ঢাকা ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিম্নমানের খাদ্যশস্য মজুদের অভিযোগ

যশোর নাভারণ সরকারি খাদ্য গুদামের ৩৫ মেট্রিক টন চাল লোপাট

স্টাফ রিপোর্টার

যশোরের নাভারণ সরকারি খাদ্য গুদামে৩৫ মেট্রিক টন চাল ঘাটতি থাকায় অভিযোগ উঠেছে। গুদাম রক্ষক জামশেদ ইকবালুর রহমান ওই চাল গোপনে বিক্রি করে দিয়েছেন। এছাড়া ৪/৫/৬ নং গুদামে ডেলিভারী ও খাওয়ার অযোগ্য বিপুল পরিমাণ নিম্নমানে চাল মজুদ রয়েছে । তারপরও গুদাম রক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই তিনি এই অপকর্ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নাভারণ সরকারি খাদ্য গুদামের প্রতিটি খামালে ১ থেকে ৩ টন চাল কম আছে। গুদামের ওসিএলএসডি জামশেদ ইকবালুর রহমান প্রত্যেক খামালে চাল কম রেখে বাকিটা বিক্রি করে দিয়েছেন। গুদামটিতে বর্তমানে ৩৫ মেট্রিক টন চাল ঘাটতি রয়েছে।

সদ্য শেষ হওয়া বোরো মৌসুমে সংগ্রহকৃত খাদ্যশস্যের অবস্থা বেশি নাজুক। ওসিএলএসডি বিধিবহির্ভূতভাবে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বিভিন্ন ডিও,র চাল কমদামে কিনে গুদাম বোঝাই করে ফেলেছেন। এখানে মাঝখানের ৬ নং গুদামে রয়েছে লালচে বর্ণের চাল । যা গত কয়েক বছর আগের ও পুরাতন। ৪ নং গুদামের খামালের মাঝখানে আছে বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের খাওয়ার অনুপযোগী চাল। ৫ নং গুদামের চালের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। এছাড়া গুদামে নন সটিং চাল রয়েছে। বিশেষ করে ৪, ৫,৬ নম্বর খামালে মজুদকৃত খাদ্যশস্যের গুণগতমান বেশি খারাপ। যা খাওয়া ও বিলি বন্টনের সম্পূর্ণ অযোগ্য।
গুদামটিতে চালের মান খারাপ ছাড়াও নানা অব্যবস্থাপনা রয়েছে। রয়েছে ১৫০০ খালি বস্তার ঘাটতি।

সূত্রগুলো বলছে, মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শেখ হাসিনার নাম সম্বলিত বস্তাসহ চাল বিলি বিতরণ করায় যশোরের শার্শা এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। তখন যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম নাভারণ গুদামের ইনচার্জ জামশেদ ইকবালুর রহমানকে প্রত্যাহার করার জন্য তৎকালীন খুলনার আরসিফুড ইকবাল বাহার চৌধুরীকে ফোন করেন। এরপর নাভারণ খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডিকে তৎকালীন আরসিফুড ইকবাল বাহার চৌধুরী খুলনায় ডেকে নিয়ে যান। ওই সময় প্রত্যাহারের ভয় দেখিয়ে আরসিফুড নাভারণ খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডির কাছ থেকে নগদ আট লাখ টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মোঃ আবুল আমিন যশোর জেলার খাদ্যগুদামসমূহ পরিদর্শনে আসেন। তখন তিনি নাভারণ খাদ্য গুদামে গিয়ে খাতা কলমে জমা ও গুদামে মজুদকৃত খাদ্যশস্য ব্যাপক অসংগতি দেখতে পান । পরে খামাল কার্ড আনতে বলেন । খামাল কার্ড দেখে গণনা করে বুঝতে পারেন গুদামে ৪টি খামালের অস্তিত্ব নেই । অথচ খাতা কলমে মজুদ দেখানো হয়েছে। ওই সময় গুদামে চাল ঘাটতি পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৭ শত মেট্রিক টন । তখন উপ সচিব মোঃ আবুল আমিন যশোরের ডিসিফুড সেফাউর রহমানকে নির্দেশ দেন বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য । ওই সময় গুদামের রক্ষক জামশেদ ইকবালুর রহমান মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে ডিসিফুডকে ম্যানেজ করে ফেলেন। এরপর কয়েকদিন সময় নিয়ে বাজার থেকে চাল ক্রয় করে ট্রাক বোঝাই করে গুদামের ঘাটতি পূরণ করেন।

