ঢাকা ০৭:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পলাশবাড়ি ভুমি অফিসে এসি ল্যান্ডের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট এখন ওপেন সিক্রেট

মোনায়েম মন্ডল

পলাশবাড়ি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) এর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যম ছাড়া করা হচ্ছে না নামজারিসহ ভুমি সংক্রান্ত কোন সমস্যার সমাধান। তারা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে করছে বন্টননামা দলিল ছাড়া নামজারি করণ, সরকারি খাসজমি ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর, ভুয়া মালিক সেজে একজনের জমি আরেক জনের নামে নামজারি করণসহ শত শত অভিযোগ পলাশবাড়ি উপজেলা ভুমি অফিসে এখন ওপেন সিক্রেট। ফলে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে এসি ল্যান্ড আল ইয়াসা রহমান তপাদার সহ এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য নাজির কাম ক্যাশিয়ার এ এস এম শফিউল রকিব বারি ও সার্টিফিকেট সহকারী শরিফ মিয়া আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।

প্রকাশ, ১৯৬৫ সালের ভুমি আইন অনুযায়ী বন্টননামা দলিল ব্যতীত অংশে অংশে ছাড়া এককভাবে কারো নামে নামজারি করে নেয়া যাবেনা। কিন্তু আল ইয়াসা তপাদারের মত কিছু দুর্নীতি পরায়ন এসি ল্যান্ড ও তহশীলদার সহ ভুমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা গোপনে বা রাতের আঁধারে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে নামজারি সহ জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ফলে দীর্ঘ ৪০/৫০ বছরের ব্যবধানে সারা দেশে জমি সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা সহ লক্ষ লক্ষ জটিলতা দেখা দেয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ভুমি মন্ত্রণালয় বা ভুমি অধিদপ্তর উল্লেখিত মামলা মোকদ্দমা সহ ভুমি সংক্রান্ত জটিলতা কমাতে বন্টননামা দলিল সহ প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি ছাড়া নামজারি করাসহ কিছু জনবান্ধব প্রজ্ঞাপন জারি করেন। কিন্তু কয়লা ধুলেও ময়লা যায়না এর মত তৎকালীন পলাশবাড়ি উপজেলার সহকারী কমিশনার মাহমাদুল হাসান তার অধিনস্ত তহশীলদারসহ ভুমি অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বন্টননামা দলিল ছাড়াই একটার পর একটা জমির নামজারি করে দিতে থাকেন। অল্প দিনের ব্যবধানে উল্লেখিত এসি ল্যান্ড মাহমাদুল হাসান ও সার্ভেয়ার সানী আসলাম অন্যত্র বদলি হয়ে যায়। কিন্তু তারা রেখে যায় তাদের সাগরেদদের। এছাড়াও বদলী হয়ে আসেন পলাশবাড়ি উপজেলা ভুমি অফিসে এসি ল্যান্ড আল ইয়াসা রহমান তপাদার। এসেই তিনি নেতৃত্ব দেন সিন্ডিকেটের।

সুত্র জানায়, পলাশবাড়ি উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের বিরামের ভিটা গ্রামের মৃত নুরুজ্জামান সরকার বিশাল সম্পদ ও দুই স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েসহ ১৪ জন ওয়ারিশ রেখে মৃত্যু বরণ করেন। এর মধ্যে ৫ জন পুত্র ও ৭ জন কন্যা সন্তান রয়েছে।
মাহমাদুল হাসান এসি ল্যান্ড থাকাকালীন সময়ে উল্লেখিত মৃত নুরুজ্জামান সরকারের পরসম্পদ লোভী পুত্র ইমরান হোসেন মৌজা- মনোহারপুর, জেএল নং- ১৪৬, বিআরএস ৯৪৯ নং মোট ৯টি দাগ সম্বলিত খতিয়ান থেকে গোপনে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বন্টননামা দলিল ছাড়াই নিজের সুবিধা মত ৬২৫১, ৬২৬০ নং দাগ থেকে ২৭ শতাংশ জমি তার নিজ নামে নামজারি করে নেন। উল্লেখিত নামজারির খতিয়ান নং ২১০৬, হোল্ডিং নং ২১০৭।

