
মোহাম্মদ আলী আজ্জম (জালাল) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার দুবাচাইল গ্রামের এক কৃতিসন্তান। ১৯৭৪ সালের ৯ জুলাই তার জন্ম; পিতা মৃত হাফেজ ওসমান আলী এবং মাতা হাজেরা খাতুন। তিতাস নদীর তীরে তার বেড়ে উঠা। বর্তমানে তিনি রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে বসবাস করেন। পেশায় ব্যবসায়ী হলেও যার মনেপ্রাণে মিশে আছে শহীদ জিয়ার আদর্শের রাজনীতি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোহাম্মদ আলী আজ্জম বিএসসি অনার্স (গণিত), এমএসসি সম্পন্ন করেছেন। তিনি দেবিদ্বার সরকারি কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ছাত্রনেতা। নবীনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য। বর্তমানে তিনি জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য, নবীনগর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় জিয়াউর রহমানের গেঞ্জিপড়া (মাথায় সাদা ক্যাপ আর চোখে কালো সানগ্লাস) খালকাটা কর্মসূচির ছবিটা দেখেই তার ভক্ত হয়ে উঠেন মোহাম্মদ আলী আজ্জম। তখন থেকেই ভাবতে থাকেন-বড় হয়ে রাজনীতি করবেন। তাই ক্লাস সেভেন কিংবা এইটে পড়ার সময়ই বড় ভাইদের সাথে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে যোগ দিতেন। দেবিদ্বার সরকারি সুজাত আলী কলেজে পড়ার সময় ১৯৯০ সালে ছাত্রদলে যোগ দেন এবং হেলাল-রতন পরিষদের (ছাত্র সংসদ) সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেন। মোহাম্মদ আলী আজ্জম মনে করেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম ও আদর্শকে এদেশের মানুষ সারা জীবন স্মরণ রাখবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসতেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তরে ছুটে গিয়েছিলেন। শহীদ জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচি দেশের উন্নয়নে মাইলফলক ছিল। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে এই চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে শহীদ জিয়াকে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে শহীদ জিয়ার নাম এদেশের মানুষে অন্তরে গাঁথা থাকবে।এককথায়, জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের প্রাণপুরুষ। আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি। তার ছিল সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি। তিনি ছিলেন ভিশনারি, এক স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনিই জাতিকে একটি সত্যিকার গণতন্ত্রের শক্তভিত্তির ওপরে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। আনতে চেয়েছিলেন অর্থনৈতিক মুক্তি। দিতে চেয়েছিলেন জাতিকে সম্মান আর গৌরব।
তার মতে, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক। নানা কারণে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার সততা, নিষ্ঠা, গভীর দেশপ্রেম, পরিশ্রমপ্রিয়তা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা প্রভৃতি গুণাবলী এ দেশের গণমানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তিনি ছিলেন একজন পেশাদার সৈনিক। তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের কাছে তার যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল অন্য কোনো রাষ্ট্রনায়কের ভাগ্যে তা জোটেনি। মোহাম্মদ আলী আজ্জম বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ জনগণ যখন চরম ভীতি ও হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল তেমন এক কঠিন সময়ে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। জিয়াউর রহমান ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও আশান্বিত করে তুলেছিলেন। তিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ক্ষান্ত হননি। একইসাথে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের নেতৃত্বও দিয়েছেন। অবশেষে দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। তার মতে, শহীদ জিয়ার সবচেয়ে বড় সৃষ্টি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের রাজনীতি, বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি) গঠন করা। জিয়া দেশপ্রেমিক ছিলেন বলেই বলতেন, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ’। দেশপ্রেম সবার ঊর্ধ্বে, তার হৃদয়ে সারাক্ষণ বাজত সেই সুর ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ।’ স্বাধীনতা ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধ থেকে ৩০ মে ১৯৮১ শাহাদত বরণ পর্যন্ত মাত্র ১০ বছর তার কর্মময় জীবনে উৎপাদন, উন্নয়নে জাদুর পরশ লেগে আছে। জিয়া জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে একটি বড় রকমের ঝাঁকুনি দিয়ে গেছেন। