ঢাকা ০৪:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় উন্নয়ন অংশীদারিত্ব জোরদার করছে চীন

  • আন্তর্জাতিক:
  • আপডেট সময় ১২:০৭:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীনই মূল চালিকশক্তি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ও দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, ৩০ শে ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বেইজিংয়ে, ‘২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও চীনের কূটনীতি’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ধীরগতির, একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়, এবং সকল দেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। অবশ্য, চীনের অর্থনীতি চাপের মধ্যেও এগিয়ে যায়।

ওয়াং ই বলেন, নিজের শক্তিশালী স্থিতিস্থাপকতা ও প্রচুর প্রাণশক্তি দিয়ে বিশ্বকে সহায়তা করে যাবে চীন এবং একতরফা উন্মুক্তকরণসহ উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে বিশ্বের সাথে সুযোগ ভাগাভাগি করবে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান ৩০ শতাংশ বজায় রয়েছে, যা জি-৭ দেশগুলোর সম্মিলিত অবদানের চেয়ে বেশি। চীনের অবদান বিশ্বকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করছে।

সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুসারে, গত বছর ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ ইনিশিয়েটিভে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোতে চীনের অ-আর্থিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বার্ষিক ২০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পায়; চীন সকল পক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গড়ে তোলে; আসিয়ানের সাথে আপগ্রেড করা মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল ৩.০ প্রোটোকল স্বাক্ষর করে; আফ্রিকার সাথে ‘দশটি অংশীদারিত্ব পদক্ষেপ’ বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহত রাখে; ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সাথে ‘পাঁচটি প্রধান প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কাজ করেছে; আরব দেশগুলোর সাথে ‘পাঁচটি প্রধান সহযোগিতার ধরণ’ তৈরি করে; এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলোর সাথে একটি সাত-প্ল্যাটফর্ম সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করে।

তিনি বলেন, চীন বস্তুনিষ্ঠতা, ন্যায্যতা ও চীনা বৈশিষ্ট্যের আলোকে, বিভিন্ন জটিল সমস্যার লক্ষণ ও মূল কারণ মোকাবিলা করার নীতি মেনে চলে। এ নীতি অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না-করার এবং ব্যক্তিগত লাভ না-চাওয়ার ওপর জোর দেয়। চীন উত্তর মিয়ানমারের সংঘাত, ইরানের পারমাণবিক সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট, এবং কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সাম্প্রতিক সংঘাত সমাধানে আন্তরিকভাবে মধ্যস্থতা করেছে।
ওয়াং ই জোর দিয়ে বলেন, চীন দ্ব্যর্থহীনভাবে আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধিতা করে এবং যেসব দেশ অবিচারের শিকার—সেসব দেশকে নৈতিক ও ব্যবহারিক সমর্থন দিয়ে থাকে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সম্পর্কে তিনি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে, সমতা, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করতে এবং দুটি প্রধান শক্তি হিসেবে সহাবস্থানের সঠিক উপায় অন্বেষণ করতে হবে।

ওয়াং ই বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল-নির্ধারণ বিশ্ব ইতিহাসের গতিপথকে প্রভাবিত করে। ২০২৫ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চার দফা ফোনালাপ এবং একাধিক চিঠি বিনিময় করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে আয়োজিত বৈঠকে তাঁরা চীন-মার্কিন সম্পর্ক এবং বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রধান বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেন। গত এক বছরে চীন-মার্কিন সম্পর্কের উন্নয়ন দেখিয়েছে যে, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা উভয়ের জন্যই লাভজনক, অন্যদিকে সংঘর্ষ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।

তিনি বলেন, চলতি বছর তাইওয়ানের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনের ৮০তম বার্ষিকী। মাতৃভূমির সম্পূর্ণ পুনর্মিলন অর্জন একটি ঐতিহাসিক মিশন, যা আমাদের অবশ্যই পূরণ করতে হবে, কারণ এর সাথে আইন অনুসারে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা জড়িত। তাইওয়ান সমস্যা চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এটি চীনের মূল স্বার্থের মূল বিষয়। তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ক্রমাগত উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে বড় আকারের অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করতে হবে।

