ঢাকা ০৯:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে কমিশন আদায়

চান্দিনায় যুবদল নেতার নিয়ন্ত্রণে চলে ড্রেজার

টি.আর. দিদার, চান্দিনা (কুমিল্লা)

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার শুহিলপুর ও বাতাঘাসী ইউনিয়ন জুড়ে দীর্ঘদিন যাবৎ চলছে ড্রেজারে মাটি খননের মহোৎসব। স্থানীয় যুবদল নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার আকবর মোল্লার নিয়ন্ত্রণে অবাধে ওইসব ড্রেজার চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করার নাম ভাঙ্গিয়ে ড্রেজার ব্যবসায়ী, মাটি বিক্রেতা ও যাদের জায়গা ভরাট করা হয় তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওই যুবদল নেতা।

আকবর মোল্লা চান্দিনা উপজেলার শুহিলপুর ইউনিয়ন যুবদল সাধারণ সম্পাদক ও একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়- গত এক বছর যাবৎ ফসলি জমি থেকে বালু মাটি উত্তোলন ও জমি ভরাটের এই অবৈধ কার্যক্রমের সাথে জড়িত রয়েছে আকবর মোল্লা। তিনি প্রশাসন ও নেতাদের ম্যানেজ করার কথা বলে প্রতি বর্গফুট মাটির হিসেবে দেড় থেকে ২ টাকা আদায় করছেন। ওই এলাকায় যারাই ড্রেজার চালান তারা ওই যুবদল নেতা আকবর মোল্লার কাছ থেকে অলিখিত অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু করছেন। এমনকি তার নেতৃত্বে সরকারি খাল ভরাটের অভিযোগও রয়েছে।

সম্মুখে কোন ড্রেজার ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারলেও এই প্রতিবেদককে দিয়েছেন নানা তথ্য। তারা স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন- আকবর মোল্লা যেসব ড্রেজার থেকে টাকা পায়না প্রশাসন অভিযানে আসলে সেগুলোই ভাঙ্গা হচ্ছে। যে কারণে ড্রেজার ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েই তার সাথে (আকবর মোল্লা) সমন্বয় করতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, বশিকপুর গ্রামের ‘প্রধান বাড়ির’ হোসেন প্রধান ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নিজের জমির সঙ্গে সংযুক্ত সরকারি খালও ভরাট করে ফেলছেন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হলেও আকবর মোল্লার রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাবের কারণে ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। তারা আরও বলেন আমরা জানি খাল ভরাট হলে জলাবদ্ধতা বাড়বে, ফসল নষ্ট হবে, পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু আমরা কিছু বললে ভয় দেখায়, হুমকি দেয়। আকবর মোল্লা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ওই ভরাট কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়। তাই এলাকার মানুষ প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ড্রেজার ব্যবসায়ী বলেন- এখানে যারা কাজ করছে, তারা সবাই জানে কমিশন না দিলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি জমিতে বালু উত্তোলনের জন্য নেতা আকবর মোল্লাকে ‘কমিশন’ দিতে হচ্ছে, না হলে ড্রেজার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মো. বিল্লাল নামের এক ড্রেজার ব্যবসায়ী জানান- আমি ড্রেজার মেশিন বসানোর সময় আকবর মোল্লা এসে কাজে বাধাঁ দেয়। কাজ করতে হলে প্রশাসনকে টাকা দিতে হবে। প্রথমে ১০ হাজার ও প্রশাসনের নাম করে আরও ৪০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু এরপরও প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন ও পাইপ ভেঙে দেয় এবং কাজ বন্ধ করে দেয়। তিনি আরও বলেন আকবর মোল্লার কথায় টাকা দিয়েও কাজ করতে পারিনি, আমার বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি এলাকাবাসীকে জানালেও কোনো বিচার পাইনি।

এবিষয়ে অভিযুক্ত আকবর মোল্লা বলেন- কেউ আমার বিরুদ্ধে কিছু বললেই কি তা সত্য হবে নাকি? আমি টাকা নেই এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান- অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা নিবো। আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যদি টাকা নেয় এমন অভিযোগ পেলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এছাড়া প্রশাসনের কথা বললেই কেন টাকা দিবে?

