ঢাকা ১১:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

জানলা

জানলা
সুস্মিতা (কোলকাতা)

এপ্রিল মাস পড়ে গেল। সারাদিন অসহ্য গুমোট। মেয়ে জামাই নাতি নাতনিরা যখন কেউ বাড়িতে থাকে না, মণিদীপা তখন প্রতিদিন দুপুরে ওদের ঘর পেরিয়ে পূবমুখো বারান্দায় এসে দাঁড়ান। এখানে দাঁড়ালে সামনের খোলা মাঠটা দেখা যায়। মাঠটার এক কোণে কারা জেনে একটা ভাঙ্গা জানলার পাল্লা ফেলে রেখে দিয়ে গেছে। বাতিল জানলা…।

এই বাড়িটার ডিজাইনটা বড্ড অদ্ভুত লাগে প্রৌঢ়া মণিদীপার। এটা তার মেয়ের বাড়ি। গত তিনমাস ধরে তার জন্য নির্ধারিত পশ্চিমের ছোট শোওয়ার ঘরটায় কোনও জানলা নেই। জানলাবিহীন ঘর…বড্ড দমবন্ধ লাগে তার।

আট মাস আগে গত সেপ্টেম্বরে স্বামী অলোকেশ না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার পরেই মণিদীপার ছেলে অর্ধেন্দু মাকে নিজের কাছে বিদেশে নিয়ে চলে গিয়েছিল।
সেই বাড়িতে মণিদীপার বিশাল ঘরটার একদিকের গোটা দেওয়াল জুড়ে ছিল কাঁচের জানলা। শীতের দেশে সেই জানলা কখনই খোলা যেত না।
ছেলে বৌমা অফিসে বেরিয়ে গেলে জানলার কাঁচে চোখ রেখে প্রৌঢ়া সারাদিন বাইরের অচেনা ধূসর বিদেশি পৃথিবী দেখতেন আর নিজের পুরোনো ভাড়াবাড়ির সংসারটার স্মৃতিতে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন। শেষপর্যন্ত সম্পর্কের নানা টানাপোড়েনে বিদেশের সেই বিশাল জানলাওয়ালা বাড়িটা আর কিছুতেই মণিদীপার নিজের বাড়ি হয়ে উঠল না।
ফিরে এলেন মণিদীপা।

দেশে ফিরে গত তিনমাস ধরে মেয়ের বাড়ির পশ্চিমের জানলাবিহীন ঘরটি মণিদীপার শোওয়ার ঘর।

আজও দুপুরবেলা মণিদীপা পূবমুখো বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। তিনদিনের অসহ্য গরমের পর আজ আকাশের ঈশান কোণে ঘন কালো মেঘ। সহসা আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে উঠল ঝড়, বছরের প্রথম কালবৈশাখী। তার পরেই মুষলধারে বৃষ্টি।

গৃহহীন বয়স্ক ভাঙাচোরা জানলাটা কেমন অসহায়ের মতো একলা মাঠে ভিজছে।
জানলাটাকে দেখে দুচোখের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মণিদীপার মনে হল- “পৃথিবীর প্রত্যেকটি জানলার একটা ঘর প্রয়োজন…ঠিক যেমন প্রত্যেক ঘরের প্রয়োজন একটা খোলা জানলা।”

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা

জানলা

আপডেট সময় ০৪:০৬:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

জানলা
সুস্মিতা (কোলকাতা)

এপ্রিল মাস পড়ে গেল। সারাদিন অসহ্য গুমোট। মেয়ে জামাই নাতি নাতনিরা যখন কেউ বাড়িতে থাকে না, মণিদীপা তখন প্রতিদিন দুপুরে ওদের ঘর পেরিয়ে পূবমুখো বারান্দায় এসে দাঁড়ান। এখানে দাঁড়ালে সামনের খোলা মাঠটা দেখা যায়। মাঠটার এক কোণে কারা জেনে একটা ভাঙ্গা জানলার পাল্লা ফেলে রেখে দিয়ে গেছে। বাতিল জানলা…।

এই বাড়িটার ডিজাইনটা বড্ড অদ্ভুত লাগে প্রৌঢ়া মণিদীপার। এটা তার মেয়ের বাড়ি। গত তিনমাস ধরে তার জন্য নির্ধারিত পশ্চিমের ছোট শোওয়ার ঘরটায় কোনও জানলা নেই। জানলাবিহীন ঘর…বড্ড দমবন্ধ লাগে তার।

আট মাস আগে গত সেপ্টেম্বরে স্বামী অলোকেশ না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার পরেই মণিদীপার ছেলে অর্ধেন্দু মাকে নিজের কাছে বিদেশে নিয়ে চলে গিয়েছিল।
সেই বাড়িতে মণিদীপার বিশাল ঘরটার একদিকের গোটা দেওয়াল জুড়ে ছিল কাঁচের জানলা। শীতের দেশে সেই জানলা কখনই খোলা যেত না।
ছেলে বৌমা অফিসে বেরিয়ে গেলে জানলার কাঁচে চোখ রেখে প্রৌঢ়া সারাদিন বাইরের অচেনা ধূসর বিদেশি পৃথিবী দেখতেন আর নিজের পুরোনো ভাড়াবাড়ির সংসারটার স্মৃতিতে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন। শেষপর্যন্ত সম্পর্কের নানা টানাপোড়েনে বিদেশের সেই বিশাল জানলাওয়ালা বাড়িটা আর কিছুতেই মণিদীপার নিজের বাড়ি হয়ে উঠল না।
ফিরে এলেন মণিদীপা।

দেশে ফিরে গত তিনমাস ধরে মেয়ের বাড়ির পশ্চিমের জানলাবিহীন ঘরটি মণিদীপার শোওয়ার ঘর।

আজও দুপুরবেলা মণিদীপা পূবমুখো বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। তিনদিনের অসহ্য গরমের পর আজ আকাশের ঈশান কোণে ঘন কালো মেঘ। সহসা আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে উঠল ঝড়, বছরের প্রথম কালবৈশাখী। তার পরেই মুষলধারে বৃষ্টি।

গৃহহীন বয়স্ক ভাঙাচোরা জানলাটা কেমন অসহায়ের মতো একলা মাঠে ভিজছে।
জানলাটাকে দেখে দুচোখের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মণিদীপার মনে হল- “পৃথিবীর প্রত্যেকটি জানলার একটা ঘর প্রয়োজন…ঠিক যেমন প্রত্যেক ঘরের প্রয়োজন একটা খোলা জানলা।”