ঢাকা ১১:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রবাসীর স্ত্রীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, আটক ০২ Logo বুড়িচংয়ে বিএনপির ৬টি ওয়ার্ড কমিটি প্রত্যাহারের দাবি Logo কচুয়ায় ৫ পরীক্ষার্থী বহিষ্কার ও ৪ শিক্ষককে অব্যাহতি Logo খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এম এম মজিবুর রহমান আটক Logo নির্বাচনের আগে খুনিদের বিচার দৃশ্যমান করতে হবে — শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী Logo চীনের প্রস্তাবিত ১ হাজার শর্য্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি স্থাপনের দাবি Logo গাইবান্ধায় বিএনপি’র রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত ৩১ দফা ও জন সম্পৃক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ Logo আব্দুল মালেক মজুমদারকে পাওয়া যাচ্ছে না Logo শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে আইএসইউতে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা Logo মানবাধিকার রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয়ে “আমাদের আইন” এর শেরপুর জেলা কমিটি গঠিত

শুভ ইংরেজি নববর্ষ

অরবিন্দ সরকারব, হরমপুর, মুর্শিদাবাদ

সাহাজাদপুর হাইস্কুল। এলাকায় অনুন্নয়ের স্পষ্ট ছাপ। খেটে খাওয়া মানুষের অধিক বাস। তাছাড়া তপশিলী জাতি উপজাতির সংখ্যা বেশি। সংখ্যালঘু মুসলিম শ্রেণীও এখানে বাস করে। স্কুলে প্রতিনিয়ত হাজিরা কমবেশি হয়। পিছিয়ে পড়া এলাকায় পড়াশোনার মান নিম্নমুখী।
আজ ইংরেজি নববর্ষে স্কুলে হাজিরা অনেক বেশি। নতুন নতুন ক্লাসে সবাই প্রবেশ করবে এই আনন্দে সবাই মাতোয়ারা। তাছাড়া বুকলিষ্ট দেবে,বই কেনার জন্য। বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রী বই কিনতে পারে না। বইছাড়ায় তারা পড়াশোনা করে ও পাশ করে। তাছাড়া অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশ ফেল নেই। তাই সকলেই পাশ।
ভোম্বল দাস সে এবার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। সব বিষয়ে পাশ করেছে। ঈশ্বরই একমাত্র জানেন সে কিভাবে পাশ করলো! প্রার্থনার লাইন শেষে নিজ নিজ শ্রেনীর উদ্দেশ্যে ছাত্র ছাত্রীরা লাইন বেঁধে ক্লাসে প্রবেশ করলো। অষ্টম শ্রেণীর শ্রেনী শিক্ষক বাগাল চন্দ্র গোস্বামী ক্লাসে ঢুকলেন। ঢুকেই বললেন হ্যাপি নিউ ইয়ার। ভোম্বল প্রথম বেঞ্চেই বসেছিলো। সে দাঁড়িয়ে বললো হ্যাপিকে তো চিনিনা। তাহলে সে নতুন বন্ধু হবে কি করে? যাকে তাকে স্কুলে নিয়ে আসছেন সামলাতে পারবেন তো?
