
মোহাম্মদ আলী সুমন
আজকের নগর জীবনে মানুষ যেন সবসময় ছুটে চলে অদৃশ্য এক প্রতিযোগিতার পেছনে। ভোর থেকে রাত অবধি ব্যস্ততা, কোলাহল, যানজট আর দৌড়ঝাঁপের মধ্যে হারিয়ে যায় নিজের সঙ্গে একান্ত কিছু সময় কাটানোর সুযোগ। অথচ মানুষ চায় প্রশান্তি, খোঁজে নীরবতা, খোঁজে প্রকৃতির সান্নিধ্য। সেই খোঁজেই হাজারো মানুষ ছুটে যায় সমুদ্র সৈকতে।
সম্প্রতি কক্সবাজারের বালুকাবেলায় এমনই এক দৃশ্য ধরা পড়লো। সৈকতের সবুজ-হলুদ রঙের ছাতার নিচে বসে আছেন এক দর্শনার্থী। সাদা পোশাকে আরাম করে বসে থাকা তার চোখেমুখে যেন খেলে যাচ্ছিল এক ধরনের প্রশান্তির ছাপ। সমুদ্রের হাওয়ায় চুল এলোমেলো হলেও, তার দৃষ্টি স্থির হয়ে ছিল সমুদ্রের বিশালতার দিকে। যেন প্রতিটি ঢেউ তাকে শোনাচ্ছিল নতুন জীবনের গান।
বালুকাবেলায় বসে তিনি যখন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে প্রকৃতি উপভোগ করছিলেন, তখন আশপাশের পরিবেশও যেন বদলে যাচ্ছিল। ঢেউয়ের মৃদু গর্জন, বাতাসের ছোঁয়া আর দূরে খেলতে থাকা শিশুদের হাসি একসাথে মিলেমিশে তৈরি করেছিল অন্যরকম আবহ।
সমুদ্রকে অনেকেই শুধু জলরাশি ভেবে ভুল করেন। অথচ এর প্রতিটি ঢেউ জীবনের প্রতীক। ঢেউ আসে, ভেঙে যায়, আবারও নতুন করে ফিরে আসে। জীবনের প্রতিটি দুঃখ-কষ্টও যেন সেই ঢেউয়ের মতো—আসবে, কেটে যাবে, আবারও নতুন সূচনা হবে।
সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা অনেক দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, তারা এখানে আসেন মনকে হালকা করতে, নিজেদের নতুন করে সাজাতে। একজন দর্শনার্থীর ভাষায়—“সমুদ্রের বিশালতা আমাকে শেখায়, জীবনে যত সমস্যা থাকুক না কেন, এর চেয়ে বড় কিছু নয়। প্রকৃতির সামনে সব কষ্টই তুচ্ছ।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্র সৈকতে সময় কাটানো মানুষের মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ঢেউয়ের ছন্দ, হাওয়ার ছোঁয়া আর প্রকৃতির বিশালতা একসাথে কাজ করে মানসিক চাপ কমাতে। শুধু তাই নয়, এটি মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং জীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন—“প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের একটি গভীর যোগ আছে। আমরা যখন সমুদ্র বা পাহাড়ে যাই, তখন আমাদের মস্তিষ্কে এমন কিছু হরমোন নিঃসৃত হয় যা দুশ্চিন্তা দূর করে এবং প্রশান্তি এনে দেয়। তাই সমুদ্র ভ্রমণ শুধু আনন্দ নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।”
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে শান্তির সন্ধানে সৈকতের চেয়ারে বসে থাকা সেই দর্শনার্থীর নির্লিপ্ত দৃষ্টি যেন প্রকৃতিরই প্রতিচ্ছবি। মনে হচ্ছিল, তিনি যেন সমুদ্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছেন। শহরের ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, ব্যস্ততা সব ভুলে তিনি ডুবে গেছেন প্রকৃতির কোলে। তার সেই ভঙ্গি যেন নীরব ভাষায় বলছিল—প্রকৃতির কাছে ফিরে গেলে মন সত্যিই হালকা হয়ে যায়।
পরিশেষে বলতে হয় সমুদ্র সৈকত কেবল ভ্রমণের জায়গা নয়, এটি মানুষের জন্য এক ধরণের মুক্তির পথ। শহরের কোলাহল আর জীবনের চাপে যখন মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে, তখন সমুদ্রের বুকে কয়েক মুহূর্ত কাটানোই হতে পারে সবচেয়ে বড় ওষুধ। বিশাল জলরাশি মানুষকে শেখায় ধৈর্য, শেখায় মুক্তি, শেখায় নতুনভাবে বাঁচার পাঠ।