ঢাকা ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo গুলশানে র‍্যাবের ক্যাশিয়ার শাহ আলমের ইস্পায় গড়ে তুলেছে অপরাধের আখড়া Logo বুড়িচংয়ে বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলায় চলছে জুয়ার আসর Logo লালমনিরহাটে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন Logo স্লিপের অর্থ ছাড় করানোর নামে ঘুষের টাকা আদায়ের অভিযোগ Logo ফুলবাড়ীতে বিএনপি’র মিছিলে ককটেল হামলা মামলায় আ.লীগের তিন নেতা গ্রেপ্তার Logo ফুলবাড়ী সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ভারতে অনুপবেশের সময় স্বামী-স্ত্রী আটক Logo ফুলবাড়ীতে ৪ আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার Logo নার্সিং শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি স্বীকৃতির দাবিতে রাঙামাটিতে কর্মসূচি Logo গাইবান্ধায় ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা Logo চট্টগ্রামের আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবাসহ মাদক কারবারীকে আটক

যৌতুক

যৌতুক
প্রিয়াংকা নিয়োগী, কোচবিহার, ভারত

বিয়ের দিন ঠিক করতে এলো পাত্রপক্ষ।অপেক্ষার তিন ঘন্টা পরে। দুপুর দুটোয় আসার কথা অর্থাৎ সময়ের থেকে তিনঘন্টা পরে পাঁচটায় আসে।
অলীক বাবুর মধ্যবিত্ত পরিবার।তার মধ্যেই বড়ো মেয়েকে বিটেক পড়াশোনা করিয়েছেন।ছোটো মেয়ে মাস্টার অফ সাইন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।বড়ো মেয়ে বেসরকারী কম্পানিতে চাকরিও করে।কথা আছে বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে বরের ওখানে গিয়ে চাকরি করবে।
বড়ো মেয়ের নাম মনোনিতা।তারি আজ বিয়ে ঠিক হবে।
ছোটো মে আকাশী।তাই সে সময়মতো তৈরী হয়ে গেছে।
অলীক বাবু বড়ো মেয়ের বিয়ে ঠিক হবে উপলক্ষ্যে সব আত্মীয় প্রতিবেশীদেরই নেমন্ত্রণ করেছিলো।তাই বাড়ি জমজমাট। এবার কথা বার্তা
নিয়ে বসলো দুপক্ষ‌ ।অর্থাৎ দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলছিলো দুপক্ষ।ছেলে কেন্দ্রীয় সরকারী অফিসার।
তাই ছেলের যৌতুকতো লাগবেই বলে বসল পাত্রের বাবা।অলীক বাবু বললেন এমনতো কোনো কথা ছিলোনা যৌতুক নেওয়া হবে।পাত্রের বাবা বললেন সে আবার বলতে হবে নাকি দাদা!আমার এম.কম,কেন্দ্রীয় সরকারী ছেলে বিয়েতে অনেক কিছু পাবে সেতো সহজ কথা। পাত্রের মাও মুখ নেরে সম্মতি জানায়।পাত্র পক্ষ থেকে যে আটজন এসেছিলেন প্রত্যেকেরই মুখে
একই ছাপ।সবুজা দেবী বললেন ঠিক কি কি চাই এই বিয়ে হওয়ার জন্য।ছেলের জেঠু বললেন তিন লাখ টাকা, জেঠিমা বললেন আসবাবপত্র কাঠের দেবেন।
ছেলের কাকু বললেন ছেলেকে হাতে সোনার ব্রেসলেট‌ ও সোনার চেইন দিয়ে আশীর্বাদ করতে‌ হবে।
এছাড়াও মেয়েকে সোনাদানা সেন্কো গোল্ডের থেকে দিতে হবে।আর ছেলের পিসি বললেন বাড়ির প্রত্যেকের জন্য যে প্রণামী পাঠাবেন তা যেন ব্র্যান্ডেড হয়।এই সমস্ত কথা চুপ করে শুনছিলেন মনোনিতা। তার মনে হচ্ছিলো তার কোনো মূল্য নেই এই লোকদের কাছে।তার বাবার প্রতি যে চাপ ছেলের বাড়ি তৈরী করছে তা মনোনিতার কাছে অপমান ও নিজেকে মূল্যহীন‌ মনে হচ্ছিলো।তার নিজেকে নীচু মনে হচ্ছিলো ।আর নিতে পারছিলো না তাকে নিয়ে যে দর‌ কষাকষি চলছিল।ছেলের জেঠু বলছে বিয়ের আগের দিন সমস্ত কিছু পৌঁছে দেবেন। অলীক বাবুর এক প্রতিবেশী আরেক প্রতিবেশীকে ঈশারায় বলছে দেখ ছেলের বাড়ির দাবীর বাহার।আত্মীয়রাও একে অপরের দিকে সুযোগ পেলেই তাকাচ্ছে।পাত্রী পক্ষের সবার মুখই শুকিয়ে গেছে।এরপর ছেলের পিশামশাই বলছে
একটা চারচাকা দিলে ভালো হয়।আপনাদের মেয়েইতো চড়বে।এই বলতে বলতেই নুপুরের শব্দ।সবাই দেখলো মনোনিতা প্রবেশ করেছে।অলীক বাবু ও সবুজা দেবী সহ প্রত্যেকেই অবাক।অলীক বাবু বললেন কি রে মা !
ঘরের প্রত্যেকেই চুপ।

