
শাহিন আলম আশিক
বাংলাদেশের রাজনীতির মহাকাব্যে বেগম খালেদা জিয়া কেবল একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক বা আপসহীন নেত্রী নন; বরং তিনি ছিলেন ইসলামী মূল্যবোধ এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের এক অপরাজেয় কণ্ঠস্বর। তাঁর প্রয়াণ কেবল একজন অভিভাবকের প্রস্থান নয়, বরং এক বিশাল শূন্যতা তৈরি হলো মুসলিম উম্মাহ ও জাতীয় চেতনার আঙিনায়।
বিশ্বাসের দৃঢ়তায় অজেয় পথচলা
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি বাঁকে তাঁর ঈমানী দৃঢ়তা ছিল প্রদীপ্ত। মহান আল্লাহর ওপর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাসই ছিল তাঁর অসীম সাহসের মূল ভিত্তি। স্বামী হারানো, আদরের সন্তান বিয়োগ এবং দীর্ঘ কারাবাসের অসহনীয় যন্ত্রণা—সবই তিনি সহ্য করেছেন ইসলামের চিরায়ত শিক্ষা ‘সবর’ ও ‘শোকর’-এর মাধ্যমে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তাঁর এই অবিচল থাকা প্রমাণ করে যে, বিশ্বাসের শক্তিই ছিল তাঁর প্রকৃত অলংকার।
দ্বীনি শিক্ষা ও সংস্কারে কালজয়ী অবদান
সরকারপ্রধান হিসেবে ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং নৈতিক শিক্ষার উন্নয়নে তিনি যে ঐতিহাসিক পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে:
মাদ্রাসা শিক্ষার স্বীকৃতি ও আধুনিকায়ন: কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে ফাজিল ও কামিলকে সাধারণ শিক্ষার সমমান প্রদানের ঐতিহাসিক উদ্যোগ তাঁর সরকারের আমলেই পূর্ণতা পেয়েছিল।
ধর্মীয় মূল্যবোধের সুরক্ষা:
বিশ্বায়নের যুগেও বাংলাদেশের নিজস্ব তাহজিব-তমুদ্দুন ও ধর্মীয় চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সগৌরবে তুলে ধরেছিলেন তিনি।
মসজিদ ও অবকাঠামো উন্নয়ন: সারাদেশে অসংখ্য মসজিদ নির্মাণ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমকে তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত করার মাধ্যমে তিনি দ্বীনি দাওয়াতের পথকে সুগম করেছিলেন।
মুসলিম উম্মাহর সংহতি ও বিশ্বজনীন অবস্থান
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বেগম জিয়া সবসময় মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর ছিলেন। ওআইসি (OIC)-সহ বিভিন্ন বিশ্বমঞ্চে তিনি মুসলিম দেশগুলোর ন্যায্য অধিকারের পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের মজলুম জনগণের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম সমর্থন বিশ্ব মুসলিম নেতাদের কাছে তাঁকে এক অনন্য মর্যাদায় আসীন করেছিল।
অনাড়ম্বর জীবন ও পর্দার নিষ্ঠা
ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করেও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জীবন ছিল ধর্মীয় অনুশাসন ও শৃঙ্খলার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনা যে শালীনতা, পর্দা এবং ধর্মীয় নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক নয়, তিনি তা নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। তাঁর এই মার্জিত ও পরিশীলিত ব্যক্তিত্ব কোটি কোটি মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধার আসন গেড়েছে।
মহাপ্রয়াণ: পরম করুণাময়ের সান্নিধ্যে
পবিত্র কুরআনের শাশ্বত ঘোষণা—”প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।” আজ বেগম জিয়া সেই অমোঘ সত্য মেনে মহান রবের সান্নিধ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। দেশ ও জাতির সেবায় তাঁর আত্মত্যাগ এবং ইসলামের কল্যাণে তাঁর নিরলস সেবা ইনশাআল্লাহ তাঁর জন্য ‘সাদাকায়ে জারিয়া’ হিসেবে গণ্য হবে।
আমরা প্রার্থনা করি, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর সকল নেক আমল কবুল করুন, তাঁর ত্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চ মকাম দান করুন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি অমর থাকবেন তাঁর ঈমানী দৃঢ়তা, অটল দেশপ্রেম এবং উন্নত চারিত্রিক আদর্শের মাধ্যমে।
বিদায়, আপোষহীন নেত্রী। চিরকাল আামাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন।
মুক্তির লড়াই ডেস্ক : 












