ঢাকা ০১:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বাংলাদেশে প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতার বড়ই অভাব Logo নীলফামারীতে এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার Logo শেরপুর সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ১৫ লাখ টাকার চোরাচালান পণ্য আটক Logo রাণীনগর রেলগেটে ফ্লাইওভারের দাবিতে মানববন্ধন Logo দুলাভাই বাহিনীর এক সদস্য আটক Logo ধোপাজান নদীতে বালু লুটপাট থামছেই না : রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার Logo মহেশখালীতে ৩ টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রসহ ১ জন কুখ্যাত সন্ত্রাসী আটক Logo শনিবার নিজ এলাকায় সংবর্ধনা পাচ্ছেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক মোঃ শাহ আলম Logo পারস্পরিক সম্মান ও আস্থার ভিত্তিতে চীন-স্লোভেনিয়া সম্পর্ক স্থিতিশীল Logo ডিজিটাল অর্থনীতি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় যৌথ উদ্যোগের পরিকল্পনা

বাংলাদেশে প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতার বড়ই অভাব

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ যেন নীতিহীনতার এক দুঃসময় পার করছে। স্বাধীনতার পর থেকে যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ এই দেশ গড়েছিল স্বচ্ছ নেতৃত্ব, সৎ রাজনীতি, জনগণের কল্যাণ, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র সেই আদর্শ আজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে। এক সময় রাজনীতিকে বলা হতো “মানুষের সেবার ক্ষেত্র”, এখন সেটি অনেকের কাছে “ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যম” হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অথচ একজন প্রকৃত রাজনীতিবিদ মানে এমন একজন মানুষ, যিনি নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে থাকবেন, দেশের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করবেন। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে সেই দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতার বড়ই অভাব।

রাজনীতির মাঠে এখন মূলত দেখা যায় দলে দলে বিভাজন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতৃত্ব আর স্বার্থসন্ধানী প্রতিযোগিতা। জনগণের সমস্যা সমাধান নয়, বরং কে কতটা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পারবে, সেটাই যেন এখন রাজনীতির মূল লক্ষ্য। দুর্নীতি, লুটপাট, দলে দলে পদ বাণিজ্য, অনৈতিক প্রভাব খাটানো সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে জনগণের আস্থা। সাধারণ মানুষ এখন রাজনীতির নাম শুনলেই ভরসা হারায়। অথচ রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যই ছিল জনগণের আস্থা অর্জন, তাদের সেবা করা, এবং জাতিকে উন্নতির পথে এগিয়ে নেওয়া।

দেশের বিভিন্ন স্তরে এমন কিছু মানুষ এখনও আছেন যারা দেশকে ভালোবাসেন, মানুষের পাশে দাঁড়ান, সততা ও আদর্শ নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অধিকাংশ নতুন প্রজন্ম রাজনীতিতে আসে স্বার্থসিদ্ধির আশায়, দেশের সেবার জন্য নয়। এর ফলে রাজনীতির মেরুদণ্ড ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। দলীয় স্বার্থ জাতীয় স্বার্থকে ছাপিয়ে যাচ্ছে, আর সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের ত্যাগী, নীতিবান নেতাদের ধারা।

প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতার প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো সততা। তিনি লোভ, প্রলোভন বা ক্ষমতার মোহে নীতির সঙ্গে আপস করেন না। তিনি জনগণের কথা বলেন, তাদের জন্য কাজ করেন, এবং দেশকে নিজের সন্তান মনে করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এমন নেতা খুঁজে পাওয়া বিরল। প্রতিটি নির্বাচনের আগে নানা প্রতিশ্রুতি শোনা যায় গরিবের উন্নয়ন, দুর্নীতি দমন, বেকার সমস্যা সমাধান কিন্তু নির্বাচনের পর সেসব প্রতিশ্রুতি কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকে।

রাজনীতিতে যদি প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতা না থাকে, তবে রাষ্ট্রব্যবস্থা কখনও টেকসই হয় না। জনগণের আস্থা নষ্ট হলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে, সমাজে বৈষম্য বেড়ে যায়, এবং রাষ্ট্রে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। তাই এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন রাজনীতিতে নীতি, মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম ফিরিয়ে আনা। জনগণের স্বার্থকে রাজনীতির কেন্দ্রে স্থাপন করা, আর তরুণ প্রজন্মকে আদর্শিক নেতৃত্বের দিকে উৎসাহিত করা।