মনোনিতা পাত্রপক্ষের কাছে জানতে চাইল আপনাদের লিস্টে আর কি কি আছে দাবীর ?
মনোনিতার এমন রুপ দেখে পাত্র পক্ষ কিছুটা অবাক হলেন।পাত্রের মা বললেন সেগুলি নিয়েতো তোমার বাবার সাথে কথা হচ্ছে তুমি এসেছো কেনো মা এগুলা জানতে?

মনোনিতা বললেন বা রে আমার জন্য চাইছেন,আমাকে বিষয় করে চাইছেন আমি আসবোনা এগুলোর মধ্যে? আর আপনাদের চাওয়া হয়ে গেলেতো এরপর আমাদের পাত্রী পক্ষের দাবী চাওয়া শুরু হবে।এবার বুঝতে পারলো আকাশি।তার দিদির পাত্রপক্ষের মুখোমুখি হওয়া।দিদিকে সাথ‌ দিতে আকাশিও এসে দিদির পাশে দাঁড়ায়।

পাত্রী পক্ষ থেকে শুরু করে পাত্র পক্ষ সবাই সাথে সাথে তৈরী হয়ে গেলো শোনার জন্য।পাত্রী পক্ষের লোকজনদের বেশি কৌতুহল মুখের মধ্যে ফুটে উঠল।
পাত্র পক্ষ বুঝতে পারল তাদেরও বেকায়দায় ফেলা হবে।

আকাশি পাত্রপক্ষের কাছে জানতে চাইলো আপনাদের শেষ হোলো না আরও বাকি আছে চাওয়ার?
মেয়ের এমন রুপ দেখে কিছুটা লজ্জা পাচ্ছিলেন মনোনিতার বাবা ।কারণ সমাজে এমন‌ কখনও হয়নি যে
পাত্রী চলে এসেছেন কথা বলতে তার বিয়ের ব্যাপারে।
অলীক বাবু বলল তোরা যা মা এখান থেকে। আকাশী বলে কথা বলতে এসেছি যখন কথা হয়ে যাওয়ার পরেই যাবো।বাবা তোমরা এখন আর কোনো কথা বলবে না।
যা বলার আমি আর দিদি বলব যতক্ষণ আমাদের হিসেব না মিলবে।পাত্রী পক্ষের প্রতিবেশীদের কেউ নাক সিটকানো মিচকি হাসছে,আত্মীয়রা তৈরী দুই বোনের কীর্তি দেখার জন্য।পাত্র পক্ষ তৈরী তাদের কথা শোনার জন্য।

