ঢাকা ০৯:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

পিআইও এবং ঠিকাদারের অসহযোগিতায় থমকে আছে ‘বীর নিবাস’র কাজ

মোঃ কামরুজ্জামান সেন্টু

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা/মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতাধিন ‘বীর নিবাস’র আংশিক কাজ করেই প্রকল্পের বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং ঠিকাদারের অসহযোগিতায় থমকে আছে ‘বীর নিবাস’র কাজ এমনটি বলছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরারব একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের শোরসাক গ্রামের মৃত ওয়ালী মুন্সীর পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত হোসেন আহমেদ। যার লাল মুক্তি বার্তা নং-০২০৫০৬০৩১৫।

মুক্তিযোদ্ধা মৃত হোসেন আহমেদ এর ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে থাকার পরও ছোট ছেলে আবদুল ওয়াদুদ মিজি অস্বচ্ছল, বেকার ও প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার নামে ঘরটির বরাদ্ধ হয়। উপজেলায় ৬৩টি ‘‘বীর নিবাস’’র বরাদ্ধের মধ্যে আবদুল ওয়াদুদের ঘরটি ৪৭ নং ক্রমিকে রয়েছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, বরাদ্দকৃত ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের কাজটি ঠিকাদার মোঃ বদিউজ্জামান টেন্ডারের মাধ্যমে পায়। ঠিকাদার ‘বীর নিবাস’র আংশিক কাজ করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ সবুজের সহযোগিতায় বরাদ্দের বিল উত্তোলন করেন। বিল উত্তোলনের পর হতে ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে বহুবার তারিখ দিয়েও কাজ না করে হয়রানি করছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ সবুজকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেন না এমনকি অফিসে দেখা করলে ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে দেখা করতে বলেন। অন্য দিকে ঠিকাদার মোঃ বদিউজ্জামানকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি আমার কোন কথার কর্ণপাত করছেন না।

এ বিষয়ে ‘বীর নিবাস’ বরাদ্দ হওয়া অসচ্ছল ও প্রতিবন্ধী আবদুল ওয়াদুদ মিজির স্ত্রী ফারজানা বেগম জানান, ঠিকাদার বদিউজ্জামান ভাইয়ের কাজের লোকদের নিয়মিত নাস্তা ও খাবারের ব্যবস্থা করেছি। কাজে লস আসবে বলে আমার কাছ থেকে ৩ হাজার ইট, ৫০ বস্তা সিমেন্ট ও এক বান্ডেল রড নিয়েছে। কিন্তু কাজ বন্ধ থাকায় আমার দেয়া সিমেন্ট ও কংক্রিট গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা অসহায় মানুষ চাইলে বার বার এসব জিনিসপত্র দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবো না।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর ইসলাম সিরাজ জানান, কাজটি ২/৩ বছর যাবত বন্ধ হয়ে রয়েছে। ঠিকাদারের কথা অনুযায়ী অসহায় পরিবারটি কাজের প্রয়োজনে কিছু ইট, রড, সিমেন্ট দেয়ার কথা ছিলো, তা দেয়ার পরও কাজটি করা হচ্ছে না। তারা খুব অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, আবদুল ওয়াদুদ মিজি’র স্ত্রী ফারজানা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের আস্থাভাজন হওয়ায় তখন রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে স্বামী পরিবারের অন্য সদস্যদের হয়রানি করেছে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পরিবারের অন্য সদস্যরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত হোসেন আহমেদের অন্য ওয়ারিশদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের সাক্ষাত পাওয়া সম্ভব হয়নি।

‘বীর নিবাস’র ঠিকাদার বদিউজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাদের পারিবারিক মামলা ও বন্যার কারনে কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। আমি অফিসে বিষয়টি জানিয়ে রেখেছি। কাজের বিষয়ে অভিযোগ হলে, অফিস কিছু বললে সেটা আমি অফিসিয়ালি জবাব দিবো।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ সবুজ জানান, এ কাজটি নিয়ে আমরা বিপাকে রয়েছি। তাদের পারিবারিক কিছু জটিলতার কারনে ঠিকাদার কাজটি সম্পন্ন করতে পারছে না। এ নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করলেও পারিবারিক সমঝোতা সম্ভব হয়নি। তারপরও ঠিকাদারকে বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে কাজটি শেষ করার জন্য। নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগের পর ঠিকাদারকে ডেকে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য বলেছি। তিনি বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির পর যান চলাচলের পথ স্বাভাবিক হলে কাজটি করে দিবেন বলে জানিয়েছেন।

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়াসির আরাফাত জানান, বিষয়টি আমি অবগত রয়েছি। তাদের পারিবারিক জটিলতা রয়েছে। পূর্বের নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে একাধিকার বৈঠক করেছে এবং একটি সমঝোতা করে দিয়েছেন।

অভিযোগকারী সমঝোতা মোতাবেক শর্ত পূরণ করেননি। যার কারণে ঠিকাদার কাজটি করতে পারেননি। এছাড়াও আমি অভিযোগকারীকে আমার সাথে সাক্ষাত করার জন্য বলেছি তিনি আসেননি। তাদের পারিবারিক সমঝোতা হলে সেটি নিয়ে আসলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মানুষের বাঁচার জন্য প্রয়োজন নির্মল বায়ু- পরিবেশ উপদেষ্টা