সুত্র আরো জানায়, ইমরান হোসেন বাবলু নামের স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে এই নামজারির আবেদন করেন গত ৬/৩/২০২৪ ইং বুধবার। কিন্তু ইমরান হোসেন আবেদনে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট ওয়ারিশ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করলেও কাজিরবাজার ভুমি অফিসের তহশীলদার সুকুমার রাজবংশী ওয়ারিশ সার্টিফিকেট উপেক্ষা করে এবং সরেজমিনে তদন্ত না করে গোপনে রাতের আঁধারে ১০/৩/২০২৪ ইং শনিবার নামজারির প্রস্তাব প্রেরণ করেন। সৃষ্ট নামজারি খতিয়ান নং ২১০৬ মতে জানা যায়, উল্লেখিত ওয়ারিশ সার্টিফিকেট সংযুক্ত থাকা সত্ত্বেও পলাশবাড়ি ভুমি অফিসের সিন্ডিকেট সদস্য অফিস সহকারী রাশেদ সুলতান স্বাক্ষর করেন ১৮/৩/২০২৪ ইং, সার্ভেয়ার আসলাম সানী স্বাক্ষর করেন ১৯/৩/২০২৪ ইং এবং উক্ত দুর্নীতি সিন্ডিকেটের লিডার এসি ল্যান্ড মাহমাদুল হাসান স্বাক্ষর করেন ২৫/৩/২০২৪ ইং। অর্থাৎ এই নামজারির গোপন মিশন সম্পন্ন করা হয় সরকারি ছুটির দিনসহ মাত্র ১৮ দিনে। কিন্তু শত শত নামজারির আবেদন মাসের পর মাস পড়ে থাকলেও রহস্যজনক কারণে সেই ফাইল গুলো কোনো অগ্রগামী হচ্ছে না! এই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যে রহস্যজনক কারণে এসি ল্যান্ড মাহমাদুল হাসান ও সার্ভেয়ার আসলাম সানী অন্যত্র বদলি হয়ে যায়।

মজার ব্যাপার হলো- এসি ল্যান্ড মাহমাদুল হাসানের স্থলাভিষিক্ত হন আল ইয়াসা রহমান তপাদার। আরো বদলী হয়ে আসেন নাজির কাম ক্যাশিয়ার এ এস এম শফিউল রকিব বারি ও সার্টিফিকেট সহকারী শরিফ মিয়া। সুত্র জানায়, শফিউল রকিব বারি সরকারি চাকরির পাশাপাশি তিনি নিজ ডাক নাম সৌরভ দিয়ে বন্ধন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা করছেন। কিন্তু সরকারি চাকরি বিধি অনুসারে একসাথে একই ব্যক্তি সরকারি চাকরি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, শফিউল রকিব বারি প্রায় প্রতিদিনই অফিসে দেরি করে আসেন। শরিফ মিয়া নামের এক স্টাফ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে গাইবান্ধা সদর উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের মৃত মুনছুর আলীর পুত্র সার্টিফিকেট সহকারী শরিফ মিয়ারা দুই ভাই। শরিফের এক ভাই অটো চালক। শরিফ মৃত মুনছুর আলীর দুই স্ত্রীর মধ্যে বড় স্ত্রীর সন্তান। শরিফ এক সময় অভাবের তাড়নায় দিনমজুর করে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়েছিল। বর্তমানে সে ছোট দুর্গাপুর নানার বাড়িতে থাকে। চাকরি পাওয়ার পর শরিফ মিয়া অল্প দিনের ব্যবধানে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। তার চাকরির বেতনের সাথে এলাকায় তার অর্থনৈতিক উন্নতি সচেতন মহলের মনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে!

