ঢাকা ১২:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ফাড়িতে আটকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ছাড়লেন এস আই নেওয়াজ

শাহিনুর রহমান পিন্টু, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের কাদিরডাঙ্গা গ্রামের অনুষ্ঠিতব্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নামযজ্ঞে যোগদানের জন্য বাড়ি থেকে আসে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী।আনুমানিক রাত ৮ টার দিকে পার্শ্ববর্তী গ্রামের পরিচিত একটি মেয়ের সাথে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় স্থানীয় কয়েকজন তাদেরকে ধরে নানারকম জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা পুলিশে খবর দিলে স্থানীয় ফাড়ির পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে সজীব পালকে ধরে নিয়ে যায় কোলা পুলিশ ফাড়িতে। খবর পেয়ে সজীব পালের মা ছেলেকে ছাড়াতে ফাড়িতে হাজির হয়। কোলা পুলিশ ফাড়ির আইসি এস আই নেওয়াজ মোরশেদের সাথে দেন দরবার করে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আনুমানিক রাত বারোটার দিকে ছেলেকে নিয়ে মা বাড়ি ফেরেন। সে সময় কৌশল করে আইসি ছেলে, মা ও তাদের সাথে থাকা আর একজনের সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন এবং পরীক্ষার্থী ব্যবহৃত ভিভো V-21E মডেলের স্মার্ট মোবাইল ফোনটি রেখে দেন।

এমনই এক ঘটনা ঘটেছে ৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার কোলা ইউনিয়নের পারিয়াট গ্রামের স্বপন পালের ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী সজীব পালের সাথে। ইতিমধ্যে ঘটনার সকল তথ্য প্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। ঘটনার সত্যতা জানতে সজীব পালের মা সরস্বতী পালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভীত হয়ে জানান,আমার ছেলেকে স্থানীয় লোকজন একটি মেয়েসহ আটকে পুলিশে দিয়েছে এমন সংবাদ শুনে আমি কোলার পুলিশ ফাড়িতে যাই। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ৫ হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম।পুলিশ ফাড়ির এস আই নেওয়াজ মোরশেদ ছেলেকে ছেড়ে দেবে মর্মে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। কাছের টাকা না থাকায় একটু সময় নিয়ে টাকা ম্যানেজ করে খালকুলা গ্রামের পরিচিত শিমুল নামের একটি ছেলের মাধ্যমে তাকে টাকা দিয়ে আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে বাড়ি নিয়ে যায়। যে মেয়েকে জড়িয়ে আমার ছেলেকে ধরে নেওয়া হলো সেই মেয়েকে আমি পুলিশ ফাঁড়িতে দেখিনি। আমার ছেলের বিরুদ্ধে লিখিত কোন অভিযোগও ছিল না। অথচ আমার এসএসসি পরীক্ষার্থী নাবালক ছেলেকে আটকে এস আই নেওয়াজ মোরশেদ জোরপূর্বক টাকা আদায়সহ আমাদের তিনজনকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। আর জোরপূর্বক মোবাইলটি রেখে দেন। এখনো মোবাইলটি দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আইসি কোলা পুলিশ ফাড়ির এস আই নেওয়াজ মোর্শেদের কাছে ঘটনার বিস্তারিত এবং ঘুষ গ্রহণের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়।তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও ঘুষ গ্রহণের কথা অস্বীকার করেন। একই সাথে তিনি উল্লেখ করেন জব্দকৃত মোবাইল পরীক্ষা শেষে ফেরত দেওয়া হবে।তিনি আরও জানান, ঘটনাটি ওসি স্যারকে জানিয়ে তার নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা হয়েছে। এব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবু আজিজ জানান, ঘটনাটি আমি আইসি সাহেবের মাধ্যমে জেনেছি।

যেহেতু ছেলেটি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল, তাই তাকে লিখিত নিয়ে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলাম। আইসি সাহেবের ঘুষ বাণিজ্যের ব্যাপারে আমি অবগত নই। তার অনৈতিক কাজের মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।উল্লেখ্য, মাস খানেক আগে কোলা ইউনিয়নে এক মরা গরুর জবাই করাকে কেন্দ্র করে এসআই নেওয়াজ মোরশেদের নির্লিপ্ততা নানা আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।

ওই সময় তিনি ঘটনার সাথে জড়িতদের নিকট থেকে ঘুষ গ্রহণ করেছেন মর্মে অনেকে অভিযোগ করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।দীর্ঘদিন এই ফাড়ির আইসির দায়িত্ব পালন কালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও নেওয়া হয়না কোনো ব্যবস্থা।

