ঢাকা ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo অধ্যাপক ড. তামিজী চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. হামিদা সেক্রেটারি জেনারেল Logo এনসিপির লোকজন আওয়ামী লীগের সাথে হাত মিলিয়েছে : কায়কোবাদ Logo রাজশাহীতে মেয়েকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা, গ্রেপ্তার ২ Logo মুরাদনগরে মাছ কাটা নিয়ে দ্বন্দ্ব, স্ত্রীকে খুন করে থানায় স্বামী Logo খুনিদের বিচার আর দেশের সংস্কার ছাড়া জনগণ নির্বাচন মেনে নেবে না- ডাঃ শফিকুর রহমান Logo বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেই এ সরকার কাজ করছে- পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা Logo সাবেক সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী’র বিশ্বস্ত সহযোগী দুর্নীতিবাজ ওসি ফারুক’র খুঁটির এতো জোর? Logo স্ত্রীর নাম ব্যবহার করে শুমারির টাকা আত্মসাৎ পরিসংখ্যান কর্মকর্তার Logo বান্দরবানে ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে পার্বত্য উপদেষ্ট Logo দ্রব্যমূল্য সহনীয় রেখে দেশ ও জনগনের জন্য কাজ করতে হবে- সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম

শিক্ষাগুরু বিশ্বাস আব্দুর রহিম এর ১৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী

শাহিনুর রহমান পিন্টু, ঝিনাইদহ

শিক্ষণ একটি অত্যন্ত জটিল কার্যকলাপ, শিক্ষা একটি সামাজিক অনুশীলন, যা একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে সঞ্চালিত হয় এবং সেই কারণে সেই নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটের মূল্যবোধ দ্বারা গঠিত হয়।

শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত (বা প্রয়োজনীয়) যা প্রভাবিত করে তার মধ্যে রয়েছে ইতিহাস এবং ঐতিহ্য, শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, শেখার বিষয়ে গৃহীত তত্ত্ব ইত্যাদি। তেমনই একজন শিক্ষা গুরু ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বাতিঘর হিসাবে সুক্ষ্যাতি অর্জন করেছিলেন প্রবিণ শিক্ষক বিশ্বাস আব্দুর রহিম। তিনি ১৯৩৬ সালের ২৩ নভেম্বর মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাজলী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম মরহুুম বদর উদ্দীন বিশ্বাস,মাতার নাম মরহুমা পাচিরন নেছা বিবি। তিনি নিজ গ্রাম কাজলী স্কুল থেকে প্রাইমারী, শ্রীপুর মহেশচন্দ্র হাই স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে ১ম বিভাগে ৩ বিষয়ে লেটার সহ মেট্রিকুলেশান, ১৯৫৫ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৭ সালে যশোর এম এম কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে বি এ পাশ করেন।

১৯৬১ সালে রাজশাহী টির্চাস ট্রেনিং কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে বি এড পাশ করেন এবং পরবর্তিতে তিনি ইংরেজী সাহিত্যে ডবল ডিগ্র গ্রহন করেন। ১৯৫৭ সালে বি এড পাশের পর থেকেই তিনি বিভিন্ন হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তন্মধ্যে ১৯৬৩ সাল হতে ২০০০ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ অবসর গ্রহনের দিন পর্যন্ত দীঘর্ ৩৭ বছর তিনি কালীগঞ্জের নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্কুলটির ততকালিন প্রধান শিক্ষক বিশ^াস আব্দুর রহিমের অধীনে সার্বিক উন্নয়ন এবং একটি আধুনিক বিদ্যালয়ের রুপ দাড়ায়, যা আজকের এই আধুনিক এবং অত্র অঞ্চলের একটি স্বনামধন্য বিদ্যালয়।

১৯৬২/৬৩ অর্থ বৎসরে দ্বিমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনার অধীনে স্কুলের ভবন নির্মানের জন্য ৫৬,০০০/- মঞ্জুরী লাভ করা হয়। পুন: ১৯৬৫/৬৬ অর্থ বৎসরে বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিদ্যালয়টি ৬৬,৮০০/- মঞ্জুরী লাভ করে। তখন হইতে সরকারী অনুমতিক্রমে বিদ্যালয়টিতে বিজ্ঞান, কৃষি, বাণিজ্য ও ইন্ডাষ্ট্রিয়াল আর্ট সহ সর্বমোট ৫ টি শাখা চালু করা হয় এবং ছাত্র সংখ্যা ৮০০ তে উন্নীত হয়। অত্র বিদ্যালয়টি ১৯৯২ সালে জেলার সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করিয়াছে এবং অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বিশ্বাস আব্দুর রহিম এই বৎসরে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট শিক্ষক হিসাবে সরকারী স্বীকৃতি ও পুরস্কার লাভ করিতে সমর্থ হইয়াছেন । তিনি সর্বাধিক কর্মময় জীবনে ৩৭ (সাইত্রিশ) বছর যাবৎ এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এর দ্বায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দায়িত্বরত ছিলেন।

অবসর গ্রহনের পর হতে মৃতুর আগ পর্যন্ত তিনি খুলনার সাউথ হেরাল্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। উল্লেখ্য ১৯৭৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা যশোর শিক্ষা বোর্ডের বাংলা ও ইংরাজী বিষয়ের প্রধান পরীক্ষক এর দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যশোর শিক্ষা বোডের শিক্ষক কমিটিতে খুলনা বিভাগের এক মাত্র শিক্ষক সদস্য হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বৃহত্তর যশোর ও ঝিনাইদহ জেলার শিক্ষক সিমিতিতে সভাপতি হিসেবে ৯ বছর দ্বয়িত্ব পালন করেছেন।
দীর্ঘদিন যাবৎ নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে নিযয়োজিত ছিলেন বিশ্বাস আব্দুর রহিম।

