ঢাকা ০১:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষক ছেলেটি এখন বিসিএস ক্যাডার

মোঃ ইলিয়াছ আহমদ, বরুড়া: মাধ্যমিকে পড়াশোনায় ছিলেন বেশ মনোযোগী। ফসলের মাঠেও ছিলেন কৃষক বাবা সহযোগী। দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার আগ পর্যন্ত বাবার সাথে মাঠে কৃষিকাজ করতেন। সাধারণভাবেই কেটেছে রকিবুল হাসানের জীবন। বাবা কৃষি কাজ করেই সংসার চালাতেন। নয় ভাই-বোনের মধ্যে রকিবুল হাসান দ্বিতীয়। অন্যের বাড়িতে লজিং মাস্টার ছিলেন। বাবাকে কৃষি কাজে সাহায্য করতেন প্রবল আত্মবিশ্বাস আর অদম্য চেষ্টায় এগিয়ে গেছেন নিজের গন্তব্যে। হয়ে গেলেন ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার (বাংলা)। কুমিল্লা জেলা বরুড়া উপজেলার দক্ষিণ খোসবাস ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ মোল্লার ছেলের রকিবুল হাসানের কথা-

রাকিবুল হাসানের শৈশব কেটেছে নিজ উপজেলাতে। মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শুরু এবং মাধ্যমিকে পড়াশোনা অবস্থায় বাবার সাথে কৃষিকাজ করে পরিবারকে সহযোগিতা করতেন। অন্যের বাড়িতে লজিং মাস্টার ছিলেন। আগানগর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় থেকে ২০০৬ সালে দাখিল পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

দাখিল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর জাতীয় গণমাধ্যমে জানতে পারলেন, দাখিলে গোল্ডেন এ+ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের আলিমে পড়াশোনা জন্য থাকা ও খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রিতে সুযোগ দিচ্ছে ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মাদ্রাসা। এই সুযোগ হাতছাড়া না করে গ্রাম থেকে সোজা চলে গেলেন ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে ২০০৮ সালে আলিমে গোল্ডেন এ+ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

দাখিল ও আলিম পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পরিবারের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেলো। পরিবারকে সহযোগিতা করতে হবে এবং নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। সে মেধাবী ছাত্রটি ২০০৮/০৯ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা অবস্থায় জব করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। একাডেমি পড়াশোনা শেষ করে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও কুমিল্লা জিলা স্কুলে চাকরি করেছেন। পারিবারিক আর্থিক সংকট খুব কাছ থেকে দেখেছেন। এখনও তিনি মাঝেমধ্যে বাড়িতে গেলে কৃষি কাজ করেন। সে শৈশবের কৃষিকাজ এখনও ভুলেননি।

অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ব্যাংক জব থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণীর চাকরি পরীক্ষা প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষা উত্তীর্ণ কিন্তু শেষমেশ ভাইভা উত্তীর্ণ হতে পারেননি। চাকরি পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। প্রতিদিন ৭/৮ ঘন্টা পড়াশোনা করে ২০১৫ সালে প্রথমবার ৩৫ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। ৩৫ থেকে শুরু করে ৪১তম বিসিএস শেষবার অংশগ্রহণ করেন (৩৭তম বাদে)। সবকিছু মিলে বিসিএস জার্নিটা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিলো। চ্যালেঞ্জিংকে জয় করে ৬বার বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে অবশেষে ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে বিসিএস পরিসমাপ্তি ঘটে।

রকিবুল হাসান বলেন, নিজ এলাকার বড় ভাইয়েরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করতেন তাদের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় নিজকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হই। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করি তখনই বিসিএস হওয়ার স্বপ্ন জাগে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করি। যার ফলে বিসিএস শুরুতে একটু পিছিয়েছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএস এর পড়াশোনা যারা সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। যারা এখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা রানিং আর দেরি না করে আজই বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করেন। বিসিএস একটি ধৈর্য্যের পরীক্ষা। লেগে থাকতে হবে, তাহলে একদিন সফল হবেন।

তিনি আরও বলেন, মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে পেরে আমি খুশি, এতে ভীষণ খুশি পরিবারের সেই কৃষক ছেলেটি। ক্যাডার হওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের উর্ধে। আমি একজন আদর্শ মানুষ হতে চাই।