আজ সময় এসেছে নতুন করে ভাবার আমরা কি শুধু ক্ষমতার রাজনীতি চাই, নাকি মানবতার রাজনীতি? ইতিহাস সাক্ষী, দেশপ্রেমিক নেতারাই জাতিকে উন্নতির পথে নিয়ে গেছে, স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে এখন দরকার সেই রকম ত্যাগী, সাহসী ও সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব যে নেতৃত্ব দেশের মানুষকে এক করবে, বিভক্ত নয়; দেশকে গড়বে, ভাঙবে না।

লেখক : মোহাম্মদ আলী সুমন, সাংবাদিক ও সংগঠক।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশে প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতার বড়ই অভাব

SBN

SBN

বাংলাদেশে প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতার বড়ই অভাব

আপডেট সময় ০৯:৪৮:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ যেন নীতিহীনতার এক দুঃসময় পার করছে। স্বাধীনতার পর থেকে যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ এই দেশ গড়েছিল স্বচ্ছ নেতৃত্ব, সৎ রাজনীতি, জনগণের কল্যাণ, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র সেই আদর্শ আজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে। এক সময় রাজনীতিকে বলা হতো “মানুষের সেবার ক্ষেত্র”, এখন সেটি অনেকের কাছে “ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যম” হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অথচ একজন প্রকৃত রাজনীতিবিদ মানে এমন একজন মানুষ, যিনি নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে থাকবেন, দেশের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করবেন। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে সেই দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতার বড়ই অভাব।

রাজনীতির মাঠে এখন মূলত দেখা যায় দলে দলে বিভাজন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতৃত্ব আর স্বার্থসন্ধানী প্রতিযোগিতা। জনগণের সমস্যা সমাধান নয়, বরং কে কতটা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পারবে, সেটাই যেন এখন রাজনীতির মূল লক্ষ্য। দুর্নীতি, লুটপাট, দলে দলে পদ বাণিজ্য, অনৈতিক প্রভাব খাটানো সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে জনগণের আস্থা। সাধারণ মানুষ এখন রাজনীতির নাম শুনলেই ভরসা হারায়। অথচ রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যই ছিল জনগণের আস্থা অর্জন, তাদের সেবা করা, এবং জাতিকে উন্নতির পথে এগিয়ে নেওয়া।

দেশের বিভিন্ন স্তরে এমন কিছু মানুষ এখনও আছেন যারা দেশকে ভালোবাসেন, মানুষের পাশে দাঁড়ান, সততা ও আদর্শ নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অধিকাংশ নতুন প্রজন্ম রাজনীতিতে আসে স্বার্থসিদ্ধির আশায়, দেশের সেবার জন্য নয়। এর ফলে রাজনীতির মেরুদণ্ড ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। দলীয় স্বার্থ জাতীয় স্বার্থকে ছাপিয়ে যাচ্ছে, আর সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের ত্যাগী, নীতিবান নেতাদের ধারা।

প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতার প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো সততা। তিনি লোভ, প্রলোভন বা ক্ষমতার মোহে নীতির সঙ্গে আপস করেন না। তিনি জনগণের কথা বলেন, তাদের জন্য কাজ করেন, এবং দেশকে নিজের সন্তান মনে করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এমন নেতা খুঁজে পাওয়া বিরল। প্রতিটি নির্বাচনের আগে নানা প্রতিশ্রুতি শোনা যায় গরিবের উন্নয়ন, দুর্নীতি দমন, বেকার সমস্যা সমাধান কিন্তু নির্বাচনের পর সেসব প্রতিশ্রুতি কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকে।

রাজনীতিতে যদি প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতা না থাকে, তবে রাষ্ট্রব্যবস্থা কখনও টেকসই হয় না। জনগণের আস্থা নষ্ট হলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে, সমাজে বৈষম্য বেড়ে যায়, এবং রাষ্ট্রে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। তাই এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন রাজনীতিতে নীতি, মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম ফিরিয়ে আনা। জনগণের স্বার্থকে রাজনীতির কেন্দ্রে স্থাপন করা, আর তরুণ প্রজন্মকে আদর্শিক নেতৃত্বের দিকে উৎসাহিত করা।

আজ সময় এসেছে নতুন করে ভাবার আমরা কি শুধু ক্ষমতার রাজনীতি চাই, নাকি মানবতার রাজনীতি? ইতিহাস সাক্ষী, দেশপ্রেমিক নেতারাই জাতিকে উন্নতির পথে নিয়ে গেছে, স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে এখন দরকার সেই রকম ত্যাগী, সাহসী ও সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব যে নেতৃত্ব দেশের মানুষকে এক করবে, বিভক্ত নয়; দেশকে গড়বে, ভাঙবে না।

লেখক : মোহাম্মদ আলী সুমন, সাংবাদিক ও সংগঠক।