SBN

SBN

পিআইও এবং ঠিকাদারের অসহযোগিতায় থমকে আছে ‘বীর নিবাস’র কাজ

আপডেট সময় ০৮:২৩:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

মোঃ কামরুজ্জামান সেন্টু

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা/মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতাধিন ‘বীর নিবাস’র আংশিক কাজ করেই প্রকল্পের বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং ঠিকাদারের অসহযোগিতায় থমকে আছে ‘বীর নিবাস’র কাজ এমনটি বলছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরারব একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের শোরসাক গ্রামের মৃত ওয়ালী মুন্সীর পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত হোসেন আহমেদ। যার লাল মুক্তি বার্তা নং-০২০৫০৬০৩১৫।

মুক্তিযোদ্ধা মৃত হোসেন আহমেদ এর ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে থাকার পরও ছোট ছেলে আবদুল ওয়াদুদ মিজি অস্বচ্ছল, বেকার ও প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার নামে ঘরটির বরাদ্ধ হয়। উপজেলায় ৬৩টি ‘‘বীর নিবাস’’র বরাদ্ধের মধ্যে আবদুল ওয়াদুদের ঘরটি ৪৭ নং ক্রমিকে রয়েছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, বরাদ্দকৃত ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের কাজটি ঠিকাদার মোঃ বদিউজ্জামান টেন্ডারের মাধ্যমে পায়। ঠিকাদার ‘বীর নিবাস’র আংশিক কাজ করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ সবুজের সহযোগিতায় বরাদ্দের বিল উত্তোলন করেন। বিল উত্তোলনের পর হতে ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে বহুবার তারিখ দিয়েও কাজ না করে হয়রানি করছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ সবুজকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেন না এমনকি অফিসে দেখা করলে ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে দেখা করতে বলেন। অন্য দিকে ঠিকাদার মোঃ বদিউজ্জামানকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি আমার কোন কথার কর্ণপাত করছেন না।

এ বিষয়ে ‘বীর নিবাস’ বরাদ্দ হওয়া অসচ্ছল ও প্রতিবন্ধী আবদুল ওয়াদুদ মিজির স্ত্রী ফারজানা বেগম জানান, ঠিকাদার বদিউজ্জামান ভাইয়ের কাজের লোকদের নিয়মিত নাস্তা ও খাবারের ব্যবস্থা করেছি। কাজে লস আসবে বলে আমার কাছ থেকে ৩ হাজার ইট, ৫০ বস্তা সিমেন্ট ও এক বান্ডেল রড নিয়েছে। কিন্তু কাজ বন্ধ থাকায় আমার দেয়া সিমেন্ট ও কংক্রিট গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা অসহায় মানুষ চাইলে বার বার এসব জিনিসপত্র দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবো না।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর ইসলাম সিরাজ জানান, কাজটি ২/৩ বছর যাবত বন্ধ হয়ে রয়েছে। ঠিকাদারের কথা অনুযায়ী অসহায় পরিবারটি কাজের প্রয়োজনে কিছু ইট, রড, সিমেন্ট দেয়ার কথা ছিলো, তা দেয়ার পরও কাজটি করা হচ্ছে না। তারা খুব অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, আবদুল ওয়াদুদ মিজি’র স্ত্রী ফারজানা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের আস্থাভাজন হওয়ায় তখন রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে স্বামী পরিবারের অন্য সদস্যদের হয়রানি করেছে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পরিবারের অন্য সদস্যরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত হোসেন আহমেদের অন্য ওয়ারিশদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের সাক্ষাত পাওয়া সম্ভব হয়নি।

‘বীর নিবাস’র ঠিকাদার বদিউজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাদের পারিবারিক মামলা ও বন্যার কারনে কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। আমি অফিসে বিষয়টি জানিয়ে রেখেছি। কাজের বিষয়ে অভিযোগ হলে, অফিস কিছু বললে সেটা আমি অফিসিয়ালি জবাব দিবো।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ সবুজ জানান, এ কাজটি নিয়ে আমরা বিপাকে রয়েছি। তাদের পারিবারিক কিছু জটিলতার কারনে ঠিকাদার কাজটি সম্পন্ন করতে পারছে না। এ নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করলেও পারিবারিক সমঝোতা সম্ভব হয়নি। তারপরও ঠিকাদারকে বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে কাজটি শেষ করার জন্য। নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগের পর ঠিকাদারকে ডেকে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য বলেছি। তিনি বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির পর যান চলাচলের পথ স্বাভাবিক হলে কাজটি করে দিবেন বলে জানিয়েছেন।

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়াসির আরাফাত জানান, বিষয়টি আমি অবগত রয়েছি। তাদের পারিবারিক জটিলতা রয়েছে। পূর্বের নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে একাধিকার বৈঠক করেছে এবং একটি সমঝোতা করে দিয়েছেন।

অভিযোগকারী সমঝোতা মোতাবেক শর্ত পূরণ করেননি। যার কারণে ঠিকাদার কাজটি করতে পারেননি। এছাড়াও আমি অভিযোগকারীকে আমার সাথে সাক্ষাত করার জন্য বলেছি তিনি আসেননি। তাদের পারিবারিক সমঝোতা হলে সেটি নিয়ে আসলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।