মনোনিতা বললেন আপনাদের শেষ নাকি আরও বাকি আছে?সবুজা দেবী আর কথা বাড়ালেননা।
সমস্তটাই মেয়েদের উপর ছাড়লেন।আকাশী বলল এখন
শুধুই দুবোন কথা বলব।আর পাত্রী পক্ষের প্রত্যেককে অনুরোধ করবো আমাদের কথার মাঝে কথা বলতে না।
এমন কি মা-বাবা তোমাদেরও অনুরোধ করব আমাদের দুবোনের কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত না।

ছেলের বাড়ির থেকে বলল আমাদের দাবী শেষ হয়ে গেছে ।আকাশি বলল এবারতো আমাদের পালা।
মনোনিতার হাত থেকে কাগজের লিস্টটা নিয়ে বলল
আমাদের বি.টেক মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ার,
প্রাইভেট চাকরি করা পাত্রীর জন্য চাই ডায়মন্ডের জরোয়া সেট,আংটিটাও ডায়মন্ডের লাগবে,আর গাড়িটা
মার্সিডিজ হলে ভালো হয়,আপনাদের ছেলেইতো চড়বে।
আর এই ইন্জিনিয়ার পাত্রীর জন্য একটি ফ্ল্যাট‌ লাগবে,
আর এই ফ্ল্যাটেতো আপনার ছেলেও থাকবে।আশা করি আপনারা ভালো ফ্ল্যাট দেবেন।আর অবশ্যই প্রণামী যা পাঠাবেন তা কোনো নামকরা বা সেলিব্রিটি ডিজাইনারের ডিজাইন করা পাঠাবেন,যাতে আমাদের আত্মীয়দের কাছে আমাদের মুখ থাকে। এই শুনে পাত্র পক্ষের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। তারা বুঝেছিলেন তাদের টাইট দিতে এসেছেন। কিন্তু এমন টাইটের মুখে পড়বেন তা কল্পনাও করতে পারেননি।একই দশা হোলো পাত্রের বাবার না হ্যা বলতে পারে আর না বলতে পারে।
একটু আগে পাত্র পক্ষের দাবী ঘোষণার চাপ যেভাবে পেয়েছিলেন অলীক বাবু।ঠিক একই পরিস্থিতি পাত্রের বাবার ।এতগুলো লোকের সামনে না বলাটাও একটা লজ্জার ব্যাপার।তাই পাত্রের পক্ষের লোকেদের চোখমুখ চিন্তিত প্রকাশ পাচ্ছে।

পাত্র পক্ষের পরিস্থিতি দেখে মনোনিতা নিজেকে হালকা অনুভব করছে।তারও যে‌ দাম আছে,সেও যে ফ্যালনা নয়।নিজের প্রতি অপমানের পাল্টা জবাব দিলেন।সাথে বললেন অলীক বাবুর বড়ো মেয়ে অর্থাৎ আমি মনোনিতা পাল কোনো ফ্যালনা নয়।ছোটোর থেকেই প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হয়েছি।এখন উপযুক্ত হয়েছি। একজন কেন্দ্রীয় সরকারী অফিসারকে বিয়ের জন্য যদি আমার বড় বিয়ের জন্য যদি আমার বাড়ির থেকে পন দিতে হয়, তাহলে আমাকে বিয়ে করতে‌ হলে পাত্রপক্ষকে আমাকে পন দিয়ে বিয়ে করতে হবে।পাত্রের দাম থাকলে পাত্রীরও মূল্য আছে।

এসব কথা শুনে পাত্রের মা থতমত হয়ে‌ গেলেন।পাত্র পক্ষের বোলতি বন্ধ হয়ে গেলো। পাত্রের বাবা বললেন আজ চলি আমরা।গিয়ে ভাবতে হবে বলেই পাত্রপক্ষ বের হয়ে গেলেন।আত্মীয়দের অনেকেই বলাবলি করছিলেন যে ঠিকই আছে।অনেকে একে অপরের কানে ফিসফিস করছিলেন বাবাগো মেয়েগো।
এমন করলে আর বিয়ে হবেনা। অলীক বাবু বললেন মারে তুই এ কি করলি ।আমি তেমন করেই হোক চেষ্টা করতাম।মনোনিতা বলল থামোতো ।তুমি একা কেন চেষ্টা করবে,তারাও চেষ্টা করুক। আর যদি পন দিয়ে‌
বিয়ে করতে হয়,তিহলে আমিও পন নিয়ে বিয়ে করব।
এই বলে রাখলাম।আর হ্যা যেখানে মেয়েকে কিছু দিতে হবে সেখানে তোমার মা ইচ্ছে হয় তাই দিও।তবে কারো
কথায় নয়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

