ঢাকা ১২:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একটি ট্রান্সফরমারের অভাবে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ গভীর নলকূপ, পতিত ২৫০ বিঘা জমি

মোঃ ওয়াহিদ, কিশোরগঞ্জ

গভীর নলকূপ বন্ধ, কৃষকদের দুঃখগাঁথা।স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কটিয়াদী উপজেলার বীর নোয়াকান্দি মৌজায় একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে। এটি দীর্ঘদিন ধরে ডিজেলচালিত থাকলেও, পাঁচ বছর আগে বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রদান করে ট্রান্সফরমার বসানো হয়। তবে অল্পদিনের মধ্যেই ট্রান্সফরমারটি চুরি হয়ে যায়, যার পর থেকে নলকূপটি বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, নলকূপটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে মাত্র দুটি অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা চালানো হচ্ছে, যা সর্বোচ্চ ৫০ বিঘা জমিতে সেচ দিতে পারে। ফলে বাকি ২৫০ বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। একসময় এই জমি থেকে বছরে ৩০০ টন ধান উৎপাদিত হলেও, এখন তা ৫০ টনে নেমে এসেছে।

নলকূপ বন্ধ থাকায় কৃষকরা বিকল্প ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিদ্যুতের মাধ্যমে সেচের ব্যয় প্রতি বিঘায় ১,০০০ টাকা থাকলেও, ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপে তা বেড়ে ১,৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এতে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অনেক জমি পতিত থাকছে।

কৃষক মুরছালিন ইসলাম জনি ও নূরু মিয়া বলেন, “বিদ্যুতে চালানো গেলে অনেক কম খরচে চাষ করা যেত, কিন্তু এখন ডিজেল ব্যবহার করতে হচ্ছে, যা ব্যয়বহুল। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে অনেক জমি ফেলে রাখছি।”

স্থানীয় বিএনপি নেতা ও নলকূপ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সোবহান জানান, নলকূপ বন্ধ থাকায় ভূগর্ভস্থ পাকা সেচ ড্রেনগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “সেচ ড্রেনের বেশির ভাগ অংশই এখন ভেঙে গেছে। ট্রান্সফরমার বসানোর পাশাপাশি ড্রেনগুলোরও সংস্কার জরুরি।”

কটিয়াদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, “এলাকার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা এখনও অর্জিত হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হলে এবারই আবাদ সম্ভব হতে পারে।”

বিএডিসির (ক্ষুদ্র সেচ) কুলিয়ারচর জোনের সহকারী প্রকৌশলী শাওনা মালাকার বলেন, “গভীর নলকূপটির ব্যাপারে কেউ আমাদের জানায়নি। যদি যোগাযোগ করা হয়, তবে আমরা ব্যবস্থা নেব।” তবে তিনি জানান, নীতিমালা অনুযায়ী চুরি হওয়া ট্রান্সফরমার বিএডিসি থেকে পুনরায় সরবরাহ করা হয় না।

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “একটি ট্রান্সফরমারের জন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা লাগার কথা নয়। কুলিয়ারচর জোনাল অফিস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলে বিষয়টি দেখা হবে।”

একটি ট্রান্সফরমারের অভাবে পাঁচ বছর ধরে গভীর নলকূপ বন্ধ থাকায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিএডিসি ও প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতেও আবাদ ব্যাহত হতে পারে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

একটি ট্রান্সফরমারের অভাবে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ গভীর নলকূপ, পতিত ২৫০ বিঘা জমি

আপডেট সময় ০৭:৫৪:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

মোঃ ওয়াহিদ, কিশোরগঞ্জ

গভীর নলকূপ বন্ধ, কৃষকদের দুঃখগাঁথা।স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কটিয়াদী উপজেলার বীর নোয়াকান্দি মৌজায় একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে। এটি দীর্ঘদিন ধরে ডিজেলচালিত থাকলেও, পাঁচ বছর আগে বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রদান করে ট্রান্সফরমার বসানো হয়। তবে অল্পদিনের মধ্যেই ট্রান্সফরমারটি চুরি হয়ে যায়, যার পর থেকে নলকূপটি বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, নলকূপটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে মাত্র দুটি অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা চালানো হচ্ছে, যা সর্বোচ্চ ৫০ বিঘা জমিতে সেচ দিতে পারে। ফলে বাকি ২৫০ বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। একসময় এই জমি থেকে বছরে ৩০০ টন ধান উৎপাদিত হলেও, এখন তা ৫০ টনে নেমে এসেছে।

নলকূপ বন্ধ থাকায় কৃষকরা বিকল্প ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিদ্যুতের মাধ্যমে সেচের ব্যয় প্রতি বিঘায় ১,০০০ টাকা থাকলেও, ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপে তা বেড়ে ১,৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এতে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অনেক জমি পতিত থাকছে।

কৃষক মুরছালিন ইসলাম জনি ও নূরু মিয়া বলেন, “বিদ্যুতে চালানো গেলে অনেক কম খরচে চাষ করা যেত, কিন্তু এখন ডিজেল ব্যবহার করতে হচ্ছে, যা ব্যয়বহুল। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে অনেক জমি ফেলে রাখছি।”

স্থানীয় বিএনপি নেতা ও নলকূপ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সোবহান জানান, নলকূপ বন্ধ থাকায় ভূগর্ভস্থ পাকা সেচ ড্রেনগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “সেচ ড্রেনের বেশির ভাগ অংশই এখন ভেঙে গেছে। ট্রান্সফরমার বসানোর পাশাপাশি ড্রেনগুলোরও সংস্কার জরুরি।”

কটিয়াদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, “এলাকার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা এখনও অর্জিত হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হলে এবারই আবাদ সম্ভব হতে পারে।”

বিএডিসির (ক্ষুদ্র সেচ) কুলিয়ারচর জোনের সহকারী প্রকৌশলী শাওনা মালাকার বলেন, “গভীর নলকূপটির ব্যাপারে কেউ আমাদের জানায়নি। যদি যোগাযোগ করা হয়, তবে আমরা ব্যবস্থা নেব।” তবে তিনি জানান, নীতিমালা অনুযায়ী চুরি হওয়া ট্রান্সফরমার বিএডিসি থেকে পুনরায় সরবরাহ করা হয় না।

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “একটি ট্রান্সফরমারের জন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা লাগার কথা নয়। কুলিয়ারচর জোনাল অফিস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলে বিষয়টি দেখা হবে।”

একটি ট্রান্সফরমারের অভাবে পাঁচ বছর ধরে গভীর নলকূপ বন্ধ থাকায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিএডিসি ও প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতেও আবাদ ব্যাহত হতে পারে।