ঘাটতি পূরণ হলে ওসিএলএডি ডিসি ফুডকে জানান। ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর শার্শার এসিল্যান্ড ও খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে নাভারণ খাদ্যগুদামের মজুতকৃত খাদ্য শস্যের বস্তা গণনা করতে যান ডিসি ফুড। ওই সময় ডিসি ফুড গুদামের সাথে একটি ছবি তুলে ফেসবুকে গুদাম রক্ষক জামশেদ ইকবালুর রহমানের পক্ষে পোস্ট দেন। ওই পোস্টে লেখেন শতভাগ মজুদ আছে। ডিসি ফুডকে ম্যানেজ করে ওই সময় জামশেদ ইকবালুর রহমান ওই মিশন থেকে রক্ষা পান বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র বলছে, সদ্য শেষ হওয়া বোরো অভিযানে কৃষকের পরিবর্তে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নাভারণের ওসিএলএসডি জামশেদ ইকবালুর রহমান।

খাতা কলমে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় দেখানো হলেও আদৌ কোন কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হয়নি। শার্শায় সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা কৃষকের তালিকায় যাদের নাম দেখানো হয়েছে তাদের স্বাক্ষর ও মোবাইল নাম্বার ভূয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধানের পরিবর্তে গুদামে সরাসরি চাল ঢোকানো হয়েছে। বিষয়টা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে যার শতভাগ সত্যতা পাওয়া যাবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্রগুলো বলছে, নাভারণ খাদ্যগুদামে চাল ও বস্তার ঘাটতি এবং নিম্নমানের খাদ্যশস্য মজুদের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ওসিএলএসডি জামশেদ ইকবালুর রহমান উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নিকট দেন দরবার করছেন। নিম্নমানের চাল জায়েজ করতে আর্থিক লেনদেন করে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই সাথে নাভারণ থেকে দ্রুত বদলী হয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি খাদ্য গুদামের ইনচার্জ হিসেবে যোগদানের জন্য আরসি ফুড অফিসে দৌড়ঝাঁপ করছেন। কালীগঞ্জে অর্ডারের জন্য আরসিফুড অফিসে আর্থিক লেনদেনেরও চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নাভারণ খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি জামশেদ ইকবালুর রহমান এ বিষয় আনীত সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গুদামে চাল ও বস্তার সংকট নেই । নিম্নমানের চাল মজুদ থাকার বিষয়টিও ভিত্তিহীন ।#

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নিম্নমানের খাদ্যশস্য মজুদের অভিযোগ

যশোর নাভারণ সরকারি খাদ্য গুদামের ৩৫ মেট্রিক টন চাল লোপাট

আপডেট সময় ০৭:৩৩:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার

যশোরের নাভারণ সরকারি খাদ্য গুদামে৩৫ মেট্রিক টন চাল ঘাটতি থাকায় অভিযোগ উঠেছে। গুদাম রক্ষক জামশেদ ইকবালুর রহমান ওই চাল গোপনে বিক্রি করে দিয়েছেন। এছাড়া ৪/৫/৬ নং গুদামে ডেলিভারী ও খাওয়ার অযোগ্য বিপুল পরিমাণ নিম্নমানে চাল মজুদ রয়েছে । তারপরও গুদাম রক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই তিনি এই অপকর্ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নাভারণ সরকারি খাদ্য গুদামের প্রতিটি খামালে ১ থেকে ৩ টন চাল কম আছে। গুদামের ওসিএলএসডি জামশেদ ইকবালুর রহমান প্রত্যেক খামালে চাল কম রেখে বাকিটা বিক্রি করে দিয়েছেন। গুদামটিতে বর্তমানে ৩৫ মেট্রিক টন চাল ঘাটতি রয়েছে।

সদ্য শেষ হওয়া বোরো মৌসুমে সংগ্রহকৃত খাদ্যশস্যের অবস্থা বেশি নাজুক। ওসিএলএসডি বিধিবহির্ভূতভাবে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বিভিন্ন ডিও,র চাল কমদামে কিনে গুদাম বোঝাই করে ফেলেছেন। এখানে মাঝখানের ৬ নং গুদামে রয়েছে লালচে বর্ণের চাল । যা গত কয়েক বছর আগের ও পুরাতন। ৪ নং গুদামের খামালের মাঝখানে আছে বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের খাওয়ার অনুপযোগী চাল। ৫ নং গুদামের চালের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। এছাড়া গুদামে নন সটিং চাল রয়েছে। বিশেষ করে ৪, ৫,৬ নম্বর খামালে মজুদকৃত খাদ্যশস্যের গুণগতমান বেশি খারাপ। যা খাওয়া ও বিলি বন্টনের সম্পূর্ণ অযোগ্য।
গুদামটিতে চালের মান খারাপ ছাড়াও নানা অব্যবস্থাপনা রয়েছে। রয়েছে ১৫০০ খালি বস্তার ঘাটতি।