স্যার বললেন – না গো ভোম্বল,এর মানে শুভ নববর্ষ।
ভোম্বল বললো – বছরে দুবার নববর্ষ। সব বাপ মায়ের ঠিক নাই। দুটো বাবা, দুটো মা কেউ দেখেছে? এই স্কুলেই দেখছি।
স্যার- নাগো ভোম্বল – একটি ইংরেজি আর একটা বাংলা।
ভোম্বল – তাহলে তো সেই ইংরেজ বাবা রয়েই গেলো, আবার বাংলা বাবাও থাকলো। তাহলে কি দাঁড়ালো দুটি বাবা। লজ্জ্বা লাগে না আপনার এসব বলতে। ইংরেজরা চলে গেছে তবুও বীজ রেখে গেছে।ওই নিয়ে আমাদের আনন্দ।স্বাধীন হয়ে সেই পরাধীন? ইংরেজের পদানত গোলাম রয়েই গেলাম।
স্যার- ভোম্বল শোনো, পুরোনোকে বিদায় দিয়ে নতুনের আবাহন। পুরোনো যা ছিলো নোংরা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে নতুন বছরে পরিস্কার জীবন যাপন করবো।
ভোম্বল — বাঃ বাঃ, এইতো পাশ্চাত্যের প্রবেশ। বাবা মা তাদের বয়স হয়েছে, তারা চলৎশক্তিহীন, তাহলে তাদের মেরে ফেলবো বা ঝেঁটিয়ে বিদায় করবো? আবার নতুন বাবা মা আনবো? এসব বাইরের দেশে হয়, এবার আমাদের দেশেও প্রচলন হবে। বাবা বলতেন হালের বলদ তাদের যত্ন করবে! তারা সারাজীবন তোমাদের পুষেছে,তাই শেষ জীবনে তাদের খাওয়া দাওয়ার যত্ন করবে। কিন্তু এখন দেখছি সে খাটতে না পারলে বিক্রি করার ব্যবস্থা। প্রাণে মারার পরিকল্পনা? যাই হোক আমি হ্যাপি নিউ ইয়ার বলবো না। আমার বাবা একটাই। পয়লা বৈশাখ শুভ নববর্ষ। ওই দিন বাবা গণপতির পূজো দিয়ে তার প্রসাদ নাড়ু খাবো। বৈশাখে শুরু গনেশ পুজো দিয়ে আর শেষ চৈত্রের সংক্রান্তি চড়ক পূজা দিয়ে। পৃথিবী যেমন ঘোরে, দিনরাত হয়, তেমনি চড়কে ঘুরে ঘুরে বছরের শেষ বুঝতে পারি। যদি ইংরেজি সাল নববর্ষ হয় তাহলে ইংরেজ তাড়িয়ে লাভ কি হলো? সেই রাম অযোধ্যায় রয়েই গেলো ত্রেতা যুগ থেকে, পুরাতন থেকে নতুনে। ইংরেজ তো তার কতো পরে তাহলে কি লাভ লেগে ওদের পিছনে? রাবনকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো দ্বীপান্তর,সে নাকি চরিত্রহীন! তাহলে এখনো যারা ওই কাজে লিপ্ত তাদের দ্বীপান্তর হয় না কেন? আসলে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় আর উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।
ক্লাসের ঘন্টা পড়ে গেলো। স্যার বললেন – সবাই তাড়াতাড়ি বই কেনার ব্যবস্থা করো। পড়াশোনা শুরু হবে।
ভোম্বল বললো – আপনি আসুন স্যার? ঘণ্টা এভাবে রোজ পড়েই যাবে। আপনি আসবেন আর যাবেন। যেমন দিন রাত যাওয়া আসা করে। ঘণ্টা পড়লেও দিন,না পড়লেও দিন। লেখাপড়া করলেও পাশ আবার না করলেও পাশ। আমরা যদি স্কুলে না আসি তাহলে আপনাদের সর্বনাশ।
স্যার বাগাল বাবু চক ডাস্টার ও রোলকলের খাতা বগলে পুরে ছুটে একেবারে স্টাফরুম।

