শাহিনুর রহমান পিন্টু, ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রশ্ন ও নিষিদ্ধ নোট গাইড বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।বিশেষ করে কালীগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেরা প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারেন না। সে সুযোগটি কাজে লাগান বহুল আলোচিত কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিয়ম রয়েছে শিক্ষা বোর্ড প্রশ্ন না দিলে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তাদের বিষয় ভিত্তিক প্রশ্ন তৈরি করে প্রধান শিক্ষক বা একটি কমিটি গঠন করে তাদের নিকট জমা দিবেন। চলতি বছর ২০২৪ সালের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রদান করা হচ্ছে না। ফলে প্রশ্ন তৈরি করবেন স্ব স্ব বিদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকরা।
কিন্তু অধিকাংশ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করতে না পারার কারনে কালীগঞ্জের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি প্রশ্ন বানিজ্য করতে নোট গাইড কোম্পানির সহায়াতা নিয়ে নিম্ন্ন মানের প্রশ্ন ক্রয় করে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ ম শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষার সময়সূচি তৈরি করে সেখানে শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুজ্জামান কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ স্বাক্ষর করে ইতিমধ্যে স্কুল গুলোতে সরবরাহ করেছে।
যা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। সরকার ইতিপূর্বে একাধিকবার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান এর উপর শিক্ষকগণকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। সরকারের বৃহৎ অংকের অর্থ প্রশিক্ষণে ব্যয় করা হলেও মাঠ পর্যায়ে শিক্ষকদের প্রশ্নপত্র ও পাঠদানে তা কোন কাজে আসছে না। আর এটাকেই সুযোগ হিসেবে নিয়েছে কালীগঞ্জ শিক্ষক সমিতি।
এদিকে অভিভাবকরা বলছেন, তারা শিক্ষার্থী প্রতি ৩০০ – ৪০০ টাকা হারে পরীক্ষার ফিস দিয়ে থাকেন প্রতিষ্ঠানসমূহ। শিক্ষকরা তাদের বিষয়ভিত্তিক পাঠ্য বই পড়িয়ে থাকেন। কিন্তু তারা পরীক্ষার সময় প্রশ্নপ্রণয়ন করতে ব্যর্থ হন। পরীক্ষার সময় এই বহুল আলোচিত শিক্ষক সমিতির অসাধু শিক্ষক নেতারা প্রশ্ন এবং নোট গাইড বানিজ্য করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন।
সূত্রমতে জানা যায়, এবার শিক্ষক সমিতি নাকি বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন একটি বই কোম্পানির নিকট থেকে নিচ্ছে। অবশ্য প্রশ্ন বানিজ্যের বিষয়ে অনেকবার স্থানীয় প্রশাসন উপজেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে আলোচনা হলেও আজ অব্দি তার কোন সুরাহা হয়নি। অপরদিকে শিক্ষক সমিতির কতিপয় অতিউৎসাহি শিক্ষক এই প্রশ্ন বানিজ্য করার জন্য কোন আইন মানতে নারাজ।প্রশ্ন বাণিজ্যের সাথে সাথে শিক্ষক সমিতির প্রথম সারির নেতারা ইতিমধ্যে একটি বড় নোট গাইড কোম্পানির সাথে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মৌখিক চুক্তি সম্পাদন করেছেন বলেও সূত্রটি জানায়।
ইতিপূর্বে প্রতিবছর নোট গাইড কোম্পানির নিকট থেকে শিক্ষক সমিতি বুকলিস্ট তৈরি করে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত কোম্পানির নোট গাইড শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করেন। আর এজন্য সমিতি ওই কোম্পানির নিকট থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। সেই ধারাবাহিকতার রক্ষার স্বার্থে এবারও শিক্ষক সমিতির বর্তমান নেতারা সোচ্চার। এই টাকার লোভে ইতিমধ্যে শিক্ষক সমিতিতে পদ নিয়ে হামলা মামলা ও নানা নাটকীয়তাও ঘটেছে।
সমিতির বর্তমান নেতারা কোনো অবস্থাতেই প্রশ্ন নোট গাইড বাণিজ্যের অর্থ হাতছাড়া করতে নারাজ। এমনকি সকলকে ম্যানেজ করেই পূর্বের ন্যায় এবারও প্রশ্ন এবং নোট গাইড বাণিজ্য চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে তারা।
বালিয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক সমিতি কর্তৃক বার্ষিক পরীক্ষার রুটিন আমি পেয়েছি। পূর্বে পরীক্ষার জন্য প্রশ্নপত্রের চাহিদাও দেওয়া ছিল সমিতির নিকট।
সমিতির মাধ্যমে প্রশ্ন এবং রুটিন পাওয়া সরকারি বিধি বহির্ভূত হলেও খরচ বাঁচাতে আমরা সমিতির দ্বারস্থ হয়েছি। সরকারি বিধান মতে প্রতি বিষয়ের ৪০ টাকা আরে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে পরীক্ষার ফি নেওয়ার নিয়ম নাকি রয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা পরীক্ষার ফিস নিয়েছি। বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন করার সক্ষমতা অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও নেই।
কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশিদ বার্ষিক পরীক্ষার রুটিন বিদ্যালয়ে প্রেরণ প্রসঙ্গে বলেন, ইতিপূর্বে সমিতির মাধ্যমে এভাবেই পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হয়ে আসছে।সে কারণে আমরা এবারও দিয়েছি।
বর্তমান মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন সমিতি কর্তৃক দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি সরকারি আইন লঙ্ঘিত হয়, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ওই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমার স্পষ্ট কথা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে আইনের ব্যত্তয় ঘটিয়ে সমিতিকে প্রাধান্য দিয়ে কোন কাজ করার সুযোগ নেয়। ঝিনাইদহ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন,প্রশ্ন বাণিজ্যের ব্যাপারটি শুনলাম। এখনই বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছি।