ঢাকা ০৫:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আশ্রয় ছিল একই বাড়ির ভদ্রলোকদের ঘরে, জানাজা-দাফন সম্পন্ন করলেন এলাকাবাসী

প্রবাসী ছেলেদের কোটি টাকার মালিকানা, তবুও ভাত খাওয়ায়নি কেউ : অবহেলায় মায়ের মৃত্যু

মোঃ ইলিয়াছ আহমদ, বরুড়া

কুমিল্লার বরুড়ার নয়নতলা এক গ্রামে ঘটেছে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। তিন ছেলে মোস্তফা, হানিফ, হালিম থাকার পর ও এক বৃদ্ধা মা সন্তানের অবহেলায় অসহায় জীবন কাটিয়ে অবশেষে মৃত্যুবরণ করেছেন।
তিন মেয়ে সাজন, মাজন,হাজেরা বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়েরা স্বামীর বাড়ি থেকে যতোটুকু সম্ভব সহোযোগিতার হাত বাড়িয়েছে মায়ের প্রতি।

মায়ের আর্তনাদ: “তোরা এমন করছিস কেন?”

গ্রামবাসীর কাছে জানা যায়, মেয়েরা বিয়ে হয়ে নিজ নিজ সংসারে চলে গেছে। তিন ছেলের মধ্যে বড় দুইজন—মোস্তফা ও হানিফ—বিদেশে থাকেন, বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হলেও দীর্ঘ চার বছর ধরে মায়ের মুখে একবেলা ভাত তোলেননি। ছোট ছেলে হালিম বাড়ি থেকে ও একইভাবে অবহেলা করেছেন।
যখন অন্যান্য ঘরের মহিলার বৃদ্ব মা কে ভাত খাওয়ায় কথা বলতেন অসহায় মা তখন বলতেন বারবার সন্তানদের উদ্দেশ্যে করে অন্যান্য মহিলাদের কে
“তোরা এমন করছিস কেন? আমার ছেলেদের কি অভাব আছে? আমার কি একটু ভাতের অভাব মেটানো যায় না?”

প্রতিবেশীর ঘরে শেষ আশ্রয়

নিজ ঘরে জায়গা না পেয়ে তিনি আশ্রয় নেন একই বাড়ির ভদ্রলোক হোসেনের ঘরে। বা অন্যান্যদের ঘরে। হোসেন এর ঘর ছিলো মায়ের শেষ ভরসা। গতকাল প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। রাতে ঘরের লোকজন দাওয়াতে থাকায় তারা কেউ ঘরে ছিলেন না। একা ছিলেন বৃদ্ধা মা।সকালে তার কান্না শুনে অনেকে যায় বৃদ্ধ মায়ের কাছে। এরই মাঝে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন।
মৃত্যুর পর কু-সন্তান ও পুত্র বধুদের ভিড়
খবর পেয়ে ছেলে হালিম ও তাদের স্ত্রীরা ছুটে এলে গ্রামবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। মহিলারা বলেন,
“এতদিন তোমরা কোথায় ছিলে? যখন বাঁচতে চাইত, তখন তো খেতে দিলে না, আশ্রয় দিলে না। এখন আবার কীসের জন্য এসেছ?”
এ সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। ছোট ছেলে হালিম চলে যায় ভয়ে জানাজার মাঠে।

এলাকাবাসীর করুণ দায়িত্ব

শেষ পর্যন্ত গ্রামের মুরুব্বিরা দয়া করে ছেলে হালিম এর আকুতি মিনতির ফলে জানাজায় এক নজর মাকে দেখার সুযোগ দেন তারা। তবে জানাজা ও দাফনের দায়িত্ব নেন গ্রামবাসী।

গ্রামবাসীর ক্ষোভ

মানুষের মুখে একটাই কথা—
“যে মা বুকের দুধ খাইয়ে মানুষ করেছেন, তাকে সন্তানরা একবেলা ভাতও খাওয়াল না। কু-সন্তানদের বিচার আল্লাহ তায়ালাই করবেন।”

এ ঘটনা শুধু বরুড়ার গ্রাম নয়, পুরো সমাজকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে। মানবতার প্রতি এটি এক ভয়াবহ প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে রইল।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আশ্রয় ছিল একই বাড়ির ভদ্রলোকদের ঘরে, জানাজা-দাফন সম্পন্ন করলেন এলাকাবাসী

