ঢাকা ০৯:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বিএনপি-জামায়াত নিধন করা ওসি জাবীদ এখন ঝিনাইদহ পিবিআইতে Logo সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ জাহাঙ্গীর আলম, পিতৃহারা হলো তিন বছরের ইরফান Logo রক্তের কালিতে লেখা ১৪ ডিসেম্বর—শোক ও গৌরবের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস Logo হাদির উপর গুলির ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন থেকে ফেরার পথে ২ জনকে কুপিয়ে জখম Logo ওসমান হাদির সুস্থতা কামনায় মুরাদনগরে দোয়া মাহফিল Logo রাণীনগরে ৬০০ শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ Logo কালীগঞ্জে অপহরণের ১৬ ঘন্টা পর এক যুবককে উদ্ধার, তিন অপহরণকারী গ্রেফতার Logo শরীফ ওসমান হাদীর ওপর হামলার পর সীমান্তে বিজিবির কড়া নিরাপত্তা Logo দীগলটারীতে ভাঙা সেতুর কারণে দুই পাড়ের পাঁচ শতাধিক মানুষের চরম দুর্ভোগ Logo নীলফামারীতে ট্রেনের ধাক্কায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু 

ঘরে বসে ৮৬ রোগের ‘ওষুধ’ বানিয়ে বিক্রি করছেন রবিউল-রূপা দম্পতি

মোঃ ইলিয়াস আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসেই ৮৬ রোগের ‘ওষুধ’ তৈরি করছেন রবিউল ইসলাম ও রূপা আক্তার নামে এক দম্পতি। তাদের তৈরি ওষুধ দেশের বড় বড় ওষুধ কোম্পানির পুরান বোতলে ভরে নতুন লেবেল লাগিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। এ কাজে সহযোগিতা করছেন চার যুবক।

নিজেদের কবিরাজ দাবি করা রবিউল-রূপার বাড়ি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার রামপুরা সরকারপাড়া এলাকায়। গত এক বছর বছরের বেশি সময় ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ধুকুরঝারী গুয়াবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৯ নং ঘরে বসবাস করছেন। আর সেই ঘরকে বানিয়েছেন ‘ওষুধ’ তৈরির কারখানা। একটি মাইক্রোবাসে করে জেলার বিভিন্ন বাজারে এসব ‘ওষুধ’ সরবরাহ করেন। এর আগে তারা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া বাজার এলাকায় বসবাস করেছিলেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তাদের তৈরি করা ‘ওষুধ’ বাজার থেকে কেনা পুরান বোতলে ভরছে কয়েকজন শিশু। সেই বোতলে ফটোকপি করা লেবেল লাগিয়ে বিক্রির জন্য কার্টনে ভরছেন রবিউল ও তার স্ত্রী। বাইরের লোক আশ্রয়ণ প্রকল্পে আসার খবরে সব বোতল সরিয়ে ফেলেন।

‘ওষুধ’ কেনার কথা জানালে সদ্য তৈরি করা দুটো বোতল বের করে দেন রবিউল। জানিয়ে দেন, খাওয়ার নিয়ম। এই ‘ওষুধ’ পেট ব্যথা, বাতব্যথা, অ্যালার্জিসহ কঠিন আরও ৮৬ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে বলে দাবি তাদের।

কোনও প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন কিংবা চিকিৎসা সেবা প্রদানের কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘কোন অনুমোদন কিংবা ডিগ্রি নেই। আমরা ওষুধ তৈরি করি। ব্যবহৃত বোতল পরিষ্কার করে সেই বোতলে ভরে আমাদের লেবেল লাগিয় বাজারে বাজারে গিয়ে বিক্রি করি। আজ পর্যন্ত কোনও খারাপ খবর আমাদের কানে আসেনি।’

কী উপাদান ব্যবহার করেন- এমন প্রশ্নে রবিউল দাবি করেন, এসব তার স্ত্রী রূপা করেন। এসব সে বলতে পারবে। এই নিয়ে রূপার কাছে জানতে চাইলে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্য ঘরে থাকা বাসিন্দা হরি দাস ও নাসিমা আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকার লোকজনও নিয়মিত তাদের কাছে ‘ওষুধ’ কিনতে আসেন। অল্প টাকা বলে বেশ চাহিদা রয়েছে। তবে কয়েক লাখ টাকার মাইক্রোবাসের মালিক এবং স্থানীয় বাসিন্দা না হয়েও প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে।

