ঢাকা ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo অধ্যাপক ড. তামিজী চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. হামিদা সেক্রেটারি জেনারেল Logo এনসিপির লোকজন আওয়ামী লীগের সাথে হাত মিলিয়েছে : কায়কোবাদ Logo রাজশাহীতে মেয়েকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা, গ্রেপ্তার ২ Logo মুরাদনগরে মাছ কাটা নিয়ে দ্বন্দ্ব, স্ত্রীকে খুন করে থানায় স্বামী Logo খুনিদের বিচার আর দেশের সংস্কার ছাড়া জনগণ নির্বাচন মেনে নেবে না- ডাঃ শফিকুর রহমান Logo বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেই এ সরকার কাজ করছে- পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা Logo সাবেক সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী’র বিশ্বস্ত সহযোগী দুর্নীতিবাজ ওসি ফারুক’র খুঁটির এতো জোর? Logo স্ত্রীর নাম ব্যবহার করে শুমারির টাকা আত্মসাৎ পরিসংখ্যান কর্মকর্তার Logo বান্দরবানে ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে পার্বত্য উপদেষ্ট Logo দ্রব্যমূল্য সহনীয় রেখে দেশ ও জনগনের জন্য কাজ করতে হবে- সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম

রূপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বদলিতে শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে স্বস্থি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দুর্নীতিবাজ শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতার ছয় বছর পর হবিগঞ্জের মাধবপুরে বদলি হওয়ায় শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে স্বস্থি ফিরে এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ আব্দুল আলীম এ আদেশ দেন। ৩ এপ্রিল সোমবার উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতার কোন রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বিদায় নিয়েছেন।

জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলায় ১১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তিন শতাধিক কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে অবকাঠামো সংস্কার, মেরামত ও রং করার জন্য প্রতি স্কুলে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্লিপ ফান্ডের টাকা বরাদ্দ আসে ৫০ হাজার টাকা করে। এ সকল টাকা বরাদ্দের বিপরীতে উৎকোচ ছাড়া কোন কাজ করা যায়নি। সরকারি বিদ্যালয়ের বার্ষিক বরাদ্দের টাকা থেকেও উৎকোচ দিতে হয়। স্লিপ বাবদ বিদ্যালয় বরাদ্দ ,বার্ষিক ক্যালেন্ডার, সিলেবাস, প্রশ্ন প্রণয়ন, শিক্ষা উপকরণ শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক ক্রয় করতে হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিয়োজিত ব্যক্তির কাছ থেকে এসকল শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করতে হচ্ছে। শিক্ষা অফিসারের নিজস্ব ব্যবসা এইভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী ও পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নকারী শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মানী থেকে শতকরা পাঁচ টাকা, বিদ্যালয় সংস্কার কাজের অর্থ উত্তোলনে শতকরা চার টাকা হারে ঘুষ আদায় ছিলো উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আক্তারের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। উৎকোচ ছাড়া গত ছয় বছরে কোন কাজ হয়নি। মিলছেনা কোন প্রতিকার। জিম্মি হয়ে পড়ে শিক্ষকরা। ধাপে ধাপে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের উৎকোচের চাহিদা বাড়তে থাকে। প্রতিবাদ করলেই শিক্ষকদের বদলি করা হয়। এছাড়া মাতৃত্বের ছুটি, বদলী, পেনশন, মাল্টিমিডিয়া ও ল্যাপটপ বিতরণ এবং তালিকা প্রণয়ন কিছুই টাকা ছাড়া হয়নি।

বেশ ক‘জন প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্ষুদ্র মেরামতসহ বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ শেষ করে বিল তুলতে গেলে কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে হয়। এ প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে গেলে শিক্ষা অফিসারকে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত ঘুষ প্রদান করতে হয়। অবৈধ টাকা লেনদেনের জন্য ২/৩ জন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যম হিসাবে তারাই উৎকোচ গ্রহন করে কাজ সম্পন্ন করে দেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার ঢাকায় থাকেন। প্রতিদিন সময়মতো অফিসও করেননা। অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতার বেপরোয়া হয়ে উঠে। জৈনক সচিবের ঘনিষ্টজন হিসাবে বার বার বদলী ঠেকিয়ে এখানে বহাল তবিয়তে ছিলেন জাহেদা আক্তার। সেই সচিব প্রায়ই উপজেলা শিক্ষা অফিসে বেড়াতে আসেন। কখনও কখনও আশপাশের রেস্টুরেন্টে তারা আড্ডায় মেতে উঠতেন।

তারাবো পৌরসভার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চলতি অর্থ বছরে রূপগঞ্জের ১১৫ স্কুলে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা স্লিপ ফান্ড থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের এ স্লিপ ফান্ডের টাকা উত্তোলনে স্কুল প্রতি ৪শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হয়। প্রতি স্কুল থেকে ১২ দশমিক ৫০ টাকা হারে ভ্যাট আদায় করা হয়। আদায়কৃত ভ্যাটের টাকা পুরোপুরি সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। যা তদন্ত করলে সততা পাওয়া যাবে।