গুলশানে র‍্যাবের ক্যাশিয়ার শাহ আলমের ইস্পায় গড়ে তুলেছে অপরাধের আখড়া

SBN

SBN

যৌতুক

আপডেট সময় ০৯:০৮:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪

যৌতুক
প্রিয়াংকা নিয়োগী, কোচবিহার, ভারত

বিয়ের দিন ঠিক করতে এলো পাত্রপক্ষ।অপেক্ষার তিন ঘন্টা পরে। দুপুর দুটোয় আসার কথা অর্থাৎ সময়ের থেকে তিনঘন্টা পরে পাঁচটায় আসে।
অলীক বাবুর মধ্যবিত্ত পরিবার।তার মধ্যেই বড়ো মেয়েকে বিটেক পড়াশোনা করিয়েছেন।ছোটো মেয়ে মাস্টার অফ সাইন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।বড়ো মেয়ে বেসরকারী কম্পানিতে চাকরিও করে।কথা আছে বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে বরের ওখানে গিয়ে চাকরি করবে।
বড়ো মেয়ের নাম মনোনিতা।তারি আজ বিয়ে ঠিক হবে।
ছোটো মে আকাশী।তাই সে সময়মতো তৈরী হয়ে গেছে।
অলীক বাবু বড়ো মেয়ের বিয়ে ঠিক হবে উপলক্ষ্যে সব আত্মীয় প্রতিবেশীদেরই নেমন্ত্রণ করেছিলো।তাই বাড়ি জমজমাট। এবার কথা বার্তা
নিয়ে বসলো দুপক্ষ‌ ।অর্থাৎ দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলছিলো দুপক্ষ।ছেলে কেন্দ্রীয় সরকারী অফিসার।
তাই ছেলের যৌতুকতো লাগবেই বলে বসল পাত্রের বাবা।অলীক বাবু বললেন এমনতো কোনো কথা ছিলোনা যৌতুক নেওয়া হবে।পাত্রের বাবা বললেন সে আবার বলতে হবে নাকি দাদা!আমার এম.কম,কেন্দ্রীয় সরকারী ছেলে বিয়েতে অনেক কিছু পাবে সেতো সহজ কথা। পাত্রের মাও মুখ নেরে সম্মতি জানায়।পাত্র পক্ষ থেকে যে আটজন এসেছিলেন প্রত্যেকেরই মুখে
একই ছাপ।সবুজা দেবী বললেন ঠিক কি কি চাই এই বিয়ে হওয়ার জন্য।ছেলের জেঠু বললেন তিন লাখ টাকা, জেঠিমা বললেন আসবাবপত্র কাঠের দেবেন।
ছেলের কাকু বললেন ছেলেকে হাতে সোনার ব্রেসলেট‌ ও সোনার চেইন দিয়ে আশীর্বাদ করতে‌ হবে।
এছাড়াও মেয়েকে সোনাদানা সেন্কো গোল্ডের থেকে দিতে হবে।আর ছেলের পিসি বললেন বাড়ির প্রত্যেকের জন্য যে প্রণামী পাঠাবেন তা যেন ব্র্যান্ডেড হয়।এই সমস্ত কথা চুপ করে শুনছিলেন মনোনিতা। তার মনে হচ্ছিলো তার কোনো মূল্য নেই এই লোকদের কাছে।তার বাবার প্রতি যে চাপ ছেলের বাড়ি তৈরী করছে তা মনোনিতার কাছে অপমান ও নিজেকে মূল্যহীন‌ মনে হচ্ছিলো।তার নিজেকে নীচু মনে হচ্ছিলো ।আর নিতে পারছিলো না তাকে নিয়ে যে দর‌ কষাকষি চলছিল।ছেলের জেঠু বলছে বিয়ের আগের দিন সমস্ত কিছু পৌঁছে দেবেন। অলীক বাবুর এক প্রতিবেশী আরেক প্রতিবেশীকে ঈশারায় বলছে দেখ ছেলের বাড়ির দাবীর বাহার।আত্মীয়রাও একে অপরের দিকে সুযোগ পেলেই তাকাচ্ছে।পাত্রী পক্ষের সবার মুখই শুকিয়ে গেছে।এরপর ছেলের পিশামশাই বলছে
একটা চারচাকা দিলে ভালো হয়।আপনাদের মেয়েইতো চড়বে।এই বলতে বলতেই নুপুরের শব্দ।সবাই দেখলো মনোনিতা প্রবেশ করেছে।অলীক বাবু ও সবুজা দেবী সহ প্রত্যেকেই অবাক।অলীক বাবু বললেন কি রে মা !
ঘরের প্রত্যেকেই চুপ।

