সৈয়দ রোকনুজ্জামান, নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) সংবাদদাতাঃ
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে সরকারি বিশাল আকৃতির ইউক্যালিপটাস গাছ কেটে সাবাড় করছেন পুটিমারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কবিরুল ইসলাম ও তার লোকজন। স্থানীয়রা প্রথমে এমন মৌখিক অভিযোগ করলে তহশিলদার ঘটনাস্থলে এসে মাত্র ৭ টি গাছ জব্দ দেখান। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (১২ জানুআরি) ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে আরো ১৯ টিসহ মোট ২৬ টি গাছ শব্দ দেখান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এসময় তিনি গাছের মাঝারী ধরনের ৩৪ টি গোলাই জব্দ করেন।
নবাবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামরুজ্জামান সরকার সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে অবৈধভাবে পুটিমারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কবিরুল ইসলাম ওরফে কবির খোড়া প্রভাব খাটিয়ে তার নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় সে নিজে উপস্থিত থেকে তার লোকজনকে দিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ হতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত সরকারি বেশ কিছু গাছ কর্তন করে বিক্রি করে দেন। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আরো দেড় শতাধিক সরকারি গাছ চুরি করে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রেখেছে সে। এমনকি অন্যের জমিতে রোপনকৃত বিশাল আকৃতির অর্ধশতাধিক গাছও কেটে বিক্রি করছে। এ সব নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে কয়েকজনকে মারধরের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শালখুরিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত দলা মৌজার দলা গ্রামের চাপড়া নামক স্থানে (বানে বাগান/ছোট তুলসী গঙ্গা নদীর পাড়) সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় রোপিত বিশাল আকৃতির ইউক্যালিপটাস গাছ যাহার মূল্য আনুমানিক ৫০০০০০ টাকা কর্তন করা হয়েছে। উক্ত গাছগুলো কর্তন করেন ১। মোঃ কবিরুল ইসলাম ওরফে কবির খোড়া, পিতা মৃত আতাফ উদ্দিন আতা, গ্রাম পরানদিঘী, ২। আবুল বাশার ওরফে গাঞ্জা বাসার, পিতা মৃত আবুল কালাম মন্ডল, গ্রাম মতিহারা, উভয় পোস্ট মতিহারা, ৫ নং পুটিমারা ইউনিয়ন, উপজেলা নবাবগঞ্জ, জেলা দিনাজপুরসহ আরো ২০-২৫ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি। ১ নং কবিরুল ইসলামের বাড়ি উক্ত গাছ কর্তনের জায়গার নিকটে। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে এভাবে সরকারি গাছগুলো কর্তন করে বিক্রি ও চুরির ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমএম আশিক রেজা বলেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এসিল্যান্ড ও থানায় অভিযোগের কপি প্রেরণ করা হয়েছে। সরকারি গাছ কেটে বিক্রির এ ঘটনায় প্রচলিত আইনে মামলা হবে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান।
অন্যের ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা হতে যে সকল গাছ কাঁটা হয়েছে, তাদের বাদি হয়ে পৃথক পৃথক থানায় মামলা দায়ের পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে মনিরুজ্জামান নামে এক ভুক্তভোগী মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
অভিযুক্তদের বক্তব্য নিতে তাদের বাড়ি গেলেও দেখা মেলেনি। পরে একাধিকার ফোন করলে তাদের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে প্রতিবেদনে তাদের বক্তব্য যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশীদের ভাষ্যমতে, অভিযুক্তরা গণমাধ্যমের সামনে আসতে চান না। সরকারি গাছ কেটে বিক্রি ও চুরির দায় থেকে বাঁচতে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করছেন।#