
পায়েল বিশ্বাস
নিশ্ছিদ্র এক শিল্পসত্তার নাম সৌম্যজ্যোতি। এ নামটি উচ্চারণেই যেন এক নিঃশব্দ দীপ্তির বিস্তার ঘটে। অভিনয়ের শাসনভাষায় যিনি এখনও নবীন, অথচ তাঁর দৃষ্টি ও অভিব্যক্তিতে যেন বহুযুগের নাট্যমঞ্চ জমে আছে। তিনি অভিনয় করেন না — চরিত্রে প্রবেশ করেন, চরিত্রকে জাগিয়ে তোলেন, চরিত্র হয়ে ওঠেন।
সৌম্যজ্যোতির চোখে আছে এক রহস্যময় স্থৈর্য; যেন সহস্র অব্যক্ত অনুভব জমে আছে সেই দৃষ্টিতে। কখনো নিঃশব্দ প্রতিবাদ, কখনো নরম কোমল প্রেম, আবার কখনো মেঘলা যন্ত্রণার ক্ষরণ — সবই তাঁর অভিব্যক্তিতে অনায়াসে মূর্ত হয়ে ওঠে। তাঁর কণ্ঠে নেই অযথা নাটুকে উচ্চারণ, বরং স্বরের ওঠানামায় ধরা দেয় নিঃশব্দ কবিতা।
তাঁর অভিনয়ের শরীরী ভাষা যেন এক গীতলতা — চলনে, বসনে, সংকোচে ও বিস্তারে — প্রত্যেকটি ভঙ্গিতে থাকে সংযম ও শৃঙ্খলা। অভিনয়ের জগতে এত সংবেদনশীল, এত সৌন্দর্যময় উপস্থিতি সচরাচর দেখা যায় না। একে বলা চলে, অভিনয়ের মাধ্যমে আত্মার সংগীত বাজানো — যাকে স্পর্শ করা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায় হৃৎকম্পে।
সৌম্যজ্যোতির অভিনয় দেখে বোঝা যায়, তিনি কেবল একজন অভিনেতা নন — তিনি এক চিন্তাশীল অনুধ্যায়ী। তিনি চরিত্রকে পড়ে নেন, বোঝেন, অনুভব করেন, তারপর নিজেকে ভেঙেচুরে গড়ে নেন সেই চরিত্রে। তাঁর মধ্যে অভিনয়ের কোনও ছলচাতুরী নেই, নেই বাহুল্য; বরং আছে গভীর এক মানবিক অনুসন্ধান।
এই তরুণ শিল্পীকে দেখে মনে হয়, বাংলা অভিনয়ের আকাশে একটি নতুন তারা উঠেছে — নিঃশব্দে, বিনয় নিয়ে, কিন্তু দীপ্তিতে অভাবনীয়। যদি অভিনয় হয় আত্মার অনুবাদ, তবে সৌম্যজ্যোতি সেই অনুবাদের ভাষান্তর।
শেষ কথা — তিনি আলো নয়, তিনি আলোকে ধারণ করেন।
এবং তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকা মানে, সময়ের এক নতুন অধ্যায়ের সাক্ষী হওয়া।