ঢাকা ০৫:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo স্ত্রীর নাম ব্যবহার করে শুমারির টাকা আত্মসাৎ পরিসংখ্যান কর্মকর্তার Logo বান্দরবানে ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে পার্বত্য উপদেষ্ট Logo দ্রব্যমূল্য সহনীয় রেখে দেশ ও জনগনের জন্য কাজ করতে হবে- সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম Logo চিন পিংয়ের প্রিয় উপাখ্যান’: ইতিহাসের গভীর জ্ঞানের এক উজ্জ্বল প্রকাশ Logo মালয়েশিয়া-চীন সম্পর্কের উচ্চ স্তরের প্রতিফলন : রাজা ইব্রাহিম Logo কুয়ালালামপুরে চীন-মালয়েশিয়া মানব ও সাংস্কৃতিক বিনিময় অনুষ্ঠান Logo ময়মনসিংহ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার অর্থনীতির অঞ্চল বাতিল ঘোষণার প্রসঙ্গে Logo সুন্দরবনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ’সহ আটক-২ Logo বুড়িচংয়ে তিন জুয়ারীর ৭ দিনের জেল Logo প্রেমের টানে ভাগ্নের হাত ধরে মামী উধাও

সিয়ামের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত না হই

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দার প্রতি যত অনুগ্রহ করেছেন, তার অন্যতম রমজানুল মোবারক। এটা উম্মতের জন্য এক মহাপ্রাপ্তি ও নিয়ামত। রোজাদার আল্লাহর কাছে এত প্রিয় যে, ‘রোজাদারের মুখের গন্ধ মেশকের সুগন্ধির চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়’ বলে হাদিসে বিবৃত হয়েছে। রোজার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মানুষকে ইহ-পারলৌকিক সফলতার চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছান। জাগ্রত করেন মনুষ্যত্ববোধ।

সৃষ্টি হয় ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ, প্রেমপ্রীতি ও ভালোবাসা। রমজানের সাধনায় আল্লাহ মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করে, রিপুর তাড়না থেকে তাকে মুক্ত করে তার ভেতর তাকওয়া তথা খোদাভীতি ও আল্লাহপ্রেম জাগ্রত করেন, যা তাকে আজীবন সত্য-সুন্দরের পথে পরিচালিত করতে সহযোগিতা করে। তাই আল্লাহ এ রমজানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে এরশাদ করেছেন, ‘যাতে তোমরা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করতে পার। (সুরা : বাকারা, আয়াত-১৮৩)।

রমজানে আল্লাহ তাঁর সব দয়া ও করুণার দ্বার খুলে দেন। আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন,‘রোজা আমারই জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেব’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আমিই এর প্রতিদান তথা আমার সন্তুষ্টিলাভই হবে এর সত্যিকার প্রতিদান। আবু উবায়দা (রা.) বলেন, ‘রোজাকে বিশেষভাবে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কিত করার কারণ এই যে, অন্যান্য ইবাদত লোক দেখানোর শঙ্কা থাকে। কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে এ শঙ্কা নেই। রোজা শুধু আল্লাহর জন্যই হয়।

রমজানের মতো এত বিরাট নিয়ামত পেয়েও যারা অবহেলায় কাটিয়ে দেন, তাদের জন্য রাসুল (সা.) বলেছেন কঠিন ও কঠোর হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন। নবিজি (সা.) একদিন মসজিদে নববির মিম্বরে আরোহণ করছিলেন; মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে তিনি বললেন, আমিন! দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রেখে তিনি আবার বললেন, আমিন! তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখে তিনি তৃতীয়বার বললেন, আমিন! যার অর্থ, হে আল্লাহ তুমি কবুল করো! নবিজি (সা.)-এর জীবনে এই প্রথম এমন ঘটনা দেখে সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়ে জানতে চাইলেন। তখন নবিজি (সা.) বলেন, ‘এই মাত্র জিবরাইল (আ.) এলেন- আমি প্রথম সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি আমাকে (কানে কানে) বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যে রমজান মাস পেল অথচ তার পাপমোচন হলো না। আমি বললাম, আমিন। আমি দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হওয়া সত্ত্বেও সে আপনার ওপর দরুদ পড়েনি। আমি বললাম, আমিন। আমি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যে তার পিতামাতা উভয়কে পেল অথবা উভয়ের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাত লাভ করতে পারল না। আমি বললাম, আমিন!’

আমাদের কর্তব্য হলো, এই মোবারক মাসকে যথাযথ সমাদর করা। যথার্থ মূল্যায়ন করা। কারণ, আমরা যদি এর উপযুক্ত মূল্য দিতে না পারি, জান্নাতলাভের এমন সুযোগকেও হাতছাড়া করে ফেলি, তাহলে এ জগতে আমাদের চেয়ে বড় হতভাগা আর কে হতে পারে? আল্লাহ যেন আমাদের অভিশপ্তদের অন্তর্ভুক্ত না করেন। শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও আমরা যেন সিয়াম সাধনার নিয়ামত থেকে বঞ্চিত না হই। আমরা হয়তো অনেকেই নবিজি (সা.)-এর সাহাবি ইবনে আহমাসি (রা.)-এর ঘটনা জানি। তিনি একবার সিয়াম অবস্থায় যুদ্ধের ময়দানে লড়ছিলেন। লড়তে লড়তে একসময় আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়লেন। সঙ্গীরা তাকে সংরক্ষিত স্থানে নিয়ে গেলেন। তারপর তাকে পানি পান করতে দিলেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। তিনি বললেন, আমার সিয়াম ভেঙে যাবে। কিছুক্ষণ পরই তিনি দুনিয়া ছেড়ে তার কাছে চলে গেলেন, যার জন্য সিয়াম রেখেছিলেন।