এদিকে, ইমরান হোসেন কর্তৃক গোপনে নামজারি করার খবর প্রকাশ হলে তার আরেক ভাই উল্লেখিত ১৪ জন ওয়ারিশের মধ্যে জনৈক ব্যক্তি উক্ত সৃষ্ট নামজারিকৃত ২১০৬ খতিয়ানটি বাতিল করার জন্য ৩/৩/২০২৫ ইং তারিখে পলাশ বাড়ি এসি ল্যান্ড অফিসে আবেদন করেন। আবেদনের সময় এসি ল্যান্ড আল ইয়াসা রহমান তপাদার বলেন, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন আবেদনের ২০-২৫ কার্যদিবসের মধ্যেই মিস কেসের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু আবেদনের পর রহস্যজনক কারণে ফাইলটি গায়েব করে রাখা হয়। দেড় মাস গত হলেও বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এসি ল্যান্ড অফিসে যোগাযোগ করা হয়। সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য শফিউল রকিব বারি কর্তৃক অনেক চেষ্টা করেও ফাইল খুঁজে না পাওয়ায় রিসিভ করে নেয়া ফাইল থেকে এক কপি ফটোস্ট্যাড করে দেয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত আবেদনটির অগ্রগামী করা হয়। যার মিস কেস নং দেয়া হয় ১১৭/২৪-২৫। অতঃপর এসি ল্যান্ড আল ইয়াসা রহমান তপাদার উক্ত মিস কেসের বাদিকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে সুকৌশল অবলম্বন করে গত ২৩/৪/২০২৫ ইং তারিখে ১৯১ স্বারক সম্বলিত পত্রে ভুল ব্যাখ্যা লিপিবদ্ধ করে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক ৫/৫/২০২৫ ইং তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে কাজিরবাজার তহশীল অফিসের তহশীলদার বরাবর পত্র দেন। কিন্তু এসি ল্যান্ড পত্রে ভুল ব্যাখ্যা লিপিবদ্ধ করায় তহশীলদার পত্রটি এসি ল্যান্ডের কাছে ফেরত পাঠান। বাদি এসি ল্যান্ড অফিসে দীর্ঘদিন যাতায়াতে জুতার তলা ক্ষয় করেও কোন কিনারা করতে না পেরে অবশেষে জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে এসি ল্যান্ডের কাছে ১৭/৫/২০২৫ ইং তারিখে মোবাইল করেন। কিন্তু দায়িত্বহীন এসি ল্যান্ড আল ইয়াসা রহমান তপাদার কর্তৃক তারপরও মিস কেসটির কোন কিনারা না হওয়ায় গত ২৪/০৫/২০২৫ ইং তারিখে পুনরায় হোয়াটসঅ্যাপে এসি ল্যান্ডকে অবগত করালে তিনি মানসিক ভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু সুচতুর এসি ল্যান্ড মিথ্যা সান্তনা হিসেবে ১/৬/২০২৫ ইং তারিখের মধ্যে তহশীলদারের কাছে তদন্ত রিপোর্ট চেয়ে পত্র দেয়ার কথা এবং ১৮/৬/২০২৫ ইং তারিখে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে বলে জানান। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তহশীলদার তদন্ত না করায় পুনরায় শুনানির তারিখ পরিবর্তন করে ২৫/৬/২০২৫ নির্ধারন করা হয়। নির্ধারিত তারিখের দিন যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে হাজিরা কপি জমা দিতে গিয়ে জারিকারক শহিদুল ইসলাম হাজিরা বাবদ ২’শ টাকা দাবি করেন। পরে ৫০/- দিয়ে হাজিরা সম্পন্ন করা হয়।

এ বিষয়টি নিয়ে গত ২৫ জুন’২০২৫ ইং তারিখে এসি ল্যান্ডের সাথে কথা হয়। এ সময় তিনি ১৪ জনের ওয়ারিশ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা এবং একটি খতিয়ানে ৯টি দাগ থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২টি দাগ নাম্বার থেকে নামজারি করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সুকৌশলে এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। কাজিরবাজার তহশীল অফিসের তহশীলদার সুকুমার রাজবংশীর সাথে কথা হয়। তিনি তদন্ত না করে ভুয়া তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন- স্থানীয় বাবলু নামের এক দালালের মাধ্যমে এই নামজারির আবেদন করা হয়েছিল।

তাই এলাকার সচেতন মহল দুর্নীতির দোসর সিন্ডিকেট লিডার এসি ল্যান্ড আল ইয়াসা রহমান তপাদার, সিন্ডিকেটের সদস্য শফিউল রকিব বারি, শরিফ মিয়া ও কাজিরবাজার তহশীল অফিসের তহশীলদার সুকুমার রাজবংশীসহ জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে শাস্তিমুলক বদলীসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পলাশবাড়ি ভুমি অফিসে এসি ল্যান্ডের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট এখন ওপেন সিক্রেট