প্রবাসী ছেলেদের কোটি টাকার মালিকানা, তবুও ভাত খাওয়ায়নি কেউ : অবহেলায় মায়ের মৃত্যু

আপডেট সময় ০৭:১৫:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মোঃ ইলিয়াছ আহমদ, বরুড়া

কুমিল্লার বরুড়ার নয়নতলা এক গ্রামে ঘটেছে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। তিন ছেলে মোস্তফা, হানিফ, হালিম থাকার পর ও এক বৃদ্ধা মা সন্তানের অবহেলায় অসহায় জীবন কাটিয়ে অবশেষে মৃত্যুবরণ করেছেন।
তিন মেয়ে সাজন, মাজন,হাজেরা বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়েরা স্বামীর বাড়ি থেকে যতোটুকু সম্ভব সহোযোগিতার হাত বাড়িয়েছে মায়ের প্রতি।

মায়ের আর্তনাদ: “তোরা এমন করছিস কেন?”

গ্রামবাসীর কাছে জানা যায়, মেয়েরা বিয়ে হয়ে নিজ নিজ সংসারে চলে গেছে। তিন ছেলের মধ্যে বড় দুইজন—মোস্তফা ও হানিফ—বিদেশে থাকেন, বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হলেও দীর্ঘ চার বছর ধরে মায়ের মুখে একবেলা ভাত তোলেননি। ছোট ছেলে হালিম বাড়ি থেকে ও একইভাবে অবহেলা করেছেন।
যখন অন্যান্য ঘরের মহিলার বৃদ্ব মা কে ভাত খাওয়ায় কথা বলতেন অসহায় মা তখন বলতেন বারবার সন্তানদের উদ্দেশ্যে করে অন্যান্য মহিলাদের কে
“তোরা এমন করছিস কেন? আমার ছেলেদের কি অভাব আছে? আমার কি একটু ভাতের অভাব মেটানো যায় না?”

প্রতিবেশীর ঘরে শেষ আশ্রয়

নিজ ঘরে জায়গা না পেয়ে তিনি আশ্রয় নেন একই বাড়ির ভদ্রলোক হোসেনের ঘরে। বা অন্যান্যদের ঘরে। হোসেন এর ঘর ছিলো মায়ের শেষ ভরসা। গতকাল প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। রাতে ঘরের লোকজন দাওয়াতে থাকায় তারা কেউ ঘরে ছিলেন না। একা ছিলেন বৃদ্ধা মা।সকালে তার কান্না শুনে অনেকে যায় বৃদ্ধ মায়ের কাছে। এরই মাঝে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন।
মৃত্যুর পর কু-সন্তান ও পুত্র বধুদের ভিড়
খবর পেয়ে ছেলে হালিম ও তাদের স্ত্রীরা ছুটে এলে গ্রামবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। মহিলারা বলেন,
“এতদিন তোমরা কোথায় ছিলে? যখন বাঁচতে চাইত, তখন তো খেতে দিলে না, আশ্রয় দিলে না। এখন আবার কীসের জন্য এসেছ?”
এ সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। ছোট ছেলে হালিম চলে যায় ভয়ে জানাজার মাঠে।

এলাকাবাসীর করুণ দায়িত্ব

শেষ পর্যন্ত গ্রামের মুরুব্বিরা দয়া করে ছেলে হালিম এর আকুতি মিনতির ফলে জানাজায় এক নজর মাকে দেখার সুযোগ দেন তারা। তবে জানাজা ও দাফনের দায়িত্ব নেন গ্রামবাসী।

গ্রামবাসীর ক্ষোভ

মানুষের মুখে একটাই কথা—
“যে মা বুকের দুধ খাইয়ে মানুষ করেছেন, তাকে সন্তানরা একবেলা ভাতও খাওয়াল না। কু-সন্তানদের বিচার আল্লাহ তায়ালাই করবেন।”

এ ঘটনা শুধু বরুড়ার গ্রাম নয়, পুরো সমাজকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে। মানবতার প্রতি এটি এক ভয়াবহ প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে রইল।