মনোনিতা পাত্রপক্ষের কাছে জানতে চাইল আপনাদের লিস্টে আর কি কি আছে দাবীর ?
মনোনিতার এমন রুপ দেখে পাত্র পক্ষ কিছুটা অবাক হলেন।পাত্রের মা বললেন সেগুলি নিয়েতো তোমার বাবার সাথে কথা হচ্ছে তুমি এসেছো কেনো মা এগুলা জানতে?

মনোনিতা বললেন বা রে আমার জন্য চাইছেন,আমাকে বিষয় করে চাইছেন আমি আসবোনা এগুলোর মধ্যে? আর আপনাদের চাওয়া হয়ে গেলেতো এরপর আমাদের পাত্রী পক্ষের দাবী চাওয়া শুরু হবে।এবার বুঝতে পারলো আকাশি।তার দিদির পাত্রপক্ষের মুখোমুখি হওয়া।দিদিকে সাথ‌ দিতে আকাশিও এসে দিদির পাশে দাঁড়ায়।

পাত্রী পক্ষ থেকে শুরু করে পাত্র পক্ষ সবাই সাথে সাথে তৈরী হয়ে গেলো শোনার জন্য।পাত্রী পক্ষের লোকজনদের বেশি কৌতুহল মুখের মধ্যে ফুটে উঠল।
পাত্র পক্ষ বুঝতে পারল তাদেরও বেকায়দায় ফেলা হবে।

আকাশি পাত্রপক্ষের কাছে জানতে চাইলো আপনাদের শেষ হোলো না আরও বাকি আছে চাওয়ার?
মেয়ের এমন রুপ দেখে কিছুটা লজ্জা পাচ্ছিলেন মনোনিতার বাবা ।কারণ সমাজে এমন‌ কখনও হয়নি যে
পাত্রী চলে এসেছেন কথা বলতে তার বিয়ের ব্যাপারে।
অলীক বাবু বলল তোরা যা মা এখান থেকে। আকাশী বলে কথা বলতে এসেছি যখন কথা হয়ে যাওয়ার পরেই যাবো।বাবা তোমরা এখন আর কোনো কথা বলবে না।
যা বলার আমি আর দিদি বলব যতক্ষণ আমাদের হিসেব না মিলবে।পাত্রী পক্ষের প্রতিবেশীদের কেউ নাক সিটকানো মিচকি হাসছে,আত্মীয়রা তৈরী দুই বোনের কীর্তি দেখার জন্য।পাত্র পক্ষ তৈরী তাদের কথা শোনার জন্য।

মনোনিতা বললেন আপনাদের শেষ নাকি আরও বাকি আছে?সবুজা দেবী আর কথা বাড়ালেননা।
সমস্তটাই মেয়েদের উপর ছাড়লেন।আকাশী বলল এখন
শুধুই দুবোন কথা বলব।আর পাত্রী পক্ষের প্রত্যেককে অনুরোধ করবো আমাদের কথার মাঝে কথা বলতে না।
এমন কি মা-বাবা তোমাদেরও অনুরোধ করব আমাদের দুবোনের কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত না।