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

উচ্চমানের উন্মুক্ততা ও বৈশ্বিক সহযোগিতায় চীনের প্রতিশ্রুতি

SBN

SBN

প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে কমিশন আদায়

চান্দিনায় যুবদল নেতার নিয়ন্ত্রণে চলে ড্রেজার

আপডেট সময় ০৫:৩৪:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

টি.আর. দিদার, চান্দিনা (কুমিল্লা)

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার শুহিলপুর ও বাতাঘাসী ইউনিয়ন জুড়ে দীর্ঘদিন যাবৎ চলছে ড্রেজারে মাটি খননের মহোৎসব। স্থানীয় যুবদল নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার আকবর মোল্লার নিয়ন্ত্রণে অবাধে ওইসব ড্রেজার চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করার নাম ভাঙ্গিয়ে ড্রেজার ব্যবসায়ী, মাটি বিক্রেতা ও যাদের জায়গা ভরাট করা হয় তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওই যুবদল নেতা।

আকবর মোল্লা চান্দিনা উপজেলার শুহিলপুর ইউনিয়ন যুবদল সাধারণ সম্পাদক ও একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়- গত এক বছর যাবৎ ফসলি জমি থেকে বালু মাটি উত্তোলন ও জমি ভরাটের এই অবৈধ কার্যক্রমের সাথে জড়িত রয়েছে আকবর মোল্লা। তিনি প্রশাসন ও নেতাদের ম্যানেজ করার কথা বলে প্রতি বর্গফুট মাটির হিসেবে দেড় থেকে ২ টাকা আদায় করছেন। ওই এলাকায় যারাই ড্রেজার চালান তারা ওই যুবদল নেতা আকবর মোল্লার কাছ থেকে অলিখিত অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু করছেন। এমনকি তার নেতৃত্বে সরকারি খাল ভরাটের অভিযোগও রয়েছে।

সম্মুখে কোন ড্রেজার ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারলেও এই প্রতিবেদককে দিয়েছেন নানা তথ্য। তারা স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন- আকবর মোল্লা যেসব ড্রেজার থেকে টাকা পায়না প্রশাসন অভিযানে আসলে সেগুলোই ভাঙ্গা হচ্ছে। যে কারণে ড্রেজার ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েই তার সাথে (আকবর মোল্লা) সমন্বয় করতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, বশিকপুর গ্রামের ‘প্রধান বাড়ির’ হোসেন প্রধান ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নিজের জমির সঙ্গে সংযুক্ত সরকারি খালও ভরাট করে ফেলছেন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হলেও আকবর মোল্লার রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাবের কারণে ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। তারা আরও বলেন আমরা জানি খাল ভরাট হলে জলাবদ্ধতা বাড়বে, ফসল নষ্ট হবে, পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু আমরা কিছু বললে ভয় দেখায়, হুমকি দেয়। আকবর মোল্লা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ওই ভরাট কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়। তাই এলাকার মানুষ প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ড্রেজার ব্যবসায়ী বলেন- এখানে যারা কাজ করছে, তারা সবাই জানে কমিশন না দিলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি জমিতে বালু উত্তোলনের জন্য নেতা আকবর মোল্লাকে ‘কমিশন’ দিতে হচ্ছে, না হলে ড্রেজার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মো. বিল্লাল নামের এক ড্রেজার ব্যবসায়ী জানান- আমি ড্রেজার মেশিন বসানোর সময় আকবর মোল্লা এসে কাজে বাধাঁ দেয়। কাজ করতে হলে প্রশাসনকে টাকা দিতে হবে। প্রথমে ১০ হাজার ও প্রশাসনের নাম করে আরও ৪০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু এরপরও প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন ও পাইপ ভেঙে দেয় এবং কাজ বন্ধ করে দেয়। তিনি আরও বলেন আকবর মোল্লার কথায় টাকা দিয়েও কাজ করতে পারিনি, আমার বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি এলাকাবাসীকে জানালেও কোনো বিচার পাইনি।

এবিষয়ে অভিযুক্ত আকবর মোল্লা বলেন- কেউ আমার বিরুদ্ধে কিছু বললেই কি তা সত্য হবে নাকি? আমি টাকা নেই এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান- অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা নিবো। আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যদি টাকা নেয় এমন অভিযোগ পেলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এছাড়া প্রশাসনের কথা বললেই কেন টাকা দিবে?