কয়েকজন কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতারের স্বেচ্ছাচারিতায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই সকল বিষয়ে এখনও বই পায়নি। কবে নাগাদ পাবে তা তারা এখনো জানেনা। বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে এখনো বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌছায়নি বলে তারা অভিযোগ করেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতার বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা। তবে বিনামূল্যের পাঠ্যবই বরাদ্দ কম থাকায় এখনও শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেয়া সম্ভব হয়নি।

আপলোডকারীর তথ্য

অধ্যাপক ড. তামিজী চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. হামিদা সেক্রেটারি জেনারেল

SBN

SBN

রূপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বদলিতে শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে স্বস্থি

আপডেট সময় ০১:৪১:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০২৩

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দুর্নীতিবাজ শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতার ছয় বছর পর হবিগঞ্জের মাধবপুরে বদলি হওয়ায় শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে স্বস্থি ফিরে এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ আব্দুল আলীম এ আদেশ দেন। ৩ এপ্রিল সোমবার উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতার কোন রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বিদায় নিয়েছেন।

জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলায় ১১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তিন শতাধিক কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে অবকাঠামো সংস্কার, মেরামত ও রং করার জন্য প্রতি স্কুলে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্লিপ ফান্ডের টাকা বরাদ্দ আসে ৫০ হাজার টাকা করে। এ সকল টাকা বরাদ্দের বিপরীতে উৎকোচ ছাড়া কোন কাজ করা যায়নি। সরকারি বিদ্যালয়ের বার্ষিক বরাদ্দের টাকা থেকেও উৎকোচ দিতে হয়। স্লিপ বাবদ বিদ্যালয় বরাদ্দ ,বার্ষিক ক্যালেন্ডার, সিলেবাস, প্রশ্ন প্রণয়ন, শিক্ষা উপকরণ শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক ক্রয় করতে হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিয়োজিত ব্যক্তির কাছ থেকে এসকল শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করতে হচ্ছে। শিক্ষা অফিসারের নিজস্ব ব্যবসা এইভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী ও পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নকারী শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মানী থেকে শতকরা পাঁচ টাকা, বিদ্যালয় সংস্কার কাজের অর্থ উত্তোলনে শতকরা চার টাকা হারে ঘুষ আদায় ছিলো উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আক্তারের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। উৎকোচ ছাড়া গত ছয় বছরে কোন কাজ হয়নি। মিলছেনা কোন প্রতিকার। জিম্মি হয়ে পড়ে শিক্ষকরা। ধাপে ধাপে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের উৎকোচের চাহিদা বাড়তে থাকে। প্রতিবাদ করলেই শিক্ষকদের বদলি করা হয়। এছাড়া মাতৃত্বের ছুটি, বদলী, পেনশন, মাল্টিমিডিয়া ও ল্যাপটপ বিতরণ এবং তালিকা প্রণয়ন কিছুই টাকা ছাড়া হয়নি।

বেশ ক‘জন প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্ষুদ্র মেরামতসহ বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ শেষ করে বিল তুলতে গেলে কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে হয়। এ প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে গেলে শিক্ষা অফিসারকে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত ঘুষ প্রদান করতে হয়। অবৈধ টাকা লেনদেনের জন্য ২/৩ জন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যম হিসাবে তারাই উৎকোচ গ্রহন করে কাজ সম্পন্ন করে দেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার ঢাকায় থাকেন। প্রতিদিন সময়মতো অফিসও করেননা। অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতার বেপরোয়া হয়ে উঠে। জৈনক সচিবের ঘনিষ্টজন হিসাবে বার বার বদলী ঠেকিয়ে এখানে বহাল তবিয়তে ছিলেন জাহেদা আক্তার। সেই সচিব প্রায়ই উপজেলা শিক্ষা অফিসে বেড়াতে আসেন। কখনও কখনও আশপাশের রেস্টুরেন্টে তারা আড্ডায় মেতে উঠতেন।

তারাবো পৌরসভার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চলতি অর্থ বছরে রূপগঞ্জের ১১৫ স্কুলে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা স্লিপ ফান্ড থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের এ স্লিপ ফান্ডের টাকা উত্তোলনে স্কুল প্রতি ৪শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হয়। প্রতি স্কুল থেকে ১২ দশমিক ৫০ টাকা হারে ভ্যাট আদায় করা হয়। আদায়কৃত ভ্যাটের টাকা পুরোপুরি সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। যা তদন্ত করলে সততা পাওয়া যাবে।

কয়েকজন কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতারের স্বেচ্ছাচারিতায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই সকল বিষয়ে এখনও বই পায়নি। কবে নাগাদ পাবে তা তারা এখনো জানেনা। বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে এখনো বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌছায়নি বলে তারা অভিযোগ করেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতার বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা। তবে বিনামূল্যের পাঠ্যবই বরাদ্দ কম থাকায় এখনও শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেয়া সম্ভব হয়নি।