ঢাকা ০৩:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo আমতলীর ডলার জালাল গ্রেফতার Logo বরুড়ায় দৈনিক মুক্তির লড়াই পত্রিকার তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত Logo পোস্তগোলা ব্রিজের ঢালে ডাকাতির প্রস্তুতি কালে ৬ ডাকাত আটক Logo সুবর্ণচরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত ১৫, দোকানপাট-বাড়িঘর ভাঙচুর Logo সাবেক চেয়ারম্যান ও বহিষ্কৃত সিইও’র ষড়যন্ত্রে সোনালী লাইফ Logo ঢাকা সাব-এডিটরস এর নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ Logo রূপসা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১১ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল Logo চীন-সার্বিয়া অভিন্ন কল্যাণের সমাজ প্রতিষ্ঠার ‘যৌথ বিবৃতি’ স্বাক্ষর Logo “দূর থেকে বন্ধু আসছে” থিম সম্বলিত স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশ Logo হাঙ্গেরির গণমাধ্যমে স্বাক্ষরযুক্ত নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন সি চিন পিং

দেবিকা দত্তের ছোট গল্প ‘বিকল্প’

দেবিকা দত্তের ছোট গল্প ‘বিকল্প’

তখন প্রায় বারোটা বাজে সবে বারোটার কাটা ছুই ছুই করছে এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো, দরজার ওপার থেকে আওয়াজ এল ফরিদ আহমেদের জন্য পার্সেল এসেছে কিছুটা ইতস্তত হই দরজা খুললাম ডেলিভারি বয় যখন পার্সেলটা আমার হাতে দেবে আমি বললাম আপনাকে এই ঠিকানা কে দিয়েছে ফরিদ আহমেদ তো গত দুদিন এই বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে চলে গেছেন। ডেলিভারি বয় একটু থমকে গিয়ে বলল উনার ছেলে ঢাকা শহর থেকে উনার জন্য পার্সেল পাঠিয়েছে আর উনি বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে চলে গেছেন ঠিক আছে আপনি নতুন ঠিকানাটা দিন। আমি বললাম উনি বারণ করেছেন উনার ঠিকানা দিতে ডেলিভারি বয় তো মহা বিপদে পড়ল তাহলে পার্সেলটা….আমি বললাম পার্সেলটা আপনি আমাকে দিয়ে যান আমি ফরিদ বাবুর হাতে পৌঁছে দেব ডেলিভারি বয় বলল ঠিক আছে তাহলে আপনার মোবাইলে একটা ওটিপি যাবে ওটা আমাকে বলুন তাহলে ডেলিভারি কনফার্ম করবো।

পার্সেলটা হাতে পাওয়ার পর আমি ফরিদ বাবুর হাতে না দিয়ে কৌতুহলবশত খুলেই দেখলাম পার্সেলটায় রয়েছে একটা চিঠি, একটা ফটো ফ্রেম, নগদ কুড়ি হাজার টাকা টাকাটা সাইডে সরিয়ে চিঠি টা‌ পড়লাম চিঠিটা ফরিদ বাবুর জন্যই লেখা লেখা হয়েছে, বাবা কর্মসূত্রে আমাকে ঢাকায় থাকতে হয় আমার এখন সংসার হয়েছে আমি স্ত্রী পুত্র নিয়ে আলাদা হলাম আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না ।তোমার বোঝা আমি টানতে পারছি না এখানে নগদ কুড়ি হাজার টাকা রয়েছে। বৃদ্ধাশ্রম এর জন্য যথেষ্ট আর তোমার পেনশনের টাকা দিয়ে তোমার বাকি জীবনটা চলে যাবে।