সূত্রগুলো বলছে, মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শেখ হাসিনার নাম সম্বলিত বস্তাসহ চাল বিলি বিতরণ করায় যশোরের শার্শা এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। তখন যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম নাভারণ গুদামের ইনচার্জ জামশেদ ইকবালুর রহমানকে প্রত্যাহার করার জন্য তৎকালীন খুলনার আরসিফুড ইকবাল বাহার চৌধুরীকে ফোন করেন। এরপর নাভারণ খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডিকে তৎকালীন আরসিফুড ইকবাল বাহার চৌধুরী খুলনায় ডেকে নিয়ে যান। ওই সময় প্রত্যাহারের ভয় দেখিয়ে আরসিফুড নাভারণ খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডির কাছ থেকে নগদ আট লাখ টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মোঃ আবুল আমিন যশোর জেলার খাদ্যগুদামসমূহ পরিদর্শনে আসেন। তখন তিনি নাভারণ খাদ্য গুদামে গিয়ে খাতা কলমে জমা ও গুদামে মজুদকৃত খাদ্যশস্য ব্যাপক অসংগতি দেখতে পান । পরে খামাল কার্ড আনতে বলেন । খামাল কার্ড দেখে গণনা করে বুঝতে পারেন গুদামে ৪টি খামালের অস্তিত্ব নেই । অথচ খাতা কলমে মজুদ দেখানো হয়েছে। ওই সময় গুদামে চাল ঘাটতি পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৭ শত মেট্রিক টন । তখন উপ সচিব মোঃ আবুল আমিন যশোরের ডিসিফুড সেফাউর রহমানকে নির্দেশ দেন বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য । ওই সময় গুদামের রক্ষক জামশেদ ইকবালুর রহমান মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে ডিসিফুডকে ম্যানেজ করে ফেলেন। এরপর কয়েকদিন সময় নিয়ে বাজার থেকে চাল ক্রয় করে ট্রাক বোঝাই করে গুদামের ঘাটতি পূরণ করেন।

ঘাটতি পূরণ হলে ওসিএলএডি ডিসি ফুডকে জানান। ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর শার্শার এসিল্যান্ড ও খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে নাভারণ খাদ্যগুদামের মজুতকৃত খাদ্য শস্যের বস্তা গণনা করতে যান ডিসি ফুড। ওই সময় ডিসি ফুড গুদামের সাথে একটি ছবি তুলে ফেসবুকে গুদাম রক্ষক জামশেদ ইকবালুর রহমানের পক্ষে পোস্ট দেন। ওই পোস্টে লেখেন শতভাগ মজুদ আছে। ডিসি ফুডকে ম্যানেজ করে ওই সময় জামশেদ ইকবালুর রহমান ওই মিশন থেকে রক্ষা পান বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র বলছে, সদ্য শেষ হওয়া বোরো অভিযানে কৃষকের পরিবর্তে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নাভারণের ওসিএলএসডি জামশেদ ইকবালুর রহমান।

খাতা কলমে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় দেখানো হলেও আদৌ কোন কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হয়নি। শার্শায় সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা কৃষকের তালিকায় যাদের নাম দেখানো হয়েছে তাদের স্বাক্ষর ও মোবাইল নাম্বার ভূয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধানের পরিবর্তে গুদামে সরাসরি চাল ঢোকানো হয়েছে। বিষয়টা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে যার শতভাগ সত্যতা পাওয়া যাবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্রগুলো বলছে, নাভারণ খাদ্যগুদামে চাল ও বস্তার ঘাটতি এবং নিম্নমানের খাদ্যশস্য মজুদের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ওসিএলএসডি জামশেদ ইকবালুর রহমান উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নিকট দেন দরবার করছেন। নিম্নমানের চাল জায়েজ করতে আর্থিক লেনদেন করে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই সাথে নাভারণ থেকে দ্রুত বদলী হয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি খাদ্য গুদামের ইনচার্জ হিসেবে যোগদানের জন্য আরসি ফুড অফিসে দৌড়ঝাঁপ করছেন। কালীগঞ্জে অর্ডারের জন্য আরসিফুড অফিসে আর্থিক লেনদেনেরও চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নাভারণ খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি জামশেদ ইকবালুর রহমান এ বিষয় আনীত সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গুদামে চাল ও বস্তার সংকট নেই । নিম্নমানের চাল মজুদ থাকার বিষয়টিও ভিত্তিহীন ।#