ঢাকা ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লালমনিরহাটে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে স্ত্রী হত্যাকারী ঘাতক স্বামী গ্রেফতার

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে গৃহবধূ হাসিনা বেগমকে হত্যা মামলায় পলাতক ঘাতক স্বামী আশরাফুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে থানা ও ডিবি পুলিশের যৌথ একটি দল।

সোমবার দুপুরে গ্রেফতারের বিষয়টি প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম।

এর আগে রোববার দুপুরে লালমনিরহাট জেলা শহরের খুটামারা এলাকার পিংকির মোড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার আশরাফুল ইসলাম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁসা কুটিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নওয়াব আলীর ছেলে। পেশায় তিনি একজন ভ্যান চালক।

পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আসামি নিজেই স্বীকার করেছেন তার দুই স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। তাই প্রথম স্ত্রীর সহযোগিতায় আসামি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যা করেছেন।

তিনি আরো জানান, পুলিশ জানতে পারে নিহত দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে একটি কন্যা সন্তানও আছে। এর মধ্যেই দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে ছেড়ে আরেকজনকে বিয়ে করেন। সেখানেও তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পরে হাসিনা বেগমের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ওই স্বামীকে ছেড়ে দেন এবং পুনরায় আশরাফুলকে বিয়ে করে ঘর সংসার করতে থাকেন।

এর পরেই শুরু হয় হাসিনা ও মেহরন দুই সতীনের মধ্যে কলহ। এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে যায় আশরাফুল। তাই বড় স্ত্রীকে খুশি করতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে আশরাফুল। তার বড় স্ত্রী মেহরন বেগমের সহযোগিতায় গত ৫মার্চ দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নিজেদের ভ্যানে বাড়ি থেকে বাহির হয় তারা দুজন। ওইদিন তারা লালমনিরহাটের বিভিন্ন জায়গায় সারাদিন ঘুরে বেড়ায়।

ঘুরতে ঘুরতেই আশরাফুল কুলাঘাট বাজার থেকে একটি হাসুয়া কিনে নেয়। কিসের এই ধারালো অস্ত্র কেনা হচ্ছে স্ত্রী হাসিনা বেগম জানতে চাইলে ঘাতক স্বামী বলেন, বাড়ির কাজে লাগবে বলে নেয়া হলো। সন্ধ্যার দিকে ঘাতক স্বামী আশরাফুল অচেতন করার জন্য হাসিনা বেগমকে পানের সঙ্গে চেতনানাশক কিছু খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর হাসিনা বেগম অচেতন হয়ে পড়লে রাত ৯টার দিকে তাকে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ এলাকার শফিকুলের ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে হাসিনা বেগমকে নিয়ে তার পেছনের দিকে গলায় কোপ দেয় এবং জবাই করে হত্যা করে। পরবর্তীতে লাশটি কেউ যেন চিনতে না পারে এজন্য হাসিনার দেহ থেকে মাথাটি বিচ্ছিন্ন করে প্লাস্টিকের ব্যাগে করে তার বাড়িতে নিয়ে যায় এবং প্রথম স্ত্রীকে খুশি করতে আশরাফুল হাসিনার বিচ্ছিন্ন মাথাটি প্রথম স্ত্রী মেহরনকে দেখায়। তার পরদিন আশরাফুল বিচ্ছিন্ন মাথাটি ভারতীয় সীমান্তের ৯২৫ নম্বর পিলারের কাছে বাংলাদেশ অংশে একটি তামাকক্ষেতে পুঁতে রাখে। বড় স্ত্রী মেহরনকে খুশি করতেই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আশরাফুল জানিয়েছেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার আরো জানান, তদন্ত এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ নিহত হাসিনা বেগমের বিচ্ছিন্ন মাথাটি তার বাড়ির পাশের একটি তামাকক্ষেত থেকে উদ্ধার করে। এরমধ্যে হাসিনা বেগমকে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো রক্তমাখা হাসুয়া, একটি কাঠের বাক্স, রক্তমাখা আশরাফুলের কাপড় ও তাদের ভ্যনটি উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে পুলিশ আশরাফুলের প্রথম স্ত্রী মেহরনকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ সুপার বলেন, হত্যার মূল রহস্য এবং আরো কিছু তথ্যের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করবে পুলিশ।

এদিকে নিহত হাসিনা বেগমের ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকেলে লাশ কন্যা চায়না বেগমের কাছে হস্তান্তর করবেন বলেও পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