আপলোডকারীর তথ্য

কৃষক ছেলেটি এখন বিসিএস ক্যাডার

আপডেট সময় ১১:৩৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৩

মোঃ ইলিয়াছ আহমদ, বরুড়া: মাধ্যমিকে পড়াশোনায় ছিলেন বেশ মনোযোগী। ফসলের মাঠেও ছিলেন কৃষক বাবা সহযোগী। দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার আগ পর্যন্ত বাবার সাথে মাঠে কৃষিকাজ করতেন। সাধারণভাবেই কেটেছে রকিবুল হাসানের জীবন। বাবা কৃষি কাজ করেই সংসার চালাতেন। নয় ভাই-বোনের মধ্যে রকিবুল হাসান দ্বিতীয়। অন্যের বাড়িতে লজিং মাস্টার ছিলেন। বাবাকে কৃষি কাজে সাহায্য করতেন প্রবল আত্মবিশ্বাস আর অদম্য চেষ্টায় এগিয়ে গেছেন নিজের গন্তব্যে। হয়ে গেলেন ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার (বাংলা)। কুমিল্লা জেলা বরুড়া উপজেলার দক্ষিণ খোসবাস ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ মোল্লার ছেলের রকিবুল হাসানের কথা-

রাকিবুল হাসানের শৈশব কেটেছে নিজ উপজেলাতে। মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শুরু এবং মাধ্যমিকে পড়াশোনা অবস্থায় বাবার সাথে কৃষিকাজ করে পরিবারকে সহযোগিতা করতেন। অন্যের বাড়িতে লজিং মাস্টার ছিলেন। আগানগর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় থেকে ২০০৬ সালে দাখিল পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

দাখিল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর জাতীয় গণমাধ্যমে জানতে পারলেন, দাখিলে গোল্ডেন এ+ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের আলিমে পড়াশোনা জন্য থাকা ও খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রিতে সুযোগ দিচ্ছে ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মাদ্রাসা। এই সুযোগ হাতছাড়া না করে গ্রাম থেকে সোজা চলে গেলেন ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে ২০০৮ সালে আলিমে গোল্ডেন এ+ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

দাখিল ও আলিম পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পরিবারের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেলো। পরিবারকে সহযোগিতা করতে হবে এবং নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। সে মেধাবী ছাত্রটি ২০০৮/০৯ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা অবস্থায় জব করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। একাডেমি পড়াশোনা শেষ করে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও কুমিল্লা জিলা স্কুলে চাকরি করেছেন। পারিবারিক আর্থিক সংকট খুব কাছ থেকে দেখেছেন। এখনও তিনি মাঝেমধ্যে বাড়িতে গেলে কৃষি কাজ করেন। সে শৈশবের কৃষিকাজ এখনও ভুলেননি।

অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ব্যাংক জব থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণীর চাকরি পরীক্ষা প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষা উত্তীর্ণ কিন্তু শেষমেশ ভাইভা উত্তীর্ণ হতে পারেননি। চাকরি পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। প্রতিদিন ৭/৮ ঘন্টা পড়াশোনা করে ২০১৫ সালে প্রথমবার ৩৫ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। ৩৫ থেকে শুরু করে ৪১তম বিসিএস শেষবার অংশগ্রহণ করেন (৩৭তম বাদে)। সবকিছু মিলে বিসিএস জার্নিটা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিলো। চ্যালেঞ্জিংকে জয় করে ৬বার বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে অবশেষে ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে বিসিএস পরিসমাপ্তি ঘটে।

রকিবুল হাসান বলেন, নিজ এলাকার বড় ভাইয়েরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করতেন তাদের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় নিজকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হই। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করি তখনই বিসিএস হওয়ার স্বপ্ন জাগে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করি। যার ফলে বিসিএস শুরুতে একটু পিছিয়েছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএস এর পড়াশোনা যারা সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। যারা এখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা রানিং আর দেরি না করে আজই বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করেন। বিসিএস একটি ধৈর্য্যের পরীক্ষা। লেগে থাকতে হবে, তাহলে একদিন সফল হবেন।

তিনি আরও বলেন, মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে পেরে আমি খুশি, এতে ভীষণ খুশি পরিবারের সেই কৃষক ছেলেটি। ক্যাডার হওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের উর্ধে। আমি একজন আদর্শ মানুষ হতে চাই।