আপডেট সময় ১১:২২:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

মোনায়েম মন্ডল

পলাশবাড়ি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) এর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যম ছাড়া করা হচ্ছে না নামজারিসহ ভুমি সংক্রান্ত কোন সমস্যার সমাধান। তারা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে করছে বন্টননামা দলিল ছাড়া নামজারি করণ, সরকারি খাসজমি ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর, ভুয়া মালিক সেজে একজনের জমি আরেক জনের নামে নামজারি করণসহ শত শত অভিযোগ পলাশবাড়ি উপজেলা ভুমি অফিসে এখন ওপেন সিক্রেট। ফলে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে এসি ল্যান্ড আল ইয়াসা রহমান তপাদার সহ এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য নাজির কাম ক্যাশিয়ার এ এস এম শফিউল রকিব বারি ও সার্টিফিকেট সহকারী শরিফ মিয়া আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।

প্রকাশ, ১৯৬৫ সালের ভুমি আইন অনুযায়ী বন্টননামা দলিল ব্যতীত অংশে অংশে ছাড়া এককভাবে কারো নামে নামজারি করে নেয়া যাবেনা। কিন্তু আল ইয়াসা তপাদারের মত কিছু দুর্নীতি পরায়ন এসি ল্যান্ড ও তহশীলদার সহ ভুমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা গোপনে বা রাতের আঁধারে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে নামজারি সহ জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ফলে দীর্ঘ ৪০/৫০ বছরের ব্যবধানে সারা দেশে জমি সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা সহ লক্ষ লক্ষ জটিলতা দেখা দেয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ভুমি মন্ত্রণালয় বা ভুমি অধিদপ্তর উল্লেখিত মামলা মোকদ্দমা সহ ভুমি সংক্রান্ত জটিলতা কমাতে বন্টননামা দলিল সহ প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি ছাড়া নামজারি করাসহ কিছু জনবান্ধব প্রজ্ঞাপন জারি করেন। কিন্তু কয়লা ধুলেও ময়লা যায়না এর মত তৎকালীন পলাশবাড়ি উপজেলার সহকারী কমিশনার মাহমাদুল হাসান তার অধিনস্ত তহশীলদারসহ ভুমি অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বন্টননামা দলিল ছাড়াই একটার পর একটা জমির নামজারি করে দিতে থাকেন। অল্প দিনের ব্যবধানে উল্লেখিত এসি ল্যান্ড মাহমাদুল হাসান ও সার্ভেয়ার সানী আসলাম অন্যত্র বদলি হয়ে যায়। কিন্তু তারা রেখে যায় তাদের সাগরেদদের। এছাড়াও বদলী হয়ে আসেন পলাশবাড়ি উপজেলা ভুমি অফিসে এসি ল্যান্ড আল ইয়াসা রহমান তপাদার। এসেই তিনি নেতৃত্ব দেন সিন্ডিকেটের।

সুত্র জানায়, পলাশবাড়ি উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের বিরামের ভিটা গ্রামের মৃত নুরুজ্জামান সরকার বিশাল সম্পদ ও দুই স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েসহ ১৪ জন ওয়ারিশ রেখে মৃত্যু বরণ করেন। এর মধ্যে ৫ জন পুত্র ও ৭ জন কন্যা সন্তান রয়েছে।
মাহমাদুল হাসান এসি ল্যান্ড থাকাকালীন সময়ে উল্লেখিত মৃত নুরুজ্জামান সরকারের পরসম্পদ লোভী পুত্র ইমরান হোসেন মৌজা- মনোহারপুর, জেএল নং- ১৪৬, বিআরএস ৯৪৯ নং মোট ৯টি দাগ সম্বলিত খতিয়ান থেকে গোপনে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বন্টননামা দলিল ছাড়াই নিজের সুবিধা মত ৬২৫১, ৬২৬০ নং দাগ থেকে ২৭ শতাংশ জমি তার নিজ নামে নামজারি করে নেন। উল্লেখিত নামজারির খতিয়ান নং ২১০৬, হোল্ডিং নং ২১০৭।