চিঠিটা পড়ার পর চোখ থেকে জল বেরিয়ে গেল আমি ফরিদ বাবুকে ফোন করলাম বললাম আপনার ছেলে নগদ কুড়ি হাজার টাকা একটা ফটো ফ্রেম এবং সঙ্গে একটি চিঠি দিয়েছেন আপনি নিজের ঠিকানা বলতে বারণ করেছেন বলে ডেলিভারি বয় কে আপনার ঠিকানা দিইনি,ফরিদ বাবু বয়স্ক মানুষ বেশি কথা বলেন না উনি শুধু বললেন ফটো ফ্রেম আর চিঠিটা কোথাও ফেলে দিয়ে আসো আর নগদ কুড়ি হাজার টাকা দুস্থ বাচ্চাদের মধ্যে বিলিয়ে দাও আমার ঠিকানা না বলেই ভালো করেছো। যে ছেলে তার বৃদ্ধ বাবাকে তার দুরবস্থার সময় বৃদ্ধাশ্রমে যেতে বলতে পারে তার দেওয়া ভিক্ষা এই ফরিদ আহমেদ গ্রহণ করেনা আমার কর্তব্য পালনে আমি সফল কিন্তু আমার ছেলে নিজের কর্তব্য পালন করতে ব্যর্থ সে ভেবেছিল নগদ কুড়ি হাজার টাকা দিয়ে এই বৃদ্ধ বাবার ঋণ মুকুব করে দেবে কিন্তু উল্টে আমি যে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছি সেটা সে বোঝেনি এ বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে আমি ভালোই করেছি। আমি বুঝেছিলাম ঠিক এরকমই একটা ঘটনা ঘটবে এটা আমার ছেলে স্ত্রীর পূর্বপরিকল্পনা ছিল থাক ওরা যখন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আমি করতে ক্ষতি নেই মা, তুমি ওই টাকাটা গরিবদের দান করে দিও।

শুধু এই বৃদ্ধ মানুষের কথা রেখো আমার ঠিকানাটা তুমি জানিও না আমার ছেলে হয়তো খোঁজ করবে তুমি শুধু বলে দিও সম্পত্তির লোভ-লালসা তাকে যে নিচে নামিয়েছে সে তার জন্মদাত্রী বৃদ্ধ বাবার দায়িত্ব নিতে যখন অক্ষম তখন এই বুড়ো তার বিকল্প ব্যবস্থা করেই নিয়েছে সুতরাং আমার যেন খোঁজ না করে, এই বলে ফরিদ বাবু ফোনটি কেটে দিলেন সম্পত্তি টাকা পয়সা মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা লোভ-লালসা মানুষকে এতটাই নিচে নামাতে পারে যে জন্মদাত্রী পিতা কে তার নিজের ছেলেও ত্যাগ করতে পারে। তাই কলিযুগে প্রত্যেকের বিকল্প ব্যবস্থা রাখা বাঞ্ছনীয়। এইভাবেই ফরিদ বাবুর মতো অসংখ্য বয়স্ক মানুষ তার বিকল্প ব্যবস্থা নিজেই তৈরি করে নিয়েছে।

 

দেবিকা দত্ত

ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ,

সোদপুর রামচন্দ্রপুর, কলকাতা।
আপলোডকারীর তথ্য

আমতলীর ডলার জালাল গ্রেফতার

দেবিকা দত্তের ছোট গল্প ‘বিকল্প’

আপডেট সময় ১০:২৬:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

দেবিকা দত্তের ছোট গল্প ‘বিকল্প’

তখন প্রায় বারোটা বাজে সবে বারোটার কাটা ছুই ছুই করছে এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো, দরজার ওপার থেকে আওয়াজ এল ফরিদ আহমেদের জন্য পার্সেল এসেছে কিছুটা ইতস্তত হই দরজা খুললাম ডেলিভারি বয় যখন পার্সেলটা আমার হাতে দেবে আমি বললাম আপনাকে এই ঠিকানা কে দিয়েছে ফরিদ আহমেদ তো গত দুদিন এই বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে চলে গেছেন। ডেলিভারি বয় একটু থমকে গিয়ে বলল উনার ছেলে ঢাকা শহর থেকে উনার জন্য পার্সেল পাঠিয়েছে আর উনি বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে চলে গেছেন ঠিক আছে আপনি নতুন ঠিকানাটা দিন। আমি বললাম উনি বারণ করেছেন উনার ঠিকানা দিতে ডেলিভারি বয় তো মহা বিপদে পড়ল তাহলে পার্সেলটা….আমি বললাম পার্সেলটা আপনি আমাকে দিয়ে যান আমি ফরিদ বাবুর হাতে পৌঁছে দেব ডেলিভারি বয় বলল ঠিক আছে তাহলে আপনার মোবাইলে একটা ওটিপি যাবে ওটা আমাকে বলুন তাহলে ডেলিভারি কনফার্ম করবো।