১৮৮২ সালের এই বিদ্যালয়টি নলডাঙ্গার রাজ পরিবারের পৃপোষকাতা, পরবর্তীতে স্থানীয় বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিবর্গ ও সরকারের সহযোগিতা এবং শিক্ষকদের বিশেষ অবদানে আজকের পর্যায়ে উন্নীত হতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১’৩০ মিনিটে কালীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অব¯’ায় মৃত্যু বরন করেন এই শিক্ষাগুরু। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর ২মাস ২০ দিন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

অধ্যাপক ড. তামিজী চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. হামিদা সেক্রেটারি জেনারেল

SBN

SBN

শিক্ষাগুরু বিশ্বাস আব্দুর রহিম এর ১৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী

আপডেট সময় ০৭:৫০:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শাহিনুর রহমান পিন্টু, ঝিনাইদহ

শিক্ষণ একটি অত্যন্ত জটিল কার্যকলাপ, শিক্ষা একটি সামাজিক অনুশীলন, যা একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে সঞ্চালিত হয় এবং সেই কারণে সেই নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটের মূল্যবোধ দ্বারা গঠিত হয়।

শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত (বা প্রয়োজনীয়) যা প্রভাবিত করে তার মধ্যে রয়েছে ইতিহাস এবং ঐতিহ্য, শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, শেখার বিষয়ে গৃহীত তত্ত্ব ইত্যাদি। তেমনই একজন শিক্ষা গুরু ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বাতিঘর হিসাবে সুক্ষ্যাতি অর্জন করেছিলেন প্রবিণ শিক্ষক বিশ্বাস আব্দুর রহিম। তিনি ১৯৩৬ সালের ২৩ নভেম্বর মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাজলী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম মরহুুম বদর উদ্দীন বিশ্বাস,মাতার নাম মরহুমা পাচিরন নেছা বিবি। তিনি নিজ গ্রাম কাজলী স্কুল থেকে প্রাইমারী, শ্রীপুর মহেশচন্দ্র হাই স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে ১ম বিভাগে ৩ বিষয়ে লেটার সহ মেট্রিকুলেশান, ১৯৫৫ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৭ সালে যশোর এম এম কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে বি এ পাশ করেন।

১৯৬১ সালে রাজশাহী টির্চাস ট্রেনিং কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে বি এড পাশ করেন এবং পরবর্তিতে তিনি ইংরেজী সাহিত্যে ডবল ডিগ্র গ্রহন করেন। ১৯৫৭ সালে বি এড পাশের পর থেকেই তিনি বিভিন্ন হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তন্মধ্যে ১৯৬৩ সাল হতে ২০০০ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ অবসর গ্রহনের দিন পর্যন্ত দীঘর্ ৩৭ বছর তিনি কালীগঞ্জের নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্কুলটির ততকালিন প্রধান শিক্ষক বিশ^াস আব্দুর রহিমের অধীনে সার্বিক উন্নয়ন এবং একটি আধুনিক বিদ্যালয়ের রুপ দাড়ায়, যা আজকের এই আধুনিক এবং অত্র অঞ্চলের একটি স্বনামধন্য বিদ্যালয়।

১৯৬২/৬৩ অর্থ বৎসরে দ্বিমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনার অধীনে স্কুলের ভবন নির্মানের জন্য ৫৬,০০০/- মঞ্জুরী লাভ করা হয়। পুন: ১৯৬৫/৬৬ অর্থ বৎসরে বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিদ্যালয়টি ৬৬,৮০০/- মঞ্জুরী লাভ করে। তখন হইতে সরকারী অনুমতিক্রমে বিদ্যালয়টিতে বিজ্ঞান, কৃষি, বাণিজ্য ও ইন্ডাষ্ট্রিয়াল আর্ট সহ সর্বমোট ৫ টি শাখা চালু করা হয় এবং ছাত্র সংখ্যা ৮০০ তে উন্নীত হয়। অত্র বিদ্যালয়টি ১৯৯২ সালে জেলার সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করিয়াছে এবং অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বিশ্বাস আব্দুর রহিম এই বৎসরে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট শিক্ষক হিসাবে সরকারী স্বীকৃতি ও পুরস্কার লাভ করিতে সমর্থ হইয়াছেন । তিনি সর্বাধিক কর্মময় জীবনে ৩৭ (সাইত্রিশ) বছর যাবৎ এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এর দ্বায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দায়িত্বরত ছিলেন।

অবসর গ্রহনের পর হতে মৃতুর আগ পর্যন্ত তিনি খুলনার সাউথ হেরাল্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। উল্লেখ্য ১৯৭৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা যশোর শিক্ষা বোর্ডের বাংলা ও ইংরাজী বিষয়ের প্রধান পরীক্ষক এর দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যশোর শিক্ষা বোডের শিক্ষক কমিটিতে খুলনা বিভাগের এক মাত্র শিক্ষক সদস্য হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বৃহত্তর যশোর ও ঝিনাইদহ জেলার শিক্ষক সিমিতিতে সভাপতি হিসেবে ৯ বছর দ্বয়িত্ব পালন করেছেন।
দীর্ঘদিন যাবৎ নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে নিযয়োজিত ছিলেন বিশ্বাস আব্দুর রহিম।

১৮৮২ সালের এই বিদ্যালয়টি নলডাঙ্গার রাজ পরিবারের পৃপোষকাতা, পরবর্তীতে স্থানীয় বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিবর্গ ও সরকারের সহযোগিতা এবং শিক্ষকদের বিশেষ অবদানে আজকের পর্যায়ে উন্নীত হতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১’৩০ মিনিটে কালীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অব¯’ায় মৃত্যু বরন করেন এই শিক্ষাগুরু। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর ২মাস ২০ দিন।