আপলোডকারীর তথ্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রবাসীর স্ত্রীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, আটক ০২

SBN

SBN

শুভ ইংরেজি নববর্ষ

আপডেট সময় ০৯:১৮:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪

অরবিন্দ সরকারব, হরমপুর, মুর্শিদাবাদ

সাহাজাদপুর হাইস্কুল। এলাকায় অনুন্নয়ের স্পষ্ট ছাপ। খেটে খাওয়া মানুষের অধিক বাস। তাছাড়া তপশিলী জাতি উপজাতির সংখ্যা বেশি। সংখ্যালঘু মুসলিম শ্রেণীও এখানে বাস করে। স্কুলে প্রতিনিয়ত হাজিরা কমবেশি হয়। পিছিয়ে পড়া এলাকায় পড়াশোনার মান নিম্নমুখী।
আজ ইংরেজি নববর্ষে স্কুলে হাজিরা অনেক বেশি। নতুন নতুন ক্লাসে সবাই প্রবেশ করবে এই আনন্দে সবাই মাতোয়ারা। তাছাড়া বুকলিষ্ট দেবে,বই কেনার জন্য। বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রী বই কিনতে পারে না। বইছাড়ায় তারা পড়াশোনা করে ও পাশ করে। তাছাড়া অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশ ফেল নেই। তাই সকলেই পাশ।
ভোম্বল দাস সে এবার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। সব বিষয়ে পাশ করেছে। ঈশ্বরই একমাত্র জানেন সে কিভাবে পাশ করলো! প্রার্থনার লাইন শেষে নিজ নিজ শ্রেনীর উদ্দেশ্যে ছাত্র ছাত্রীরা লাইন বেঁধে ক্লাসে প্রবেশ করলো। অষ্টম শ্রেণীর শ্রেনী শিক্ষক বাগাল চন্দ্র গোস্বামী ক্লাসে ঢুকলেন। ঢুকেই বললেন হ্যাপি নিউ ইয়ার। ভোম্বল প্রথম বেঞ্চেই বসেছিলো। সে দাঁড়িয়ে বললো হ্যাপিকে তো চিনিনা। তাহলে সে নতুন বন্ধু হবে কি করে? যাকে তাকে স্কুলে নিয়ে আসছেন সামলাতে পারবেন তো?
স্যার বললেন – না গো ভোম্বল,এর মানে শুভ নববর্ষ।
ভোম্বল বললো – বছরে দুবার নববর্ষ। সব বাপ মায়ের ঠিক নাই। দুটো বাবা, দুটো মা কেউ দেখেছে? এই স্কুলেই দেখছি।
স্যার- নাগো ভোম্বল – একটি ইংরেজি আর একটা বাংলা।
ভোম্বল – তাহলে তো সেই ইংরেজ বাবা রয়েই গেলো, আবার বাংলা বাবাও থাকলো। তাহলে কি দাঁড়ালো দুটি বাবা। লজ্জ্বা লাগে না আপনার এসব বলতে। ইংরেজরা চলে গেছে তবুও বীজ রেখে গেছে।ওই নিয়ে আমাদের আনন্দ।স্বাধীন হয়ে সেই পরাধীন? ইংরেজের পদানত গোলাম রয়েই গেলাম।
স্যার- ভোম্বল শোনো, পুরোনোকে বিদায় দিয়ে নতুনের আবাহন। পুরোনো যা ছিলো নোংরা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে নতুন বছরে পরিস্কার জীবন যাপন করবো।
ভোম্বল — বাঃ বাঃ, এইতো পাশ্চাত্যের প্রবেশ। বাবা মা তাদের বয়স হয়েছে, তারা চলৎশক্তিহীন, তাহলে তাদের মেরে ফেলবো বা ঝেঁটিয়ে বিদায় করবো? আবার নতুন বাবা মা আনবো? এসব বাইরের দেশে হয়, এবার আমাদের দেশেও প্রচলন হবে। বাবা বলতেন হালের বলদ তাদের যত্ন করবে! তারা সারাজীবন তোমাদের পুষেছে,তাই শেষ জীবনে তাদের খাওয়া দাওয়ার যত্ন করবে। কিন্তু এখন দেখছি সে খাটতে না পারলে বিক্রি করার ব্যবস্থা। প্রাণে মারার পরিকল্পনা? যাই হোক আমি হ্যাপি নিউ ইয়ার বলবো না। আমার বাবা একটাই। পয়লা বৈশাখ শুভ নববর্ষ। ওই দিন বাবা গণপতির পূজো দিয়ে তার প্রসাদ নাড়ু খাবো। বৈশাখে শুরু গনেশ পুজো দিয়ে আর শেষ চৈত্রের সংক্রান্তি চড়ক পূজা দিয়ে। পৃথিবী যেমন ঘোরে, দিনরাত হয়, তেমনি চড়কে ঘুরে ঘুরে বছরের শেষ বুঝতে পারি। যদি ইংরেজি সাল নববর্ষ হয় তাহলে ইংরেজ তাড়িয়ে লাভ কি হলো? সেই রাম অযোধ্যায় রয়েই গেলো ত্রেতা যুগ থেকে, পুরাতন থেকে নতুনে। ইংরেজ তো তার কতো পরে তাহলে কি লাভ লেগে ওদের পিছনে? রাবনকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো দ্বীপান্তর,সে নাকি চরিত্রহীন! তাহলে এখনো যারা ওই কাজে লিপ্ত তাদের দ্বীপান্তর হয় না কেন? আসলে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় আর উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।
ক্লাসের ঘন্টা পড়ে গেলো। স্যার বললেন – সবাই তাড়াতাড়ি বই কেনার ব্যবস্থা করো। পড়াশোনা শুরু হবে।
ভোম্বল বললো – আপনি আসুন স্যার? ঘণ্টা এভাবে রোজ পড়েই যাবে। আপনি আসবেন আর যাবেন। যেমন দিন রাত যাওয়া আসা করে। ঘণ্টা পড়লেও দিন,না পড়লেও দিন। লেখাপড়া করলেও পাশ আবার না করলেও পাশ। আমরা যদি স্কুলে না আসি তাহলে আপনাদের সর্বনাশ।
স্যার বাগাল বাবু চক ডাস্টার ও রোলকলের খাতা বগলে পুরে ছুটে একেবারে স্টাফরুম।