লালমনিরহাটে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে স্ত্রী হত্যাকারী ঘাতক স্বামী গ্রেফতার

আপডেট সময় ০৬:৪৪:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে গৃহবধূ হাসিনা বেগমকে হত্যা মামলায় পলাতক ঘাতক স্বামী আশরাফুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে থানা ও ডিবি পুলিশের যৌথ একটি দল।

সোমবার দুপুরে গ্রেফতারের বিষয়টি প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম।

এর আগে রোববার দুপুরে লালমনিরহাট জেলা শহরের খুটামারা এলাকার পিংকির মোড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার আশরাফুল ইসলাম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁসা কুটিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নওয়াব আলীর ছেলে। পেশায় তিনি একজন ভ্যান চালক।

পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আসামি নিজেই স্বীকার করেছেন তার দুই স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। তাই প্রথম স্ত্রীর সহযোগিতায় আসামি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যা করেছেন।

তিনি আরো জানান, পুলিশ জানতে পারে নিহত দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে একটি কন্যা সন্তানও আছে। এর মধ্যেই দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে ছেড়ে আরেকজনকে বিয়ে করেন। সেখানেও তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পরে হাসিনা বেগমের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ওই স্বামীকে ছেড়ে দেন এবং পুনরায় আশরাফুলকে বিয়ে করে ঘর সংসার করতে থাকেন।

এর পরেই শুরু হয় হাসিনা ও মেহরন দুই সতীনের মধ্যে কলহ। এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে যায় আশরাফুল। তাই বড় স্ত্রীকে খুশি করতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে আশরাফুল। তার বড় স্ত্রী মেহরন বেগমের সহযোগিতায় গত ৫মার্চ দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নিজেদের ভ্যানে বাড়ি থেকে বাহির হয় তারা দুজন। ওইদিন তারা লালমনিরহাটের বিভিন্ন জায়গায় সারাদিন ঘুরে বেড়ায়।

ঘুরতে ঘুরতেই আশরাফুল কুলাঘাট বাজার থেকে একটি হাসুয়া কিনে নেয়। কিসের এই ধারালো অস্ত্র কেনা হচ্ছে স্ত্রী হাসিনা বেগম জানতে চাইলে ঘাতক স্বামী বলেন, বাড়ির কাজে লাগবে বলে নেয়া হলো। সন্ধ্যার দিকে ঘাতক স্বামী আশরাফুল অচেতন করার জন্য হাসিনা বেগমকে পানের সঙ্গে চেতনানাশক কিছু খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর হাসিনা বেগম অচেতন হয়ে পড়লে রাত ৯টার দিকে তাকে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ এলাকার শফিকুলের ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে হাসিনা বেগমকে নিয়ে তার পেছনের দিকে গলায় কোপ দেয় এবং জবাই করে হত্যা করে। পরবর্তীতে লাশটি কেউ যেন চিনতে না পারে এজন্য হাসিনার দেহ থেকে মাথাটি বিচ্ছিন্ন করে প্লাস্টিকের ব্যাগে করে তার বাড়িতে নিয়ে যায় এবং প্রথম স্ত্রীকে খুশি করতে আশরাফুল হাসিনার বিচ্ছিন্ন মাথাটি প্রথম স্ত্রী মেহরনকে দেখায়। তার পরদিন আশরাফুল বিচ্ছিন্ন মাথাটি ভারতীয় সীমান্তের ৯২৫ নম্বর পিলারের কাছে বাংলাদেশ অংশে একটি তামাকক্ষেতে পুঁতে রাখে। বড় স্ত্রী মেহরনকে খুশি করতেই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আশরাফুল জানিয়েছেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার আরো জানান, তদন্ত এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ নিহত হাসিনা বেগমের বিচ্ছিন্ন মাথাটি তার বাড়ির পাশের একটি তামাকক্ষেত থেকে উদ্ধার করে। এরমধ্যে হাসিনা বেগমকে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো রক্তমাখা হাসুয়া, একটি কাঠের বাক্স, রক্তমাখা আশরাফুলের কাপড় ও তাদের ভ্যনটি উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে পুলিশ আশরাফুলের প্রথম স্ত্রী মেহরনকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ সুপার বলেন, হত্যার মূল রহস্য এবং আরো কিছু তথ্যের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করবে পুলিশ।

এদিকে নিহত হাসিনা বেগমের ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকেলে লাশ কন্যা চায়না বেগমের কাছে হস্তান্তর করবেন বলেও পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।