দুনিয়াতে সিয়াম সাধনা করে আখেরাতে মহান প্রভুর কাছে ইফতার করতে গেলেন। ওমর এ ঘটনা শুনে বললেন, এই সাহাবি দুনিয়া দিয়ে আখেরাতকে কিনে নিয়েছেন।

লেখক : মহাপরিচালক, জামিয়া আরাবিয়া নুরুল ইসলাম, উত্তরখান, ঢাকা

স্ত্রীর নাম ব্যবহার করে শুমারির টাকা আত্মসাৎ পরিসংখ্যান কর্মকর্তার

SBN

SBN

সিয়ামের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত না হই

আপডেট সময় ০২:০৬:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দার প্রতি যত অনুগ্রহ করেছেন, তার অন্যতম রমজানুল মোবারক। এটা উম্মতের জন্য এক মহাপ্রাপ্তি ও নিয়ামত। রোজাদার আল্লাহর কাছে এত প্রিয় যে, ‘রোজাদারের মুখের গন্ধ মেশকের সুগন্ধির চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়’ বলে হাদিসে বিবৃত হয়েছে। রোজার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মানুষকে ইহ-পারলৌকিক সফলতার চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছান। জাগ্রত করেন মনুষ্যত্ববোধ।

সৃষ্টি হয় ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ, প্রেমপ্রীতি ও ভালোবাসা। রমজানের সাধনায় আল্লাহ মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করে, রিপুর তাড়না থেকে তাকে মুক্ত করে তার ভেতর তাকওয়া তথা খোদাভীতি ও আল্লাহপ্রেম জাগ্রত করেন, যা তাকে আজীবন সত্য-সুন্দরের পথে পরিচালিত করতে সহযোগিতা করে। তাই আল্লাহ এ রমজানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে এরশাদ করেছেন, ‘যাতে তোমরা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করতে পার। (সুরা : বাকারা, আয়াত-১৮৩)।

রমজানে আল্লাহ তাঁর সব দয়া ও করুণার দ্বার খুলে দেন। আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন,‘রোজা আমারই জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেব’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আমিই এর প্রতিদান তথা আমার সন্তুষ্টিলাভই হবে এর সত্যিকার প্রতিদান। আবু উবায়দা (রা.) বলেন, ‘রোজাকে বিশেষভাবে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কিত করার কারণ এই যে, অন্যান্য ইবাদত লোক দেখানোর শঙ্কা থাকে। কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে এ শঙ্কা নেই। রোজা শুধু আল্লাহর জন্যই হয়।

রমজানের মতো এত বিরাট নিয়ামত পেয়েও যারা অবহেলায় কাটিয়ে দেন, তাদের জন্য রাসুল (সা.) বলেছেন কঠিন ও কঠোর হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন। নবিজি (সা.) একদিন মসজিদে নববির মিম্বরে আরোহণ করছিলেন; মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে তিনি বললেন, আমিন! দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রেখে তিনি আবার বললেন, আমিন! তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখে তিনি তৃতীয়বার বললেন, আমিন! যার অর্থ, হে আল্লাহ তুমি কবুল করো! নবিজি (সা.)-এর জীবনে এই প্রথম এমন ঘটনা দেখে সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়ে জানতে চাইলেন। তখন নবিজি (সা.) বলেন, ‘এই মাত্র জিবরাইল (আ.) এলেন- আমি প্রথম সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি আমাকে (কানে কানে) বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যে রমজান মাস পেল অথচ তার পাপমোচন হলো না। আমি বললাম, আমিন। আমি দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হওয়া সত্ত্বেও সে আপনার ওপর দরুদ পড়েনি। আমি বললাম, আমিন। আমি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যে তার পিতামাতা উভয়কে পেল অথবা উভয়ের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাত লাভ করতে পারল না। আমি বললাম, আমিন!’

আমাদের কর্তব্য হলো, এই মোবারক মাসকে যথাযথ সমাদর করা। যথার্থ মূল্যায়ন করা। কারণ, আমরা যদি এর উপযুক্ত মূল্য দিতে না পারি, জান্নাতলাভের এমন সুযোগকেও হাতছাড়া করে ফেলি, তাহলে এ জগতে আমাদের চেয়ে বড় হতভাগা আর কে হতে পারে? আল্লাহ যেন আমাদের অভিশপ্তদের অন্তর্ভুক্ত না করেন। শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও আমরা যেন সিয়াম সাধনার নিয়ামত থেকে বঞ্চিত না হই। আমরা হয়তো অনেকেই নবিজি (সা.)-এর সাহাবি ইবনে আহমাসি (রা.)-এর ঘটনা জানি। তিনি একবার সিয়াম অবস্থায় যুদ্ধের ময়দানে লড়ছিলেন। লড়তে লড়তে একসময় আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়লেন। সঙ্গীরা তাকে সংরক্ষিত স্থানে নিয়ে গেলেন। তারপর তাকে পানি পান করতে দিলেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। তিনি বললেন, আমার সিয়াম ভেঙে যাবে। কিছুক্ষণ পরই তিনি দুনিয়া ছেড়ে তার কাছে চলে গেলেন, যার জন্য সিয়াম রেখেছিলেন।

দুনিয়াতে সিয়াম সাধনা করে আখেরাতে মহান প্রভুর কাছে ইফতার করতে গেলেন। ওমর এ ঘটনা শুনে বললেন, এই সাহাবি দুনিয়া দিয়ে আখেরাতকে কিনে নিয়েছেন।

লেখক : মহাপরিচালক, জামিয়া আরাবিয়া নুরুল ইসলাম, উত্তরখান, ঢাকা