পার্সেলটা হাতে পাওয়ার পর আমি ফরিদ বাবুর হাতে না দিয়ে কৌতুহলবশত খুলেই দেখলাম পার্সেলটায় রয়েছে একটা চিঠি, একটা ফটো ফ্রেম, নগদ কুড়ি হাজার টাকা টাকাটা সাইডে সরিয়ে চিঠি টা‌ পড়লাম চিঠিটা ফরিদ বাবুর জন্যই লেখা লেখা হয়েছে, বাবা কর্মসূত্রে আমাকে ঢাকায় থাকতে হয় আমার এখন সংসার হয়েছে আমি স্ত্রী পুত্র নিয়ে আলাদা হলাম আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না ।তোমার বোঝা আমি টানতে পারছি না এখানে নগদ কুড়ি হাজার টাকা রয়েছে। বৃদ্ধাশ্রম এর জন্য যথেষ্ট আর তোমার পেনশনের টাকা দিয়ে তোমার বাকি জীবনটা চলে যাবে।

চিঠিটা পড়ার পর চোখ থেকে জল বেরিয়ে গেল আমি ফরিদ বাবুকে ফোন করলাম বললাম আপনার ছেলে নগদ কুড়ি হাজার টাকা একটা ফটো ফ্রেম এবং সঙ্গে একটি চিঠি দিয়েছেন আপনি নিজের ঠিকানা বলতে বারণ করেছেন বলে ডেলিভারি বয় কে আপনার ঠিকানা দিইনি,ফরিদ বাবু বয়স্ক মানুষ বেশি কথা বলেন না উনি শুধু বললেন ফটো ফ্রেম আর চিঠিটা কোথাও ফেলে দিয়ে আসো আর নগদ কুড়ি হাজার টাকা দুস্থ বাচ্চাদের মধ্যে বিলিয়ে দাও আমার ঠিকানা না বলেই ভালো করেছো। যে ছেলে তার বৃদ্ধ বাবাকে তার দুরবস্থার সময় বৃদ্ধাশ্রমে যেতে বলতে পারে তার দেওয়া ভিক্ষা এই ফরিদ আহমেদ গ্রহণ করেনা আমার কর্তব্য পালনে আমি সফল কিন্তু আমার ছেলে নিজের কর্তব্য পালন করতে ব্যর্থ সে ভেবেছিল নগদ কুড়ি হাজার টাকা দিয়ে এই বৃদ্ধ বাবার ঋণ মুকুব করে দেবে কিন্তু উল্টে আমি যে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছি সেটা সে বোঝেনি এ বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে আমি ভালোই করেছি। আমি বুঝেছিলাম ঠিক এরকমই একটা ঘটনা ঘটবে এটা আমার ছেলে স্ত্রীর পূর্বপরিকল্পনা ছিল থাক ওরা যখন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আমি করতে ক্ষতি নেই মা, তুমি ওই টাকাটা গরিবদের দান করে দিও।

শুধু এই বৃদ্ধ মানুষের কথা রেখো আমার ঠিকানাটা তুমি জানিও না আমার ছেলে হয়তো খোঁজ করবে তুমি শুধু বলে দিও সম্পত্তির লোভ-লালসা তাকে যে নিচে নামিয়েছে সে তার জন্মদাত্রী বৃদ্ধ বাবার দায়িত্ব নিতে যখন অক্ষম তখন এই বুড়ো তার বিকল্প ব্যবস্থা করেই নিয়েছে সুতরাং আমার যেন খোঁজ না করে, এই বলে ফরিদ বাবু ফোনটি কেটে দিলেন সম্পত্তি টাকা পয়সা মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা লোভ-লালসা মানুষকে এতটাই নিচে নামাতে পারে যে জন্মদাত্রী পিতা কে তার নিজের ছেলেও ত্যাগ করতে পারে। তাই কলিযুগে প্রত্যেকের বিকল্প ব্যবস্থা রাখা বাঞ্ছনীয়। এইভাবেই ফরিদ বাবুর মতো অসংখ্য বয়স্ক মানুষ তার বিকল্প ব্যবস্থা নিজেই তৈরি করে নিয়েছে।

 

দেবিকা দত্ত

ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ,

সোদপুর রামচন্দ্রপুর, কলকাতা।