
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো চীনা চলচ্চিত্র ‘স্নো লেপার্ড’-এর এক বিশেষ প্রদর্শনী।১৭ নভেম্বর, সোমবার বারিধারায় অবস্থিত আপন ফ্রেন্ডশিপ এক্সচেঞ্জ সেন্টারের কার্যালয়ে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে অংশ নেন চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের শিক্ষক–শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি–পেশার দর্শক।
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিআইয়ের শিক্ষক ছেন সি বলেন, ‘এই সিনেমা থেকে আমরা মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সংঘাত দেখতে পাই, এবং প্রাণী ও মানুষের তৈরি করা সম্পর্ক বা নির্মাণও দেখতে পাই। তারা পরিবেশের সঙ্গে যেন লড়াই করছে, আবার একে অপরের উপর নির্ভরও করছে। তাই আমরা দেখতে পাই—এই সংঘাত পৃথিবীর প্রতিটি জায়গায়, প্রতিটি সময়েই উপস্থিত। এই বিষয়টি আমাদের মানুষে মানুষে সম্পর্ক এবং মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক নিয়ে ভাবতে সাহায্য করে।
আমি আরও মনে করি, এই সিনেমায় সাদা-কালো দৃশ্য এবং রঙিন দৃশ্যের ব্যবহার খুব অর্থবহ। এসব দৃশ্য বাস্তবতা ও স্বপ্ন—মানুষের জীবনের ভিন্ন ভিন্ন দিক—দেখাতে সাহায্য করে। এটি আমাদের বিশ্বাস নিয়েও ভাবায়, কারণ আমরা দেখি তিব্বতিদের নিজস্ব ধর্ম ও বিশ্বাস রয়েছে। এতে আমরা ভাবতে বাধ্য হই—আমাদেরও কি আমাদের বিশ্বাস অনুসরণ করা উচিত, নাকি প্রকৃতি ও প্রাণীর প্রতি আরও দয়াময় হওয়া উচিত, যাতে আমরা আরও সুসমন্বিতভাবে থাকতে পারি।’
চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিআইয়ের শিক্ষক লিউ ওয়েনলি ওয়েনতি বলেন, ‘আসলে এই মুভিটি মানুষ ও প্রকৃতি সম্পর্কে। আমি মনে করি, এই মুভিটি দেখার পর আমাদের চিন্তা করা প্রয়োজন, কীভাবে দীর্ঘসময় প্রকৃতির সাথে থাকা যায়।‘
চলচ্চিত্রটি উপভোগ শেষে দর্শকরা তাদের অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে বলেন, এ ধরনের আয়োজন চীন ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে এবং দুই দেশের মানুষের পারস্পরিক বোঝাপড়া গভীর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সিএফএমসিসি এর কর্মকর্তা ওয়েই হান ছাং বলেন, ‘আমরা চীনা কোম্পানি সিএফএমসিসি থেকে এই চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে এসেছিলাম। এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য আমন্ত্রণ পাওয়ায় আমরা সত্যিই আনন্দিত। এই চলচ্চিত্র আমাদেরকে চীন এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতির মধ্যে বিনিময়ের একটি দারুণ সুযোগ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় নাগরিকদের কাছে চীনা সংস্কৃতি উপস্থাপন করার সুযোগ পাওয়াটাও আমাদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
বিশেষ করে এই চলচ্চিত্র সম্পর্কে বলতে গেলে—আমি যখন এটি দেখলাম, প্রথমেই আমার চোখে পড়েছে এর অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ। আমার বিশ্বাস, এটি খুবই চিত্তাকর্ষক এবং মনোমুগ্ধকর একটি স্থানে চিত্রায়িত হয়েছে।
এই প্রতিবেদনভিত্তিক গল্প মানুষের মধ্যে পরস্পরকে বোঝার এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক বিনিময় ও বোঝাপড়া গভীর করার একটি কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে। আমি মনে করি এটি সত্যিই অসাধারণ।‘
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বা তিব্বতের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে বিরল প্রজাতির তুষারচিতার জীবন ও মানুষ–প্রকৃতির সম্পর্কের সূক্ষ্ম গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে চীনা ভাষার এই চলচ্চিত্র।
গল্পে দেখা যায়—একটি তুষার চিতা নয়টি ভেড়া মেরে ফেলে, আর একটি টেলিভিশন দল ঘটনাটি নথিভুক্ত করে। পরে পরিবারে বিভাজন সৃষ্টি হয়—কেউ চিতাটিকে হত্যা করতে চায়, আবার কেউ তার সুরক্ষার পক্ষে যুক্তি দেয়। এতে উঠে আসে প্রকৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে ভিন্ন বিশ্বাস ও মানসিকতার সংঘাত।
চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সিচাংয়ের সংস্কৃতি ও মানুষের জীবনধারা তুলে ধরার জন্য পরিচিত খ্যাতিমান নির্মাতা পেমা সেদান।
‘স্নো লেপার্ড’ প্রকৃতি, নৈতিকতা ও সহাবস্থানের সংবেদনশীল বয়ান তুলে ধরে দর্শকদের মানুষ ও প্রাণীর সম্পর্ক নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। একই সঙ্গে আধুনিক সিচাংয়ের সংস্কৃতি, ভাষা ও জীবনযাত্রার মনোমুগ্ধকর চিত্রও এতে ফুটে উঠেছে।
এই বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করে আপনি ফ্রেন্ডশিপ এক্সচেঞ্জ সেন্টার। এর আগে, গত ১৮ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটি চীনের মহাকাশ অভিযানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘শেনচৌ–১৩’–এরও প্রদর্শনের আয়োজন করে।
তথ্য ও ছবি:ঐশী-আজাদ,সিএমজি বাংলা।
আন্তর্জাতিক: 






