আপলোডকারীর তথ্য

এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ফাড়িতে আটকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ছাড়লেন এস আই নেওয়াজ

আপডেট সময় ০৬:৩৪:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ মার্চ ২০২৪

শাহিনুর রহমান পিন্টু, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের কাদিরডাঙ্গা গ্রামের অনুষ্ঠিতব্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নামযজ্ঞে যোগদানের জন্য বাড়ি থেকে আসে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী।আনুমানিক রাত ৮ টার দিকে পার্শ্ববর্তী গ্রামের পরিচিত একটি মেয়ের সাথে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় স্থানীয় কয়েকজন তাদেরকে ধরে নানারকম জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা পুলিশে খবর দিলে স্থানীয় ফাড়ির পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে সজীব পালকে ধরে নিয়ে যায় কোলা পুলিশ ফাড়িতে। খবর পেয়ে সজীব পালের মা ছেলেকে ছাড়াতে ফাড়িতে হাজির হয়। কোলা পুলিশ ফাড়ির আইসি এস আই নেওয়াজ মোরশেদের সাথে দেন দরবার করে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আনুমানিক রাত বারোটার দিকে ছেলেকে নিয়ে মা বাড়ি ফেরেন। সে সময় কৌশল করে আইসি ছেলে, মা ও তাদের সাথে থাকা আর একজনের সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন এবং পরীক্ষার্থী ব্যবহৃত ভিভো V-21E মডেলের স্মার্ট মোবাইল ফোনটি রেখে দেন।

এমনই এক ঘটনা ঘটেছে ৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার কোলা ইউনিয়নের পারিয়াট গ্রামের স্বপন পালের ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী সজীব পালের সাথে। ইতিমধ্যে ঘটনার সকল তথ্য প্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। ঘটনার সত্যতা জানতে সজীব পালের মা সরস্বতী পালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভীত হয়ে জানান,আমার ছেলেকে স্থানীয় লোকজন একটি মেয়েসহ আটকে পুলিশে দিয়েছে এমন সংবাদ শুনে আমি কোলার পুলিশ ফাড়িতে যাই। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ৫ হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম।পুলিশ ফাড়ির এস আই নেওয়াজ মোরশেদ ছেলেকে ছেড়ে দেবে মর্মে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। কাছের টাকা না থাকায় একটু সময় নিয়ে টাকা ম্যানেজ করে খালকুলা গ্রামের পরিচিত শিমুল নামের একটি ছেলের মাধ্যমে তাকে টাকা দিয়ে আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে বাড়ি নিয়ে যায়। যে মেয়েকে জড়িয়ে আমার ছেলেকে ধরে নেওয়া হলো সেই মেয়েকে আমি পুলিশ ফাঁড়িতে দেখিনি। আমার ছেলের বিরুদ্ধে লিখিত কোন অভিযোগও ছিল না। অথচ আমার এসএসসি পরীক্ষার্থী নাবালক ছেলেকে আটকে এস আই নেওয়াজ মোরশেদ জোরপূর্বক টাকা আদায়সহ আমাদের তিনজনকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। আর জোরপূর্বক মোবাইলটি রেখে দেন। এখনো মোবাইলটি দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আইসি কোলা পুলিশ ফাড়ির এস আই নেওয়াজ মোর্শেদের কাছে ঘটনার বিস্তারিত এবং ঘুষ গ্রহণের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়।তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও ঘুষ গ্রহণের কথা অস্বীকার করেন। একই সাথে তিনি উল্লেখ করেন জব্দকৃত মোবাইল পরীক্ষা শেষে ফেরত দেওয়া হবে।তিনি আরও জানান, ঘটনাটি ওসি স্যারকে জানিয়ে তার নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা হয়েছে। এব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবু আজিজ জানান, ঘটনাটি আমি আইসি সাহেবের মাধ্যমে জেনেছি।

যেহেতু ছেলেটি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল, তাই তাকে লিখিত নিয়ে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলাম। আইসি সাহেবের ঘুষ বাণিজ্যের ব্যাপারে আমি অবগত নই। তার অনৈতিক কাজের মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।উল্লেখ্য, মাস খানেক আগে কোলা ইউনিয়নে এক মরা গরুর জবাই করাকে কেন্দ্র করে এসআই নেওয়াজ মোরশেদের নির্লিপ্ততা নানা আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।

ওই সময় তিনি ঘটনার সাথে জড়িতদের নিকট থেকে ঘুষ গ্রহণ করেছেন মর্মে অনেকে অভিযোগ করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।দীর্ঘদিন এই ফাড়ির আইসির দায়িত্ব পালন কালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও নেওয়া হয়না কোনো ব্যবস্থা।