ছেলের বাড়ির থেকে বলল আমাদের দাবী শেষ হয়ে গেছে ।আকাশি বলল এবারতো আমাদের পালা।
মনোনিতার হাত থেকে কাগজের লিস্টটা নিয়ে বলল
আমাদের বি.টেক মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ার,
প্রাইভেট চাকরি করা পাত্রীর জন্য চাই ডায়মন্ডের জরোয়া সেট,আংটিটাও ডায়মন্ডের লাগবে,আর গাড়িটা
মার্সিডিজ হলে ভালো হয়,আপনাদের ছেলেইতো চড়বে।
আর এই ইন্জিনিয়ার পাত্রীর জন্য একটি ফ্ল্যাট‌ লাগবে,
আর এই ফ্ল্যাটেতো আপনার ছেলেও থাকবে।আশা করি আপনারা ভালো ফ্ল্যাট দেবেন।আর অবশ্যই প্রণামী যা পাঠাবেন তা কোনো নামকরা বা সেলিব্রিটি ডিজাইনারের ডিজাইন করা পাঠাবেন,যাতে আমাদের আত্মীয়দের কাছে আমাদের মুখ থাকে। এই শুনে পাত্র পক্ষের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। তারা বুঝেছিলেন তাদের টাইট দিতে এসেছেন। কিন্তু এমন টাইটের মুখে পড়বেন তা কল্পনাও করতে পারেননি।একই দশা হোলো পাত্রের বাবার না হ্যা বলতে পারে আর না বলতে পারে।
একটু আগে পাত্র পক্ষের দাবী ঘোষণার চাপ যেভাবে পেয়েছিলেন অলীক বাবু।ঠিক একই পরিস্থিতি পাত্রের বাবার ।এতগুলো লোকের সামনে না বলাটাও একটা লজ্জার ব্যাপার।তাই পাত্রের পক্ষের লোকেদের চোখমুখ চিন্তিত প্রকাশ পাচ্ছে।

পাত্র পক্ষের পরিস্থিতি দেখে মনোনিতা নিজেকে হালকা অনুভব করছে।তারও যে‌ দাম আছে,সেও যে ফ্যালনা নয়।নিজের প্রতি অপমানের পাল্টা জবাব দিলেন।সাথে বললেন অলীক বাবুর বড়ো মেয়ে অর্থাৎ আমি মনোনিতা পাল কোনো ফ্যালনা নয়।ছোটোর থেকেই প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হয়েছি।এখন উপযুক্ত হয়েছি। একজন কেন্দ্রীয় সরকারী অফিসারকে বিয়ের জন্য যদি আমার বড় বিয়ের জন্য যদি আমার বাড়ির থেকে পন দিতে হয়, তাহলে আমাকে বিয়ে করতে‌ হলে পাত্রপক্ষকে আমাকে পন দিয়ে বিয়ে করতে হবে।পাত্রের দাম থাকলে পাত্রীরও মূল্য আছে।

এসব কথা শুনে পাত্রের মা থতমত হয়ে‌ গেলেন।পাত্র পক্ষের বোলতি বন্ধ হয়ে গেলো। পাত্রের বাবা বললেন আজ চলি আমরা।গিয়ে ভাবতে হবে বলেই পাত্রপক্ষ বের হয়ে গেলেন।আত্মীয়দের অনেকেই বলাবলি করছিলেন যে ঠিকই আছে।অনেকে একে অপরের কানে ফিসফিস করছিলেন বাবাগো মেয়েগো।
এমন করলে আর বিয়ে হবেনা। অলীক বাবু বললেন মারে তুই এ কি করলি ।আমি তেমন করেই হোক চেষ্টা করতাম।মনোনিতা বলল থামোতো ।তুমি একা কেন চেষ্টা করবে,তারাও চেষ্টা করুক। আর যদি পন দিয়ে‌
বিয়ে করতে হয়,তিহলে আমিও পন নিয়ে বিয়ে করব।
এই বলে রাখলাম।আর হ্যা যেখানে মেয়েকে কিছু দিতে হবে সেখানে তোমার মা ইচ্ছে হয় তাই দিও।তবে কারো
কথায় নয়।