সুত্র আরো জানায়, ইমরান হোসেন বাবলু নামের স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে এই নামজারির আবেদন করেন গত ৬/৩/২০২৪ ইং বুধবার। কিন্তু ইমরান হোসেন আবেদনে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট ওয়ারিশ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করলেও কাজিরবাজার ভুমি অফিসের তহশীলদার সুকুমার রাজবংশী ওয়ারিশ সার্টিফিকেট উপেক্ষা করে এবং সরেজমিনে তদন্ত না করে গোপনে রাতের আঁধারে ১০/৩/২০২৪ ইং শনিবার নামজারির প্রস্তাব প্রেরণ করেন। সৃষ্ট নামজারি খতিয়ান নং ২১০৬ মতে জানা যায়, উল্লেখিত ওয়ারিশ সার্টিফিকেট সংযুক্ত থাকা সত্ত্বেও পলাশবাড়ি ভুমি অফিসের সিন্ডিকেট সদস্য অফিস সহকারী রাশেদ সুলতান স্বাক্ষর করেন ১৮/৩/২০২৪ ইং, সার্ভেয়ার আসলাম সানী স্বাক্ষর করেন ১৯/৩/২০২৪ ইং এবং উক্ত দুর্নীতি সিন্ডিকেটের লিডার এসি ল্যান্ড মাহমাদুল হাসান স্বাক্ষর করেন ২৫/৩/২০২৪ ইং। অর্থাৎ এই নামজারির গোপন মিশন সম্পন্ন করা হয় সরকারি ছুটির দিনসহ মাত্র ১৮ দিনে। কিন্তু শত শত নামজারির আবেদন মাসের পর মাস পড়ে থাকলেও রহস্যজনক কারণে সেই ফাইল গুলো কোনো অগ্রগামী হচ্ছে না! এই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যে রহস্যজনক কারণে এসি ল্যান্ড মাহমাদুল হাসান ও সার্ভেয়ার আসলাম সানী অন্যত্র বদলি হয়ে যায়।

মজার ব্যাপার হলো- এসি ল্যান্ড মাহমাদুল হাসানের স্থলাভিষিক্ত হন আল ইয়াসা রহমান তপাদার। আরো বদলী হয়ে আসেন নাজির কাম ক্যাশিয়ার এ এস এম শফিউল রকিব বারি ও সার্টিফিকেট সহকারী শরিফ মিয়া। সুত্র জানায়, শফিউল রকিব বারি সরকারি চাকরির পাশাপাশি তিনি নিজ ডাক নাম সৌরভ দিয়ে বন্ধন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা করছেন। কিন্তু সরকারি চাকরি বিধি অনুসারে একসাথে একই ব্যক্তি সরকারি চাকরি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, শফিউল রকিব বারি প্রায় প্রতিদিনই অফিসে দেরি করে আসেন। শরিফ মিয়া নামের এক স্টাফ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে গাইবান্ধা সদর উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের মৃত মুনছুর আলীর পুত্র সার্টিফিকেট সহকারী শরিফ মিয়ারা দুই ভাই। শরিফের এক ভাই অটো চালক। শরিফ মৃত মুনছুর আলীর দুই স্ত্রীর মধ্যে বড় স্ত্রীর সন্তান। শরিফ এক সময় অভাবের তাড়নায় দিনমজুর করে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়েছিল। বর্তমানে সে ছোট দুর্গাপুর নানার বাড়িতে থাকে। চাকরি পাওয়ার পর শরিফ মিয়া অল্প দিনের ব্যবধানে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। তার চাকরির বেতনের সাথে এলাকায় তার অর্থনৈতিক উন্নতি সচেতন মহলের মনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে!