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, নারী, শিশু সবকিছুতেই একটা বিপ্লব ঘটিয়ে গেছেন। গোটা জাতিকে তিনি ’৭১’র মতো একতাবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। একটি দৃঢ় জাতীয় সংহতি সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। পরিচয়-সংকটে আক্রান্ত হীনম্মন্যতায় ভোগা জাতিকে তার সত্যিকারের পরিচয় এবং তার আপন স্বাধীন স্বকীয়তার পরিচিতি তিনি উন্মোচন করতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সংমিশ্রণে হাজার বছরের যে রসায়ন, তারই আবিষ্কার তিনি করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মোহাম্মদ আলী আজ্জমকে শতবার হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। জিয়াউর রহমান, স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সম্পর্কিত বই প্রকাশনা এবং তা সারা দেশে বিনামূল্যে বিতরণের কারণে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়েছিল। অমানসিক নির্যাতন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও সিলগালা এবং জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের অপরাধে তার পৈত্রিক বাড়ি ভাংচুর ও নেতা কর্মীদের ওপর হামলা করা হলে একজন দলীয় কর্মীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর তার ব্যবসা-বাণিজ্য তছনছ হয়ে যায় এবং হত্যার হুমকির সম্মুখীন হয়ে বহুদিন ফেরারী জীবন যাপন করতে হয়। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে ঢাকায় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হয়েছে বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলা। এই মামলায় তিনি ১ মাস ২৬ দিন কারাবন্দী ছিলেন। তার ভাষ্য মতে, এ মামলায় পুলিশ সিভিলে এসে ২০১৭ সালের মামলায় ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করে এবং থানায় নিয়ে মামলা দেয়। যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় তিনি ২ মাস কারাবন্দী ছিলেন। প্রথমে তাকে গাড়ি পোড়ানো সহ নাশকতার মামলায় অর্থদাতা ও ইন্ধনদাতা হিসেবে এ মামলার আসামি করা হয়। তার ভাষ্য মতে, ডিবি নিয়ে চোখ বেঁধে নির্যাতন করেছে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। টাকা দেয়ার পরে যাত্রাবাড়ি থানায় নিয়ে যায় রাত ৩টায়। সেখান থেকে তাকে নতুন আরেকটি মামলায় চালান করে দেয়। দীর্ঘ এ সময়ে পুলিশি হয়রানির কারণে ব্যবসায় সীমাহীন লোকসান হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তার প্রতিষ্ঠানের স্টাফদেরও আটক করে রেখেছে তাকে ধরিয়ে দিতে৷ ২০১৩ সালে তার গ্রামের বাড়িতে দালান ভাংচুরের পাশাপাশি দলীয় সমর্থক ও কর্মীদের মারধর করেছে। এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বাড়িতে যেতে পারেননি। দুঃখজনক হলেও সত্য, ২০২০ সালের ঢাকায় তার মা মারা গেলে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান। কোনোরকম লাশ দাফন করে কবরস্থান থেকে বাড়িতে না ফিরে ঢাকায় চলে যান। কারণ, খবর ছিল- আওয়ামী লীগের নেতারা পুলিশ নিয়ে আসছে তাকে গ্রেফতার করানোর জন্য! আর এমন বিপদের সময়ও তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের যেকোনো মামলা কিংবা হয়রানিতে পাশে থেকেছেন। উদারহস্তে অর্থ বিলিয়েছেন। ‘সুদিন আমাদেরও আসবে ইনশাল্লাহ’ বলে তাদের মনোবল চাঙা রেখেছেন।
মোহাম্মদ আলী আজ্জমের লেখা প্রকাশিত বইসমূহ হলো- ১. জিয়াউর রহমানের চিন্তা ও চেতনার বাংলাদেশের উন্নয়ন; ২. মুক্তির চেতনা স্বাধীনতার ঘোষণা; ৩. বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৪৭-২০১৫। এছাড়াও রয়েছে ১. এক নজরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (প্রকাশনা ও উপদেষ্টা) ও ২. জিয়াউর রহমান ও স্বাধীন স্বনির্ভর বাংলাদেশ (সার্বিক সহযোগিতা)। সামাজিক কর্মকাণ্ডেও পিছিয়ে নেই ধর্মপ্রাণ মোহাম্মদ আলী আজ্জম। প্রতিষ্ঠা করেছেন হাফেজ ওসমান আলী হিফজুল কোরআন ক্যাডেট মাদ্রাসা। হোমল্যান্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের তিনি চেয়ারম্যান। পিপড়িয়াকান্দা হাবিবিয়া, হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার সভাপতি। এছাড়া দুবাচাইল বীরপাড়া জামে মসজিদ কমিটিরও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সমাজের অসংখ্য অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তার মনে নেই কোনো হিংসা, প্রতিহিংসা অথবা অহংকার। মানুষের সেবাতেই তিনি শান্তি পান। মোহাম্মদ আলী আজ্জমের সামাজিক কর্মকান্ডের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন তাকে বিভিন্ন পদকে ভূষিত করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘বঙ্গবীর ওসমান স্মৃতি পদক-২০১১’ ও বিডি ফাউন্ডেশন কর্তৃক দেওয়া ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা পদক-২০১১’। দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে রাজনীতির মাধ্যমে দল ও দেশের কল্যাণে কাজ করতে চান মোহাম্মদ আলী আজ্জম। দল তাকে যোগ্য বিবেচনা করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (আসন : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫, নবীনগর) মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করতে চান।
মুক্তির লড়াই ডেস্ক : 



