স্থানীয় বাজার থেকে মায়ের জন্য রবিউল-রূপার তৈরি এক বোতল ‘ওষুধ’ কিনেছিলেন ফুলতলা গ্রামের মাজেদুল ইসলাম। তিনি জানান, বুকে অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া- সেটি কমার জন্য তিনি কিনেছিলেন। তবে বোতলের গায়ে বিভিন্ন লেখা এবং মেয়াদ না থাকায় তিনি সেটা ফেলে দিয়েছেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক মিঠুন চন্দ্র দেবনাথ জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া যেকোনও ওষুধ মানবদেহে প্রয়োগের ফলে চরম ক্ষতি হতে পারবে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। এদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ। একইসঙ্গে খোলা বাজারে ঔষধ কেনা থেকে মানুষের সচেতন থাকা দরকার।

বিষয়টি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার জানান, এ ধরনের কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বিএনপি-জামায়াত নিধন করা ওসি জাবীদ এখন ঝিনাইদহ পিবিআইতে

SBN

SBN

ঘরে বসে ৮৬ রোগের ‘ওষুধ’ বানিয়ে বিক্রি করছেন রবিউল-রূপা দম্পতি

আপডেট সময় ০৮:১৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩

মোঃ ইলিয়াস আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসেই ৮৬ রোগের ‘ওষুধ’ তৈরি করছেন রবিউল ইসলাম ও রূপা আক্তার নামে এক দম্পতি। তাদের তৈরি ওষুধ দেশের বড় বড় ওষুধ কোম্পানির পুরান বোতলে ভরে নতুন লেবেল লাগিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। এ কাজে সহযোগিতা করছেন চার যুবক।

নিজেদের কবিরাজ দাবি করা রবিউল-রূপার বাড়ি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার রামপুরা সরকারপাড়া এলাকায়। গত এক বছর বছরের বেশি সময় ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ধুকুরঝারী গুয়াবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৯ নং ঘরে বসবাস করছেন। আর সেই ঘরকে বানিয়েছেন ‘ওষুধ’ তৈরির কারখানা। একটি মাইক্রোবাসে করে জেলার বিভিন্ন বাজারে এসব ‘ওষুধ’ সরবরাহ করেন। এর আগে তারা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া বাজার এলাকায় বসবাস করেছিলেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তাদের তৈরি করা ‘ওষুধ’ বাজার থেকে কেনা পুরান বোতলে ভরছে কয়েকজন শিশু। সেই বোতলে ফটোকপি করা লেবেল লাগিয়ে বিক্রির জন্য কার্টনে ভরছেন রবিউল ও তার স্ত্রী। বাইরের লোক আশ্রয়ণ প্রকল্পে আসার খবরে সব বোতল সরিয়ে ফেলেন।

‘ওষুধ’ কেনার কথা জানালে সদ্য তৈরি করা দুটো বোতল বের করে দেন রবিউল। জানিয়ে দেন, খাওয়ার নিয়ম। এই ‘ওষুধ’ পেট ব্যথা, বাতব্যথা, অ্যালার্জিসহ কঠিন আরও ৮৬ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে বলে দাবি তাদের।

কোনও প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন কিংবা চিকিৎসা সেবা প্রদানের কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘কোন অনুমোদন কিংবা ডিগ্রি নেই। আমরা ওষুধ তৈরি করি। ব্যবহৃত বোতল পরিষ্কার করে সেই বোতলে ভরে আমাদের লেবেল লাগিয় বাজারে বাজারে গিয়ে বিক্রি করি। আজ পর্যন্ত কোনও খারাপ খবর আমাদের কানে আসেনি।’

কী উপাদান ব্যবহার করেন- এমন প্রশ্নে রবিউল দাবি করেন, এসব তার স্ত্রী রূপা করেন। এসব সে বলতে পারবে। এই নিয়ে রূপার কাছে জানতে চাইলে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্য ঘরে থাকা বাসিন্দা হরি দাস ও নাসিমা আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকার লোকজনও নিয়মিত তাদের কাছে ‘ওষুধ’ কিনতে আসেন। অল্প টাকা বলে বেশ চাহিদা রয়েছে। তবে কয়েক লাখ টাকার মাইক্রোবাসের মালিক এবং স্থানীয় বাসিন্দা না হয়েও প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে।

স্থানীয় বাজার থেকে মায়ের জন্য রবিউল-রূপার তৈরি এক বোতল ‘ওষুধ’ কিনেছিলেন ফুলতলা গ্রামের মাজেদুল ইসলাম। তিনি জানান, বুকে অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া- সেটি কমার জন্য তিনি কিনেছিলেন। তবে বোতলের গায়ে বিভিন্ন লেখা এবং মেয়াদ না থাকায় তিনি সেটা ফেলে দিয়েছেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক মিঠুন চন্দ্র দেবনাথ জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া যেকোনও ওষুধ মানবদেহে প্রয়োগের ফলে চরম ক্ষতি হতে পারবে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। এদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ। একইসঙ্গে খোলা বাজারে ঔষধ কেনা থেকে মানুষের সচেতন থাকা দরকার।

বিষয়টি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার জানান, এ ধরনের কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।