সূত্র:চায়না মিডিয়া গ্রুপ।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় উন্নয়ন অংশীদারিত্ব জোরদার করছে চীন

আপডেট সময় ১২:০৭:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীনই মূল চালিকশক্তি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ও দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, ৩০ শে ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বেইজিংয়ে, ‘২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও চীনের কূটনীতি’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ধীরগতির, একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়, এবং সকল দেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। অবশ্য, চীনের অর্থনীতি চাপের মধ্যেও এগিয়ে যায়।

ওয়াং ই বলেন, নিজের শক্তিশালী স্থিতিস্থাপকতা ও প্রচুর প্রাণশক্তি দিয়ে বিশ্বকে সহায়তা করে যাবে চীন এবং একতরফা উন্মুক্তকরণসহ উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে বিশ্বের সাথে সুযোগ ভাগাভাগি করবে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান ৩০ শতাংশ বজায় রয়েছে, যা জি-৭ দেশগুলোর সম্মিলিত অবদানের চেয়ে বেশি। চীনের অবদান বিশ্বকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করছে।

সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুসারে, গত বছর ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ ইনিশিয়েটিভে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোতে চীনের অ-আর্থিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বার্ষিক ২০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পায়; চীন সকল পক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গড়ে তোলে; আসিয়ানের সাথে আপগ্রেড করা মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল ৩.০ প্রোটোকল স্বাক্ষর করে; আফ্রিকার সাথে ‘দশটি অংশীদারিত্ব পদক্ষেপ’ বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহত রাখে; ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সাথে ‘পাঁচটি প্রধান প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কাজ করেছে; আরব দেশগুলোর সাথে ‘পাঁচটি প্রধান সহযোগিতার ধরণ’ তৈরি করে; এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলোর সাথে একটি সাত-প্ল্যাটফর্ম সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করে।

তিনি বলেন, চীন বস্তুনিষ্ঠতা, ন্যায্যতা ও চীনা বৈশিষ্ট্যের আলোকে, বিভিন্ন জটিল সমস্যার লক্ষণ ও মূল কারণ মোকাবিলা করার নীতি মেনে চলে। এ নীতি অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না-করার এবং ব্যক্তিগত লাভ না-চাওয়ার ওপর জোর দেয়। চীন উত্তর মিয়ানমারের সংঘাত, ইরানের পারমাণবিক সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট, এবং কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সাম্প্রতিক সংঘাত সমাধানে আন্তরিকভাবে মধ্যস্থতা করেছে।
ওয়াং ই জোর দিয়ে বলেন, চীন দ্ব্যর্থহীনভাবে আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধিতা করে এবং যেসব দেশ অবিচারের শিকার—সেসব দেশকে নৈতিক ও ব্যবহারিক সমর্থন দিয়ে থাকে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সম্পর্কে তিনি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে, সমতা, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করতে এবং দুটি প্রধান শক্তি হিসেবে সহাবস্থানের সঠিক উপায় অন্বেষণ করতে হবে।

ওয়াং ই বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল-নির্ধারণ বিশ্ব ইতিহাসের গতিপথকে প্রভাবিত করে। ২০২৫ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চার দফা ফোনালাপ এবং একাধিক চিঠি বিনিময় করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে আয়োজিত বৈঠকে তাঁরা চীন-মার্কিন সম্পর্ক এবং বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রধান বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেন। গত এক বছরে চীন-মার্কিন সম্পর্কের উন্নয়ন দেখিয়েছে যে, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা উভয়ের জন্যই লাভজনক, অন্যদিকে সংঘর্ষ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।

তিনি বলেন, চলতি বছর তাইওয়ানের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনের ৮০তম বার্ষিকী। মাতৃভূমির সম্পূর্ণ পুনর্মিলন অর্জন একটি ঐতিহাসিক মিশন, যা আমাদের অবশ্যই পূরণ করতে হবে, কারণ এর সাথে আইন অনুসারে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা জড়িত। তাইওয়ান সমস্যা চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এটি চীনের মূল স্বার্থের মূল বিষয়। তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ক্রমাগত উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে বড় আকারের অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করতে হবে।

সূত্র:চায়না মিডিয়া গ্রুপ।