এদিকে, ইমরান হোসেন কর্তৃক গোপনে নামজারি করার খবর প্রকাশ হলে তার আরেক ভাই উল্লেখিত ১৪ জন ওয়ারিশের মধ্যে জনৈক ব্যক্তি উক্ত সৃষ্ট নামজারিকৃত ২১০৬ খতিয়ানটি বাতিল করার জন্য ৩/৩/২০২৫ ইং তারিখে পলাশ বাড়ি এসি ল্যান্ড অফিসে আবেদন করেন। আবেদনের সময় এসি ল্যান্ড আল ইয়াসা রহমান তপাদার বলেন, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন আবেদনের ২০-২৫ কার্যদিবসের মধ্যেই মিস কেসের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু আবেদনের পর রহস্যজনক কারণে ফাইলটি গায়েব করে রাখা হয়। দেড় মাস গত হলেও বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এসি ল্যান্ড অফিসে যোগাযোগ করা হয়। সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য শফিউল রকিব বারি কর্তৃক অনেক চেষ্টা করেও ফাইল খুঁজে না পাওয়ায় রিসিভ করে নেয়া ফাইল থেকে এক কপি ফটোস্ট্যাড করে দেয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত আবেদনটির অগ্রগামী করা হয়। যার মিস কেস নং দেয়া হয় ১১৭/২৪-২৫। অতঃপর এসি ল্যান্ড আল ইয়াসা রহমান তপাদার উক্ত মিস কেসের বাদিকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে সুকৌশল অবলম্বন করে গত ২৩/৪/২০২৫ ইং তারিখে ১৯১ স্বারক সম্বলিত পত্রে ভুল ব্যাখ্যা লিপিবদ্ধ করে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক ৫/৫/২০২৫ ইং তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে কাজিরবাজার তহশীল অফিসের তহশীলদার বরাবর পত্র দেন। কিন্তু এসি ল্যান্ড পত্রে ভুল ব্যাখ্যা লিপিবদ্ধ করায় তহশীলদার পত্রটি এসি ল্যান্ডের কাছে ফেরত পাঠান। বাদি এসি ল্যান্ড অফিসে দীর্ঘদিন যাতায়াতে জুতার তলা ক্ষয় করেও কোন কিনারা করতে না পেরে অবশেষে জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে এসি ল্যান্ডের কাছে ১৭/৫/২০২৫ ইং তারিখে মোবাইল করেন। কিন্তু দায়িত্বহীন এসি ল্যান্ড আল ইয়াসা রহমান তপাদার কর্তৃক তারপরও মিস কেসটির কোন কিনারা না হওয়ায় গত ২৪/০৫/২০২৫ ইং তারিখে পুনরায় হোয়াটসঅ্যাপে এসি ল্যান্ডকে অবগত করালে তিনি মানসিক ভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু সুচতুর এসি ল্যান্ড মিথ্যা সান্তনা হিসেবে ১/৬/২০২৫ ইং তারিখের মধ্যে তহশীলদারের কাছে তদন্ত রিপোর্ট চেয়ে পত্র দেয়ার কথা এবং ১৮/৬/২০২৫ ইং তারিখে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে বলে জানান। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তহশীলদার তদন্ত না করায় পুনরায় শুনানির তারিখ পরিবর্তন করে ২৫/৬/২০২৫ নির্ধারন করা হয়। নির্ধারিত তারিখের দিন যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে হাজিরা কপি জমা দিতে গিয়ে জারিকারক শহিদুল ইসলাম হাজিরা বাবদ ২’শ টাকা দাবি করেন। পরে ৫০/- দিয়ে হাজিরা সম্পন্ন করা হয়।

এ বিষয়টি নিয়ে গত ২৫ জুন’২০২৫ ইং তারিখে এসি ল্যান্ডের সাথে কথা হয়। এ সময় তিনি ১৪ জনের ওয়ারিশ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা এবং একটি খতিয়ানে ৯টি দাগ থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২টি দাগ নাম্বার থেকে নামজারি করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সুকৌশলে এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। কাজিরবাজার তহশীল অফিসের তহশীলদার সুকুমার রাজবংশীর সাথে কথা হয়। তিনি তদন্ত না করে ভুয়া তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন- স্থানীয় বাবলু নামের এক দালালের মাধ্যমে এই নামজারির আবেদন করা হয়েছিল।

তাই এলাকার সচেতন মহল দুর্নীতির দোসর সিন্ডিকেট লিডার এসি ল্যান্ড আল ইয়াসা রহমান তপাদার, সিন্ডিকেটের সদস্য শফিউল রকিব বারি, শরিফ মিয়া ও কাজিরবাজার তহশীল অফিসের তহশীলদার সুকুমার রাজবংশীসহ জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে শাস্তিমুলক বদলীসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।