকল্পনা ছিল এবার দেশে এলেই ছেলেকে বিয়ে করানোর। সেই আশা মুহূর্তে ধূলিসাৎ হয়ে গেল।
সরকারের কাছে সাইফুলের স্বজনের একটিই চাওয়া, তাঁর মরদেহ যেন দ্রুত দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়। জীবিত সন্তানকে না পেলেও লাশ বাড়ির পাশে দাফন করতে চান তারা। এ বিষয়ে ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান মাসুদ বলেন, সাইফুলের সহকর্মীরা মরদেহ দেশে পাঠাতে চেষ্টা করছেন বলে তিনি জেনেছেন। তিনিও যোগাযোগ রাখছেন। মরদেহ ফেরাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করে কামরুজ্জামান বলেন, আশা করি স্বজনরা দ্রুতই তাঁর মরদেহ পাবেন।
মোহাম্মদ আলী সুমন। 

























